ভূমিকাঃ
গরু, মহিষকে এমন খাদ্য খাওয়াতে হবে যাতে সবরকম খাদ্যগুণ বিদ্যমান থাকে। পশুকে শর্করা, আমিষ, স্নেহপদার্থ, খনিজ পদার্থ, ভিটামিন, লবণ প্রভৃতি সব জিনিসই খাওয়াতে হবে।
১. আদর্শ খাদ্য
যে খাদ্যে পশুর প্রয়োজনীয় আমিষ, শর্করা, খনিজ, ভিটামিন ইত্যাদি সব জিনিস থাকে তাকে আদর্শ খাদ্য বলে। আদর্শ খাদ্যকে দুভাগে ভাগ করা যায়। যথা- (১) সুষম ও (২) মিশ্র খাদ্য।
২. সুষম খাদ্য
সুষম খাদ্য বলতে যেসব খাদ্যকে গরু-মহিষ খুব সহজে হজম করতে পারে এবং সেসব খাদ্য খেলে পুষ্টি চাহিদাপূরণ হয় তাকেই বোঝায়।
৩. মিশ্র খাদ্য
যে সব খাদ্য দানাজাতীয় উপাদান, খনিজ, ভিটামিন ইত্যাদির সংমিশ্রনে তৈরি হয় তাকেই মিশ্র খাদ্য বলে। মিশ্র খাদ্য তৈরির সময় নিচের বিষয়াদি অবশ্যই বিবেচনায় রাখা দরকার।
১. কম খরচে পুষ্টি সমৃদ্ধ খাদ্য তৈরি হচ্ছে কিনা।
২. সহজে পাওয়া যায় এমন জিনিস দিয়ে তৈরি কিনা।
৩. গরু-মহিষের মুখরোচক কিনা।.
৪. অপছন্দনীয় দুর্গন্ধমুক্ত খাদ্য কিনা।
৫. পায়খানা কষা বা পাতলা যাতে না হয় এমন খাদ্য কিনা।
৬. বেশ কিছুটা সংরক্ষণে রাখা যায় কিনা ইত্যাদি।
গরু-মহিষের দানাদার খাদ্যের মিশ্রণঃ
দানাদার খাদ্যের মিশ্রণের নিচের যেকোন একটি ফরমূলা ব্যবহার করা যেতে পারে। যেমন-
ফরমুলা-১
বাদাম খইল ২৫% + গমের ভূষি ২৫% + চাউলের কুড়া ২৫% + খেসারি ২৫%।
ফরমুলা-২
সরিষার খইল ২৫% + গমের ভূষি ২৫% + ডালের ভুষি ২৫% + বুটের ডাল ২৫%।
ফরমুলা-৩
তিলের খইল ২৫% + ভুট্টার গুড়া ২৫% + গমের ভূষি ২৫% + খেসারি ডাল ২৫% +।
ফরমুলা-৪
গম ভাংগা ২৫% + নারকেলের খইল ২৫% + গমের ভূষি ২৫% + কলাই ডাল ২৫%।
গরু-মহিষের দৈনিক খাদ্য তালিকা
বাছুর এবং পূর্ণ বয়স্ক গরু-মহিষকে দৈনিক কোন খাদ্য কি পরিমাণে দিতে হবে তা সকল পশুপালনকারীরই জানা থাকা দরকার। বাছুরকে যে খাদ্য যে পরিমানে দিতে হয় তা পূর্ণ বয়স্ক গরু-মহিষকে যা খেতে দেয়া যায় তা কোন কোন সময় বাছুরের কাছে গ্রহণযোগ্য হয় না। তাই খাদ্যের ধরণ এবং পরিমাণ পশুর খাদ্য ব্যবস্থাপনায় যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।
বাছুরের খাদ্য তালিকা
পশুপালনকারীরা অনেক সময় বাছুরের জন্যে পৃথক খাদ্য ব্যবস্থার কথা ভাবেন নি। আসলে সেই বাছুরটাই পরবর্তীতে গাভী হয়ে দুধ দেবে অথবা ষাড় হয়ে শ্রম দেবে। গাভী দুহনের পর গাভীর বাটে কিছুটা দুধ রাখা দরকার। সাথে সাথে জানা দরকার বাছুরের ওজনের ১০ ভাগের ১ ভাগ এই দুধের প্রয়োজন। বস্তুকে এই চাহিদা অন্যান্য উপায়ে মেটানো হয় যেমন-
(১) মায়ের দুধ,
(২) গুড়ো দুধ গরম জলে গুলে এবং
(৩) দুধ ও সুষম খাদ্য মিশিয়ে তরল খাদ্য তৈরি করে।
একটি বাছুরকে দৈনিক কোন খাদ্য কি পরিমাণে দিতে হয় তা নিম্নের সারনীতে -২ এ উল্লেখ করা হলো।
গর্ভবতী গাভীর খাদ্য তালিকা
গর্ভবতী গাভীর খাদ্য ব্যবস্থা স্বাভাবিক পশুর খাদ্য থেকে ভিন্নতর হওয়াটাই স্বাভাবিক। গর্ভ সঞ্চারের প্রথম ২৪-২৮ সপ্তাহ স্বাভাবিক খাদ্য দিলেই চলবে এবং দুধ দোহন স্বাভাবিক পর্যায়ে করা যাবে।
২৮ সপ্তাহের পর থেকে দুধ দোহন কমাতে হবে এবং বাচ্চা প্রসবের ৮ সপ্তাহ পূর্ব থেকে দুধ দোহন বন্ধ করে দিতে হবে। দুধ উৎপাদন বন্ধ না হলে দানাদার খাদ্য কমিয়ে দিয়ে খড় বেশি দিতে হবে। একটি গর্ভবতী গাভীকে দৈনিক নিম্নের সারনী-৩ এর খাদ্য সরবরাহ করা যেতে পারে।
স্বাভাবিক গরু-মহিষের খাদ্য তালিকা
স্বাভাবিক পূর্ণ বয়স্ক গরু-মহিষ পালনের নিমিত্বে দৈনিক কি কি খাদ্য কি পরিমাণে দেয়া প্রয়োজন তা জানা আবশ্যক। পশুর শারীরিক ওজনের উপর নির্ভর করে খাদ্যের উপাদান এবং পরিমাণ কম বেশি হতে পারে।
ইউ এম এস খাদ্য হিসেবে সরবরাহ
বাছুর, গাভী, গর্ভবতী গাভী, ষাড়, বলদ অর্থাৎ সকল ধরণের গরু-মহিষকে ইউ এম এস খাওয়ানো যেতে পারে। ইউরিয়া, মোলাসেস ও স্ট্রকে সংক্ষেপে ইউ এম এস বলা হয়। বাংলাদেশ পশু সম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠান উদ্ভাবিত এই ইউ এম এস খাওয়ানোর প্রযুক্তি একটি লাগসই প্রযুক্তি। এই মিশ্রিত খাবারটি গরুকে প্রতিদিন শুকনো খড়ের বদলে খাওয়ানো যেতে পারে।
বি এল আর আই গবেষণা করে দেখেছেন যে, বাড়ন্ত বাছুরকে দৈনিক ১.৪ কেজি গমের ভূষি ও ১০০ গ্রাম মাছের গুড়া দিয়ে শুকনো খড়ের বদলে পরিমান মতো ইউ এম এস খাওয়ালে দৈহিক ওজন ৫০০-৭০০ গ্রাম বৃদ্ধি পায়।
অন্য একটি গবেষণায় দেখা গেছে পাবনা অঞ্চলের একটি গাভীকে শুকনো খড়ের পরিবর্তে ইউ এম এস খাওয়ালে দৈনিক ১.৫ কেজি দানাদার খাদ্য কম দিয়েও প্রায় ১ লিটার দুধ বেশি পাওয়া যায়।
ইউ এম এস তৈরির পদ্ধতি
ইউ এম এস তৈরির প্রয়োজনীয় উপাদানের অনুপাত ঠিক রাখা অত্যাবশ্যক। ইউরিয়া, মোলাসেস ও খড়ের যথাক্রমে ৩ ভাগ, ১৫ ভাগ ও ৮২ হওয়া বাঞ্চনীয়। তাছাড়া এই তিনটি উপাদান মিশানোর কমপক্ষে খড়ের অর্ধেক ওজনের সমপরিমান পানির প্রয়োজন হবে।
(ক) খড়, মোলাসে, ইউরিয়া ও পানি পরিমাণ মতো মেপে নিতে হবে,
(খ) ইউরিয়া মোলাসেস ও পানি ভালো ভাবে মিশিয়ে দ্রবণ তৈরি করতে হবে,
(গ) শুকনো খড়গুলোকে পলিথিন বিছানো অথবা পাকা মেঝেতে ছড়িয়ে দিতে হবে এবং
(ঘ) খড়ের উপর ইউরিয়া ও মোলাসেসের দ্রবণ ছিটিয়ে দিয়ে মিশিয়ে নিয়ে পশুকে খাওয়ানো যাবে।
মেঝেতে না করে অল্প হলে মাটির হাড়িতেও ইউ এম এস তৈরি করা যেতে পারে। দ্রব্যাদির উপাদান ও মিশাবার পদ্ধতি একই রকমের। ইউ এম এস তৈরি করে ৩ দিনের বেশি রাখা যাবে না। রাখলে এর গুণগত মান খারাপ হয়ে যেতে পারে।
গরু মোটাতাজা করার জন্য খাদ্য তালিকা
মোটাতাজা করণ প্রক্রিয়ায় পশুর জন্যে বিশেষ ধরণের খাদ্য সরবরাহ করতে হয়। খাবারে শর্করা, আমিষ, স্নেহ, ভিটামিন ইত্যাদি উপাদান সাধারণ খাদ্যের চেয়ে বেশি পরিমাণে দিতে হয়। প্রচুর পরিমাণে পরিষ্কার পানি খাওয়াতে হয়। তাছাড়া সাধারণ খাবারের বদলে প্রক্রিয়াজাতকৃত খড় খাওয়ানো ভালো, তাতে আমিষের পরিমান বেশি থাকে। গরু মোটাতাজা করনে বিভিন্ন ওজনের পশুকে বিভিন্ন উপাদান বিভিন্ন অনুপাতে দেয়া হয়।