ভিটামিন (Vitamins) : যেসব জৈব যৌগিক খাদ্য উপাদান হিসেবে অতি অল্প পরিমাণে দেহের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য অত্যাবশ্যক তাদের ভিটামিন বলা হয়। প্রাণী দেহের জন্য পর্যাপ্ত আমিষ, শর্করা, চর্বি ও খনিজ পদার্থ খাদ্যের সাথে সরবরাহ করেও ভিটামিন ছাড়া জীবন চালনা সম্ভব হয় না। পশুর খাদ্যের জন্য ভিটামিনের উৎস, কার্যাবলি ও অভাব জনিত উপসর্গ নিচের টেবিলে। দেয়া হয়েছে।
খনিজ পদার্থ (মিনারেল) : পশু খাদ্যের প্রয়োজনীয় উপাদান। প্রাপ্ত বয়স্ক পশু দেহে শতকরা ৩-৫ ভাগ খনিজ পদার্থ থাকে। মোট খনিজ পদার্থের শতকরা ৮০ ভাগ অস্থিতে, কঙ্কালে ও দাঁতে থাকে। আর অবশিষ্ট ২০ ভাগ থাকে শরীরের কোষ কলা ও রক্তে।
আজকে আমরা আলোচনা করবঃ
গরু, ছাগল অন্যান্য পশুর খনিজ পদার্থের উৎস, অত্যাবশ্যকীয় কাজ ও অভাব জনিত উপসর্গঃ
খনিজ পদার্থঃ ১। ক্যালসিয়াম
ক্যালসিয়ামের উৎস : বোনমিল, কিসমিস, চুনাপাথর, ঝিনুকর্ত।
ক্যালসিয়ামের অত্যাবশ্যকীয় কাজ : দাঁত ও অস্থিগঠন, রক্ত জমাট বাধা, হৃৎপিণ্ড ও পেশীয় সক্রিয়তা নিয়ন্ত্রণ।
ক্যালসিয়ামের অভাব জনিত উপসর্গ : রিকেট, অস্থিকোমলতা, দুগ্ধজ্বর বাড়ন ব্যাহত, প্রসব কষ্ট, উৎপাদন হ্রাস।
খনিজ পদার্থঃ ২। ফসফরাস
ফসফরাস এর উৎস : বোনমিল, ফিসমিল, ধানের গুঁড়া, গমের ভূষি ইত্যাদি।
ফসফরাস এর অত্যাবশ্যকীয় কাজ : অস্থি ও দাঁত গঠন, দেহের এটিপি যৌগিকের উপাদান।
ফসফরাস এর অভাব জনিত উপসর্গ : বিকৃত ক্ষুধা, বাড়ন ব্যাহত, অস্থি গঠন বিকৃতি, প্রজনন অক্ষমতা ।
খনিজ পদার্থঃ ৩। ম্যাগনেসিয়াম
ম্যাগনেসিয়ামের উৎস : ভূষি, কুড়া, খৈল ।
ম্যাগনেসিয়ামের অত্যাবশ্যকীয় কাজ : অস্থি গঠন, শর্করা বিপাক, এনজাইম ও স্নায়ু পেশীর সক্রিয়ক।
ম্যাগনেসিয়ামের অভাব জনিত উপসর্গ : হোল মিল্ক টেটানি, ল্যাকটেশন টেটানি বা গ্রাস টেটানি ।
খনিজ পদার্থঃ ৪। সোডিয়াম
সোডিয়ামের উৎস : সাধারণ খাবার লবণ।
সোডিয়ামের অত্যাবশ্যকীয় কাজ : দেহের পি-এইচ রক্ষা, দেহের তরল পদার্থের ভলিউম নিয়ন্ত্রণ।
সোডিয়ামের অভাব জনিত উপসর্গ : ক্ষুধামান্দ্য, লোম অমসৃণ, দৈহিক ওজন হ্রাস ও বিকৃত ক্ষুধা।
খনিজ পদার্থঃ ৫। পটাসিয়াম
পটাসিয়ামে এর উৎস : সবুজ ঘাস, শুষ্ক ঘাস।
পটাসিয়ামে এর অত্যাবশ্যকীয় কাজ : দেহের তরল পদার্থের পি-এইচ রক্ষা ও অস্ত্রবণ চাপ বজায়, প্রোটিন ও শর্করা বিপাকে প্রয়োজন, স্নায়ুর কার্যক্রম সংরক্ষণ।
পটাসিয়ামে এর অভাব জনিত উপসর্গ : দৈহিক বাড়ন ব্যাহত, অ্যানিমিয়া।
খনিজ পদার্থঃ ৬ । আয়রন/লৌহ
আয়রন/লৌহ এর উৎস : সবুজ ঘাস, ফেরাস রক্ত সালফেট।
আয়রন/লৌহ এর অত্যাবশ্যকীয় কাজ : রক্ত (লোহিত কণিকা সৃষ্টি)।
আয়রন/লৌহ এর অভাব জনিত উপসর্গ : দৈহিক বাড়ন ব্যাহত, অ্যানিমিয়া।
খনিজ পদার্থঃ ৭। কপার
কপার এর উৎস : কপার সালফেট।
কপার এর অত্যাবশ্যকীয় কাজ : লোহিত কণিকা ও পাওয়ার কপার থাকে। হেমোগ্লোবিন তৈরিতে আয়রনের সংযুক্তির জন্য কপার প্রয়োজন। লোম ও উলের স্বাভাবিক রং বজায় রাখে।
কপার এর অভাব জনিত উপসর্গ : ডায়রিয়া, অ্যানিমিয়া, ফলিং ডিজিজ, খোড়ানো ইত্যাদি রোগ উপসর্গ হয়।
খনিজ পদার্থঃ ৮। কোবাল্ট
কোবাল্ট এর উৎস : কোবাল্ট ক্লোরাইড।
কোবাল্ট এর অত্যাবশ্যকীয় কাজ : ভিটামিন বি সৃষ্টির উপাদান, বোমন্থক পশুর রুমেনের জীবাণুর ভিটামিন বি সংশ্লেষণের জন্য কোবাল্ট আবশ্যক।
কোবাল্ট এর অভাব জনিত উপসর্গ : ক্ষুধামান্দ্য, পেশীর অবক্ষয়, অ্যানিমিয়া, দৈহিক ওজন হ্রাস, উৎপাদন হ্রাস, ডায়রিয়া ইত্যাদি।
খনিজ পদার্থঃ ৯ । আয়োডিন
আয়োডিনের উৎস : সামুদ্রিক উৎসের সকল খাদ্যদ্রব্য, ফিসমিল, বোনমিল ।
আয়োডিনের অত্যাবশ্যকীয় কাজ : এনার্জি মেটাবলিজম দৈহিক ও মানসিক বৃদ্ধি, থাইরয়েড গ্রন্থির হরমোনের সাথে সংযুক্ত থেকে কার্যসম্পাদন।
আয়োডিনের অভাব জনিত উপসর্গ : গলগন্ড (গয়টার), নবজাতকের মৃত্যু, লোম পড়ে যাওয়া।
খনিজ পদার্থঃ ১০। ম্যাঙ্গানিজ
ম্যাঙ্গানিজ এর উৎস : ম্যাঙ্গানিজ সালফেট।
ম্যাঙ্গানিজ এর অত্যাবশ্যকীয় কাজ : অস্থি গঠন, দৈহিক বৃদ্ধিসাধন।
ম্যাঙ্গানিজ এর অভাব জনিত উপসর্গ : প্রজনন ক্ষমতা ও অহির বিকলঙ্গতা।
খনিজ পদার্থঃ ১১। জিঙ্ক
জিঙ্ক এর উৎস : জিঙ্ক সালফেট।
জিঙ্ক এর অত্যাবশ্যকীয় কাজ : দেহের বিভিন্ন এনজাইমের উপাদান হিসেবে কার্যসম্পাদন করে।
জিঙ্ক এর অভাব জনিত উপসর্গ : প্যাকেরাটোসিস, লোম পড়ে যাওয়া, অস্বাভাবিক পায়ের ক্ষুর বৃদ্ধি, খোঁড়ানো ।
খনিজ পদার্থঃ ১২ । মলিবডেনাম
মলিবডেনাম এর উৎস : বাঁধা কপি, আস্ত সোয়াবিন।
মলিবডেনাম এর অত্যাবশ্যকীয় কাজ : বিভিন্ন এনজাইমের উপাদান।
মলিবডেনাম এর অভাব জনিত উপসর্গ : সাধারণত কোন উপসর্গ প্রকাশ পায় না।
খনিজ পদার্থঃ ১৩ । সেলিনিয়াম
সেলিনিয়াম এর উৎস : মটর, শুষ্ক আলফালফা মিল।
সেলিনিয়াম এর অত্যাবশ্যকীয় কাজ : বিপাকের জন্য প্রয়োজন। সেলিনিয়াম ও ভিটামিন-ই সম্পর্কযুক্ত ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট।
সেলিনিয়াম এর অভাব জনিত উপসর্গ : নিউট্রিশনাল মাসকুলার ডিস্ট্রাফি, ডফুল আটকিয়ে যাওয়া, প্রজনন অক্ষমতা ইত্যাদি।
খনিজ পদার্থঃ ১৪ । ফ্লুরিন
ফ্লুরিন এর উৎস : সোডিয়াম বা
ফ্লুরিন এর অত্যাবশ্যকীয় কাজ : অস্থি গঠন, দাঁতের এনামেলকে শক্ত ও ক্ষয়রোধ করে।
ফ্লুরিন এর অভাব জনিত উপসর্গ : দাঁতের ক্ষয় (কানিস) হয়।
গরু, ছাগল ওঅন্যান্য পশুর প্রয়োজনীয় ভিটামিনের উৎস, অত্যাবশ্যকীয় কাজ ও অভাব জনিত রোগ উপসর্গঃ
ভিটামিনঃ ১ । ভিটামিন এ
ভিটামিন এ এর উৎস : কাঁচা সবুজ ঘাস, মাছের যকৃতের তেল।
ভিটামিন এ এর অত্যাবশ্যকীয় কাজ : দৈহিক বৃদ্ধি, চোখ, ত্বক ও শ্লৈষ্মিক ঝিল্লীর স্বাভাবিকতা বজায় রাখে।
ভিটামিন এ এর অভাব জনিত উপসর্গ : বাড়ন ব্যাহত, চোখ, ত্বক ও শ্লৈষ্মিক ঝিল্লীর অস্বাভাবিকতা রোগের প্রতি সংবেদনশীলতা ও জন্মগত ত্রুটি।
ভিটামিনঃ ২। ভিটামিন ডি
ভিটামিন ডি এর উৎস : ত্বকে (সূর্যালোকের) সক্রিয়তায় তৈরি।
ভিটামিন ডি এর অত্যাবশ্যকীয় কাজ : দৈহিক বৃদ্ধি, ক্যালসিয়াম ও সদ্ব্যবহার ফসফরাসের অস্থি ও দাঁতের গঠনে।
ভিটামিন ডি এর অভাব জনিত উপসর্গ : ক্ষুধামান্দ্য দৈহিক দৈহিক ওজন হ্রাস, রিকেট, অস্টিওম্যালাসিয়া।
ভিটামিনঃ ৩ । ভিটামিন ই
ভিটামিন ই এর উৎস : সবুজ ঘাস, শস্যদানা।
ভিটামিন ই এর অত্যাবশ্যকীয় কাজ : অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, সেলিনিয়ামের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক আছে। পশুর প্রজননে ভূমিকা আছে।
ভিটামিন ই এর অভাব জনিত উপসর্গ : জনন অকৃতকার্যতা, অপুষ্টি জনিত পেশী রোগ, হোয়াইট মাসল ডিজিজ ।
ভিটামিনঃ ৪। ভিটামিন কে
ভিটামিন কে এর উৎস : সবুজ ঘাস, সয়াবিন, গমের ভূষি, পাকান্রের জীবাণু সৃষ্টি করে।
ভিটামিন কে এর অত্যাবশ্যকীয় কাজ : রক্ত জমাট বাঁধায় গুরুত্বপূর্ণ।
ভিটামিন কে এর অভাব জনিত উপসর্গ : রক্ত জমাট বাঁধার সময় বৃদ্ধি।
ভিটামিনঃ ৫। বি-ভিটামিন
বি-ভিটামিনের উৎস : ক্ললেস্ট্রাম ও দুধে পর্যাপ্ত থাকে।
বি-ভিটামিনের অত্যাবশ্যকীয় কাজ : দেহের বিভিন্ন এনজাইমের উপাদান হিসেবে কার্যসম্পাদন করে।
বি-ভিটামিনের অভাব জনিত উপসর্গ : সাধারণত রোমন্থক পওর বি-ভিটামিনের অভাব হয় না।
ভিটামিনঃ ৬। ভিটামিন সি
ভিটামিন সি এর উৎস : পশুর দেহের কোষ কলায় সংশ্লেষিত হয়।
ভিটামিন সি এর অত্যাবশ্যকীয় কাজ : দৈহিক বৃদ্ধি, কোষকলা, রক্তনালী ও মাটির স্বাস্থ্য সুস্থ রাখে।
ভিটামিন সি এর অভাব জনিত উপসর্গ : সাধারণত পশুর দেহে ভিটামিন-সি এর অভাব হয় না।
একজন দক্ষ খামারি হতে, উল্লিখিত পশুর/গরু ছাগলের প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও মিনারেল এর উৎস, অত্যাবশ্যকীয় কাজ ও অভাব জনিত রোগ উপসর্গ জেনে রাখা প্রয়োজন।