গবাদি পশু পালনে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এই সমস্যাগুলির মধ্যে, আমাদের অবশ্যই গরু খাবার খায় না বা গরু ঘাস খায় না এই সমস্যাটি অন্যতম। তাই গরু না খাওয়ার কারণ বা গরু কম খাওয়ার কারণ? এজন্য আগে রোগ নির্ণয় করতে হবে। রোগ নির্নয়ে খুব মনযোগী না হলেতো চিকিৎসা সফল হবেনা।
আরও একটি একই রকম পোষ্টঃ (পড়তে Click করুন) যেই 17 টি কারণে গরু খাবার খায় না: গরু খাবার না খাওয়ার কারণ? গরু কম খাওয়ার কারণ? গরুর খাবার না খেলে কি করনীয়?
1. গরুর বদহজম বা ফুড পয়জনিং হলে গরু খায় নাঃ
গরু খায় না অসংখ্য কারন বিদ্যমান। প্রথমত তাপমাত্রা দেখতে হবে।
অনেকে ১০১ ডিগ্রি এর উপরে তাপ কে স্বাভাবিক ভাবে। হ্যা কখনো হতে পারে যেমন অনেকে গরু পালে আটকা ঘরে যারে চারপাশে ঘেরা থাকে তখন গরুর ঘর ও শীরের তাপমাত্রা বেশি হয়ে থাকে।
তখন নিশ্চিত হওয়ার জন্য আরো ২/১ টা গরুর তাপ মাপতে হবে। তবে শংকর জাতের গরুর শরীরে তাপ একটু বেশী থাকে।
যাহা সাধারনত ১০১ ডিগ্রীর উপরে উঠে না।
তাপ যদি ১০১ বা তার নীচে হয় তাহলে বদহজম বা ফুড পয়জনিং বলবো। তখন আমরা জানতে চাবো পুর্বের দিন গরু কি খেয়েছে, মাঠে গেলে কি ধরনের খাবার খেয়েছে?
যদি গুল্মজাতীয় গাছ খেয়ে থাকে যেমন, শিয়ালমতি/বন তুলসী/ কুকুর শোকা/ বন মুলা সেক্ষেত্রে এ্যালকালয়েড পয়জনিং হতে পারে। যার কোন চিকিৎসা নেই।
গরুর ফুড পয়জন হলে, রুমেনের দুষ্প্রাচ্য খাদ্য জমা হওয়া, স্পন্দন হ্রাস পেয়ে বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দেওয়া খাদ্যের প্রতি পশুর অরুচি তরি হয় হয়। অধিকাংশ পশুর মল কঠিন বা সামান্য পাতলা এবং পরিমাণে কম হয়। ক্রমশ দেহের ওজন কমে যায় ও পশু দুর্বল হয়ে পড়ে। রক্ত স্বল্পতা উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
উক্ত সমস্যাটি গরু না খাওয়ার কারণ হিসেবে কি করণীয়?
এক্ষেত্রে চিকিৎসার একমাত্র লক্ষ পেট খালি করা এবং ব্লাড পিউরিফাই করার জন্য লিকুইড ডেক্সট্রোজ থেরাপি দেয়া। যেহেতু Fluid লস হয়নি।
আমি সোডিয়াম ক্লোরাইড ব্যাবহারের পক্ষপাতি নয়।
কারন আমরা মাত্র ২০ মিনিটে ১০০০ সিসি Fluid ইনজেক্ট করি। যদি সোডিয়াম ক্লোরাইড দেয়া হয় তা ভেঙ্গে রক্তে সোডিয়াম ও পটাসিয়াম আয়ন হয়। আয়োনিক একচেন্জ এর ফলে হার্ট বিট অস্বাভিক হয়ে যায়।
ফলে এই আয়ন হার্ট বিটের আয়নকে নিউট্রালাইজ করে হার্ট বিট বাধাগ্রস্থ করে গরু মারা যেতে পারে, এটা আমার ধারনা।
তাই আমি শুধু ডেক্সট্রোজ Fluid থেরাপি ব্যাবহার করি।
পাশাপাশি-
১। প্রোবায়োটিক প্লাস:
১০০-২০০ গ্রাম মুখে প্রতিবারে এইভাবে সকাল বিকাল ব্যাবহার করি।
২। ডেক্সট্রোজ ( পাউডার):
প্রতিবারে ১০০-২০০ গ্রাম দিনে ২বার।
এতে ডেক্সট্রোজ এনার্জী যোগায় এবং ২ টা মিলে বাল্কি পারগেটিভ হিসেবে কাজ করে দ্রুত পায়খানা করায় গরু বেচে যায়।
অখবা-
প্রাকৃতিক প্রতিকার হিসেবে গরুকে দিনে দুবার আদা গুঁড়ো, সামান্য লবণ, খাবার সোডা ইত্যাদি মিশিয়ে খাওয়ানো যেতে পারে একটি কলা পাতায় মুড়িয়ে।
এভাবে ৩/৪ দিন খাওয়ালে ভালো ফল পাওয়া যায়। এই ক্ষেত্রে, প্রতি 100-160 কেজি দৈহিক ওজনের জন্য, একটি গরুকে 50 গ্রাম আদার পেস্ট, 20 গ্রাম জিরা গুঁড়া এবং 20 গ্রাম সামান্য লবণের গুঁড়ো দেওয়া উচিত।
সর্বপরি, পশুকে নিম্নমানের খাবার, খাবার হজম করা কঠিন এবং নষ্ট খাবার থেকে দূরে রাখতে হবে। নিয়মিত কৃমিনাশক খাওয়াতে হবে, গরুর খাদ্যে বিভিন্ন এনজাইমের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে যেমন গুড় বা চিটাগুড়, লবণ, খাদ্য বা ভিটামিন এবং বিভিন্ন খনিজ পদার্থ।
সঠিক কারণ জানা না থাকলে তাৎক্ষণাক প্রাথমিক বা সহায়ক থেরাপি হিসেবে রিউমাটোটোনিক ওষুধ যেমন এপিভেট বা জাইমোভেট প্রতি লিটার পানিতে এক লিটার মিশিয়ে দিনে দুবার করে দুই দিন খাওয়াতে হবে।
2. নাইট্রেট পয়জনিং হলে গরু খাবার খায় নাঃ
যদি কাচা ঘাস বিশেষ করে নিচু এলাকার ঘাস খেয়ে বা তরকারীর জমি বা বেশী নাইট্রোজেনাস সার ব্যাবহার করা জমির ঘাস খেয়ে নাইট্রেট পয়জনিং হয়,তখন মুখ দিয়ে লালা পড়ে।
তখন আমরা মিথিলিন Blue ব্যাবহার করি। মাত্রাটা রোগের তীব্রতার উপর নির্ভর করে।
যাহা বোঝা যায় না, তাই আমি সরিষার দানা পরিমান নিয়ে স্যালাইনের সাথে অথবা পানি দিয়ে গুলায়ে শিরায় দিয়ে দিই।
দেবার ২/১০ মিনিটের মধ্যে যদি গরুর জ্ঞান ফেরে এবং নাক মুখ চেটে খাবারের কাছে যায় এবং খাবার খায়,তাহলে আমি সফল। আর যদি খাবারের কাছে গেল কিন্তু খেল না,তখন আবার অল্প করে মিথিলিন ব্লু দেই।
কোন অবস্থাতেই একবারে বেশী দেয়া যাবেনা।তাতে অতিরিক্ত মিথিলিন BLue রক্তের হেমোগ্লোবিনকে মেথেমোগ্লোবিনে রুপান্তর করবে, ফলে রক্ত অক্সিজেন ক্যারি করতে পারবেনা ফলে গরু শ্বাস কষ্ট হয়ে মারা যাবে।
বদহজম হজম হলে ইতিহাস ও পেটে চাপ দিলে হাত বসে যাবে এভাবে রোগ নির্নয় করা যাবে।
উক্ত সমস্যাটি গরু না খাওয়ার কারণ হলে কি করণীয়?
১। প্রোবায়োটিক প্লাস:
১০০-২০০ গ্রাম প্রতিবারে দিনে ২ বার খাওয়ান।
২। এস আর ডেক্সট্রোজ:
১০০-২০০ গ্রাম প্রতিবারে দিনে ২ বার।
৩। এস আর বভি( S R Bovi):
এক থেকে ২ প্যাকেট হালকা গরম পানিতে প্রতিবারে দিনে ২ বার।
ভাত খেয়ে কার্বোহাইড্রট ইনগোর্জমেন্ট হলেও এই চিকিৎসায় দ্রুত সফলতা লাভ করা যায়।
অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, কার্বোহাইড্রেট ইনগোর্জমেন্টে কেন আবার ডেক্সট্রোজ পাউডার ব্যাবহার করব, তারা মেডিসিন বই বের করে দেখেন ঐ সময় রক্তে হাইপোগ্লাইসেমিয়া হয়।
3. ইনফেক্সাস ডিজিজ অথবা কিটোসিস হলে গরু খাবার খায় না
না খাওয়া গরুর যদি গায়ে তাপ থাকে। তাহলে আমরা ধরবো হয় ইনফেক্সাস ডিজিজ না হয় কিটোসিস।
কিটোসিসের ক্ষেত্রে মালিকের কাছে ইতিহাস নিলে পাবেন গরুটা কিছুদিন পুর্বে হাট থেকে কেনা অথবা ম্যাষ্টাইটিস/ রিটেন প্লাসেনটা/ এফ এম ডি/ অথবা পাতলা পায়খানা বা যে কোন কারনে খাদ্যাভাবে ভুগেছে।
গরুর পায়খানা প্রথমে পাবেন শক্ত গুটি গুটি,তাপমাত্রা ১০২- ১০৪ ডিগ্রি পর্যন্ত। শক্ত পায়খানা অবশ্যই থাকবে।
যদি রোগীটা বিলম্বে আপনার হাতে পড়ে, তখন খামারিকেকে জিজ্ঞাসা করে জানবেন প্রথম খাওয়া বন্ধ হবার সময় পায়খানা শক্ত গুটি গুটি ছিল।
পরে দেখবেন তাপ বেশী অথবা উঠানামা করতেছে।মোট কথা যদি ২/১ জন ডাক্তারের হাত ঘুরে আপনার হাতে আসে তাহলে তা অবশ্যই কিটোসিসে রুপান্তর হবে। পরে হলে পায়খানা হবে অল্প অল্প কাল আঠালো।
উক্ত সমস্যাটি গরু না খাওয়ার কারণ হলে কি করণীয়?
এস আর রুচি( S R Ruchi) বা ACI Ruchi Plus Powder
প্রতিবারে ২০০–৩০০ গ্রাম দিনে ২ বার। পরের দিন দিনে একবার। সাথে ডেক্সট্রোজ ১০০ গ্রাম মিশায়ে খাওয়াবেন। ১–২ ডোজই খাওয়া ধরা, জ্বর কমা ও যাবর ধরার জন্য যথেষ্ট। ৪/৫ দিন চলবে।
যদি ক্রোনিক হয় তাহলে
এস আর বভিঃ ১–২ প্যাকেট হালকা গরম পানিতে মিশায়ে প্রথম খাওয়াবেন ১০–১৫ মিনিট পর রুচি পাউডার খাওয়াবেন।
কিটোসিস হলে কোন এন্টিবায়োটিক বা ফেব্রিফিউজ দিয়ে আপনি খাওয়া ধরাতে পারবেন না,জ্বর হয়তো কমতে পারে, কিন্তু খাওয়া ধরবে না।
আর যদি দীর্ঘদিন পর খাওয়া ধরে দুধ কম পাবেন স্বাস্হ্য ভাল হবে না।এই চিকিৎসা দিয়েই তার দুধ বাড়াতে পারবেন।
চিকিৎসার মাত্রাটা ১০০–১২০ কেজি দৈহিক ওজনের জন্য। বড় হলে মাত্রা বাড়াবেন।বেশী হলে সমস্যা নেই বরং আরো তাড়াতাড়ি ভাল হবে।
আমরা যদি প্রাণীটির প্রতি গভীর দৃষ্টি রাখি তবে আমরা তার খাদ্যের চাহিদা বুঝতে পারি। উপরোক্ত আলোচনা যদি প্রাকৃতিক কারণে বলে মনে হয় তবে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত এবং যদি এটি রোগের কারণে হয় তবে তা দ্রুত মোকাবেলা করা উচিত। দ্রুত সেরে উঠলে প্রাণীটি আগের মতো পুরান খাবে এবং তার বৃদ্ধি নিশ্চিত করবে। তাহলে প্রতিটি পদক্ষেপই হবে জাতীয় উন্নয়নের পাশাপাশি আত্মোন্নয়নের অংশ। আমাদের মাংসের চাহিদা পূরণ হবে।
আরও ১৭ টি গরু না খাওয়ার কারণ জানতে: https://khamarian.com/গরু-খাবার-না-খাওয়ার-কারণ/
খামারিদের সাথে সংযোগ করতে, জ্ঞান ও বিভিন্ন তথ্য শেয়ার করে নিতে এবং বাংলাদেশের খামারি সম্প্রদায়কে শক্তিশালী করতে বাংলাদেশের খামারিদের একটি সামাজিক নেটওয়ার্ক "খামারিয়ার ক্লাব” এ যোগ দিন।