গৃহপালিত পশুর খাদ্যে বা গরুর ভিটামিন ও মিনারেল প্রয়ােজন হয় সেগুলো হল- ভিটামিন এ, ডি, ই, কে ও বি১২ ফসফরাস, ক্যালসিয়াম, সোডিয়াম,পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ক্লোরিন। ভিটামিনের অভাবে বিভিন্ন ধরনের রোগ হয়ে থাকে। ভিটামিন বি-কমপেক্স এবং ভিটামিন সি: রোমন্থনকারী পশুর খাদ্যনালিতে অনুজীবের সংশ্লেষে তৈরী হয়। তাই গবাদিপশুতে এসব ভিটামিনের অভাবজনিত লক্ষণ সাধারণত দেখা যায় না।
ভিটামিন এ
◈ সবুজ কাঁচা ঘাস,সবুজ লতা-পাত এবং হলুদ রং এর শাকসবজিতে প্রচুর কেরোটিন থাকে যা পশুর দেহে ভিটামিন এ তে রূপান্তরিতহয়।
◈ যে সব পশু মাঠে চরে প্রচুর কাঁচা লতা-পাতা খায় এরা প্রচুর ভিটামিন এ পায়। যে সব পশুকে ঘরে বেঁধে শুধু খড় বিচালি এবং দানাদার খাদ্য খাওয়ানো হয় সে সব পশুতে ভিটামিন এ এর অভাব দেখা দেয়।
◈ পশুর যকৃত এবং সামুদ্রিক মাছের যকৃতে প্রচুর ভিটামিন এ জমা থাকে। যকৃতের যে কোন রোগে ভিটামিন এ এর অভাব দেখা দেয়।
◈ পশুর দেহে ভিটামিন এ এর অভাব হলে পশু রাত্রিতে দেখতে পায় না বা অল্প আলোতেও দেখতে পায় না। একে রাতকানা রোগ বলা হয়।
◈ পশুর দেহে অধিক পরিমাণে ভিটামিন এ এর অভাব হলে পশুর হাঁটাচলায় অসুবিধা হয়। অনেক ক্ষেত্রে মাংসপেশির খিচুনিও দেখা যায়।
◈ ভিটামিন এ এর অভাবে পশুর ত্বক খসখসে ও লোম রুক্ষ হয়।
◈ আক্রান্ত পশুর চোখ ফুলে যায় চোখে সাদা পিচুটি জমা হয়। সময়মত চিকিৎসা না করালে পশ অন্ধ হয়ে যায়।
◈ ভিটামিন এ এর অভাব দূর করতে হলে পশুকে প্রচুর সবুজ কাচা ঘাস খাওয়াতে হবে। পশুর দানাদার খাদ্যে কৃত্রিম ভিটামিন এ সমৃদ্ধ মিশ্রণ মিশিয়ে নিয়মিত পশুকে খাওয়াতে হবে।
◈ বাছুরকে জন্মের সাথে সাথে গাভীর প্রথম দুধ বা শাল দুধ খাওয়াতে হবে।
ভিটামিন ডি
◈ সাধারণত পশুর জন্য দুধরনের ভিটামিন ডি গুরুত্বপূর্ণ। যেমন-ডি ২ (আরগোক্যালসিফেরোল) এবং ডি ৩ (কোলিক্যালসিফেরোল)। দেহে ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাসের অভাব হলে বা এই দুইটি পদার্থের অসমতা হলে ভিটামিন ডি এর অভাব হয়।
◈ পশুর ত্বকে সূর্যরশ্মি পড়ে রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় ভিটামিন ডি তৈরী হয় যা চামড়ার মাধমে পশুর দেহে শোষিত হয়।
◈ যেসব পশু মাঠে ঘাটে চরে বেড়ায় এবং প্রচুর সূর্যরশ্মি পায় তাদের দেহে সাধারণত ভিটামিন ডি এর অভাব হয় না। তবে ঘরে বেঁধে পালা পশুতে ভিটামিন ডি এর অভাব দেখা দেয়।
◈ ভিটামিডি এর অভাবে বাছুরের হাড় এবং দাঁতের স্বাভাবিক গঠন হয় না। হাড়ে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস শোষণ ঠিকমতো হয় না ফলে বাছুরের হাড় নরম এবং বাঁকা হয়। এ অবস্থাকে রিকেট বলা হয়।
◈ বয়স্ক পশুতে ভিটামিন্ডডি এর অভাব হলে হাড় নরম ও ভঙ্গুর হয় যাকে অসটিওমেলেসিয়া বা ভঙ্গুর অস্থি বলা হয়।
◈ পশুর ক্ষুধাহীনতা দেকা দেয়। ফলে পশু না খেয়ে দুর্বল হয়ে যায়। কাজ করার ক্ষমতা থাকে না।
◈ দুধ উৎপাদন কমে যায়। পশুর প্রজননক্ষমতা কমে যায়। পশুর ত্বকে নিয়মিত সূর্যরশ্মি লাগলে ভিটামিডি এর অভাব হয় না।
◈ পশুর দানাদার খাদ্যের সাথে নিয়মিত কৃত্রিম ভিটামিন্ডডি যুক্ত মিশ্রণ মিশিয়ে খাওয়ালে পশুর ভিটামিড়ি এর অভাব হয় না।
ভিটামিন ই
◈ টাটকা সবুজ ঘাস, লতা-পাতা এবং অংকরোদগমিত শস্যদানা, অঙ্কুরজাত তেলে প্রচুর ভিটামিন ই পাওয়া যায়।
◈ ভিটামিন ই এর অভাবে বাছুরের মাংসপেশির বৈকল্যতা দেখা দেয়।
◈ হৃৎপিন্ডের মাংসপেশি আক্রান্ত হয়ে পশু হঠাৎ মারা যায়।
◈ অস্থির মাংসপেশির সংকোচন, অস্বাভাবিক চলাফেরা এবং পেশি গঠনে অসামঞ্জস্যতা দেখা যায়।
◈ ভিটামিন ই এর অভাবে পশুর প্রজনন ক্ষমতা কমে যায়। এমনকি পশুর বন্ধ্যাত্ব দেখা দিতে পারে।
◈ পশুকে নিয়মিত সুবজ কাচা ঘাস, লতা-পাতা, অঙ্কুরোদগমিত শস্যদানা খাওয়ালে এই ভিটামিনের অভাব হবে।
◈ গাভীর দানাদার খাদ্যে কৃত্রিম ভিটামিন ই মিশ্রণ মিশিয়ে খাওয়ালে গাভী এবং গাভীর দুধের মাধ্যমে বাছুর প্রচুর ভিটামিন ই পাবে।
ভিটামিন কে
◈ এটি পশুর দেহে রক্তক্ষরণ বন্ধ করে বিধায় এই ভিটামিনকে জমাট বাঁধার উপাদান বা ইংরেজিতে Coagulation factor বলে।
◈ সবুজ কাঁচা ঘাসে এই ভিটামিন পাওয়া যায়।
◈ গবাদিপশুর পরিপাকতন্ত্রে ব্যাকটেরিয়া জীবাণু সংশেষের ফলে পশুর প্রয়ােজনীয় প্রচুর ভিটামিন উৎপাদিত হয়। এই জন্য গবাদিপশুতে ভিটামিন কে এর অভাবজনিত লক্ষণ খুব একটা দেখা যায় না।
◈ তবে এই ভিটামিনের অভাবে হলে পশুর রক্তক্ষরণ বন্ধে ব্যাঘাত ঘটে। এইরূপ অবস্থায় পশুকে ভিটামিন কে দ্বারা চিকিৎসা করাতে হয়। পশুকে প্রচুর সবুজ কাঁচা ঘাস খাওয়ালে ভিটামিন কে এর অভাব হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
ভিটামিন বি
◈ এই ভিটামিন পশুর আমিষ উপাদান বা Animal Protein Factor (APE) নামে প্রথম আবিস্কৃত হয়। পরে এর নাম ভিটামিন বি, দেওয়া হয়।
◈ এই ভিটামিনের অভাবজনিত লক্ষণ বয়স্ক পশুতে বিশেষভাবে পরিলক্ষিত হয়। তবে অল্প বয়স্ক পশুর শরীর ভিটামিনের অভাবে বাড়ে না।
◈ পশুর রক্তশূণ্যতা দেখা যায়।
◈ শরীরিক বৃদ্ধি দারুণভাবে কমে যায়।
◈ ভিটামিন বি পশুর লিভারে ক্ষুদ্র অণুজীব দ্বারা এই ভিটামিন তৈরী হয়। পশুর সুষম খাদ্যে দিলে পশুতে এই ভিটামিনের অভাব হয় না।
◈ পশুর দানাদার খাদ্যের সাথে নিয়মিত কৃত্রিম ভিটামিন মিশ্রণ মিশিয়ে খাওয়ালে ভিটামিন বি১২ এর অভাব হয় না।
খনিজ পদার্থের অভাবজনিত রোগ
ফসফরাস
◈ ফসফরাসের অভাব সাধারণত দুগ্ধবতী গাভীতে বেশি হয়ে থাকে। অধিক দুগ্ধবতী গাভীর শরীরে যে পরিমাণ ফসফরাস পরিশোধিত হয় তার চেয়ে বেশি দুধের সাথে নিঃসৃত হয়ে যায়। ফলে পশুতে ফসফরাসের অভাবে দেখা দেয়।
◈ ফসফরাসের অভাবের প্রথম লক্ষণ পশুর দেহ না বাড়া, দুধ কমে যাওয়া, অনুর্বরতার ফলে গর্ভধারণ রা করা, অস্বাভাবিক ক্ষুধার ফলে হাড় শক্ত বস্তু কামড়ানো বা চিবানো ফসফরাসের অভাবে বাছুর দুর্বল হয়ে জন্ম নেয়।
◈ বাছুর বাড়ে না, হাড় বাঁকিয়ে রিকেটস রোগ হয়। বড় পশুতে অস্থিকোমলতা অর্থাৎ অসটিওমেলেসিয়া রোগ হয়।
ক্যালসিয়াম
◈ ক্যালসিয়ামের অভাবজনিত লক্ষণ সব ধরনের পশুতে দেখা যায়। ক্যালসিয়ামের অভাবে পশুর হাড় বাড়ে না।
◈ বাছুরের রিকেটস এবং বয়স্ক পশুতে অষ্টিওম্যালেসিয়া রোগ হয়।
◈ গাভীর দুধ কমে যায়। অনুর্বরতা দেখা দেয়।
◈ তীব্র ক্যালসিয়ামের অভাবে গাভীর দুধ-জুর রোগ হয়।
সোডিয়াম,পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম,ক্লোরিন
◈ এ সকল সূক্ষ্ম মৌল পদার্থের অভাবে পশুর সাধারণ দুর্বলতা,অনুর্বরতা,দুধ কমে যাওয়া,রুক্ষ ত্বক, রক্তশূণ্যতা,হাড়ের কোমলতা, দৈহিক অবস্থার অবনতি, কর্মক্ষমতা কমে যাওয়া প্রভৃতি লক্ষণ দেখা যায়।
◈ সাধারণত গবাদিপশুকে সুষম খাদ্য বিশেষ করে প্রয়ােজনমতো সবু কাঁচা ঘাস খাওয়ালে খনিজ পদার্থের অভাব হয় না।
◈ তাছাড়া পশুর দানাদার খাদ্যে হাড়ের গুড়া ও খনিজ মিশ্রণ মিশিয়ে খাওয়ালে পশুর দেহে খনিজ পদার্থের অভাব হয় না।
Prepared by: Dr. M Azizul Hoque Chowdhury
thank you very much. I learn many things about nutrition food of Cow.Thank you.