গরু গরম করার উপায় শীর্ষক আজকের আলোচনায় আপনাকে স্বাগতম। গরু গরম করার উপায় বা গরু হিটে আনার উপায় গুলো সম্পর্কে সঠিক ধারনা থাকলে আমরা এই সহজেই এই সমস্যা থেকে পরিত্রান পেতে পারি। এটি গাভী গরুর প্রজনন তন্ত্রের রোগ এ রোগে যদি গরু আক্রান্ত হলে গরু হিটে আনার চিকিৎসা করতে হয়।
গাভী/বকনা হিটে আসার সময় প্রথমে যানতে হবে। একটি বকনা গরু সাধারনত ১৭-২৪ মাস অর্থাৎ ২ বছর বয়সে প্রথমবার হিটে আসে। গাভী গরু বাছুর প্রসবের ৪-৮ সপ্তাহের মধ্যেই হিটে আসে। গাভীর প্রথমবার বাছুর প্রসবের পর এসময় কিছুটা বৃদ্ধি পেতে পারে।
গাভী যদি ৯০-১০০ দিনের মধ্যে আর বকনা যদি ২৪ মাসের মধ্যে হিটে না আসে তাহলে বুঝতে হবে গরুর প্রজনন স্বাস্থ্যে কোন সমস্যা হয়েছে।
সঠিক সময়ে গরু গরম করার উপায়/ গরু হিটে আনার উপায়ঃ
কিভাবে সঠিক সময়ে গরু বা ছাগল ডাকে আনতে হয় তার ধাপগুলো নিচে দেওয়া হল-
(1)
বাছুর জণ্মের পর পরিমিত শালদুধ খাওয়ানো এবং পরিমিত মাত্রায় সুষম খাদ্য খাওয়াতে হবে। গাভী বাচ্চা দেয়ার পর ৪০-৬০ দিনের মধ্যে ভাল দিয়ে স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে কৃত্রিম প্রজনন করাতে হবে অথবা ভাল জাতের ষাঁড় দিয়ে প্রজনন করাতে হবে।
(2)
প্রতিটি গাভীর ডাকে আসার সঠিক সময় নির্ণয়ের জন্য প্রতিদিন সকালে এবং সন্ধ্যায় আধা ঘন্টা করে গাভীকে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। কোন গাভীর যোনিদ্বার দিয়ে অস্বাভাবিক ধরনের বিজল অর্থাৎ ঘোলাটে বা পুঁজ জাতীয় বিজল নি:সৃত হলে সেগুলিকে প্রজনন করানো যাবে না।
(3)
বাচ্চা দেয়ার পর যদি গাভীর গর্ভফুল ৬-১২ ঘন্টার মধ্যে না পড়ে সে গাভীগুলোকে ৮০-ঌ০ দিনের আগে প্রজনন করানো যাবে না।
(4)
গাভী গরম হওয়ার লক্ষণ প্রকাশের ১০-১২ ঘন্টা পর ভাল বীজ দিয়ে স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে দক্ষ লোক দ্বারা কৃত্রিম প্রজনন করাতে হবে অথবা ভাল জাতের ষাঁড় দ্বারা প্রজনন করাতে হবে।
(5)
কোন গাভী স্বাভাবিক তিনটি ঋতুচক্রে পর পর তিনবার ভালবীজ দ্বারা কৃত্রিম প্রজনন করানোর পরও যদি গর্ভসঞ্চার না হয়, তবে পরবতীতে সেটিকে ১-২ টি ঋতুচক্রে প্রজনন না করিয়ে বিশ্রাম দিতে হবে। তবে যদি প্রজনন করাতে চান তাহলে ১০০-৫০০ মাইক্রোগ্রাম গোনাডোট্রফিন-রিলিজিং হরমোন যেমন ফার্টিলন অথবা ফার্টাজিল অথবা রিসিপ্টালের যেকোন একটি প্রজনন করানোর পরপরই এক মাত্রা, প্রয়োজনে ৮-১০ দিন পর আরেক মাত্রা ইনজেকশন মাংসে দিলে গর্ভসঞ্চার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
গরু হিটে আনার/ গরু গরম করার চিকিৎসা
গাভী বা বকনা হিটে না আসলে একজন অভিজ্ঞ ডাক্তার দ্বারা গাভী পরীক্ষা-নিরীক্ষা করিয়ে দেখতে হবে। গাভীর জরায়ুতে কোন প্রকার সমস্যা আছে কিনা, কোন প্রকার ভাইরাস বা ব্যকট্যারিয়া দ্বারা আক্রান্ত কিনা এবং জরায়ুতে চর্বি জমেছে কিনা এবং জরায়ু সঠিক স্থানে আছে কিনা।
(1)
গাভীর মলদ্বারে হাত দিয়ে জননাঙ্গ ভালভাবে পরীক্ষা করতে হবে যদি ডিম্বকোষে করপাস লুটিয়াম থাকে তবে বুঝতে হবে গাভী ঋতুচক্রে আছে এক্ষেত্রে কর্পাস লুটিয়াম পেলে পরবতী ১০ থেকে ১২ দিন পর গাভীকে গরম বা ডাকে আসার লক্ষণ সঠিকভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে৷
(2)
এ লক্ষে অন্তত সকালে একবার এবং সন্ধ্যার পর আরেকবার ডাকে আসার লক্ষণ ভালভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে জরায়ু সংক্রমিত হয়ে তাতে পুঁজ জমে প্রদাহসহ কর্পাস লুটিয়াম থাকলে সে ক্ষেত্রে যোনিদ্বার দিয়ে পুঁজ বা ঘোলাটে বিজল পড়তে দেখা যায়।
(3)
তখন একমাত্রা প্রোস্টাগ্লানডিন এফ২ আলফা জাতীয় ইনজেকশন যেমন- ২ মিলি প্রোসলভিন অথবা এস্ট্রোমেট অথবা সিনক্রোমেট কিংবা ৩.৫ মিলি গ্যাব্রস্টিম, ৫ মিলি লুটালাইজ অথবা গান্ডিন-এন এর যেকোন একটি ইনজেকশন মাংসে দিতে হবে।
(4)
ইনজেকশন দেয়ার ২৪-৪৮ ঘন্টা পর ৫০০-১০০০ মিগ্রা পলিভিনাইল পাইরোলিডিন এ দ্রবীভূত অক্সিটেট্রাসাইক্লিন জাতীয় ইনজেকশন যেমন- রেনামাইসিন ১০০ অথবা ৪০-৮০ লাখ পেনিসিলিন জাতীয় ইনজেকশন যেমন- প্রোনাপেন অথবা প্রোনাসিলিন যেকোন একটি ১৫-২০ মিলি স্যালাইনের সাথে ভালভাবে মিশিয়ে প্লাস্টিক এ আই ক্যাথেটারের সঙ্গে এডপ্টারের (যা দ্বারা কোন কিছু পাম্প করে ভিতরে ঢুকানো হয়) সাহায্যে ২০ সিসি প্লাস্টিক সিরিঞ্জ দ্বারা যোনিদ্বার দিয়ে সাবধানে ঢুকিয়ে দিতে হবে।
(5)
২-৩ দিন পর আরেকবার এ ধরনের চিকিৎসা প্রদান করলে ভাল ফল পাওয়া যায়।
যদি ডিম্বকোষ খুব ছোট থাকে এবং এতে কেশগর্ভ (ডিম্বকোষের একপাশ ফোলা অবস্থা) ও কর্পাস লুটিয়াম (ডিম্বক্ষরন হওয়ার পর ডিম্বকোষের লম্বাটে ধরনের অবস্থা) কিছুই না পাওয়া যায় তবে বূঝতে হবে গাভীর ঋতুচক্র বন্ধ হয়ে আছে।
(6)
এজন্য বাছুরকে ৩ মাসের বেশী দুধ খাওয়ানো যাবে না এবং গাভীকে পরিমিত সুষম খাদ্য বিশেষ করে আমিষ ও দানাদার খাদ্য প্রদান করতে হবে। কোন কোন গাভীর ঋতুচক্রের সময়কাল ১৭ দিনের কম ও ২৪ দিনের বেশি দেখা গেলে ডিম্বাশয়ের কেশগর্ভ ফোসকা (২.০-২.৫ সে.মি. পরিধির বেশি) হয়েছে বলে ধারণা করতে হবে৷ সেক্ষেত্রে মলদ্বারে হাত দিয়ে ডিম্বকোষ পরীক্ষা করে বিষয়টি নিশ্চিত হতে হবে।
(7)
এ সকল গাভীকে স্বাভাবিক ঋতুচক্রে আনার ব্যবস্থা নিতে হবে৷ এজন্য ৫০০ মাইক্রোগ্রাম জি এন আর এইচ হরমোন অর্থাৎ ফার্টিলন অথবা ফার্টাজিল অথবা রিসেপ্টাল ইনজেকশন মাংসে দিয়ে পরবতী ১০-১২ দিন পর ১ মাত্রা প্রোস্টাগ্লানডিন এফ২ আলফা যেমন- ২ মিলি প্রোসলভিন অথবা এস্ট্রোমেট কিংবা ৩.৫ মিলি গ্যাব্রস্টিম, ৫ মিলি লুটালাইজ অথবা গান্ডিন-এন অথবা ২ মিলি সিনক্রোমেটের যেকোন একটি মাংসে ইনজেকশন দিতে হবে। এ ইনজেকশন দেয়ার ৭২-ঌ৬ ঘন্টায় গাভী গরম বা ডাকে এলে প্রজনন করাতে হবে।
(8)
কোন কোন গাভীর কেশগর্ভ আংশিক লিউটিনাইজেশন (ডিম্বক্ষরণ হওয়ার পর ডিম্বকোষের লম্বাটে ধরনের বিশেষ অবস্থা) হয়ে ঋতুচক্র বন্ধ থাকে৷ সেক্ষেত্রে মলদ্বারে হাত দিয়ে ডিম্বকোষ পরীক্ষা করে নিশ্চিত হয়ে গাভীকে প্রোস্টাগ্লানডিন এফ২ আলফা জাতীয় ইনজেকশন যেমন- ২ মিলি প্রোসলভিন অথবা এস্ট্রোমেট কিংবা ৩.৫ মিলি গ্যাব্রস্টিম অথবা ৫ মিলি লুটালাইজ অথবা গান্ডিন-এন অথবা ২ মিলি সিনক্রোমেট এর যেকোন একটি মাংসে ইনজেকশন দিতে হবে।
(9)
এ ইনজেকশন দেয়ার ৭২-ঌ৬ ঘন্টায় গাভী গরম বা ডাকে এলে প্রজনন করাতে হবে গর্ভকালের শেষের ২ মাস অবশ্যই দুধ দোহন বন্ধ রাখতে হবে গর্ভকালের শেষের ৩ মাস ও প্রসব পরবতী ৩ মাস গাভীকে পরিমিত সুষম খাদ্য যেমন- সাধারন খাবারের পাশাপাশি আমিষ, দানাদার ও খনিজ জাতীয় খাদ্য প্রদান করতে হবে।
পুষ্টিগত সমস্যার কারণে গরু হিটে না আসলে করনীয় কি?
গরু গরম করার জন্য প্রথমে দেখতে হবে পুষ্টিগত সমস্যা আছে কিনা। এরপর রোগ, বীজ ও পরিবেশগত বিষয় সমূহ বিবেচনা করতে হবে। গাভী গরু যদি ৮-৯ সপ্তাহেও হিটে না আসে বা গর্ভধারণ না করে তাহলে নিম্নোক্ত ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে।
(1)
উচ্চ প্রোটিন যুক্ত খাবার যেমন ফিস মিল, সয়াবিন মিল, সরিষার খৈল, নারিকেলের খৈল, তিলের খৈল, সূর্যমুখী খৈল অথবা বাজারে প্রাপ্ত প্রোটিন সাপলিমেন্ট খাবারে দিতে হবে।
অতিরিক্ত সরিষার খৈল দেওয়া যাবে না এতে ইরোসিক এসিড থাকে। গরুর জন্য একটি ভালো প্রোটিনের উৎস্য হলো সযাবিন মিল বা সয়ামিল।
সয়াবিন মিলে সুষম মাত্রায় এমায়নো এসিড পাওয়া যায়।
(2)
গরু গরম করার জন্য আঁশ যুক্ত খাবার কমিয়ে উচ্চ এনার্জি যুক্ত খাদ্য সরবরাহ করতে হবে যাতে খাদ্যের মেটাবলিক এনার্জি বৃদ্ধি পায়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আঁশের পরিমাণ ১০% এ নামিয়ে আনতে হয়।
(3)
গরু গরম করার জন্য গাভীর শরীরের ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস এর অভাব পুরন করতে হবে। ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস এর একটি ভালো উৎস হলো ডিসিপি (ডাইক্যালসিয়াম ফসফেট) বা DCP। এছড়াও ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও ভিটামিম ডি৩ এর একটি ওরাল সাসপেনশন পাওয়া যায়। বাজারে যে সকল লিকুইড ক্যালসিয়াম পাওয়া যায় সেগুলোর যে কোন একটি ব্যবহার করা যেতে পাড়ে।
(4)
গরু গরম করার জন্য ভিটামিন এ, ডি৩ ও ই এই তিনটি ভিটামিন একত্রে পাওডার, ওরাল সলুশন ও ইনজেকশন এই তিন ফর্মে বাজারে পাওয়া যায়। তবে ইনজেকশনের মাধ্যমে প্রয়োগ করলে দ্রুত ফলাফল পাওয়া যায়।
(5)
গাভী বা বকনার প্রজনন স্বাস্থ্যের জন্য অতি দরকারি একটি মিনারেলের নাম সেলিনিয়াম। বাজারে ভিটামিন-ই + সেলিনিয়াম একসাথে একটি ওরাল সিরাপ পাওয়া যায়। এটি খাওয়াতে হবে। যেমন- ইসেল (স্কয়ার) খাওয়ানো যেতে পাড়ে।
সমস্যা তৈরি হওয়ার আগে থেকেই আমাদের ব্যবস্থা নিতে হবে। গাভী বা বকনার দেহে যেনো কোনো ভিটামিন ও মিনারেলের অভাব না থাকে সেদিকে নজর রাখতে হবে।
গাভীর দেহে যেন প্রোটিন ও এনার্জি (শক্তি) এর অভাব না থাকে সেদিকে নজর রাখতে হবে। খামারে যথেষ্ট আলো বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা রাখতে হবে। গাভীকে রোগমুক্ত ও সম্পূর্ণ সুস্থ রাখতে হবে।
সর্বপরি গাভীকে পর্যাপ্ত কাঁচা ঘাস ও সঠিক মাত্রায় ভিটামিন, মিনারেল, এমাইনো এসিড, প্রোটিন ও মেটাবলিক এনার্জি সমৃদ্ধ দানাদার খাদ্য সরবরাহ করতে হবে।
আরও পড়ুনঃ
গাভী গরম না হওয়ার কারণ 16 টি? বকনা গরু হিটে না আসার কারণ? গরু ডাকে না আসার কারন?
গরু হিটে আনার ইনজেকশন
3 টি গরু হিটে আসার ঔষধ
15 টি গরু গরম হওয়ার লক্ষণ/গরু হিটে আসার লক্ষণ
খামারিদের সাথে সংযোগ করতে, জ্ঞান ও বিভিন্ন তথ্য শেয়ার করে নিতে এবং বাংলাদেশের খামারি সম্প্রদায়কে শক্তিশালী করতে বাংলাদেশের খামারিদের একটি সামাজিক নেটওয়ার্ক "খামারিয়ার ক্লাব” এ যোগ দিন।
আমার একটি গাভি,, হিটে আসছে ২ মাস আগে, সময় মতো ভালো ষাড় পাইনি বা ইনজেকশন দেয়া সম্ভব হয় নি,, কিন্তু গত ২ মাস ধরে আর হিটে আসছে না, একেত্রে আমার কি করণিয়,
কি করলে আবার হিটে আসবে,
একটু বলে দেন,, যারা জানেন।
Pingback: 3 টি গরু হিটে আসার ঔষধ (গরু হিটে আনার চিকিৎসা) » খামারিয়ান লাইভস্টক ভিলেজ
Pingback: 15 টি গরু গরম হওয়ার লক্ষণ/ গরু হিটে আসার লক্ষণ/ গরু ডাকে আসার লক্ষণ » খামারিয়ান লাইভস্টক ভিলেজ