আজকে আমরা আলোচনা করবঃ
গরুর মাংসের পুষ্টিগুণঃ
প্রাণীর শরীরের যে অংশ আহার্য হিসাবে জবাই করার পর গ্রহণ করা হয় সাধারণত: তাকেই মাংস বলে। মাংস হলো একটি প্রাণীর ঐচ্ছিক পেশীর পরিষ্কার, সুষ্ঠ এবং ভোজ্য অংশ। মাংস মানুষের খাদ্যের অত্যন্ত মূল্যবান অংশ। কারণঃ
- ইহা প্রাণীজ আমিষের একটি উত্তম উৎস যা জীবন। ধারনের জন্য প্রয়ােজনীয় অ্যামাইনো এসিড দ্বারা গঠিত।
- গরুর মাংসের পুষ্টিগুণসমূহ দেহের জন্য প্রয়ােজনীয় তাপ ও শক্তি উৎপাদন করে থাকে।
- মাংস সকল প্রকার ভিটামিনের একটি উত্তম উৎস।
- ইহা সহজে পরিপাচ্য ও গরুর মাংসের পুষ্টিগুণ অনেক বেশি।
১০০ গ্রাম গরুর মাংসের পুষ্টিগুণঃ
উপাদান | পরিমান |
পানি | ৭২-৭৩ % |
চর্বি | ২.৮-৩.৮% |
আমিষ | ২২-২৩% |
বিপাকীয় শক্তি | ৪৯৮ মে.জুল |
কোলেস্টেরল | ৫০ মিলিগ্রাম |
ক্যালসিয়াম | ৪.৫ মিলিগ্রাম |
ফসফসরাস | ২১৫ মিলিগ্রাম |
পটাশিয়াম | ৩৬৩ মিলিগ্রাম |
সোডিয়াম | ৫১ মিলিগ্রাম |
● শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় ৯টি পুষ্টি উপাদান আছে গরুর মাংসে। এগুলো হল প্রোটিন, জিঙ্ক, ভিটামিন বি টুয়েলভ, সেলেনিয়াম, ফসফরাস, নায়াসিন, ভিটামিন বি৬, আয়রন এবং রিবোফ্লাভিন। প্রোটিন শরীরের পেশি গঠনে ভূমিকা রাখে। জিঙ্ক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। ফসফরাস দাঁত ও হাড়ের শক্তি বাড়ায়। গরুর মাংসের পুষ্টিগুণ হিসেবে আয়রন শরীরের পেশিতে অক্সিজেন প্রবাহে সহায়তা করে। ‘ভিটামিন বি টুয়েলভ’ খাদ্য থেকে শক্তি যোগান দেয়।
● আমাদের শরীরে গড়ে ১৮ মি.গ্রা জিংক প্রয়োজন হয়ে। অনেকেই আছেন জিংকের অভাবে ভুগেন বিশেষত কিশোর-কিশোরিরা। গরুর মাংসে থাকা প্রায় ২৫ শতাংশ জিংক এই স্বল্পতা দূর করে।গরুর মাংসে থাকা জিংক শরীরের কোষ রক্ষনাবেক্ষন করে। তাছাড়া সেলেনিয়ামের মতো গুরুত্বপূর্ণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এই উপাদানটি গরুর মাংসে অধিক পরিমাণে পাওয়া যায়।
● শিশুদের জন্য গরুর মাংসের পুষ্টিগুণ শরীর সমর্থ ও শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে গরুর মাংসের তুলনা নেই। ৩ আউন্স গরুর মাংসে আছে ৯-১৩ বছর বয়সি শিশুর দৈনিক চাহিদার ১২৫% ভিটামিন বি১২, ৯০% প্রোটিন, ৭৪% জিংক, ৪২% সেলেনিয়াম, ৩২% ভিটামিন বি৬, ৩২% আয়রন, ২৯% নায়াসিন, ২৩% রিবোফ্লাভিন এবং ১৬% ফসফরাস। শুধু শারীরিক বর্ধন নয় বুদ্ধি বৃত্তিক গঠন এবং রক্ত বর্ধনেও এটি ভূমিকা রাখে।
● তিন আউন্স ‘সিরলোইন’ ভাগের মাংসে কোলেস্টেরলের মাত্রা ৪৭ মিলিগ্রাম এবং ৩ আউন্স ‘রাউন্ড’ অঞ্চলের মাংসে কোলেস্টেরল এর মাত্রা ৫৩ মিলিগ্রাম। একজন সুস্থ মানুষের কোলেস্টেরল এর দৈনিক নিরাপদ মাত্রা হল ৩০০ মিলিগ্রাম। হৃদরোগীর জন্য ২০০ মিলিগ্রাম। সুতরাং ৩ আউন্স গরুর মাংসে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিরাপদ সীমার অনেক নিচে।
সুতরাং বলা যায় গরুর মাংসের পুষ্টিগুণ অনেক বেশি। তবে বেশি খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য কখনোই ভাল নয় এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। অবশ্যই রান্না এবং খাওয়ার সময় সুস্বাস্থ্যের কথা মনে রাখতে হবে। তবে দেহের সকল পুষ্টির যোগান দেয়া সম্ভব।
উপসংহারঃ গরুর মাংস প্রোটিনের জন্য একটি বিরাট উৎস। প্রথম শ্রেনীর উন্নতমানের প্রোটিন পাওয়া যায় গরুর মাংসের পুষ্টিগুণ থেকে। যা সুস্থ মাংসপেশি গঠন, মজবুত এবং শক্তিশালী করে থাকে। যা বর্ধনশীল বাচ্চা এবং গরুর মাংসের পুষ্টিগুণগুলো টিনেজদের খুবই দরকার। এছাড়াও রয়েছে অ্যামাইনো এসিড যা আমাদের ত্বকে বিশেষ ভাবে সুস্থ রাখে। গরুর মাংসে আছে Conjugated Linoleic Acid (CLA) যা ক্যান্সার, ডায়াবেটিস প্রতিরোধ এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে যা গবেষণায় প্রমানিত হয়েছ।
গরুর দুধের উপাদান সমূহঃ
এক বা একাধিক স্বাস্থ্যবতী গাভী বাচ্চা দেওয়ার ১৫ দিন পূর্বে এবং ৫ দিন পর মোট ২০ দিন ব্যতীত অন্য সময় গাভীর ওলান গ্রন্থির পূর্ণ শারীরিক দোহনে কলস্ট্রামমুক্ত এবং ৩.৫ % ফ্যাট বা চর্বি এবং ৮.৫ % চর্বিবিহীন কঠিন পদার্থ দ্বারা গঠিত যে নিসৃত পদার্থ পাওয়া যায় তাকে দুধ বলা হয়ে থাকে। প্রতিটি নবজাতকের প্রধান খাদ্য দুধ। গাভীর দুধের উপাদান সমূহ এর মধ্যে নবজাতকের জন্য প্রয়ােজনীয় সব উপাদানই থাকে। এছাড়া দুধ মানুষের জন্যে একটি আদর্শ খাদ্য হিসেবে সুপরিচিত।
গাভীর দুধের উপাদান সমূহ হলোঃ ১) পানি, ২) চর্বি বা ফ্যাট, ৩) প্রােটিন, ৪) ল্যাকটোজ, ৫) খনিজ পদার্থ, এবং ৬) ভিটামিন।
দুধই একমাত্র খাদ্য যাহার সমস্ত অংশই খাদ্য হিসাবে গ্রহণীয়। নিম্নলিখিত কারণে দুধকে গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য হিসাবে বিবেচনা করা হয়ঃ
- দুধ সুস্বাদু খাদ্য।
- ইহা সহজ পাচ্য।
- দুধ শিশুর জন্য ভারসাম্য রক্ষাকারী খাদ্য।
- দুধ বয়স্কদের জন্য একটি অপূর্ব খাদ্য।
- দুধের উপাদান সমূহ ভিটামিন ও খনিজ সমৃদ্ধ।
- দুধ দিয়ে নানাবিদ মুখরোচক ও পুষ্টিকর খাদ্য তৈরী করা হয় যেমন: ঘি, দই, মিষ্টি, পনির, পুডিং, লাচ্ছি ইত্যাদি।
দুধের উপাদান সমূহঃ
উপাদান | পরিমান |
পানি | ৮৭.৩% |
চর্বি | ৩.৭% |
ল্যাকটোজ | ৪.৫% |
আমিষ | ৩.৮% |
খনিজ | ০.৭% |
খামার পদ্ধতিতে লাইভস্টকের অবদানঃ
নিম্নোক্ত চিত্রে মাধ্যমে খামার পদ্ধতিতে প্রাণীসম্পদের অবদানকে তুলে ধরা হয়েছে।