ছাগলের কৃমিনাশক ঔষধ ও গরুর কৃমিনাশক ঔষধ বাচ্চা দেওয়ার পর কত দিনের মধ্যে কৃমিনাশক ঔষধ দেওয়া যেতে পারে?
খামারিয়ন লাইভস্টক ফার্মে স্বাগতম। আজকের এই পোষ্টটিতে আমরা আলোচনা করব ছাগল বা গরু বাচ্চা দেওয়ার পর কত দিনের মধ্যে কৃমিনাশক ঔষধ দেওয়া যেতে পারে? যা প্রয়োগ করাটাও ভালো আবার বেশি প্রয়োগ করলেও ক্ষতি। কারণ সঠিক সময় সঠিক বিধি না জেনে যদি কৃমির মেডিসিন প্রয়োগ করেন পশুদের ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। আজকের ভিডিওতে বিস্তারিত আলোচনা করে নেব একটা ছাগল গরুর বাচ্চা দেওয়ার কতদিন পর কোন মেডিসিন কোন সময় কত পরিমাণে প্রয়োগ করবেন? স্কিপ না করে শেষ মুহূর্ত অবধি পড়ুন।
♦ খামারিয়ান এর নিয়মিত দর্শক। প্রিয় ছাগল এবং গরু খামারি বন্ধুরা আপনারা যারা দীর্ঘদিন ধরে আমার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। আপনারা অবশ্যই জানেন পশুদের ডিওয়ার্মিং বা কৃমিনাশক একটি ভাইটাল জিনিস। যা সঠিক সময় যদি প্রয়োগ করা না হয় পশুদের যেমন ক্ষতি হয়ে যায় ঠিক তেমনি কিন্তু যদি সঠিক প্রয়োগ বিধি না জেনে তাকে প্রয়োগ করা হয় তাতেও কিন্তু পশুদের ক্ষতি হয়ে যায়। যার জন্য কিন্তু এই কৃমিনাশক ওষুধের সঠিক প্রয়োগ বিধি এবং সময় জেনে এরপরে প্রয়োগ করাটা উচিত।
♦ আপনার পশুদের যদি সঠিক সময়ে এই কৃমিনাশক মেডিসিন প্রয়োগ না করেন, আর যদি আপনার প্রচুর শরীরে অতিরিক্ত মাত্রায় কৃমিগুলো থেকে যায় তা শরীরে বিভিন্ন রকম সমস্যা সৃষ্টি করে। ধরে নিন ছাগল গরুর বাচ্চা দেওয়ার পর তার শরীরের যদি অতিরিক্ত মাত্রায় কৃমি থাকে, প্রথম তারা খাওয়ার রুচি কমে যাবে, দ্বিতীয় হচ্ছে দুধ কমে যাবে, বাচ্চা দেওয়ার পর শরীরের যে একটা ঘাটতি চলে আসে সে ঘাতটি সহজে রিকভার করবে না। আর যার কারণে কিন্তু শরীর হয়ে যাবে দুর্বল, শরীরের ইমিউনিটি গুলো কমে যাবে, আর তখনই যে কোন রোগে আক্রান্ত হয়ে যেতে পারে। বিশেষ করে এনিমিয়া বা রক্ত অল্পতা রোগে আক্রান্ত হওয়ার সবচেয়ে বেশি সম্ভাবনা থাকে।
♦ কৃমি প্রধান খাদ্য হচ্ছে পশুদের শরীরের রক্ত, আর খাদ্য হিসেবে এই পশুদের শরীরের রক্ত বেছে নেয় যার ফলে পশুদের শরীরের রক্ত খুব তাড়াতাড়ি কমে যায় এবং সেখান থেকেই এনিমিয়া বা রক্ত রোগের সৃষ্টি হয়। এই সমস্ত সমস্যার থেকে আপনাদের পশুকে বাঁচানোর জন্য তাদের কৃমিনাশক ওষুধ দেওয়া খুবই জরুরী।
♦ এখানে আরেকটি খুব গুরুত্বপূর্ণ জিনিস আপনাদের কিন্তু মনে রাখতে হবে আমাদের পশু পরজীবিতা আক্রান্ত হয়েছে। তাকে পরজীবী মুক্ত করার জন্য আমাদের বিষ প্রয়োগ করতে হবে। মনে রাখবেন যে কৃমির মেডিসিন গুলো আমরা প্রয়োগ করেছি সেগুলো এক প্রকারের বিষ আর বিষ মানেই যে কোন প্রাণীর শরীরে ক্ষতিকারক। কিন্তু এটা মেডিসিন আকারে তৈরি করা হয়েছে যার কারণে সঠিক প্রয়োগ বিধি জানতে হবে যদি আপনারা এর সঠিক প্রয়োগ বিধি মেনে এটি প্রয়োগ করেন তাহলে তার সাইডএফেক্ট খুবই কম হবে।
♦ আর যদি কৃমিনাশক ওষুধের সঠিক প্রয়োগ বিধি না জেনে প্রয়োগ করেন সবার প্রথমে একটি মা ছাগল বা গরুর লিভারের উপর এফেক্ট করবে। খাওয়ার রুচি কমে যাবে। পাতলা পায়খানা হয়ে যেতে পারে এবং ছাগল বা গরুর দুধ কমে যাবে শরীর দুর্বল হয়ে যাবে।
♦ প্রিয় দর্শক এই বিষয়টি আপনাদেরকে অবশ্যই ক্লিয়ার করে বোঝাতে পারলাম যে, কৃমিনাশক প্রয়োগ করা ভালো সঠিক প্রয়োগ বিধি না মেনে যদি প্রয়োগ করেন এর থেকে ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।
মা পশুকে কৃমিনাশক প্রয়োগের সঠিক সময় সঠিক নিয়মঃ
♦ একটি মা পশুকে কৃমিনাশক প্রয়োগের সঠিক সময় হচ্ছে বাচ্চা দেওয়ার 14 দিন পর থেকে 21 দিনের মধ্যেই প্রয়োগ করতে হবে। যদি বলেন কেন? এ নিয়ে যদি বিস্তারিত আলোচনা করতে চাই ভিডিও অনেক বড় লম্বা হবে যার জন্য বিস্তারিত আলোচনা করছে না।
♦ মনে রাখবেন পশুদেরকে সবসময় কৃমিনাশক খালি পেটে দেওয়া উচিত। খালি পেটে দিলে সবচেয়ে বেশি কার্যকরী হয়। এর জন্য আগের দিন রাত্রে বেলা পশুদেরকে গুড় খাওয়াবেন, পরের দিন সকাল বেলায় খালি পেটে কৃমি নাশক ওষুধ দিয়ে দেবেন। কৃমিনাশক মেডিসিন প্রয়োগ করার পর এক থেকে দুই ঘণ্টার মধ্যে কোনরকম জলখাবার পশুকে দেওয়া যাবে না। ঠান্ডার দিন দেখে কৃমিনাশক প্রয়োগ করা উচিত। যদি গরুর ক্ষেত্রে হয় কৃমিনাশক প্রয়োগের দু-তিন ঘণ্টা পর স্নান করানো সবচেয়ে ভালো।
♦ কৃমিনাশক ঔষধ প্রয়োগের পরের দিন থেকে তাকে লিভার টনিক প্রয়োগ করতে হবে। একটা গরুর জন্য প্রায় 1 লিটার এবং একটা ছাগলের জন্য হাফ লিটার। যে লেভার টনিক ব্যবহার করবেন সেই লিভার টনিক এর পরিমাণ জেনে ব্যবহার করবেন। বেশি দিলে যে বেশি কাজ হবে এটা কখনোই ভাববেন না। কৃমিনাশক দেওয়ার পর লিভার টনিক 10 থেকে 15 দিন দেওয়া উচিত।
♦ কৃমিনাশক দেওয়ার তিনদিন পর থেকে তাকে ক্যালসিয়াম দিতে হবে, ক্যালসিয়ামের পরিমাণ জেনেই প্রয়োগ করবেন বেশি দিলে বেশি কাজ করবে ভাববেন না। লিভার টনিক দেওয়ার তারপর থেকে কিন্তু পাতলা পায়খানা হতে পারে এতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই।
এবার কি নিয়মে কোন মেডিসিন প্রয়োগ করবেন?
♦ বাচ্চা দেওয়ার পর পশুকে ফেনবেন্দাজল গ্রুপে বা এর সঙ্গে অন্যকোন কম্পোজিশনের যদি কম্বিনেশন থাকে সেই সমস্ত মেডিসিন দেওয়ার চেষ্টা করবেন তাতে পশুদের ক্ষতিটা একটু কম হবে। বর্তমান সময়ে কিছু হার্বাল কৃমিনাশক ওষুধ মার্কেটে পাওয়া যায় সেগুলো ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়াও আমি পরবর্তীতে পশুদের কৃমিনাশের ঘরোয়া পদ্ধতি এবং হোমিওপ্যাথিক মেডিসিন নিয়ে আলোচনা করবো।
প্রিয় দর্শক কেমন লাগলো আমাদের আজকের এই আলোচনাটি জানাবেন, সঙ্গে আমাদের ফেসবুক পেইজে একটা লাইক করতে ভুলবেন না। সম্পূর্ণ পোষ্টটি পড়ার পর পোষ্টটিতে দেওয়া তথ্য যদি ভাল লাগে বাকি খামারি বন্ধুদেরকে পোষ্টটি শেয়ার করে দেখার সুযোগ করে দিন। আর যে সকল নতুন দর্শক এখনো পর্যন্ত আমাদের ফেইসবুক পেইজে লাইক করেননি, যদি পশুদের বিভিন্ন রকম রোগ তাদের চিকিৎসা এবং মেডিসিন সম্পর্কে জানতে চান আমাদের ফেইসবুক পেইজে লাইক করে রাখবেন। যদি আমাদের বাকি পোষ্টগুলি দেখতে চান আমাদের ওয়েবসাইটে গিয়ে গিয়ে দেখে নিতে পারেন। আজকের আলোচনা এই পর্যন্তই। সকলে ভাল থাকুন খামারিয়ান এর সাথেই থাকুন। মূল আলোচনাটি সংগ্রহিত।