ভূমিকাঃ
সকল জীবিত প্রাণীর মতো পশুরও রোগ হতে পারে নানাবিধ কারণে। আর সেই কারণগুলোর কিছুটা খাদ্য সরবরাহের সাথে সম্পৃক্ত, কিছুটা পরিবেশগত আর কিছুটা পশুর ক্ষতিকর বীজাণুর সাথে জড়িত।
সরবরাহকৃত খাদ্যে কোন সমস্যা থাকলে রোগ হতে পারে, পরিবেশের কোন অস্বাভাবিক অবস্থায় রোগ দেখা দিতে পারে আবার রোগের বীজাণুর দ্বারাও রোগ সৃষ্টি হতে পারে।
এই পোষ্ট এ রোগ ও প্রতিকার সম্বন্ধে একটা ধারণা দেয়া যাবে। তবে পশু ডাক্তারের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া চিকিৎসা করা ঠিক হবে না।
১. জ্বর
পশুর দেহে বীজাণুর সংক্রমন হলে ঐ বীজাণু রক্তের সাথে মিশে মস্তিষ্কের তাপযন্ত্রকে উত্তেজিত করে। ফলে ঐ আক্রান্ত পশুর দেহের তাপমাত্রা বেড়ে যায়।
জ্বর রোগের লক্ষণঃ
- জ্বরে পশুর গা অনেক সময় গরম হয় না, তবে তার কান গরম হয়ে থাকে।
- কুকুরের নাক শুকনো ও গরম হবে।
- তাপ কমবে বাড়বে বা ছেড়ে ছেড়ে জ্বর আসবে।
- রেমিটেন্ট ফিভারে সব সময় জ্বর থাকবে।
- ইন্টারমিটেণ্ট ফিভারে দিনে রাতে একবার জ্বর ছেড়ে স্বাভাবিক হবে আবার জ্বর আসবে।
জ্বর রোগের প্রতিকার/চিকিৎসাঃ
১. সাধারণ জ্বরের মিকশ্চারে এমোনিয়া ইথার ও স্পিরিট থাকায় উত্তেজকের কাজ করে। এটা জ্বর নাশক না হলেও কিছুটা উপকার হয়। কেবল গরুর জন্যে নিচের মিকশ্চার দেয়া যেতে পারে।
১. এমন এসিড ২. স্পিরিট এমন এরোমেটিক ৩. স্পিরিট ইথার নাইট্রোসিস ৪. স্পিরিট ক্লোরোফর্ম ৫. পানি | ১৫ মি. লি ১০ মি. লি ১০ মি.লি ১০ মি. লি ১৫ মি. লি |
২. ভাইসোডিয়ার হাইড্রোজেন সাইট্রেট সলিউশন ২ চা-চামচ মাত্রায় দিনে ২ বার খাওয়াতে হবে।
৩. বেশি পানি খাওয়াতে হবে, যাতে বেশি প্রস্রাব হবে এবং দেহ থেকে দুষিত পদার্থ বের হয়ে যাবে।
২. খাদ্য নলের পথ রোধ
মুখের পিছন থেকে খাদ্যনল গেছে পাকস্থলীতে। গরু-মহিষ যখন খাবার গোগ্রাসে গেলে তখন কোন ফলের আটি বা শক্ত ইট পাথরের টুকরো গলায় গিয়ে আটকে যেতে পারে।
খাদ্য নলের পথ রোধ রোগের লক্ষণঃ
- শক্ত বস্তু গলায় আটকিলে কাশি হবে।
- খাবার বন্ধ হবে ও মুখ দিয়ে লালা পড়বে।
- দম বন্ধ হবার উপক্রম হবে।
- গলার কাছে আটকালে হাত দিলে তা লাগবে।
খাদ্য নলের পথ রোধ রোগের প্রতিকার/চিকিৎসাঃ
- কেবল মাত্র জল খাওয়াতে হবে এবং জলে ভিজে শুকনো বস্তুটি পাকস্থলীতে নেমে যাবে।
- আটকানো অংশে গলায় ব্যথা হবে এবং এক্ষেত্রে এট্রোপিন সালফেট চামড়ার নিচে ইনজেকশন দিতে হবে।
- এট্রোপিন ০.৬ মিলিগ্রাম মাত্রায় ১ মিলিলিটার এমপলে পাওয়া যায়। গরুর মাত্রা ৫ মিলিলিটার।
- যন্ত্রণা উপশমের জন্যে গরু-মহিষকে ৫ মিলিলিটার মাত্রায় পেশীর মধ্যে ইনজেকশন দিতে হবে।
৩. উদরাময়
ঘন ঘন পাতলা পায়খানা হওয়াকে উদরাময় বলে। দুষ্প্রাচ্য খাবার খাওয়ার ফলে কিম্বা স্যালমোনেলা, কোলা ইত্যাদি পেটে গেলে এ রোগ সৃষ্টি হয়।
উদরাময় রোগের লক্ষণঃ
- ঘন ঘন পাতলা পায়খানা হয়।
- অন্ত্রে প্রদাহ বা এনটেরাইটিস হয়।
- খাদ্য নলের ভেতরের আবরণ লাল হয়ে ওঠে।
- পশু যা খায় সবই জলের মতো বের হয়ে যায়।
উদরাময় রোগের প্রতিকার/চিকিৎসাঃ
- খাবারের শেষে হলে প্রথমে খাবার পেট থেকে বের করার নিমিত্তে কাঁচা তিসির তেল ও ক্যাস্টর অয়েল খাওয়ানো যায়।
- পেট পরিষ্কার হলে কেবল গরুর জন্যে কাঁচা তিসির তৈল ২০০ মিলি, চুনের জল ১০ মিলি।
- অন্ত্রের গায়ে ট্যানিক এসিডের প্রলেপে কাজ হয়।
- বিষাক্ত পদার্থ শোধনে কেওলিন অন্ত্র থেকে বিষাক্ত দ্রব্যাদি শুষে নেয়।
- পেটটিন প্রলেপের কাজ করে এবং পরিবেশ বীজাণুর প্রতি করে রোগ দমন করে।
৪. এ ভিটামিনের অভাব
বাছুর মায়ের দুধ না পেলে এ রোগ দেখা যায়। বাছুরের স্বাস্থ্যক্ষায় বা বৃদ্ধিতে জন্মের পর থেকেই তা দরকার।
এ ভিটামিনের অভাব রোগের লক্ষণঃ
- বাছুরের ওজন কমতে থাকে।
- গায়ের লোম রুক্ষ দেখায়।
- চোখের কর্নিয়ায় সাদা সাদা হয়।
- রাতে বাছুর দেখতে পায় না বা রাতকানা হয়।
- পা ফুলে ও চলতে গেলে টলতে থাকে।
এ ভিটামিনের অভাব রোগের প্রতিকার/চিকিৎসাঃ
- ভিটামিন এ খাওয়াতে হবে। প্রতি ১ মিলিলিটারে (২০ কোটা) ৭২০০০ ইউনিট থাকে। এই লিকুইড দিনে ১০ ফোটা খাওয়াতে হবে।
- ভিটামিন ইনজেকশন দিতে হবে।
- অরোবিট ইনজেকশন ১ মিলিলিটারে ৩ লাখ ইউনিট থাকে। প্রিপ্যালিন ইনজেকশন প্রতি ১ মিলিলিটারে ১ লাখ ইউনিট থাকে। বাছুরকে ১ লাখ ইউনিট ইনজেকশন দিতে হবে।
৫. গোল কৃমি
গোল কৃমি দেখতে সাদা ও কেঁচোর মতো গোল ও লম্বা। অন্ত্রে বাস করে এবং এদের ডিম গোবরের সাথে বেরিয়ে আসে। সেই গোবরে দুষিত ঘাস, খড় ইত্যাদি খেলে সুস্থ পশুর গোল কৃমি হয়।
গোল কৃমি রোগের লক্ষণঃ
- বেশ সুন্দর স্বাস্থ্যবান বাছুর ধীরে ধীরে দুর্বল হতে থাকে ৷
- গায়ের লোম রুক্ষ ও দেহের হাড় প্রকট হয়ে ওঠে।
- মাঝে মাঝে পেটের অসুখ হয় ও ক্রমে রক্ত শূন্যতা দেখা যায়।
- বাছুর নির্জীব হতে হতে শেষে মারা যায়।
গোল কৃমি রোগের প্রতিকার/চিকিৎসাঃ
- পাইপারেজিন পাউডার প্রতি কেজি দেহের ওজনের জন্যে ১০০ মিলিগ্রাম মাত্রায় ছাগল, গরু ও মহিষকে খাওয়ানো যায়।
- পাইপারেজিন সলিউশনের মাত্রা নির্ভর করবে সলিউশন মূল ঔষধ কত হারে আছে তার উপর। এই ঔষধের হেলমাসিড সিরাপ বাছুরকে ২০ মিলিলিটার দৈনিক খাওয়ানো যেতে পারে।
৬. স্ট্রঙ্গাইল্স
গোল কৃমি জাতের ১ সেন্টিমিটার থেকে ৫ সেন্টিমিটার লম্বা এই কৃমি গরু-মহিষের পাকস্থলীতে হয়ে থাকে।
স্ট্রঙ্গাইল্স রোগের লক্ষণঃ
- পশুর ক্ষুধামান্দ্যা ও উদরাময় হয়।
- পশুর লোম রুক্ষ ও হাড় প্রকট হয়।
- ধীরে ধীরে রোগা ও দুর্বল হয়।
স্ট্রঙ্গাইল্স রোগের প্রতিকার/চিকিৎসাঃ
এই কৃমির প্রতিকার হিসাবে গরুকে ২০ গ্রাম বাছুরকে ৫ গ্রাম ও ছাগলকে ৫ গ্রাম মাত্রায় ঔষধ খাওয়ানো যেতে পারে।
৭. ফিতা কৃমি
ফিতার মতো দেখতে এবং মাথায় শোষক যন্ত্র আছে। দেহে ৩০০-৪০০ টি ছোট ছোট খন্ড থাকে।
ফিতা কৃমি রোগের লক্ষণঃ
গোল কৃমির মতো লক্ষন দেখাবে।
ফিতা কৃমি রোগের প্রতিকার/চিকিৎসাঃ
মেল ফার্ন বা ফিনিক্স ম্যাক্স গরু-মহিষকে ২০ মিলিলিটার ও ছাগলকে ৫ মিলিলিটার খাওয়ানো যেতে পারে। এই ঔষধ খাওয়ানোর ৬ ঘণ্টা পর গরুকে ২৫০ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম গোলাপ জলে গুলে খাওয়াতে হবে।
৮. বাছুরের পেটের অসুখ
দূষিত খাদ্যের কারণে এ রোগ হয়।
বাছুরের পেটের অসুখ রোগের লক্ষণঃ
- বারবার সাদা পাতলা মলত্যাগ করবে।
- আক্রান্ত পশু খুব দুর্বল হয়ে পড়বে।
- লেজে ও মলদ্বারের চারদিকে মল লেগে থাকবে।
- জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হলে শরীরের তাপ বৃদ্ধি পাবে।
বাছুরের পেটের অসুখ রোগের প্রতিকার/চিকিৎসাঃ
- সালফা গোয়ানইনডিন ট্যাবলেট পাউডার করে এক তোলা চক-পাউডারের সাথে মিশিয়ে দৈনিক দুবার খাওয়াতে হবে। প্রতিবারে ৪/৫ ট্যাবলেট প্রতিদিন দুবার ৩-৫ দিন খাওয়াতে হবে।
- পটাশ পারম্যঙ্গানেট পানীয় জলের সাথে অতি সামান্য পরিমাণে মিশিয়ে খাওয়াতে হবে।
- টেট্রাসাইক্লিন ক্যাপসুল ৩/৪টা করে দৈনিক দু বার ৪/৫ দিন খেতে দিতে হবে।
- ডায়াভেট পাউডার ১৫০ গ্রার পরিষ্কার পানিতে গুলে বা দানাদার খাদ্যের সাথে মিশিয়ে সকাল-বিকাল ২-৩ দিন খাওয়ানো যেতে পারে।
৯. ক্ষুরা ব জরা রোগ
একধরনের সূক্ষ্ম ভাইরাস দ্বারা পশু আক্রান্ত হয়। এ রোগ মারাত্মক ছোঁয়াছে। পানি, বাতাস, খাদ্য ইত্যাদির মাধ্যমে এ রোগ বিস্তার লাভ করে থাকে এবং দ্রুত এ রোগ ছড়িয়ে পড়ে।
ক্ষুরা রোগের লক্ষণঃ
- শরীরে কাঁপুনি দিতে থাকে এবং জ্বর ১০১০ থেকে ১০৫০ ফাঃ পর্যন্ত হতে পারে।
- জিহ্বা, দাঁতের মাঢ়ি ঠোঁটের ভিতর দিক ও খুরের ফাঁকে প্রথমে ফোঁড় ও পরে ঘা দেখা দিতে পারে।
- ঘা বা ক্ষত হতে পানি বা রস ঝরে থাকে।
- পশুর পা ফুলে যায় ও খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটে।
- কিছু খেতে পারে না ও আক্রান্ত পশু দুর্বল হয়ে যায়।
- আক্রান্ত পশুর মুখ থেকে অনবরত লালা ঝরে।
- মুখ খোলা ও বন্ধ করার সময় ছটফট শব্দ হয়।
- পায়ের ক্ষতস্থানে পোকা বা কীড়ার জন্ম হতে পারে।
ক্ষুরা রোগের প্রতিকার/চিকিৎসাঃ
- রোগ দেখা দেয়ার পূর্বে সম্ভব হলে পলি ভ্যাকসিন দেয়া উচিত।
- আক্রান্ত পশুকে পূর্ণ বিশ্রামে রাখতে হবে।
- ঈষদুষ্ণ পানিতে সামান্য পরিমাণ ফিটকিরি (১%) মিশিয়ে ক্ষতস্থানে ধুয়ে দিতে হবে।
- অনুরূপভাবে পটাশ পারম্যাঙ্গানেট (১%) পানিতে মিশিয়ে জিহ্বা ধুয়ে দিতে হবে।
- পায়ের ক্ষতস্থানে তুঁতে (১%) অথবা সোডিয়াম বাই কার্বনেট (২%) অথব পটাশ পারম্যাঙ্গানেট (১%) পানিতে মিশিয়ে ধুয়ে দিতে হবে।
- ধুয়ে দেয়ার পর পায়ের ক্ষতের ওপর সালফানিলামাইড পাইডার ছিটিয়ে দিতে হবে।
- মুখের ঘা শুকানোর জন্যে সোহাগা পুড়ে খৈ করে নারকেল তেল বা মধুর সাথে মিশিয়ে ক্ষতস্থানে লাগানো যায়।
- শরীরে তাপ থাকলে এন্টিবায়োটিক ইনজেকশন দেয়া যেতে পারে।
- আইডসন ৩%-৫% দ্রবণ ক্ষতস্থানে দৈনিক ২/৩ বর করে ৩/৪ দিন ব্যবহার কর যেতে পারে।
- দ্রুত ক্ষত বা ঘা শুকানোর জন্য অ্যান্টিবায়োটিক ইনজেকশন বা সালফার জাতীয় ওষুধ খাওয়ানো যেতে পারে।
- পায়ের ক্ষতে পোকা হলে সে স্থানে কিছু তারপিন তেল ছিটিয়ে দিলে পোকাগুলো বেরিয়ে আসবে, তখন চিমটা দিয়ে এদের সরিয়ে ফেলতে হবে।
ক্ষুরা রোগের প্রতিষেধকঃ
সুস্থ পশুকে ক্ষুরা রোগের প্রতিষেধক টিকা দিলে এ রোগের হাত থেকে রক্ষা করা যায়। ক্ষুর রোগের টিকা প্রতি ৬ মাসে একবার করে দিতে হয়।
১০. গলা ফুলা
ব্যাংগাপাসচুরেলা বডিস এ রোগের উৎপত্তির কারণ। সাধারণত গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালে গরু ও মহিষ এ রোগে আক্রান্ত হয়।
গলা ফুলা রোগের লক্ষণঃ
- গলকম্বল ফুলে যায় ও ফোলা ক্রমশ গলা থেকে বুক পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে।
- ফোলাস্থানে খুব ব্যথা হয়।
- প্রথমে শরীরে তাপমাত্রা খুব বৃদ্ধি পায় (১০৫° থেকে ১০৭° ফাঃ)।
- মুখ থেকে লালা বের হয় ও জিহ্বা ফুলে যায়।
- শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট হয়।
- পেটে ব্যথা হয়, পাতলা মলত্যাগ করে এবং মলের সাথে আম (Mucous) বের হতে পারে।
- পশু সটান শুয়ে পড়ে ও কান ঝুলে পড়ে।
- মুখের ভেতরের পাতলা ঝিল্লি (চামড়া বা পর্দা) ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায়।
- নাড়ির স্পন্দন ও শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত হয়।
- খাওয়ার রুচি থাকে না; খাওয়াদাওয়া কমে যায়।
- কাশি হতে পারে ও নাক দিয়ে ঘন শ্লেষ্মা পড়তে পারে।
গলা ফুলা রোগের প্রতিকার/চিকিৎসাঃ
- ১৫ থেকে ২০টা সালফামেজাথিন ট্যাবলেট গুঁড়ো করে গুড়েরর সাথে মিশিয়ে দৈনিক দু বার করে ৫দিন পর্যন্ত খাওয়াতে হবে।
- সালফামেজাথিন ৩৩% সলিউশন ইনজেকশান দিতে হবে।
- ১১.৬৬ গ্রাম কর্পূর ৩ গ্রাম সোডিয়াম বাই কার্বনেট ও ৩ গ্রাম নিশাদল কিছু গুড়ের
- সাথে মিশিয়ে দৈনিক ৫/৬ বার খাওয়াতে হবে।
- ডেসুলং ২০% দ্রবণ প্রতি ১০০ কেজি ওজনের পশুর জন্য ২৫ থেকে ৩০ সি সি ওষুধ একবার করে ৩ দিন থেকে ৫দিন চামড়ার নিচে বা শিরায় ইনজেকশান দিতে হবে।
- মারাত্মক এ রোগ দেখা দেয়া মাত্রই অভিজ্ঞ পশু-চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া এবং সুস্থ পশুকে দূরে সরিয়ে রাখা উচিৎ।
১১. তড়কা
Bacillus Authvais নামক একপ্রকার জীবাণু থেকে এ রোগের উৎপত্তি। গরু ছাড়াও ছাগল ভেড় মহিষও এ রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে।
তড়কা রোগের লক্ষণঃ
- হঠাৎ পড়েই মারা যায় বলে এ রোগের লক্ষণ তেমন ধরা যায় না।
- সুস্থ পশু হঠৎ লাফ দিয়ে অথব টলতে টলতে খিঁচুনি দিয়ে মারা যায়।
- মরার পর নাম-মুখ দিয়ে রক্তের ফেনা বের হয়।
- কালচে রঙ-এর আলকাতবার মতো পাতলা পায়খানা হতে পারে।
- পেট ফুলে যায়।
- শরীরের তাপমাত্রা ১০৪° থেকে ১০৬° ফাঃ পর্যন্ত হতে পারে। লোম খাড়া হয়ে থাকে এবং পশু মাথ নিচু করে দাঁড়ায়।
- রক্ত-মেশানো পাতলা পায়খানা হয়। পরে রক্ত মেশানো লালা পড়ে;
- গলা ও বুকের নিচ ফুলে ওঠে এবং ফোলা স্থানের চারপশ নিচু হয়ে যায়।
- জীবিত ও মৃত অবস্থায় নাক, মুখ ও পায়খানার রাস্তা দিয়ে রক্ত ও লালা পড়বে।
- পেট ফুলে যাবে ও মৃতদেহে দ্রুত পচন ধরবে।
তড়কা রোগের প্রতিকার/চিকিৎসাঃ
- অ্যান্টিসিরাম (Antiserum) ইনজেকশান দিতে হবে। পূর্ণ বয়স্ক ও বড় পশুর জন্য ১০০ থেকে ৩০০ মিলিলিটার। ছোট ও অপরিণত বয়ষ্ক পশুর জন্য ৫০-১০০ মিলিলিটার।
- ৫ গ্রামের সালফাডিসিডিন ট্যাবলেট বয়স্ক গরুকে দৈনিক ৬টা করে খাওয়ানো যেতে পারে।
- টিনামাইড ট্যাবলেট দিনে ৬টা করে খাওয়ানো যেতে পারে
- রোগ দেখা দিলে জীবাণুনাশক ওষুধ দিয়ে গোয়ালঘর ধুয়ে দেয়া উচিত।
তড়কা রোগের রোগবিস্তার রোধঃ
এ রোগের জীবাণু মাটিতে ৩০ থেকে ৪০ বছর পর্যন্ত জীবিত থাকতে পারে যা অনুকূল পরিবেশে সক্রিয় রোগজীবাণুতে পরিণত হয়ে গবাদিপশুকে আক্রমণ করতে পারে। তড়কা রোগে কোণ পশু মারা গেলে পশুর গায়ের চামড়া নষ্ট করে ব্লিচিং পাউডার দিয়ে অন্তত ৬ ফুট মাটির নিচে পুঁতে ফেলতে হবে। বন্য পশু যাতে মৃতদেহ খুড়ে বের করতে না পারে সেজন্য কাঁটাজাতীয় গাছ বা বাঁশের শক্ত খুঁটি গর্তের চারপাশে পুঁতে দেয়া উচিত।
তড়কা রোগের প্রতিষেধক ব্যবস্থাঃ
সুস্থ গবাদিপশুকে বর্ষার আগেই প্রতিষেধক টিকা দিয়ে নেয়া উচিত। রোগ প্রতিরোধের জন্য বছরে দুবার টিকা দিতে হয়। সরকারি পশু-চিকিৎসকের সাহায্যে এ প্রতিষেধক টিকা দেয়া যেতে পারে ৷
১২. বাদলা
ফেলাস্টিডিয়াম চৌরিমাই নামক জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হলে গরু, মহিষ, ভেড়ার এ রোগ হয়।
বাদলা রোগের লক্ষণঃ
- হঠাৎ আক্রমণ ও মৃত্যু এ রোগের প্রধান লক্ষণ। পশু দিন দুয়েকের মধ্যে মারা যেতে পারে।
- প্রথমে খুব জ্বর (তাপমাত্রা ১০৩°-১০৬° ফাঃ পর্যন্ত) হয় ও পশম খাড়া হয়ে যায়।
- পা ও গর্দান ফুলে যাবে বা অবশ হবে। ফোলা স্থানে ব্যথা হয় ও হাঁটতে কষ্ট হয়।
- ফোলাংশের ভেতর পচন ধরে এবং টিপ দিলে পচ পচ বা বজ বজ শব্দ হয়।
- নাক, মুখ ও মলদ্বার দিয়ে রক্তস্রাব হতে পারে।
- ফোলাস্থানে পচন লাগে বলে এ রোগকে বাদলা রোগ বলা হয়।
বাদলা রোগের প্রতিকার/চিকিৎসাঃ
পেনিসিলিন অথবা টেরামাইসিন ইনজেকশান ৫ থেকে ১০ মিঃ লিঃ দৈনিক মাংসের মধ্যে দিতে হবে রোগ ভালো না হওয়া পর্যন্ত।
বাদলা রোগের প্রতিষেধকঃ
৬ মাস বয়সে এ রোগের প্রতিষেধক টিকা দিলে ১ বছর পর্যন্ত এ রোগ হয় না। আশঙ্কামুক্ত এলাকায় প্রতি ১০০ কেজি ওজনের পশুর জন্য ২ সিঃ সিঃ ব্ল্যাক কোয়ার্টার অ্যান্টিসিরাম ইনজেকশন দিতে হয়।
১৩. গো-বসন্ত
প্রচলিত নাম হচ্ছে গো-মড়ক, গুটি, শীলতা বা গো-মারী। একধরনের ভাইরাস দ্বারা এ রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। এটি সংক্রামক এবং মহামারী আকারেও এ রোগ দেখা দিতে পারে।
গো-বসন্ত রোগের লক্ষণঃ
- এ রোগে আক্রান্ত হলে পশুর মুখ থেকে আরম্ভ করে পাকস্থলী ও অন্ত্রে ঘা ছড়িয়ে পড়ে।
- হঠাৎ প্রবল জ্বর (তাপমাত্রা ১০৫০-১০৬° ফাঃ পর্যন্ত) হয়। গায়ের লোম খাড়া হয়,
- চোখ লাল হয়, জাবর কাটা বন্ধ করে দেয় ও পিপাসা বেড়ে যায়।
- জ্বরের দ্বিতীয় বা তৃতীয় দিনে মুখের ভেতরটা লাল হয়।
- মুখ দিয়ে লালা পড়ে, কিছু খেতে পারে না।
- দুর্গন্ধযুক্ত খুব পাতলা পায়খানা হয় ও মলে আম, রক্ত ও পচা অংশ থাকে।
- পশু দুর্বল হলে এক সপ্তাহের মধ্যেই মারা যায়।
গো-বসন্ত রোগের প্রতিকার/চিকিৎসাঃ
- এ রোগের কোনো চিকিৎসা নেই; তাই রোগ হবার আগেই টিকা দিয়ে নেয়া উচিত
- এসিট্রিনজেন্ট মিক্সার দিনে ৩ বার খাওয়ানো যেতে পারে।
- জেনসান (Gention) ট্যাবলেট দুটো করে দিনে ৩ বার খাওয়ানে যেতে পারে।
- মুকের ঘা-এর জন্য পটাশ পারম্যাঙ্গানেট পানি দিয়ে ধুয়ে জেনসান ভায়লেট সলিউশন লাগানো যেতে পারে।
১৪. জলাতঙ্ক
ভাইরাসজনিত জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত পশু মানুষ অথবা তৃণভোজী পশুকে (গরু, মহিষ, ছাগল) কামড়ালে এ রোগ হয়।
জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণঃ
- পা, এমনকি সমস্ত শরীর অবশ হয়ে যায়।
- পশুর হিংস্রতা ও উন্মত্ততা বেড়ে যায়।
- দৃষ্টিশূন্যতা দেখা দেয় ও মুখ থেকে লালা ঝরে।
- নিজের শরীর নিজেই চাটতে থাকে।
- অস্থিরতা বেড়ে যায় এবং বারে বারে প্রস্রাব করতে চেষ্টা করে।
- যৌন উন্মত্ততা দেখা দেয়।
- পানাহার বন্ধ করে দেয়।
- মুখে ও গলায় পক্ষাঘাত হয় এবং চোয়াল নিচে ঝুলে পড়ে।
জলাতঙ্ক রোগের প্রতিকার/চিকিৎসাঃ
- জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত পশু (কুকুর, শিয়াল বা বিড়াল) সুস্থ পশুকে কামড়ালে সাথে সাথে প্রতিষেধক টিকা দিলে এ রোগ হয় না।
- একবার রোগের লক্ষণ প্রকাশ পেলে আর চিকিৎসা করলেও কোনো ফল পাওয়া যায় না।
১৫. পেট ফাঁপা
গলায় কিছু আটকা পড়লে বেশি খেলে, বদহজম হলে এবং খালিপেটে বেশি পরিমাণে শিম, কলাই ও কচি ঘাস খেলে পেট ফাঁপে।
পেট ফাঁপা রোগের লক্ষণঃ
- বাঁ দিকের পেট ভীষণ ফুলে ওঠে ও পেটে শব্দ হয়।
- নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট হয় ও জাবর কাটা বন্ধ হয়ে যায়।
- আক্রান্ত পশু বারবার ওঠাবসা করে।
- পেটে ব্যথা হয় এবং নিজের পেট নিজেই আঘাত করার চেষ্টা করে।
- খুব ঘাম বের হয়, মুখ দিয়ে লালা পড়ে ও জিহ্বা বের করে শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণের চেষ্টা করে।
- ঘন ঘন লেজ নাড়বে ও দাঁতে দাঁত ঘষে কট কট শব্দ করবে।
- পেটের ভার পায়ের ওপর রেখে আড়াআড়িভাবে দাঁড়াতে চেষ্টা করবে।
পেট ফাঁপা রোগের প্রতিকার/চিকিৎসাঃ
- সাধারণভাবে রোগীর খাদ্য ও পানি বন্ধ করে দিতে হয়।
- জিহ্বা টেনে বের করে গোড়ায় লবণ মালিশ করলে গ্যাস বের হয়।
- লবণ-মেশানো গরম পানি আদাসহ খাওয়ানো যায়।
- গ্যাসটোডেট পাউডার ৭২ গ্রাম পানি বা খাদ্যের মিশিয়ে দিনে ২/৩ বার খাওয়ানো যায়।
- ৩০ মিঃ লিঃ তারপিন তেল+ ২৫০ গ্রাম আদা ছেঁচা আধা লিটার তিসির তেলসহ একত্রে মিশিয়ে খওয়ানো যেতে পারে।
- আদা, রসুন ও খাবার সোডা সমান পরিমাণে মিশিয়ে ১২৫ গ্রামের মতো করে
- কলাপাতায় বেঁধে তা পশুকে খাওয়াতে হবে।
১৬. পেটের অসুখ
খাদ্যে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস থাকলে অথবা কৃমিজনিত কারণে পেটের অসুখ হতে পারে।
পেটের অসুখ রোগের লক্ষণঃ
- ঘন ঘন পাতলা মলত্যাগ হয় এবং অনেক সময় মলে আম থাকে।
- মলদ্বার ও লেজের চারপাশে মল লেগে থাকে।
- খাওয়ার অরুচি থাকে এবং দুর্বল ও নিস্তেজ হয়ে পড়ে।
- তাপমাত্রা বাড়তে বা কমতে পারে।
পেটের অসুখ রোগের প্রতিকার/চিকিৎসাঃ
- যদি কৃমির জন্য হয়, তবে কৃমির ওষুধ খাওয়াতে হবে।
- খাবার কারণে পেটের অসুখ হলে খাবার বদলিয়ে সহজে হজম হয় এমন খাবার যেমন
- গমের ভুষি, ঘাস এসব খেতে দিতে হবে।
- ভাতের মাড়ের সাথে ৫৮ গ্রাম চক পাউডার, ১২ গ্রাম খয়ের ও ১২ গ্রাম আদার গুঁড়ো মিশিয়ে দিনে ২ বার করে খাওয়াতে হবে।
১৭. কৃমি
বাংলাদেশে শতকরা ৮০ ভাগ গবাদিপশু নানারকম কৃমিতে আক্রান্ত হয়। কোনো কোনো কৃমি পশুর পাকস্থলী ও অন্ত্রে বাসা বাঁধে, কোনো কোনো কৃমি পশুর কলিজা বা ফুসফুসকে আক্রমণ করে।
কৃমি রোগের লক্ষণঃ
- আক্রান্ত পশু দিন দিনই শুকিয়ে যেতে থাকে, বুকের হাড় প্রকটভাবে বেরিয়ে পড়ে এবং পেট মোটা দেখা যায়।
- খুব ক্ষুধা হয়; চোখ কোঠরাগত ও বিবর্ণ দেখায়।
- বার বার তৃষ্ণা পায়; মাঝে মাঝে বদহজম হয়।
- মলের সাথে ছোট ছোট কৃমি দেখা যায়।’
- রক্তশূন্যতা দেখা দেয়।
- শরীরের চামড়া খসখসে হয়ে যায় ও শরীরের লোম পড়ে যেতে পারে।
- পেটের অসুখ বা কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে।
- পশু ঝিমিয়ে পড়ে, ঘন ঘন কাশি হয়।
- শ্বাসকষ্ট দেখা দেয় এবং শ্বাস নেয়ার সময় খড়খড় শব্দ হয়।
কৃমি রোগের প্রতিকার/চিকিৎসাঃ
ক. কলিজাকৃমি বা পাতাকৃমির জন্য- নিমাফেক্স ১০ গ্রাম ভাতের মাড়ের সাথে মিশিয়ে একবার এবং প্রয়োজন হলে ৭ দিন পর আর একবার খাওয়ানো যায়।
দৈহিক ওজন | বোলাসের সংখ্যা |
৭৫ কেজি পর্যন্ত ৭৬-১৫০ কেজি পর্যন্ত ১৫১-২২৫ কেজি পর্যন্ত ২২৬-৩০০ কেজি পর্যন্ত ৩০১-৩৭৫ কেজি পর্যন্ত ৩৭৬-৪৫০ কেজি পর্যন্ত | ১টি বোলাস ২টি বোলাস ৩টি বোলাস ৪টি বোলাস ৫টি বোলাস ৬টি বোলাস |
খ. গোলকৃমির জন্য- নিমাফেক্স তরল বা শুকনো খাদ্যের সাথে মিশিয়ে খাওয়ানো যেতে পারে। ফেনোভিস বাছুরের জন্য ২০ গ্রাম (৪ চা-চামচ) ও বংয়স্ক গরুর জন্য ৩০-৬০ গ্রাম (৬-১২ চা-চামচ- খাওয়ানো যায়। এ ছাড়া কপার সালফেট সলিউশন বা ভালবাজেন বোলাস খাওয়ানো যেতে পারে।
১৮. ওলান ফোলা
নানাপ্রকার সংক্রামক রোগজীবাণু, ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস বা অন্য কোনো রাসায়নিক দ্রব্য ব কাটা ঘা, বাঁটে অত্যধিক চাপ, অপরিষ্কার দোহনকারী বা অস্বাস্থ্যকর স্থানে গাভী রাখা ইত্যাদির কারণে এ রোগ হয়।
ওলান ফোলা রোগের লক্ষণঃ
- ওলান ফুলে যায়, ব্যথা হয় ও ব্যথার জন্য গাভী ওলানে হাত দিতে দেয় না, জ্বর হয়।
- বাঁট ও ওলান শক্ত হয়ে যায়; দুধ দোহন করলে দুধে তলানি পড়ে।
- রোগ মারাত্মক হলে ওলানের ভেতর পুঁজ হবে, ওলান বিবর্ণ হবে, দুধ উৎপাদন কমে যাবে বা বন্ধ হয়ে যাবে।
- সময়মতো চিকিৎসা না করলে বাঁট নষ্ট হবে এবং আর দুধ পাওয়া যায় না।
ওলান ফোলা রোগের প্রতিকার/চিকিৎসাঃ
- লবণাক্ত গরম পানির সেঁক দিলে ভালো হয়।
- ওলানে দুধ জমে ব্যথা হয়। সেজন্য দুধ বের করে বাঁটের ভেতর পেনিসিলিন ঢুকিয়ে দিতে হয়।
- ১০০ কেজি ওজনের গাভীকে অফসিনের টিন ১০০ দৈনিক ৫ সি সি করে ইনজেকশান ৩-৫ দিন দিতে হবে।
- প্রতিটি আক্রান্ত বাঁটের মধ্যে এক টিউব “ইলকোমিলিন ভ্রাইকাউ” ওলানের ভেতর ঢুকিয়ে দিতে হয়।
- ম্যাসটিসিলিন অয়েন্টমেন্ট স্থানীয়ভাবে প্রয়োগ করা যেতে পারে।
১৯. কাঁধের ঘা
গরু বা মহিষের কাঁধে প্রথমত জোয়ালের আঘাতের দরুণ ক্ষত হয়, পরবর্তী সময়ে মাছির দ্বারা কৃমির মত পোকার জন্ম হয় এবং এ ঘা অনেক বড় ও জটিল আকার ধারণ করে।
কাঁধের ঘা রোগের লক্ষণঃ
- ঘা বড় বা ছোট হতে পারে, ঘা-এর চারদিকে চামড়া মরে খুসকির মতো হয়।
- ঘা চুলকায়, পশু গাছ বা অন্য শক্ত কিছুর সাথে ঘা ঘসে ঘসে চুলকায়।
- অনেক সময় মোটা আবরণের সৃষ্টি হয় এবং ফেটে যায়।
কাঁধের ঘা রোগের প্রতিকার/চিকিৎসাঃ
- কার্বলিক সাবানের পানি দিয়ে প্রথমে ঘা পরিষ্কার করে নিতে হবে।
- শুকনো সাদা (তামাক) পাতার গুঁড়োর সাথে ৩ গ্রাম চুন ও নারকেল তেল মিশিয়ে উক্ত ক্ষতস্থানে বারবার লাগানো যায়।
- আলকাতরার সাথে কিছু তুতের গুঁড়ো মিশিয়ে ক্ষতস্থানে প্রলেপ দিতে হয়।
- ৬% (Neguvon) ২০ ভাগ পরিমাণ, সালফানিসাইড ৫ ভাগ এবং ভেসেলিন ৭৫ ভাগ পরিমাণ ভালোভাব মিশিয়ে ক্ষতস্থানে প্রলেপ দেয়া যায়।
- ক্ষতস্থানে যাতে মাছি বসতে না পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। তুলা পরিষ্কার পানিতে ভিজিয়ে ক্ষতস্থান পরিষ্কার করে দিনে ৩ বার ভারমাজল অয়েন্টমেণ্ট লাগানো যেতে পারে।
২০. নিউমোনিয়া
ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ধুলা ইত্যাদি ফুসফুসে ঢুকে নিইমোনিয়া রোগ হতে পারে।
নিউমোনিয়া রোগের লক্ষণঃ
- শরীরের তাপ বেড়ে যায়।
- ঘন ঘন শ্বাস-প্রশ্বাস নেয়।
- খাওয়ার অরুচি হয়, শরীর শুকিয়ে যায়।
- হাঁ করে শ্বাস নিতে চেষ্টা করে।
- বুকে চাপ দিলে নাক দিয়ে শ্লেষ্মা বের হয় ও পশু ব্যথা অনুভব করে।
নিউমোনিয়া রোগের প্রতিকার/চিকিৎসাঃ
- অ্যান্টিবায়োটিক বা সালফার ড্রাগস ব্যবহার করা যায়।
- অ্যান্টিহিস্টাসি বা ফেনারগান ব্যবহার করা যায়।
একসপেকটোরেন্ট জাতীয় ওষুধ :
ক. এমোনিয়াম ক্লোরাইড খ. পটাসিয়াম আইওডাইড গ. ক্যামফর টিংচার বেলডোনা ঘ. পানি | ২ থেকে ২ থেকে ২ থেকে ৬ থেকে | ৪ ড্রাম ৪ ড্রাম ৪ ড্রাম ৮ ড্রাম |
এগুলো একসাথে মিশিয়ে মিকচার তৈরী করে দিনে ২ বার করে ৩/৪ দিন খাওয়ানো যায়।
২১. উকুন, রক্তপায়ী কীট ইত্যাদি
উকুন, রক্তপায়ী কীট ইত্যাদি রোগের লক্ষণঃ
- চামড়া লাল ও মোটা হয়ে যায়।
- লোম উঠে যেতে পারে।
- আক্রান্ত স্থান চুলকানোর জন্য গাছ বা শক্ত কোনো কিছুর সাথে ঘষাঘষি করতে পারে।
উকুন, রক্তপায়ী কীট ইত্যাদি রোগের প্রতিকার/চিকিৎসাঃ
- শক্ত ব্রাশ বা লোহার চিরুনি দিয়ে সমস্ত শরীর আঁচড়িয়ে পরিষ্কার করতে হবে।
- শুকনো গোবর বা কাদা ক্ষতস্থানসমূহ থেকে বারবার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
- একটা বালতিতে সামান্য পরিমাণ ডেটল বা ফিনাইল মিশিয়ে পশুর সমস্ত শরীর ভেজা ন্যাকড়া দিয়ে মুছে ফেলতে হবে।
- ন্যাপথালিন পাউডার নারকেল তেলের সাথে মিশিয়ে মালিশ করতে হবে। ডি ডি টি পাউডার পানির সাথে মিশিয়ে (৫%) সমস্ত শরীরের ছিটিয়ে দিতে হয়।
- পশুর নাক, মুখ, চোখ ইত্যাদি রক্ষা করে তামাকের গুঁড়ো হালকা করে সমস্ত শরীরে মেখে দেয়া যেতে পারে।
২২. বদহজম
দানাদার খাদ্য বেশি করে খেলে অথবা পচা দুর্গন্ধযুক্ত খাদ্য খাওয়ালে বদহজম হয়।
বদহজম রোগের লক্ষণঃ
- পাতলা পায়খানা অথবা কৌষ্ঠকাঠিন্য হয়।
- দুর্গন্ধযুক্ত পচা মলত্যাগ করে।
- খাওয়ায় অরুচি হবে।
- দুধেল গাভীর দুধ কমে যায় ও বলদের কর্মক্ষমতা কমে যায়।
বদহজম রোগের প্রতিকার/চিকিৎসাঃ
সোডি বাই–৬ ড্রাম, ম্যাগসালফ-৪ ড্রাম, লাইম পানি-২-৩ লিটার। এগুলো একসাথে মিশিয়ে দিনে ৩ বার খাওয়ানে যেতে পারে। গ্যাসটোভেট ৭২ গ্রাম খাদ্য ও পানির সাথে মিশিয়ে দিনে ২-৩ বার খাওয়ানো যেতে পারে।
২৩. গাভীর অকাল গর্ভপাত
আমাদের দেশে সঙ্কর ও উন্নত জাতের গাভীর এ রোগের বেশি হয়।
গাভীর অকাল গর্ভপাত রোগের লক্ষণঃ
গর্ভপাতের ক’দিন পূর্ব থেকেই প্রস্রাবদ্বার দিয়ে স্বচ্ছ তরল স্রাব হতে পারে। সাধারণত ৫ থেকে ৭ মাস গর্ভকালের মধ্যে অকাল গর্ভপাত ঘটে থাকে।
গাভীর অকাল গর্ভপাত রোগের প্রতিকার/চিকিৎসাঃ
আক্রান্ত পালে সকল গাভীকে প্রতিষেধক টিকা দিতে হবে। গর্ভধারণের ২-৩ মাস আগে এ টিকা প্রদান করতে হয়।
২৪. কঠিন প্রসব বা প্রসব বিপত্তি
ছোট যোনির মুখ, বড় আকৃতির বাচ্চা, প্রসবে সাহায্যকারী হরমোনের অভাব ইত্যাদি কারণে স্বাভাবিকভাবে বাচ্চা রেব হতে পারে না। গর্ভফুল অস্বাভাবিকভাবে আটকে থাকা, গর্ভবতী পশুর ব্যায়ামের অভাব, অতিরিক্ত পরিশ্রম—এসব কারণেও কঠিন প্রসব ঘটে থাকে।
কঠিন প্রসব বা প্রসব বিপত্তি রোগের লক্ষণঃ
স্বাভাবিক প্রসবে ভ্রণের মুখ ও সামনের পা দুটো সময়মত প্রথমে বাইরে চলে আসে। কঠিন প্রসবে এর ব্যতিক্রম হয়। যেমন- সামনের ১টি পা ও মুখ বাইরে চলে আসতে পারে, শুধু মুখ বের হয়ে আসতে পারে, মুখ ও চার পা বের হয়ে আসতে পারে, শুধু সামনের পা দুটো বের হয়ে আসতে পারে, পেছনের পা দুটো ও লেজ বের হয়ে আসতে পারে।
কঠিন প্রসব বা প্রসব বিপত্তি রোগের প্রতিকার/চিকিৎসাঃ
- স্বাভাবিক প্রসবে বাছুরের মুখ ও সামনের পা দুটো দেখা দেয়া মাত্রই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হাতে হালকাভাবে টানলে সহজে বাচ্চা রেব হয়ে আসে।
- আবার যদি পেছনের পা দুটো ও লেজ বাইরের দিক দেখা যায় তা হলেও লেজ ও পা দুটো ধরে হালকাভাবে টানলে বাচ্চা বের হয়ে আসে।
- বাচ্চা এ দু রকম অবস্থান ব্যতীত অন্য যে-কোনো অবস্থান হলে বাচ্চাকে আস্তে আস্তে ভেতরের দিকে হাতের সাহায্যে চাপ দিয়ে পুর্বে বর্ণিত অবস্থার যে-কোনো এক অবস্থায় আনতে হবে এবং অবস্থান অনুসারে “সামনের পা দুটো মুখসহ” অথবা “পেছনের পা দুটো লেজসহ” হালকাভাবে টেনে বাছুর বের করা সহজ হয়।
- এ দু অবস্থার কোনো অবস্থায় না হলে বাচ্চা বের করার জন্য বল প্রয়োগ করা উচিত নয়। এতে বাচ্চা ও গাভী উভয়েরই জীবনসংশয় দেখা দেয়। তখন পশু- চিকিৎসকের শরনাপন্ন হওয়া বাঞ্ছনীয়।
- বাচ্চা স্বাভাবিক অবস্থায় থাকলে অকসিটোসিন মিনস ৩-৪ মিঃ মাংসে ইনজেকশন দিলে গাভীর প্রসব সহজতর হয়।