
চামড়া (Hides & skin)
বাংলাদেশে শহর ছাড়া গ্রামাঞ্চলে পশু জবাই করার কোন নির্দিষ্ট স্থান বা ঘর নাই। ফলে দেশের অধিকাংশ পশুর মাংসের জন্য যেখানে সেখানে জবাই করা হয়। এছাড়া অধিকাংশ ক্ষেত্রে অদক্ষ লোকজন পশু জবাই ও চামড়া ছাড়ানোর কারণে প্রচুর সংখ্যায় চামড়া নষ্ট হয়।
আমাদের দেশে কোরবানীর ঈদে হাজার হাজার পশু জবাই হয় এবং এই সময় অদক্ষতার কারণে প্রচুর চামড়া নষ্ট হয়। এমনকি অজ্ঞতার কারণে পশুর অনেক উপজাত বিনষ্ট হয়। তাই বিজ্ঞানসম্মত উন্নত পদ্ধতিতে পশু জবাই, চামড়া ছাড়ানো, স্বাস্থ্যসম্মত পদ্ধতিতে মাংস উৎপাদন ও পশুর অন্যান্য উপজাত সংগ্রহ সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান থাকা আবশ্যক।
প্রধানত নিম্নে উল্লেখিত স্বাস্থ্য বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে পশু জবাই করে উন্নতমানের চমড়া, পরিচ্ছন্ন মাংস ও জবাইকৃত পশুর বিভিন্ন উপজাত সংগ্রহ করা যায়-
→ পশু জবাইয়ের রোগ জীবাণু ২৪ ঘণ্টা পূর্ব থেকে পশুকে পূর্ণ বিশ্রাম ও ১২ ঘণ্টা পূর্ব থেকে দানাদার খাদ্য বন্ধ রেখে পানি ও কাঁচা ঘাস খাওয়ানো উচিত। এতে জবাইকৃত পশুর চামড়া ছাড়ানো সহজ হয়।
→ কোরবানীর পশুসহ যে কোন পশু সকালে জবাই করা উত্তম।
→ পশু জবাই করার জন্য সমতল পরিষ্কার জায়গা বেছে নিতে হবে। জবাইয়ের সময় পশুর মাথার দিকটা একটি ঢালু দিকে রাখা প্রয়োজন যাতে সব রক্ত দেহ থেকে সহজে বের হয়ে যায়।
→ জবাই করার পর রক্ত পড়া বন্ধ হলে ছায়ায় বা ঘরের মধ্যে দ্রুত চামড়া ছাড়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
→ চামড়া ছাড়ানোর সময় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে যাতে চামড়ায় মাংস এবং মাংসে রক্ত, গোবর, কাদা-মাটি মেখে না যায়।
→ পশু জবাই ও মাংস কাটার স্থানে কুকুর, বিড়াল ও অন্যান্য কোন জন্তু যাতে মাংস ও তার উপজাত ভক্ষণের জন্য আসতে না পারে সে ব্যবস্থা করতে হবে।
→ পশুর চামড়া ছাড়ানোর পর বেশি সময় চামড়া ফেলে না রেখে সাথে সাথে বিক্রি বা চামড়া পাকা করার কারখানায় পাঠাতে হবে। চামড়ার ব্যবস্থা দ্রুত না করলে পচন ধরে নষ্ট হতে পারে।
→ চামড়া দ্রুত বিক্রি করা বা কারখানায় পাঠানোর ব্যবস্থা না থাকলে চামড়ার গায়ে লেগে থাকা চর্বি, রক্ত, মাংস, ইত্যাদি পরিষ্কার করে লবণ ঘসে লাগাতে হবে।
→ প্রতি গরু ও মহিষের চামড়ায় ৫-৬ কেজি এবং প্রতিটি মেষ ও ছাগলের চামড়ায় ১-২ কেজি লবণ লাগাতে হয়।
→ চামড়ার লবণ মাখানোর দিক ভিতরে রেখে শিরদাঁড়া বরাবর এমনভাবে ভাঁজ করে নিতে হবে যাতে লবণ ঝরে যায়।
→ লবণ মাখানো চামড়া মাটিতে না রেখে কাঠের তৈরি মাচার উপর একটির উপর একটি করে সাজিয়ে রাখতে হবে।
→ ভালভাবে লবণ মাখানো চামড়া নষ্ট হয় না।
→ সময় সুযোগ হলেই চামড়া বিক্রি বা কারখানায় পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে।

গোবর (Faeces / Cow-dung)
পশুর গোবর প্রধানত জ্বালানি, জৈব সার ও জৈব গ্যাস তৈরির জন্য ব্যবহার হয়। জমির উর্বরা শক্তি বৃদ্ধির জন্য পশুর মল-মূত্র একটি উৎকৃষ্ট জৈব সার। সুতরাং জ্বালানি হিসেবে গোবরের ব্যবহার বন্ধ করে জৈব সার হিসেবে ব্যবহার অধিক লাভজনক। কিন্তু আমাদের দেশে ত্রুটিপূর্ণভাবে গোবর সার সংরক্ষণের ফলে উদ্ভিদ খাদ্যের অধিকাংশ নষ্ট হয়ে যায়। সুতরাং নিম্নে উল্লেখিত বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অবলম্বনে গোবর সার সংরক্ষণ ও ব্যবহার করা প্রয়োজন।
→ পশুর মলমূত্র থেকে উৎকৃষ্ট জৈব সার সংরক্ষণের জন্য উঁচু জায়গা পাকা করে সারের গর্ত তৈরি করা প্রয়োজন।
→ গোশালার মেঝে সিমেন্ট দিয়ে তৈরি করে গোশালার নালাটি জমাকৃত সারের গর্তের সাথে যোগ করে দিলে পশুর মল-মূত্র অপচয় না হয়ে সরাসরি গর্তে পড়বে।
→ পশুর মেঝেতে শুকনো খড় বিছিয়ে দিলে শুল্ক খড় পশুর মল-মূত্র শোষণ করে। পরে এই মলমূত্র মিশ্রিত খড় গর্তে পচিয়ে ভাল জৈব সার তৈরি হয়।

পশুর অন্যান্য উপজাত (Other by-products)
→ পশুর রক্ত, চর্বি, নাড়ী-ভুড়ি, পশম, ক্ষুর, শিং ইত্যাদি উপজাতগুলি সুষ্ঠুভাবে সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করে নিম্নোক্তভাবে ব্যবহার করা যায়।
→ চর্বি সাবান তৈরিতে ব্যবহার হয়।
→ রক্ত ও হাঁড়ের গুঁড়া পশু-পাখির খাদ্য হিসেবে ব্যবহার হয়। হাঁড় দিয়ে সারও তৈরি হয়।
→ পশুর নাড়ীভুড়ি পোল্ট্রি ও মাছের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
→ মেষের পশম দিয়ে কম্বল ও পোশাক তৈরি হয়।
→ গরু ও মহিষের শিং দিয়ে চিরুনী তৈরি করা যায়।
বাংলাদেশে পশুর এসব উপজাতগুলোর ব্যবহারের জন্য তেমন শিল্প কারখানা গড়ে উঠে নাই। তাই এসব উপজাত সুষ্ঠুভাবে ব্যবহার হয় না। ফলে এসব উপজাতগুলো যেখানে সেখানে ফেলে দিয়ে পরিবেশকে নোংরা ও দূষিত করা হয়। যতদিন পর্যন্ত পশু উপজাত আমাদের দেশে সুষ্ঠুভাবে ব্যবহারের শিল্প গড়ে না উঠে ততদিন পর্যন্ত এসব উপজাত মাটির নীচে পুঁতে রাখলে পরিবেশ নোংরা বা দূষিত হবে না।