বিষয়ঃ
গর্ভবতী গাভী চেনার শারীরিক বৈশিষ্ট্য সমূহ কি? লক্ষন দেখে কিভাবে গর্ভবতী গাভী চেনা যায়? গাভীর প্রেগনেন্সি টেস্ট কিট ব্যবহার করে গর্ভবতী গাভী চেনার উপায় কি?

গর্ভবতী গাভী চেনা একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে গাভী গর্ভাবস্থায় আছে কিনা তা নির্ধারণ করা যায়। গাভীর গর্ভাবস্থা নির্ধারনের মাধ্যমে উৎপাদনশীল ও অনুতপাদনশীল গাভী আলাদা করে খামারের ব্যয় কমিয়ে লাভজনক করা যায়।
আমাদের দেশের প্রচলিত গর্ভাবস্থা নির্ধারণ প্রক্রিয়া হচ্ছে গাভির মলদ্বারের ভিতর দিয়ে হাত ঢুকিয়ে ভ্রুনের অবস্থা নির্ধারণ করে গর্ভাবস্থা নির্নয় যাকে রেক্টাল পালপেশন বলে।
রেকটাল পালপেশনের মাধ্যমে গাভীর গর্ভাবস্থা নির্ধারনের জন্য গাভীকে কৃত্রিম প্রজনন করানোর পরে প্রায় তিন মাস অপেক্ষা করতে হয় যা অনেক সময় সাপেক্ষ ব্যাপার।
গর্ভাবস্থায় না থাকলে এই কয়েক মাসে গাভীর পিছনে অনর্থক ব্যয় খামার খরচ বাড়িয়ে দেয়। যারা সচেতন খামারি তারা রেকটাল পালপেশনের মাধ্যমে গাভীর গর্ভাবস্থা নির্ধারন কে ভ্রুনের জন্য অনেক ঝুকিপূর্ণ মনে করেন।
আবার কিছু কিছু গাভী পাওয়া যায় যাকে কৃত্রিম প্রজনন করানোর পরে মনে হয় গর্ভধারণ করেছে কিন্তু কয়েকমাস পরে আবার হিটে আসে এবং তখন পরীক্ষা করে দেখা যায় গাভীটি গর্ভধারণ করেনি যাকে সিউডোপ্রেগনেন্সি বলা হয়।

গর্ভবতী গাভী চেনার শারীরিক বৈশিষ্ট্য সমূহ কি?
প্রাকৃতিক উপায়ে বা কৃত্রিম পদ্ধতিতে গাভীকে প্রজনন করার পরও অনেক সময় গর্ভধারণ সম্বন্ধে সন্দেহ থেকে যায়।
কারন গর্ভধারণের কাল পাঁচ মাসের কম হলে বাইরের লক্ষণের উপর পুরোপুরি বিশ্বাস করা যায় না। তাই গর্ভবতী গাভী চেনা সত্যিই একটি কঠিন ব্যপার।
গাভীকে শান্তভাবে দাঁড় করে নিন এবং গর্ভবতী গাভী চেনার জন্য নিম্নলিখিত লক্ষণগুলো পর্যবেক্ষণ করুন।
১. গাভী ষাঁড়ের কাছে থাকতে পছন্দ করে কিনা।
২. গাভীর পেট স্বাভাবিকের চেয়ে বড় কিনা লক্ষ করুন।
৩. তিন মাস বয়সের পর থেকে পেটের ভেতর কিছু নড়াচড়া করে কিনা।
৪. দুধ ধীরে ধীওে কমে যায় কিনা।
৫. যৌনাঙ্গ ফুলে যায়, ঝুলে পড়ে এবং নরম হতে থাকে কিনা খেয়াল করুন।
৬. খয়েরী রঙের মল ত্যাগ করে কিনা দেখুন।
৭. বাঁট ধরে টান দিলে কলার কসের মত আঠালো পদার্থ বের হয় কিনা পরীক্ষা কর।
৮. দূর্বা ঘাসের উপর কয়েকদিতে হবে প্রস্রাব করালে ঘাস হলুদ হয়ে যায় কিনা।
এসব গর্ভবতী গাভী চেনার লক্ষণগুলো যদি নির্বাচিত গাভীর সাথে মিলে যায় তবে বুঝে নিতে পারেন যে গাভটি গর্ভবতী।

লক্ষন দেখে কিভাবে গর্ভবতী গাভী চেনা যায়?
১. গাভীকে প্রজনন করার পর দুই দিতে হবেের মধ্যে স্বাভাবিক অবস্থায় চলে আসবে।
২. গাভী/বকনাকে প্রজননের পর উত্তেজনা কমে যাবে।
৩. প্রজননের ২১ দিতে হবেের মধ্যে গাভী/বকনা আর গরম হবে না।
৪. দুধের গাভী হলে আস্তে আস্তে দুধ কমতে থাকবে।
৫. একমাস বা দুইমাস পর থেকে মল কখনো কখনো হলুদ বর্ণের মতো হবে।
৬. গাভী/বকনার পেট ও ওলান আস্তে আস্তে বড় হতে থাকবে।
৭. চার হতে ছয় মাসের মধ্যে গাভীর পেটে বাচ্চা নড়াচড়া করবে।
৮. গাভী/বকনার স্বাস্থ্য উন্নতি হতে থাকবে।
৯. গাভী/বকনার শরীলে চর্বি জমবে এবং শরীর ভাড়ি হবে।
১০. গাভী/বকনার কোমড় নিচের দিকে ঝুলে যাবে।
১১. গাভীর চালচলন আস্তে আস্তে শান্ত প্রকৃতির হবে।
উল্লিখিত লক্ষণসমূহ দেখে গর্ভবতী গাভী চেনা যায়।

গাভীর প্রেগনেন্সি টেস্ট কিট ব্যহার করে গর্ভবতী গাভী চেনার উপায় কি?
অতি স্বল্প সময়ে গর্ভধারণ নিশ্চিত কিনা পরীক্ষা করে গর্ভবতী গাভী চেনা ও ব্রিডিং সাকসেস রেট নির্ধারণ করা যায় এবং এর উপর নির্ভর করে গাভীটি খামারে রাখ যাবে কিনা, গর্ভবতী গাভী চেনার পর উর্বর গাভীগুলো আলাদাভাবে খামারের জন্য রেখে দেয়া যায়। অনুতপাদনশীল গাভী খামার থেকে ছাটাই করা উচিত।
গর্ভবতী গাভী চেনার এই জটিল ও সময় সাপেক্ষ ব্যবস্থার পরিবর্তে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি গাভীর প্রেগনেন্সি টেস্ট কিট ব্যবহারের মাধ্যমে খুব সহজেই স্বল্প সময়ে বীজ দেওয়ার মাত্র ১৮-২৪ দিনের মধ্যেই গাভীর গর্ভাবস্থা নির্ধারন করা যায়।
এই গর্ভবতী গাভী চেনার প্রেগনেন্সি টেস্ট কিট Colloidal gold method এর ভিত্তিতে কাজ করে যা খুবই সংবেদনশীল ও সঠিক ফলাফল দিয়ে থাকে। এটা ব্যবহার করতে কোন বিশেষ দক্ষতার প্রয়োজন নেই। মাত্র ৫/১০ মিনিটের মধ্যেই ফলাফল পাওয়া যায়।
১. একটা বাটি/কাপে গাভীর সকালের মুত্র ও পরিষ্কার মুত্র সংগ্রহ করতে হবে।
২. কিট টা বের করে ড্রপারের সাহায্য কীটের উপরের ছোট্র গর্ত তে ৩-৪ ফোটা মুত্র দিতে হবে।
৩. ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করুতে হবে ৫-১০ মিনিট।
৪. যদি কন্ট্রোল লাইনে একটা লাল দাগ দেখা যায় তাহলে নেগেটিভ মানে গাভীটি গর্ভবতী না।
৫. যদি কন্ট্রোল লাইনে দুইটা লাল দাগ দেখা যায় তাহলে পজেটিভ মানে গাভীটি গর্ভবতী।
৬. যদি কোন দাগ না আসে তাহলে তাহলে কিট টা কাজ করেনি। তখন পুনরায় নতুব কিট ব্যবহার করে টেস্ট করুন।
৭. ব্যবহারের পর কীট নির্দিষ্ট স্থানে ফেলে দিতে হবে।

পরামর্শঃ
লাভজনকভাবে ডেইরি খামার গড়ে তুলতে চাইলে গাভীর প্রজনন ব্যবস্থাপনার উপর গুরুত্ব দেয়া উচিত। যথাযথ গাভীর রেশন তৈরি করতে হবে যেন সকল সুষম খাদ্য উপাদান পরিমান মতো থাকে এবং পর্যাপ্ত কাচা ঘাসের ব্যবস্থা রাখতে হবে৷
যদি খামারের গাভীগুলোর প্রজনন হার খুব কম হয়ে থাকে তাহলে খামার ব্যবস্থাপনা ও গাভীর খাদ্য ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আনা প্রয়োজন এবং প্রজনিন হার কম হওয়ার সঠিক কারন নিরুপন জরুরী এক্ষেত্রে রেজিস্টার্ড ভেটেরিনারি ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে খামারের ত্রুটিগুলো নির্নয় করে সঠিক খাদ্য ব্যবস্থাপনায় আনতে হবে যেন আগামীতে খামারের গাভীরগুলার প্রজনন হার বেড়ে যায়।
এছাড়া খামারের ষাড় অথবা সিমেন অথবা সিমেন কোম্পানি পরিবর্তন করে প্রজনন হার বাড়ানো যেতে পারে। সবসময় দক্ষ কৃত্রিম প্রজনন কারীর মাধ্যমে গাভীকে সঠিক সময়ে প্রজনন করাতে হবে।
খামারিদের সাথে সংযোগ করতে, জ্ঞান ও বিভিন্ন তথ্য শেয়ার করে নিতে এবং বাংলাদেশের খামারি সম্প্রদায়কে শক্তিশালী করতে বাংলাদেশের খামারিদের একটি সামাজিক নেটওয়ার্ক "খামারিয়ার ক্লাব” এ যোগ দিন।
সমাপ্তঃ
গর্ভবতী গাভী চেনার শারীরিক বৈশিষ্ট্য সমূহ কি? লক্ষন দেখে কিভাবে গর্ভবতী গাভী চেনা যায়? গাভীর প্রেগনেন্সি টেস্ট কিট ব্যবহার করে গর্ভবতী গাভী চেনার উপায় কি?
Ami khamar korte chai