গরু মোটাতাজাকরণের সুবিধা সমূহ :
⇒ কম মূলধণ ও কম জায়গার প্রয়োজন হয়।
⇒ অল্প সময়ের (৪-৬ মাসের) মধ্যে গরু মোটাতাজাকরে অধিক মূল্যে বাজারে বিক্রয় করা যায় অর্থাৎ আর্থিক মুনাফা অর্জন করা যায়।
⇒ খুব সল্প সময়ের মধ্যে লাভসহ মুনাফা ফেরত পাওয়া যায়।
⇒ বসতভিটা আছে এমন সকল পরিবার স্বল্প বিনিয়োগকরে এ প্রকল্পের আওতায় আসার ব্যাপক সুযোগ লাভ করতে পারে। ফলে বেকার এবং মহিলাদের কর্মসংস্থানে সুযোগ বেশি হয়।
⇒ বাজারের মাংসের চাহিদা সব সময় বেশি থাকার কারণে বাজার দর কমার সম্ভাবনা কম ও লোকসানের ঝুঁকি কম থাকে।
⇒ বাড়ন্তগরুর রোগ-ব্যাধির প্রকোপ খুব কম থাকে। ফলে আর্থিক ‣তির সম্ভবনা খুব কম। ∙ স্থানীয় বাজার-হাট থেকে অনায়াসে প্রাণি ক্রয় করে প্রকল্প শুরু করা যায়।
মোটাতাজাকরণ গরুর স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা :
⇒ গরু মোটাতাজা করার জন্য প্রাণি ক্রয়ের পর সংক্রামক রোগের টিকা প্রদানের করতে হবে।
⇒ গরুকে কোন টিকা দেওয়া না থাকলে ক্রয় করার ৭ দিন পর থেকে বিভিন্ন ধরনের টিকা ১৫ দিন পর পর দিতে হবে।
⇒ প্রাণিকে যে সকল রোগ প্রতিরোধে টিকা প্রয়োগ করা যেতে পারে- তড়কা, ক্ষুরা, বাদলা (প্রয়োজন বোধে), গলাফুলা (প্রয়োজন বোধে)। ইত্যাদি।
⇒ গরুর নিম্নে বর্ণিত রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সর্ম্পকে সচেতন থাকতে হবে :
❖তড়কা
❖বাদলা
❖ক্ষুরা
❖কৃমি
❖বদহজম/পেটের পিড়া
⇒ মোটাতাজা করার গরুকে পরিস্কার পানি দিয়ে নিয়মিত গোসল করাতে হবে।
⇒ প্রতিদিন গরুকে ভালভাবে গোসল করালে গরুর শরীর সুস্থ থাকে এবং দেহে পরজীবি (উকুন, আঁঠালি, মাছি, মাইটস) আক্রমণ থেকে গরু মুক্ত থাকে।
মোটাতাজাকরণ গরুর পুষ্টি ও খাদ্য ব্যবস্থাপনা :
আমাদের দেশীয় গরুর খাদ্য ব্যবস্থাপনার প্রতি সাধারণত তেমন কোন গুরুত্ব দেয়া হয় না। ফলে এদের নিকট থেকে আশানুরূপ উৎপাদনও পাওয়া যায় না। অথচ:-
⇒ গরুকে পর্যাপ্ত কাঁচা ঘাস।
⇒ পরিমিত প্রক্রিয়াজাত খড়।
⇒ দানাদার খাদ্য (কুড়া, গমের ভূষি, চাউলের খুদ, খৈল, কলাই, মটর, খেশারী, কুড়া ইত্যাদি)।
⇒ পর্যাপ্ত পরিমানে পরিস্কার পানি (নলকুপের টাটকা পানি) সরবরাহ এবং স্বাস্থ্যসম্মত আবাসন ব্যবস্থা।
⇒ নিয়মিত কৃমিনাশক চিকিৎসা ও টিকা প্রদানের ব্যবস্থা।
এগুলো করা হলে এদের উৎপাদন অনেকাংশে বৃদ্ধি করা যায়। আমাদের দেশে গবাদি পশুর সবচেয়ে সহজলভ্য ও সাধারণ খাদ্য হল খড় যার ভিতর আমিষ। শর্করা ও খনিজের ব্যাপক অভাব রয়েছে। বর্তমানে খড়কে ইউরিয়া দ্বারা প্রক্রিয়াজাত করলে তার খাদ্যমান বহুগুণে বেড়ে যায়।
খাদ্য উপকরণে যে পুষ্টি উপাদান অধিক পরিমানে থাকে তাকে সে জাতীয় খাদ্য বলে :
⇒ শর্করা জাতীয় খাদ্য ( ভুট্টা, গম, কাওন, চাউলের কুঁড়া, গমের ভুষি ইত্যাদি)।
⇒ আমিষ জাতীয় খাদ্য ( সয়াবিন মিল, তিল, খৈল, শুটকিমাছ, মিটমিল ইত্যাদি)।
⇒ চর্বি জাতীয় খাদ্য (এনিমেল ফ্যাট, হাঁস-মুরগরি তৈল, ভেজিটেবল অয়েল, সার্কলিভার ওয়েল ইত্যাদি)।
⇒ ভিটমিন জাতীয় খাদ্য (শাক সব্জি ও কৃত্রিম ভিটামিন)
⇒ খনিজ জাতীয় খাদ্য (ঝিনুক, ক্যালশিয়াম ফসফেট, রকসল্ট, লবন ইত্যাদি)।
প্রাণির খাদ্যকে তিন শ্রেণীতে ভাগ করা যায় :
⇒ আঁশ বা ছোবড়া জাতীয় খাদ্যঃ খড়, সবুজ ঘাষ বা কাঁচা ঘাষ। ইত্যাদি
⇒ দানাদার জাতীয় খাদ্যঃ চালের কুঁড়া, গমের ভূষি, খেসারি ভাঙ্গা, তিল বা বাদাম খৈল ইত্যাদি।
⇒ সহযোগী অন্যান্য খাদ্য : খনিজ উপাদান, ভিটামিন ইত্যাদি।
গরুকে প্রচুর পরিমানে বিশুদ্ধ পানি খাওয়ানো :
⇒ দেহ কোষে শতকরা ৬০- ৭০ ভাগ পানি থাকে। তাই কোন প্রাণি খাদ্য না খেয়েও কিছু দিন বাঁচতে পারে। কিন্তু পানি ছাড়া সামান্য কিছু দিনের বেশী বাঁচে না।
⇒ সাধারণত দেহ থেকে পানির ক্ষয় হয় মলমূত্র ও শ্বাস প্রশ্বাসের মাধ্যমে।
⇒ অপরদিকে পানি আহরিত হয় পানি পান করে। রসালো খাদ্য গ্রহণ করে এবং দেহের ভিতর বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানের অক্সিডেশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে।
⇒ দেহের বেশির ভাগ অংশ পানি দ্বারা গঠিত।
প্রণির দেহে পানির কাজ:
⇒ খাদ্যতন্ত্রের মধ্যে খাদ্য ব¯দ নরম ও পরিপাকে সহায্য করে।
⇒ খাদ্যতন্ত্রের মধ্যে পুষ্টি উপাদান তরল করে দেহের প্রত্যন্ত অ লে পরিবহণ করে।
⇒ দেহের তাপ নিয়ন্ত্রণ করে ও দেহকে সতেজ রাখে।
⇒ দেহের ভিত্তিতে দুষিত পদাথর্ অপসারণ করে।
⇒ দেহের গ্রন্থি হতে নিঃসৃত রস। হরমোন।এনজাইম এবং রক্ত গঠনে ভূমিকা রাখে।
প্রাণিকে সবুজ/কাঁচা ঘাস ও দানাদার খাদ্য খাওয়ানোর পরিমান :
১০০ কেজির কম ওজনের জন্য→
- ইউরিয়া প্রক্রিয়াজাত খড় বা শুধু খড়ঃ ২ কেজি
- দানাদার খাদ্য সুষমঃ ২.৫-৩ কেজি
- সবুজ ঘাসঃ ৪-৫ কেজি
১০০-১৫০ কেজি ওজনের জন্য →
- ইউরিয়া মোলাসেস খড় বা শুধু খড়ঃ ৩ কেজি
- দানাদার খাদ্য সুষমঃ ৩.০-৩.৫ কেজি
- সবুজ ঘাসঃ ৭-৮ কেজি
১৫০-২০০ কেজি এবং তদুর্দ্ধ ওজনের জন্য →
- ইউরিয়া মোলাসেস খড় বা শুধু খড়ঃ ৪ কেজি
- দানাদার খাদ্য সুষমঃ ৪.০-৪.৫ কেজি
- সবুজ ঘাসঃ ৮-১২ কেজি
সতর্কতাঃ
গরু মোটাতাজাকরণ করার জন্য কোন প্রকার ঔষধ ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে।
মোটাতাজাকরণ গরুতে ষ্টেরয়েড ব্যবহার করার বিষয়ে সম্পূর্ণভাবে বিরত থাকতে হবে।