প্রিয় পাঠক বৃন্দ আবারও একটি ”গরুর রোগ প্রশ্ন উত্তর” পর্বে আপনাদের স্বাগতম। আপনারা অনেকেই গরুর রোগ বিষয়ক প্রায়ই অনেক ধরণের প্রশ্ন করেছেন। তাই আজকে আপনাদের সামনে উক্ত প্রশ্নগুলোর উত্তর তুলে ধরা হলো।। প্রশ্নগুলো হলো-
গরুর সমস্যা ও সমাধান গুলো কি? গরুর সকল রোগ সমূহ কি? গরুর কি কি রোগ হয়? গরুর রোগের লক্ষণ কি কি প্রকাশ পায়? গরুর রোগের নাম কি কি? গরুর রোগ কি কি? গরুর রোগের লক্ষণ কি? গরুর রোগ ও তার প্রতিকার কি? গরুর রোগ ও প্রতিকার কিভাবে করতে হয়? গরুর কি কি রোগ হয়? গরুর বিভিন্ন রোগ এর নাম কি? গরু ছাগলের রোগ কি কি হয়? গরুর কয়েকটি রোগের নাম কি? গরুর বিভিন্ন প্রকার রোগ কি কি? গরুর বিভিন্ন রোগ সমূহ কি?
উপরোক্ত প্রশ্ন গুলো যেহেতু প্রায় একই তাই উক্ত সকল প্রশ্নে উত্তর একটি পর্বেই দেওয়া হলো।
♦ গরু খামার, ছাগল খামার, ভেড়া খামার, মহিষ খামার সহ যেকোন গবাদি পশু পালন এর সাথে সম্পকৃত সকল ব্যক্তিদের উদ্দেশ্যে আজকের এই পোষ্ট।
♦ আপনি যদি অভিঙ্গ খামারি হন বা নতুন খামারি বা খামার করার আগ্রহ করছেন এমন ব্যক্তি হয়ে থাকেন তবে এই আলোচনাটি অবশ্যই আপনার জন্য অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ।
♦ এই পোষ্টটি আপনাকে আপনার খামারের পশু বিভিন্ন রোগের বিস্তারের কারণ, লক্ষণ এবং প্রতিকার সমূহ জানতে পারেন। যদি আমি আপনি অভিঙ্গ খামারি হন তবুও আপনাকে এটি অনেক নতুন নতুন তথ্য দিবে। যাবে আপনার খামারকে বিভিন্ন রোগ ও ক্ষতি থেকে বাচিয়ে দিতে পারে।
♦ তাই আজকের এই আলোচনাটি শেষ অবধি মনোযোগ সহকারে পড়বেন, যদিও ১৫-২০মিনিট সময় ব্যায়ও হয়, এই ১৫-২০ মিনিট আপনার অনেক উপকারে আসবে এবং আপনাকে একজন দক্ষ খামারি হিসেবে গড়ে তুলবে ইংশাআল্লাহ।
চলুন শুরু করা যাক-
১. ক্ষুরা রোগ (Foot-and-mouth/hoof-and-mouth disease/FMD)
এ রোগ ভাইরাস জনিত একটি মারাত্মক সংক্রামক রোগ। গ্রামে কোথাও কোথাও এ রোগকে ক্ষুরাচল, চপচপিয়া, বাতা বা বাতনা রোগ বলা হয়ে থাকে। গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া ইত্যাদি দ্বিক্ষুর বিশিষ্ট প্রাণি এ রোগে আক্রান্ত হয়।
রোগ বিস্তার :
(১) রোগাক্রান্ত প্রাণি থেকে বাতাসের মাধ্যমে তাড়াতাড়ি রোগ ছড়িয়ে পড়ে।
(২) ক্ষুরা রোগ জীবাণু দুষিত খাদ্য ও পানির মাধ্যমেও ছড়ায়।
রোগের লক্ষণ :
(১) শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়।
(২) মুখে, জিহ্বায় ও ক্ষুরায় ফোস্কা পড়ে। পরে ফোস্কা ফেটে ঘা হয়।
(৩) মুখে ঘা হওয়ায় মুখ দিয়ে লালা ঝরে এবং এ অবস্থ্যায় প্রাণি ক্ষেতে পারে না।
(৪) পায়ের ক্ষুরায় ঘা হওয়ায় তীব্র ব্যথা হয় ও হাঁটতে/কাজ করতে পারে না এবং দুর্বল হয়ে যায়। ∙ দুগ্ধবতী গাভীর দুধ কমে যায়।
(৫) এ রোগে বাছুরের মৃত্যুর হার বেশি।
রোগের প্রতিকার :
(১) অসুস্থ প্রাণিকে সুস্থ প্রাণী থেকে আলাদা রাখা।
(২) রোগ হওয়ার আগেই সুস্থ সকল প্রাণিদের ক্ষুরা রোগের টিকা দেয়া।
(৩) প্রতিদিন গোয়াল ঘর জীবাণুনাশক যেমন ডেটল বা ফিনাইল দ্বারা ভালভাবে ধুয়ে দেওয়া।
(৪) প্রাণিকে নরম খাদ্য সরবরাহ করা
(৫) প্রাণির ক্ষতস্থানের চিকিৎসা।
২. তড়কা রোগ (Anthrax)
এ রোগ ব্যাকটেরিয়াজনিত একটি অতি তীব্র ও মারাত্মক সংক্রামক রোগ। প্রাণির দেহে সাধারণত খাবারের সাথে এ রোগ প্রবেশ করে। মাটিতে এ রোগের জীবাণু বহু বছর বেঁচে থাকে।
রোগ বিস্তার :
(১) সাধারণত: বর্ষাকালের প্রথম দিকে এ রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে।
(২) স্যাঁতস্যাঁতে জমির ঘাস খাওয়ালে এই রোগ হয়, কেননা সেখানে এ রোগের জীবানু থাকার সম্ভাবনা থাকে।
(৩) বৃষ্টি ও বন্যার পানির সাহায্যে এই রোগ ছড়ায়, তাই ভিজে যাওয়া খড় খাওয়ালে এই রোগ হতে পারে।
(৪) তড়কায় আক্রান্ত মৃত প্রাণি কুকুর ও শৃগাল খেয়ে একস্থ্যান থেকে অন্যস্থ্যানে এই রোগ ছড়ায়।
(৫) মৃত পশুর চামড়া থেকেও এই রোগ ছড়ায়।
(৬) তড়কা রোগে আক্রান্ত প্রাণির মৃতদেহ যে মাঠে রাখা হয়, তার চতুর্দিকের ঘাস খেলেও এই রোগ হতে পারে।
(৭) তড়কা রোগের জীবাণু দ্বারা দুষিত পুকুর, নালা ও ডোবার পানি পান করলেও এই রোগ হতে পারে।
রোগের লক্ষণ :
(১) এর রোগ অতি তীব্র প্রকৃতির হলে প্রাণী দ্রুত নিঃশ্বাস নেয় ও কৃষক/খামারী কিছু বুঝার আগেই অসুস্থ প্রাণির দেহ মাটিতে ঢলে পড়ে এবং খিচুনি দিয়ে কয়েক মিনিটের মধ্যে মারা যায়।
(২) তীব্র প্রকৃতির হলে প্রাণীর দেহের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। জ্বর হবে ১০৪ -১০৭ সেন্টিগ্রেড। এ সময়ে প্রাণির শরীরের লোম খাড়া হয়ে যায় এবং বিভিন্ন মাংস পেশীর কম্পন শুরু হয়।
(৩) প্রণির চোখের পর্দা লাল হবে এবং দ্রুত নিঃশ্বাস নিতে থাবে (মিনিটে ৮০-৯০ বার)।
(৪) এক পর্যায়ে অল্প সময়ে প্রাণিটি মাটিতে পড়ে যাবে এবং দ্রুত চিকিৎসা না করলে মারা যাবে।
তড়কা রোগে মৃত প্রাণির লক্ষণ :
(১) মৃত প্রণির নাক, মুখ ও মল দ্বার দিয়ে আলকাতরার মত জমাটবিহীন রক্ত বাহির হবে। ∙ মৃত প্রাণির দেহ শক্ত হবে না।
(২) মৃত প্রণির পেট খুব দ্রুত ফুলে যাবে।
রোগের প্রতিকার :
(১) এ রোগের জীবাণু সহজে মরে না, তাই জীবাণুনাশক ব্যবহার করে মৃত প্রাণিকে মাটির নিচে পুঁতে ফেলতে হবে।
(২) কোন অবস্থ্যাতেই মৃত প্রাণি পানিতে ফেলা যাবে না এবং মুচিকে দেওয়া যাবে না।
(৩) আক্রান্ত প্রাণিকে আলাদা রাখতে হবে ও সুস্থ প্রাণিকে তড়কা রোগের প্রতিষেধক টিকা দিতে হবে। ∙ তড়কা রোগে আক্রান্ত এলাকায় এ রোগ ছাগল/ভেড়াতেও হতে পারে, তবে ছাগল/ভেড়ায় এ রোগের টিকা প্রদান করলে মারাত্মক সমস্যাও হতে পারে। কেননা এ টিকা প্রদান স্থ্যানে প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব হয়, তখন ছাগল/ভেড়া লাফালাফি শুরু করে দেয় এবং কখনও মারও যেতে পারে। তাই অতি প্রয়োজন হলে খুব সাবধানতা অবলম্বন করে ছাগল/ভেড়াকে এ রোগের টিকা প্রদান করতে হবে।
৩. বাদলা রোগ (Black Quarter/B.Q.)
এ রোগ ব্যাকটেরিয়া জনিত একটি মারাত্মক সংক্রামক রোগ। বাংলাদেশে এ রোগ বৃষ্টি বাদলের মৌসুমে বেশী হয় বলে এ রোগকে বাংলায় বাদলা রোগ বলা হয়। সাধারণত ৬ মাস থেকে ২ বৎসর বয়সের যে সমস্ত প্রণির স্বাস্থ্য ভাল, তাদের এ রোগ বেশী হতে দেখা যায়। এ রোগে মৃত্যুর হার বেশী হয়।
রোগ বিস্তার :
(১) সাধারণত: বর্ষাকালের প্রথম দিকে এ রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে।
(২) স্যাঁতস্যাঁতে জমির ঘাস খাওয়ালে এই রোগ হয়, কেননা সেখানে এ রোগের জীবাণু থাকার সম্ভাবনা থাকে।
(৩) বৃষ্টি ও বন্যার পানির সাহায্যে এই রোগ ছড়ায়, তাই পানিতে ডোবা ঘাস খাওয়ালে এ রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
(৪) বাদলা রোগের জীবাণু দ্বারা দুষিত পুকুর, নালা ও ডোবার পানি পান করলেও এই রোগ হতে পারে।
রোগের লক্ষণ :
(১) অতি তীব্র প্রকৃতির হলে প্রাণীর আকস্মিক মৃত্যু হতে পারে।
(২) তীব্র প্রকৃতির হলে ক্ষুধামন্দা দেখা দিবে।
(৩) জ্বর হবে এবং তা ১০৪ -১০৭ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড পর্যন্ত হতে পারে।
(৪) এই রোগে সাধারণত প্রাণির উড়ু, ঘাড়, কাঁধ ও কোমরের মাংশ আক্রান্ত হয়ে ফুলে উঠে।
(৫) আক্রান্ত ফুলা স্থ্যান কালচে দেখাবে এবং ফুলাস্থ্যান গরম ও বেদনাদায়ক হবে।
(৬) আক্রান্ত মাংস পেশীতে চাপ দিলে পচ্ পচ্ শব্দ হবে যা দ্বারা সহজেই বাদলা রোগ বুঝা যাবে।
(৭) প্রাণি হাঁটতে পারে না ও খুঁড়িয়ে হাঁটবে।
(৮) চিকিৎসায় বিলম্ব হলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ১৮-৭২ ঘন্টার মধ্যে পশু মারা যাবে।
রোগের প্রতিকার :
(১) আক্রান্ত প্রাণিকে আলাদা রাখতে হবে।
(২) মৃত প্রাণিকে মাটির নিচে পুঁতে রাখতে হবে।
(৩) স্যাঁতস্যাঁতে এলাকা চারণভূমি বা বাসস্থ্যানের জন্য ব্যবহার করা যাবে না।
(৪) পঁচা পুকুর, নালা এবং ডোবার পানি খাওয়ানো যাবে না।
(৫) পঁচা ঘাস এবং পানির নিচের ঘাস খাওয়ানো যাবে না।
(৬) বর্ষার ২ মাস পূর্বে ৬ মাস থেকে ২ বছরের সু¯’ সকল প্রাণিকে বাদলা রোগের প্রতিষেধক টিকা দিতে হবে।
৪. গলাফুলা রোগ (Hemorrhagic septicemia/HS)
এ রোগ ব্যাকটেরিয়া জনিত একটি মারাত্মক সংক্রামক রোগ। বাংলাদেশে প্রায় সকল ঋতুতে এই রোগ হয। তবে বর্ষাকলে যখন গো/মহিষকে দিয়ে বেশি কাজ করানো হয় তখন এ রোগ বেশি হয়। বর্ষার শুরু এবং শেষে এ রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি হয়। এ রোগ ডুবো অ লে বেশি হয় এবং মৃত্যুর হারও অনেক বেশী।
রোগ বিস্তার :
(১) সুস্থ প্রাণি আক্রান্ত প্রাণির মলমূত্র দিয়ে দূষিত খাদ্য ও পানি খেয়ে এ রোগে আক্রান্ত হয়।
(২) প্রাণির দেহে এই রোগের জীবাণু স্বাভাবিক অবস্থ্যাতেও বিদ্যমান থাকতে পারে। কোন কারণে যদি ঐ প্রাণিটি পীড়নের সম্মুখীন হয় যেমন, ঠান্ডা, অধিক গরম, ভ্রমনজনিত দুর্বলতা থাকে, তখন প্রাণির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে প্রাণিটি এই রোগের জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হয়।
(৩) দীর্ঘদিন পুষ্টিহীনতায় ভুগলে এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে।।
(৪) বর্ষার শুরুতে বৃষ্টিতে ভিজলে এবং ঠান্ডা লাগলে এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে।।
(৫) প্রাণিকে কষ্টের সাথে একজায়গা থেকে অন্য জায়গায় স্থ্যানান্তরিত করলে এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
(৬) গরম এবং স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশেও এই রোগ হতে পারে।
রোগের লক্ষণ :
(১) অতি তীব্র প্রকৃতির হলে, হঠাৎ করে প্রাণির জ্বর আসে, তাপমাত্রা বেড়ে যায় (জ্বর ১০৫ -১০৭ ঋ)। ∙ ক্ষুধামন্দা হয়, নাক, মুখ দিয়ে লালা ঝরে ও ২৪ ঘন্টার মধ্যে প্রাণী মার যায়।
(২) তীব্র প্রকৃতির হলে উপরের লক্ষণ ছাড়াও প্রথমে গলার নিচে, পরে চোয়াল, বুক, পেট ও কানের অংশ ফুলে যায়। এ অবস্থ্যাতে শ্বাস নিতে কষ্ট হয় এবং প্রণি গলা বাড়িয়ে মুখ দিয়ে শ্বাস নেয়।
(৩) গলা ও গলকম্বল ফুলে যাবে, ফুলা জায়গায় টিপ দিলে ব্যাথা পাবে এবং বসে যাবে। গরম ও শক্ত হবে।
(৪) শ্বাস নেয়ার সময় ঘাড় ঘাড় আওয়াজ হবে।
(৫) কখনও কখনও পাতলা পায়খানা হতে পারে।
রোগের প্রতিকার :
(১) আক্রান্ত প্রাণিকে আলাদা রাখতে হবে।
(২) মৃত প্রাণিকে মাটির নিচে পুঁতে রাখতে হবে।
(৩) স্যাঁতস্যাঁতে এলাকা চারণভূমি বা বাসস্থ্যানের জন্য ব্যবহার করা যাবে না।
(৪) সব সুস্থ প্রাণিকে সুস্থ অবস্থ্যায় নিয়মিত প্রতিষেধক টিকা দিতে হবে।
৫. গাভীর ওলান ফুলা রোগ বা ওলান প্রদাহ (Mastitis)
বিভিন্ন প্রকার ব্যাকটেরিয়া, ফাংগাস ও মাইকোপ্লাজমা দ্বারা এই রোগ হয়। গাভীর জন্য এ রোগ একটি মারাত্মক রোগ। সময়মত চিকিৎসা করা না হলে গাভীর ওলান নষ্ট হয়ে যাতে পারে।
রোগ বিস্তার :
(১) ওলান বা বাঁটে যে কোন প্রকার আঘাত বা ক্ষত থাকলে সেখান দিয়ে ব্যাকটেরিয়া সহজেই প্রবেশ করে এ রোগ সৃষ্টি করে।
(২) অপরিষ্কার-অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে, ময়লা, গোবর ইত্যাদির উপর গাভী শয়ন করলে।
(৩) বাচ্চা প্রসবের পর ওলানে ময়লা লাগলে এবং তা সময়মত পরিস্কার করা না হলে।
(৪) ঘাসের চটা ওলানে প্রবেশ করালে।
(৫) গোয়ালার অপরিষ্কার হাত ও বড় নখ দ্বারা গাভীর ওলানে ক্ষত হলে।
(৬) বাছুর ওলানে জোরে গুতো মারলে।
রোগের লক্ষণ :
(১) অতি তীব্র রোগের ক্ষেত্রে দুধের পরিবর্তন লক্ষণীয়, দুধ পাতলা ও কিছু জমাট বাঁধা হবে।
(২) দুধের রং পরিবর্তন হবে, দুধের সাথে রক্ত বের হবে।
(৩) ওলান ফুলে যাবে, গরম থাকবে এবং শক্ত হয়ে যাবে।
(৪) প্রাণির ওলানে ব্যাথা অনুভব করে, ফলে ওলানের মধ্যে হাত দিতে দেবে না।
(৫) দীর্ঘস্থ্যায়ী প্রকৃতির হলে দুধের পরিমাণ কমে যাবে ও ক্রমান্বয়ে দুধ ছানার মত ছাকা ছাকা হবে। ∙ ক্ষুধামন্দা, অবসাদভাব, জ্বর ইত্যাদি হবে।
(৬) গাভী হাঁটতে চাইবে না, ধীরে ধীরে হাঁটবে।
রোগের প্রতিকার :
(১) আক্রান্ত গাভীকে আলাদা করে চিকিৎসা করতে হবে।
(২) গাভীকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন জায়গায় রাখতে হবে।
(৩) ওলানে ঘাসের চটা প্রবেশ করান চলবে না।
(৪) ময়লা যেন ওলানে না লাগে সেদিকে প্রসবোত্তর খেয়াল রাখতে হবে।
(৫) গাভীকে খালি পেটে দুধ দোহন করাতে হবে, কেননা ঘাস পানি খেয়ে ভরা পেটে দুধ দোহন করা হলে ওলান ফুলা রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে,
(৬) দুধ দোহনের পর জীবানু নাশক ঔষধ পানির সহিত মিশিয়ে দুধের বাট পরিস্কার করলে ওলান ফুলা রোগ হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।
(৭) এ রোগ প্রতিরোধ করা খুব কঠিন, কারণ ওলানে কোন এন্টিবডি তৈরি হলে তা দুধের মাধ্যমে বের হয়ে যায়। ∙ তবে দুধ দোহনের পর জীবানু নাশক ঔষধ পানির সহিত মিশিয়ে দুধের বাট পরিস্কার করলে ওলান ফুলা রোগ হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।
৬. নাভীতে ঘাঁ রোগ (Neval ill)
এ রোগ ব্যাকটেরিয়া জনিত কারণে ঘটে। সময়মত চিকিৎসা করা না হলে বাছুরের সাস্থ্যহানী হবে যা পরবর্তীতে বাছুরের সাভাবিক বৃদ্ধিতে ব্যঘাত ঘটবে।
রোগ বিস্তার :
(১) বাচ্চা প্রসবের পর বাচ্চার নাভী জীবাণুনাশক ঔষধ দিয়ে না ধুলে, কাঁচা নাভীতে ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করলে। ∙ প্রণির ময়লাযুক্ত জায়গায় বাচ্চা শুলে।
(২) নাভী শুকাতে কয়েকদিন সময় লাগে, এ সময়ের মধ্যে নাভীতে মাছি বসলে।
(৩) অনেক সময় গাভী বাচ্চার নাভী চেটে ক্ষত করে ফেলে এবং সেখান থেকে এই রোগের সৃষ্টি হয়।
রোগের লক্ষণ :
(১) নাভীর চারদিকে লাল হয়ে যাবে।
(২) নাভীর চারদিকে ফুলে যাবে।
(৩) নাভীতে ব্যথা হবে এবং পুঁজ হবে।
(৪) অনেক সময় নাভীতে পোকা পড়ে।
(৫) বাছুর গাভীর দুধ খেতে চাবে না।
(৬) গায়ে জ্বর থাকবে।
রোগের প্রতিকার :
(১) বাচ্চা প্রসবের পর নাভী জীবাণুনাশক ঔষধ দিয়ে ধৌত করে দিতে হবে।
(২) গাভী যাতে নাভী না চাটতে পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
৭. পেটের গোলকৃমি রোগ
এসকারিয়া নামক এক প্রকার গোলকৃমি দ্বারা এ রোগের কারণ ঘটে। এ রোগের চিকিৎসা না করা হলে প্রাণির, বিশেষ করে বাছুরের স্বাস্থ্যহানীসহ মৃত্যুও ঘটেতে পারে।
রোগ বিস্তার :
(১) আক্রান্ত প্রাণির মল দিয়ে কৃমির ডিম বের হয়ে ঘাসকে দূষিত করে। সেই ঘাস খেলে এই রোগ হয়। ∙ আক্রান্ত গাভীর দুধ খেয়ে বাছুরের এই রোগ হয়।
(২) গাভীর জরায়ুতে ভ্রণের ভিতরেও এই রোগ সংক্রামিত হতে পারে।
রোগের লক্ষণ :
(১) আক্রান্ত প্রাণির ডায়রিয়া দেখা দেবে।
(২) অনেক সময় পায়খানা শক্ত হয়ে যাবে।
(৩) ক্ষুধামন্দা দেখা দেবে।
(৪) প্রাণি দিন দিন শুকিয়ে যাবে ও দুর্বল হয়ে যাবে।
(৫) বাছুরের পেট বড় হয়ে যাবে।
(৬) লোমের চাকচিক্য নষ্ট হয়ে যায়।
(৭) মহিষের বাচ্চার ক্ষেত্রে চোখের পর্দা লাল হয়।
(৮) বাড়ন্ত প্রাণির বৃদ্ধি কমে যায়। বয়স্ক প্রাণির উৎপাদন কমে যায় ও রক্ত শূণ্যতা দেখা যায়।
রোগ প্রতিরোধ :
(১) গবাদিপশুর গোবর যেখানে-সেখানে না ফেলে এক জায়গায় ফেলতে হবে।
(২) গোয়াল ঘর, আশপাশের জায়গা ও চারণভূমি পরিস্কার রাখা।
(৩) গোয়াল ঘরে নিয়মিত চুন ব্যবহার করা ও জলাবদ্ধ জমিতে প্রাণিকে চরাণো যাবে না।
৮. কলিজার পাতা কৃমি রোগ :
প্রাণির একটি মারাত্মক কৃমি রোগ। সাধারণত ছাগল, গরু, মহিষ ও ভেড়ার এ রোগ হয়ে থাকে।
রোগ বিস্তার :
(১) কলিজা কৃমির লার্ভা শামুকের স্যাঁতস্যাঁতে বা নিচু জলাভূমির ঘাসের পাতায় লেগে থাকে। এই ঘাস খেলে পশু কলিজা কৃমি দ্বারা আক্রান্ত হয়।
রোগের লক্ষণ :
(১) বদহজম এবং মাঝে মাঝে ডায়রিয়া দেখা দেবে।
(২) থুতনীর নিচে পানি জমে ফুলে যাবে, এ অবস্থ্যা হলে একে “বটল জ” বলে।
(৩) রক্তশূণ্যতা হবে, ফলে চোখের পর্দা সাদা হয়ে যাবে।
(৪) প্রাণিটি দিনে দিনে শুকিয়ে যাবে।
(৫) তীব্র আক্রমণের ক্ষেত্রে পশু হঠাৎ মারা যেতে পারে।
রোগ প্রতিরোধ :
(১) ডোবা, নালা ও বিলের ঘাস খাওয়ানো যাবে না। খাওয়াতে হলে রৌদ্রে একটু শুকিয়ে খাওয়াতে হবে। ∙ গবাদিপশুর গোবর এক জায়গায় জমা করে রাখতে হবে।
(২) মাঠের শামুক ধ্বংস করতে হবে।
৯. উকুন; আঁটুলি; মেঞ্জ
লক্ষণ :
(১) অল্প আক্রমণে তেমন লক্ষণ বোঝা যায় না। তবে মাঝারি প্রকৃতিতে দীর্ঘমেয়াদী চর্ম প্রদাহ হয়। চুলকানি, ক্ষুধামন্দা, দুর্বলতা, ওজন হ্রাস ও বাছুরের লোম পড়ে যায়।
(২) অ্যানিমিয়া, অস্বস্তি বোধ, খাদ্য গ্রহণ হ্রাস, দৈহিক ওজন হ্রাস ও দুধ উৎপাদন কমে যায়। চুলকানি, রক্ত জমাট বাঁধা দাগ দেখা যায়, আঁটুলি বিভিন্ন রোগের বাহক হয়।
(৩) চর্ম প্রদাহ, চুলকানি, লোম পড়া, খাদ্য গ্রহণ কমে যাওয়া, দুর্বল, স্বাস্থ্যহানী, চামড়া নষ্ট হয় ও পুঁজ সৃষ্টি হয়।
প্রতিকার :
(১) প্রাণির দেহ ব্রাশ করা, গোসল করানো, উকুন হাত দিয়ে মেরে ফেলা
(২) গোয়াল ঘরে ধোঁয়া দেয়া।
(৩) প্রতিদিন গো/মহিষকে ভালভাবে গোসল করালে শরীর সুস্থ থাকে এবং দেহের পরজীবি, যেমন- উকুন, আঁঠালি, মাছি, মাইটস, ফ্লি আক্রমণ থেকে মুক্ত থাকে।
১০. রক্ত আমাশয় (Coccidiosis) রোগ
আইমেরিয়া নামের এক জাতীয় পরজিবী (ককসিডিয়া) দিয়ে এই রোগ হয়। সময়মত চিকিৎসা না করা হলে বাছুর মারা যেতে পারে।
রোগ বিস্তার :
(১) প্রাণির শোবার জায়গা ময়লা থাকলে এই রোগ হয়।
(২) গোবর মিশ্রিত খাদ্য খাওয়ালে এই রোগ হয়।
(৩) গাভী দোহন করবার সময় ওলান পরিষ্কার না করলে ময়লাযুক্ত ওলানের দুধ খেয়ে বাছুরে এই রোগ হয়।
(৪) আক্রান্ত প্রাণির মলদ্বারা দূষিত খাদ্য ও পানি অন্য প্রাণি খেলে এই রোগ হয়।
রোগের লক্ষণ :
(১) আক্রান্ত প্রাণি রক্ত মিশ্রিত পায়খানা করে এবং অনেক সময় শুধু রক্ত পায়খানা করে।
(২) আক্রান্ত প্রাণি পায়খানা করার সময় কোৎ দেয় ও ডাকে।
(৩) লেজের গোড়ায় রক্ত মিশ্রিত গোবর লেগে থাকে।
(৪) ঘন ঘন পানি পান করে, দেহের তাপ বৃদ্ধি পায় এবং অরুচি দেখা দেয়।
প্রতিকার :
(১) পরস্কার পরিচ্ছন্নতাই হচ্ছে এ রোগের প্রধান প্রতিকার
(২) সময়মত চিকিৎসার ব্যাবস্থ্যা করা।
১১. পেট ফাঁপা রোগ (Tympanitis)
এ রোগ প্রাণির একটি সাধারনণ রোগ। সময়মত চিকিৎসা করা হলে প্রাণিটি সহজেই সু¯’ হয়ে যায়।
রোগ বিস্তার :
(১) অধিকমাত্রায় ঘাস/খাদ্য, পানি খেলে এই রোগ হয়।
(২) অনেকদিন খরা হওয়ার পর হঠাৎ বৃষ্টি হওয়ার পর কচি ঘাস হয়। সেই ঘাস যদি প্রাণি অধিক পরিমাণে খায় তাহলে এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
(৩) যে সমস্ত প্রাণি খেসারীর ভূষি, মাসকালাইয়ের ভূষির সাথে প্রচুর পরিমাণ পানি খায় তাদের পেট অতিরিক্ত ভর্তির ফলে এই রোগ হয়।
(৪) যে জমিতে ইউরিয়া সার সদ্য ব্যবহার করা হয়েছে, সেই জমির ঘাস খেলে এই রোগ হয়।
(৫) গলায় কোন জিনিস/খাদ্য আটকিয়ে গেলে, অসাধারণ খাদ্য বেশি পরিমাণে খেলে এ রোগ হয়।
রোগের লক্ষণ :
(১) পেটের ভিতরে গ্যাস জমা হওয়ার ফলে পেটফুলে যায়।
(২) পেট ফুলে যাওয়ার সাথে সাথে প্রাণির অস্থিরতা ও চঞ্চলতা বৃদ্ধি পায়।
(৩) পেট ব্যাথার জন্য অনেক প্রাণি প্রায়ই মাটিতে শোয় ও উঠে।
(৪) অনেক সময় পিছনের পা দিয়ে প্রাণি পেটে লাথি মারতে থাকে।
(৫) প্রাণি খুব ঘন ঘন শ্বাস নেয়।
(৬) জিহব্বা বের হয়ে যায় এবং মুখ দিয়ে লালা পড়তে থাকে।
(৭) নিঃশ্বাসের গতি খুব বেশি হয় এবং হৃদস্পন্দন খুব বেড়ে যায়।
(৮) পেটের বাম পার্শ্বে থাপ্পড় দিলে ধপ ধপ শব্দ করে।
(৯) প্রাণির খাওয়া বন্ধ হয়ে যায়।
(১০) প্রাণির পায়খানা বন্ধ হয়ে যায়।
(১১) ঐ ক্ষেত্রে পশুর জ্বর থাকে না।
রোগ প্রতিকার :
(১) প্রাণির খাদ্য সরবরাহের বিষয়ে যতœবান হতে হবে।
(২) সময়মত চিকিৎসার ব্যবস্থ্যা করা।
১২. বদহজম রোগ
এ রোগ প্রাণির একটি সাধারণ রোগ। সময়মত চিকিৎসা করা হলে প্রাণিটি সহজেই সুস্থ হয়ে যায়।
রোগ বিস্তার :
(১) হঠাৎ প্রাণির খাদ্য পরিবর্তন করলে এই রোগ হয়। যেমন-এক পালের গরু অন্য পালে নিয়ে গেলে, বাজার হতে গরু কিনে আনলে এইরূপ হয়ে থাকে।
(২) নষ্ট হয়ে যাওয়া খাদ্য খাওয়ালে এই রোগ হয়।
(৩) গাভীর গর্ভফুল অনেক সময় গাভী খেয়ে ফেললে এই রোগ হতে পারে।
(৪) প্রাণিকে পরিমাণ মত পানি না খাওয়ালে এই রোগ হয়।
(৫) অনেকদিন যাবৎ শুধু খড় খাওয়ালে বা অন্য কোন খাদ্য না দিলে এই রোগ হয়।
রোগের লক্ষণ :
(১) পশুর ক্ষুধা হঠাৎ কমে যায়।
(২) দুগ্ধবতী গাভীর দুধ কমে যায়।
(৩) প্রাণির মল কঠিন ও পরিমাণ অল্প হয়।
(৪) কোন কোন প্রাণির মাজল শুকনা থাকে।
রোগ প্রতিকার
(১) প্রাণির খাদ্য সরবরাহের বিষয়ে যত্নবান হতে হবে।
(২) সময়মত চিকিৎসার ব্যবস্থ্যা করা।
১৩. ডাইরিয়া (Diarrhoea)
এ রোগ প্রাণির একটি সাধারণ রোগ। সময়মত চিকিৎসা করা হলে প্রাণিটি সহজেই সু¯’ হয়ে যায়। তবে চিকিৎসায় দেরী হলে পানি স্বল্পতায় প্রাণিটি মারা যেতে পারে।
রোগ বিস্তার :
(১) পঁচা ও বিনষ্ট হয়ে যাওয়া খাদ্য প্রাণিকে খাওয়ালে ডায়রিয়া হয়।
(২) ঘাসের সাথে বালি মিশ্রিত থাকলে সেই ঘাস প্রাণি খেলে এই রোগ হয়।
(৩) গাভীর বাচ্চা প্রসবের পর প্রথমে যে শাল দুধ বাহির হয় সেই দুধ বাছুরকে না খাওয়ালে সহজেই ডায়রিয়া হয়। ∙ অধিক পরিমাণ খাদ্য খাওয়ালে এই রোগ হয়।
(৪) খাদ্য ও পানির পাত্র দীর্ঘদিন যাবৎ পরিষ্কার না করে সেই পাত্রে খাদ্য ও পানি খাওয়ালে এই রোগ হয়।
(৫) প্রসবের পর প্রাণির শরীর পরিষ্কার না করলে এই রোগ হয়।
রোগের লক্ষণ :
(১) পাতলা পায়খানা হয় এবং পায়খানার সাথে রক্ত ও আম থাকে।
(২) পায়খানা দুর্গন্ধযুক্ত হয়।
(৩) কখনও কখনও হজম না হওয়া খাদ্যব¯দ পায়খানার সাথে বের হয়ে আসে।
(৪) পায়খানার রং কালো বা হলুদ হতে পারে।
(৫) ঘন ঘন পায়খানা হতে পারে।
(৬) মলত্যাগের সময় অনেক সময় প্রাণি কোৎ দিতে পারে।
(৭) পাতলা পায়খানার কারণে প্রাণির দেহে শুষ্কতা দেখা দেয়।
(৮) প্রাণির পেটের ভিতরে কল কল শব্দ শোনা যায়।
(৯) ক্ষুদামন্দা দেখা দেয়।
(১০) প্রাণি নিস্তেজ হয়ে যায়।
রোগ প্রতিকার :
(১) প্রাণির খাদ্য সরবরাহের বিষয়ে যতœবান হতে হবে।
(২) নষ্ট হয়ে যাওয়া ঘাস বা খড় খাওয়ানো যাবে না।
(৩) প্রাণির খাবারের ও পানির পাত্র প্রতিদিন পরিষ্কার করতে হবে।
(৪) প্রাণিকে পুকুর, ডোবা, নালার পানি খাওয়ানো যাবে না। সর্বদা নির্দিষ্ট পরিষ্কার পাত্রে বিশুদ্ধ পানি পান করাতে হবে।
(৫) গোয়াল ঘর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন এবং সকল সময় শুকনা রাখতে হবে।
(৬) সময়মত চিকিৎসার ব্যাবস্থ্যা করা।
১৪. গর্ভফুল আটকে যাওয়া
এ রোগ প্রাণির একটি সাধারনণ রোগ। সময়মত চিকিৎসা করা হলে প্রাণিটি সহজেই সু¯’ হয়ে যায়।
রোগ বিস্তার :
(১) অপরিণত বাচ্চা প্রসব (সময়ের পূর্বেই বাচ্চা হওয়া)
(২) সংক্রামক রোগ, যেমন ব্রুসেলোসিস।
(৩) দৈহিক দুর্বলতা, ক্যালসিয়ামের অভাব।
রোগের লক্ষণ :
(১) গর্ভফুল যোনী মুখে ঝুলে থাকে।
(২) গর্ভফুল ২৪ ঘন্টার মধ্যে বাহির হয় না।
(৩) খাদ্য গ্রহণে অনীহা।
(৪) জ্বর হতে পারে।
প্রতিকার :
(১) ২৪ ঘন্টার মধ্যে গর্ভফুল না পড়লে ভেটেরিনারি ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা করা। ∙ কোন অবস্থ্যাতেই ভেটেরিনারি ডাক্তারের পরামর্শ ছাড় গর্ভফুল হাত দিয়ে টেনে বের করা যাবে না। কারণ এর ফলে গাভী বন্ধ্যা হয়ে যেতে পারে।
১৫. দুধ জ্বর রোগ বা মিল্ক ফিভার (Milk Fever)
রোগের কারণ :
(১) রক্তে ক্যালসিয়ামের অভাব হলে এই রোগ হয়।
(২) মাথা ও পা কাঁপতে থাকে এবং পশু একস্থ্যানেই দাঁড়িয়ে থাকতে চায়।
(৩) চলতে গেলে টলতে থাকে, বিশেষ করে পিছনের পায়ে জোর কমে যায়।
(৪) প্রাণি নিস্তেজ হয়ে দেহের একপাশে মাথা গুজে শুয়ে থাকে।
(৫) মাজল শুকনা থাকে।
(৬) শরীরের তাপমাত্রা কমে যায়।
(৭) হৃদস্পন্দন বেড়ে যায় এবং শ্বাস প্রশ্বাসের গতি কমে যায়।
প্রতিকার :
(১) প্রাণির খাদ্য সরবরাহের বিষয়ে যতœবান হতে হবে।
(২) সময়মত চিকিৎসার ব্যবস্থ্যা করা।
♦ এই পর্বে প্রাণির বিভিন্ন রোগ নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হলো। উক্ত রোগসমূহের চিকিৎসার জন্য স্থ্যানীয় ভেটেরিনারি ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসার ব্যবস্থ্যা করতে হবে। তবে মনে রাখতে হবে ভাইরাস জনিত রোগের সুনির্দিষ্ট কোন চিকিৎসা নেই।
♦ উক্ত রোগে আক্রান্ত প্রাণি যাতে ব্যাকটেরিয়াজনিত জীবাণু দ্বারা দ্বিতীয় বার আক্রান্ত হয়ে রোগের তীব্রতা বৃদ্ধি না পায় সেজন্য ভাইরাস জনিত রোগেরও চিকিৎসার প্রয়োজন রয়েছে। তবে যে কোন রোগ হওয়ার অগেই প্রতিষেধক ব্যবস্থ্যা গ্রহণ করা উত্তম। তাই যে সকল সংক্রামক রোগ এর কারণে প্রাণির মৃত্যুর সম্ভাবনা রয়েছে সে সকল রোগের প্রতিকার হিসাবে প্রয়োজনীয় টিকা প্রদানের ব্যবস্থ্যা করতে হবে।
♦ প্রাণিকে টিকা প্রদানের সময় একটি বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। তা হচ্ছে সঠিক সময়ে সঠিকভাবে টিকা প্রদান করা। তা না হলে উক্ত টিকা থেকে আশানুরূপ ফল পাওয়া যাবে না। অসুস্থ প্রাণিকে সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত টিকা প্রদান করা ঠিক হবে না।
♦ তাছাড়া টিকা প্রদান এর পূর্বে প্রাণিকে কৃমি মুক্ত করতে হবে। তা করা হলে প্রদানকৃত টিকা থেকে উত্তম ফল পাওয়া যাবে। পানির প্রতি মহিষের বিশেষ দুর্বলতা রয়েছে, তাই নদী মহিষ পরিস্কার পানি ও জলাশয়ের মহিষ ডোবা-নালার কর্দমাক্ত পানি গায়ে মেখে দেহের তাপ নিয়ন্ত্রণ করে। যেখানে নদী-ডোবা নেই সেখানে ছায়াযুক্ত স্থ্যানে মহিষ রেখে পাইপের সাহায্যে দিনে অন্তত দু’বার পানি দিয়ে গোসল করাতে হবে।
তো আজকের মত এখানেই বিরতি, দেখা হবে পরবর্তী আলোচনায়। যে সকল দর্শক আমাদের চ্যানেলের নতুন যদি পশুদের বিভিন্ন রকম রোগ তাদের চিকিৎসা এবং মেডিসিন সম্পর্কে আরও জানতে চান তারা খামারিয়ান.কম এ নিয়মিত ভিজিট করবেন এবং আমাদের ইউটিউব চ্যানেলটিকেও সাবস্ক্রাইব ও আমাদের ফেসবুক পেজটিতে একটি লাইক দিয়ে রাখবেন রাখবেন। তাহলে নতুন কোন পোষ্ট করা হলে তা সহজেই বুঝতে পারবেন। আমাদের আজকের এই আলোচনা এখানেই শেষ করে দিচ্ছে সকলে ভাল থাকুন সুস্থ থাকুন এবং খামারিয়ান এর সাথেই থাকুন। ধন্যবাদ।
খামারিয়ান.কম – সর্বদা খামারিদের পাশে।
গাবি বাচুর এর নাক দিয়া রক্ত গেলে কি করা উচিৎ
গাবি বাচুর এর নাক দিয়া রক্ত গেলে কি করা উচিৎ