লাভ জনক ডেইরী খামারি হতে হলে গাভী হিটে না আসার কারণ ও হিটে আনার উপায় গরু হিটে আসার ঔষধ ও গরু হিটে আনার ইনজেকশন ইত্যাদি সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকতে হবে এরং সঠিক সময়ে সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
আরও পড়ুনঃ https://khamarian.com/গরু-হিটে-আনার-ইনজেকশন/ https://khamarian.com/গাভী-গরম-না-হওয়ার-কারণ/ https://khamarian.com/গাভী-গরু-গরম-হওয়ার-লক্ষণ/ https://khamarian.com/গরু-গরম-করার-উপায়/
বকনা গাভী গরু কৃমিতে অধীক পরিমানে আক্রান্ত হলে গরু হিটে আসে না বা আসলেও কনসেপ্ট করে না। আর তাই প্রজনন ক্ষম গরুকে কৃমি মুক্ত করুন আর কিছু ভিটামিন মিনারেল খায়িয়ে দিন দেখবেন গরুর তেমন বোন সমস্যা না থকলে ঠিক হিটে এসে যাবে।
গরু হিটে না আসলে সকল খাশারিরই মাথাব্যথা তৈরি হয়। কেননা গরু সঠিক সময়ে হিটে না আসলে খামারে লোকসান হবে। গরু শুধু খাবে কোন উৎপাদন আসবে না।
আর তাই গরু হিটে আসার ঔষধ ও চিকিৎসা করতে হবে। সবচেয়ে ভালো হয় একজন ভেটেরিনারী ডাক্তার কে দিয়ে গরুটি পর্যবেক্ষণ করিয়ে তার কাছে থেকে চিকিৎসা পত্র/ গরু হিটে আসার ঔষধ গ্রহণ করা।
আমরা এখানে গরু হিটে আনার ঔষধ সম্পর্কে কিছুটা ধারণা দেবার চেস্টা করবো। গরু হিটে আনতে নিম্নোক্ত পদক্ষেপ ও ঔষধ গ্রহণ করা যেতে পারে-
গরু হিটে আসার ঔষধ প্রয়োগের পূর্ব প্রস্তুতিঃ
- প্রথমে গরুকে সম্পূর্ণ রুপে সকল পরজীবী কৃমি মুক্ত করতে হবে।
- গরুর খাদ্য ব্যাবস্থপনা উন্নত করবে হবে।
- খাদ্যে পর্যাপ্ত প্রোটিন সরবরাহ করতে হবে।
- গাভী বা বকনা কে অন্য এঁড়ে বা ষাঁড় গরু থেকে আলাদা রাখতে হবে।
গাভী বা বকনা গরু হিটে আনার ঔষধ সমূহ নিম্নরূপঃ
- ভিটামিন-এ, ভিটামিন-ডি৩ ও ভিটামিন-ই এই কম্পোজিশনের ইনজেকশন ও সিরাপ পাওয়া যায় এটি প্রয়োগ করতে হবে।
- ভিটামিন-ই পাওডার পাওয়া যায় এটি ব্যবহার করা যেতে পারে। ভিটামিন-ই এবং সেলিনিয়াম এর কম্বিরনশন এক প্রকার ওরাল সলুসন পাওয়া যায় এটি অবশ্যই ব্যবহার করতে হবে। কেননা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় সেলিনিয়ামের ঘাটতি থাকে।
- এছাড়াও যেকোন মাল্টি ভিটামিন ও মাল্টি মিনারেল ব্যবহার করা যেতে পারে।
যেমন-
1. Es-ADE® সিরাপ
এটি একটি ভিটামিন এবং খনিজ সম্পূরক, এতে রয়েছে ভিটামিন এ, ডি৩ ও ই।
বাজারে 100 মিলি, 500 মিলি এবং 1 লিটার বোতল পাওয়া যায়।
ব্যাবহারঃ
ষাড়ের অণ্ডকোষের অবক্ষয় প্রতিরোধ এবং গাভীর ডিম্বাণু উৎপাদন, গর্ভধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি, গরু হিটে আসার ঔষধ হিসেবে, অন্ধত্ব, দুর্বলতা, নিস্তেজতা, অ্যানোরেক্সিয়া, রিকেট, টিকা দেওয়ার সময়, ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগের চিকিৎসার পরে এবং প্রসবের আগে।
ডোজঃ
গরুর ক্ষেত্রে পশু প্রতি 5-10 মিলি টানা 2-3 দিন।
ভেড়া ও ছাগল পরপর ২-৩ দিনে পশু প্রতি 2-3 মিলি।
সাধারণত ডোজই যথেষ্ট, প্রয়োজনে এক সপ্তাহ পর বা রেজিস্টার্ড ভেটেরিনারি ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী পুনরাবৃত্তি করুন।
2. OSE Vet (SK-F) সিরাপ বা Sel-E® ট্যাবলেট
OSE Vet (SK-F) সিরাপ
এটি একটি জৈব সেলেনিয়াম এবং ভিটামিন ই অ্যাসিটেট ওরাল সলিউশন।
100 মিলি, 500 মিলি এবং 1 লি. বোতল পাওয়া যায়।
উপাদানঃ
- ভিটামিন ই অ্যাসিটেট 10 গ্রাম
- সেলেনিয়াম (সেলিসিও হিসাবে) 20 মিলিগ্রাম
কাজঃ
- গরুর (শুক্রাণুর পরিপক্কতা) এবং গাভী গর্ভধারণ ক্ষমতা (হ্যাচেবিলিটি) উভয়ই বৃদ্ধি করে ও ভ্রূণের বিকাশের উন্নতি করে।
- এআই (কৃত্রিম প্রজনন) এর পরে সুস্থ শুক্রাণু উৎপাদনের মাধ্যমে ষাঁড়ের উর্বরতা বৃদ্ধি করে।
- সর্বাধিক গর্ভধারণের হার নিশ্চিত করে তাই গরু হিটে আসার ঔষধ হিসেবেও ব্যবহার করা হয়।
- প্রসবোত্তর সময়ে মেট্রাইটিস এবং ওভারিয়ান সিস্ট রোগের প্রকোপ কমায়।
- গর্ভাবস্থার প্রথম মাসে ভ্রূণের মৃত্যু হ্রাস করে সাহায্যকারী গঠন এবং সক্রিয়করণের মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করে।
- প্লাসেন্টা এবং দুধের মাধ্যমে সেলেনিয়াম স্থানান্তর বাছুরের জোরালো বৃদ্ধি নিশ্চিত করে।
প্রয়োগের পরিমাণঃ
গবাদি পশু, ভেড়া এবং ছাগল: 1 মিলি / 10-20 কেজি শরীরের ওজন 3-5 দিনের জন্য অথবা, নিবন্ধিত পশুচিকিৎসক/পরামর্শদাতা দ্বারা নির্দেশিত।
Sel-E® ট্যাবলেট
সেল-ই বোলাস এর প্রতি বোলাসে আছে ভিটামিন ই ৮০০ মি.গ্রা. এবং সোডিয়াম সেলেনাইট ৪ মি.গ্রা।
প্রস্তুতকারক কম্পানিঃ পপুলার ফার্মাসিউটিক্যাল্স লিমিটেড।
ব্যাবহারঃ
গর্ভধারণ ক্ষমতা ও প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধি, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, দৈহিক বৃদ্ধি, উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি, গরু হিটে আসার ঔষধ হিসেবে ইত্যাদি চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
মাত্রা ও প্রয়োগবিধিঃ
সেল-ই বোলাস গরুকে দৈনিক ১-২ টি বোলাস প্রতিটি প্রাণীর জন্য ৫-১০ দিন। অথবা, রেজিস্টার্ড ভেটেরিনারিয়ান এর পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবহার্য।
3. DB-Vitamin® পাউডার
এটি একটি মাল্টিভিটামিন, খনিজ এবং অ্যামিনো অ্যাসিড বিশিষ্ট পানিতে দ্রবণীয় পাউডার।
প্রস্তুতকারক কম্পানিঃ রেনেটা লিমিটেড/ স্কয়ার।
কাজঃ
দুর্বলতা, অক্ষমতা, পুষ্টির ঘাটতি, তীব্র ও দীর্ঘস্থায়ী রোগের কারণে ভিটামিন ঘাটতি, থেরাপিউটিক চিকিৎসা, গবাদি প্রাণীর ওজন বৃদ্ধি।
ডোজঃ
1 মেট্রিক টন খাবারে 10-20 কেজি ডিবি-ভিটামিন মিশিয়ে 5-10 দিনের জন্য খাওয়াতে হবে।
পরামর্শঃ
সময় হওয়ার পরও গরু ডাকে না এলে বা গর্ভধারণ না করলেই দৌড়ে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার দরকার নেই। কারণ এই সমস্যার সহজ সমাধান হিসেবে অনেক ডাক্তার সরাসরি হরমোন ইনজেকশন দিয়ে দেন। এতে উল্টো ক্ষতি হতে পারে।
এমনকি গরুর যদি পুষ্টিঘাটতি বা অন্য কোনো সমস্যা থেকে থাকে তাহলে হরমোন থেরাপির কারণ তার প্রজনন ক্ষমতা স্থায়ীভাবেও নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
প্রথমে দেখতে হবে পুষ্টি সংক্রান্ত সমস্যা আছে কিনা। তারপর রোগ, বীজ ও পরিবেশগত বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে সে অনুযায়ী গরু হিটে আসার ঔষধ হিসেবে ও চিকিৎসা করতে হবে।
আপনার গরু যদি ব্যবস্থা নেওয়ার পর থেকে ৮-৯ সপ্তাহেও ডাকে না আসে বা গর্ভধারণ না করে এবং আপনার ব্যবহৃত রেশন যদি ওয়েল ব্যালান্সড না হয় থাকে তবে প্রথমে নিচের বিষয়গুলো বিবেচনায় এনে গরু হিটে আসার ঔষধ হিসেবে ও চিকিৎসা করাতে হবেঃ
১. প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট দিতে হবে অর্থাৎ উচ্চ প্রোটিন যুক্ত খাবার যেমন ফিস মিল, সয়াবিন মিল, তিলের খৈল, সূর্যমুখী খৈল অথবা বাজারে প্রাপ্ত প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট দিতে হবে। অতিরিক্ত সরিষার খৈল দেওয়া যাবে না এতে ইরোসিক এসিড থাকে।
২. উচ্চ আঁশ যুক্ত খাবার কমিয়ে উচ্চ এনার্জি যুক্ত খাবার দিতে হবে যাতে মেটাবলিক এনার্জি বৃদ্ধি পায়। এটি হতে পারে ভুট্টা, চিটাগুড় (মোলাসেস ইত্যাদ। এসব ক্ষেত্রে আঁশ ১০% এ নামিয়ে আনতে হবে যদিও এতে দুধের ঘনত্ব ও ফ্যাট কমে যেতে পারে। তবে যে কোনোভাবেই হোক অ্যানায়ন-ক্যাটায়ন মান পজেটিভ রাখতে হবে।
3. আপনার গরু যদি ব্যবস্থা নেওয়ার পর থেকে ৮-৯ সপ্তাহেও ডাকে না আসে বা গর্ভধারণ না করে তবে একজন অভিজ্ঞ ডাক্তারকে দিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করিয়ে দেখতে হবে গরুর জরায়ুতে কোনো প্রকার সমস্যা আছে কিনা, কোন প্রকার ভাইরাস বা ব্যকট্যারিয়া দ্বারা আক্রান্ত কিনা ও জরায়ুতে ফ্যাট জমেছে বা সঠিক স্থানে আছে কিনা।
গরু হিটে আসে না তার কন্য কি করা যায়
Pingback: সঠিক সময়ে গরু গরম করার উপায়, গরু হিটে আনার চিকিৎসা, গরু হিটে না আসলে করনীয়? » খামারিয়ান লাইভস্ট