বিস্তারিত জানতে আমাদের সম্পূর্ণ পোষ্টটি পড়ুন। এছাড়াও গরুর গর্ভফুল, গাভীর গর্ভকাল, গরুর প্রসব বিষেয়ে ভবিষ্যতে আগামী পর্ব গুলোতেও আরও আলোচনা থাকবে। তাই যারা আমাদের ব্লগে নতুন চিকিৎসা সম্বন্ধীয় আলোচনাগুলি দেখতে চাইলে আমাদের অবশ্যই আমাদের ফেসবুক পেইজ এ লাইক করতে ভুলবেন না। চলুন শুরু করা যাক আজকের আলোচনাটি।
গাভীর গর্ভফুল কি?
এনডোমেট্রিয়াম ও করিয়ন এর সংযোগকারী অঙ্গের নাম গর্ভফুল। সাধারনত গাভীর গর্ভধারনের ৩২ দিন পর থেকেই গর্ভফুলের কার্যক্রম শুরু হয়।
গাভীর গর্ভফুল এর কাজ কি?
● এই গর্ভফুলের মাধ্যমে গর্ভস্থ বাচ্চা মায়ের কাছ থেকে অক্সিজেন, কার্বন ডাই অক্সাইড ও পুষ্টি গ্রহন করে থাকে এবং গাভী বাচ্চা প্রসবের ৪ থেকে ১২ ঘন্টার মধ্যেই এই গর্ভফুল পড়ে যায়।
গাভীর গর্ভফুল আটকে যাওয়া কাকে বলে?
● গর্ভফুল পরে যাওয়ার স্বাভাবিক সময় হিসাবে বিবেচনা করা হয় ১২-২৪ ঘন্টা। বাচ্চা প্রসবের ২৪ ঘন্টার মধ্যে স্বাভাবিক ভাবে গর্ভফুল না পড়লে তাকে গর্ভফুল আটকে যাওয়া (Retained Placenta) বলে। দুর্বল ও উন্নত জাতের গাভীতে এ রোগ বেশি হয়ে থাকে।
● গাভীর বাচ্চা প্রসবের সময় ফুল আটকে গেলে করণীয় সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই জানা নেই। আমাদের দেশে গাভী পালন একটি লাভজনক পেশা। আমাদের দেশে বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই গাভী পালন করা হয়ে থাকে। গাভী পালন করে গিয়ে বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে হয়। এসব সমস্যার মধ্যে অন্যতম হল গাভীর বাচ্চা প্রসবের সময় ফুল আটকে যাওয়া।
● এক কথায় বলতে গেলে, অনেক সময় গাভীর বাচ্চা প্রসবের পর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ফুল পড়ে না এবং এসব ক্ষেত্রে গর্ভ ফুলের অংশ বিশেষ বাইরের দিক হতে ঝুলে থাকে। গাভী সাধারণত বাছুর প্রসবের ৩০ মিনিট থেকে আট ঘন্টার মধ্যে গর্ভফুল পড়ে যায় স্বাভাবিক ভাবে। অনেক সময় এটা স্বাভাবিক ভাবে আর বের হয়ে আসে না। এটাকেই ফুল আটকে যাওয়া বলে।
গাভীর গর্ভফুল আটকে যাওয়া ফলে কি সমস্যা হয়?
● গাভীর গর্ভফুল পরা একটি জটিল শারীরিক, যান্ত্রিক ও হরমোন ঘটিত প্রক্রিয়া। কিছু গাভীতে বাচ্চা প্রসবের পর গর্ভফুল স্বাভাবিক নিয়মে পরলেও অনেক গাভীতে তা আটকে যায়। গর্ভফুল বেশি দিন আটকে থাকলে জরায়ু প্রদাহ ও সেপ্টিসেমিয়ার কারনে পশু মারা যেতে পারে।
গাভীর গর্ভফুল আটকে যাওয়া ২০ টি কারণ
১) প্রসবের পর বাচ্চাকে সরাসরি ওলান থেকে শাল দুধ চুষে না খাওয়ালে।
২) গর্ভাবস্থায় গাভীর শরীরে ক্যালসিয়াম, আয়রন, ভিটামিন এ,ডি,ই ও মিনারেলের অভাব হলে।
৩) রক্তে ইস্ট্রোজেন হরমোনের অভাব ও অপুষ্টি হলে।
৪) বিভিন্ন জীবানুর আক্রমন হলে।
৫) অপরিপক্ক গর্ভফুল এর কারেণে এটি আটকে যেতে পারে।
৬) গাভীর অপরিপক্ক প্রসব।
৭) গর্ভকালিন সময় কাচা ঘাস ও সুষম খাদ্য না খাওয়ালে।
৮) গাভীর শীরিরে বিভিন্ন হরমোনের প্রভাবে।
৯) নির্দিষ্ট সময়ের আগে বা পরে বাচ্চা প্রসব করলে।
১০) জোরপুর্বক বাচ্চা টেনে হিচরে বের করলে অর্থাৎ কষ্ট প্রসব বা প্রসব বিঘ্নতা ঘটলে।
১১) গাভীর শীরিরে ক্যালসিয়ামের অভাব এর কারণে।
১২) গাভীর স্বাস্থ্যহানী ঘটলে।
১৩) যমজ বাচ্চা হলেও গর্ভফুল আটকে যায়।
১৪) গর্ভবতী গাভীতে ছত্রাক জাতীয় সংক্রমক রোগ ভিব্রিওসিস বা যক্ষ্মা হলে।
১৫) জরায়ুর মাংশপেশীর সঙ্কোচন হীনতা।
১৬) মরা বাছুর হওয়া।
১৭) সময়ের বেশ আগেই ডেলিভারি হয়ে যাওয়া।
১৮) অতিরিক্ত গরম-ভ্যাপসা আবহাওয়াতে, ডেলিভারি হওয়া।
১৯) গাভীর অ্যাবরশন হওয়া বা, অ্যাবরশনের হিস্ট্রি থাকা।
২০) ডেলিভারিতে অনেক লম্বা সময় লাগা বা, অনেক কষ্ট হওয়া।
ইত্যাদি।
গাভীর গর্ভফুল আটকে যাওয়া ১২ টি লক্ষণ
১) স্বাভাবিক সময়ের ( ৬–১২ ঘন্টা) মধ্যে গর্ভ ফুল না পড়া হলো অন্যতম প্রধান লক্ষন।
২)বাচ্চা প্রসবের পর গর্ভফুলের অর্ধেকটা বের হয়ে নিচের দিকে ঝুলে থাকে।
৩) গাভীর অল্প জ্বর, অস্বস্তি বোধ ও খাওয়ার অরুচি দেখা যাবে।
৪) গর্ভফুল বের করার জন্য বার বার কোঁথ দিবে ফলে জরায়ু বের হয়ে আসতে পারে।
৫) ভাজাইনাল ও জরায়ুর প্রোলাপস হতে দেখা যায়।
৬) প্রসাব করার সময় দুর্গন্ধ হবে ও দুধ কমে যাবে।
৭) জীবানু দ্বারা আক্রন্ত হলে জ্বর থাকবে এবং খাবে না।
৮) গাভীর বাচ্চা প্রসবের পর গর্ভফুল অর্ধেকটা বের হয়ে নিচের দিকে ঝুলে থাকে।
৯) গাভীর শরীরে অল্প জ্বর, অস্বস্তি বোধ ও খাবার খাওয়ায় অরুচী দেখা দেয়।
১০) গর্ভফুল বের করার জন্য বার বার কোৎ দিতে থাকবে। এতে জরায়ু বের হয়ে আসতে পারে।
১১) প্রস্রাব করার সময় দুর্গন্ধ বের হবে ও গাভীর দুধ কমে যাবে।
১২) ভেজাইনাল ও জরায়ুর প্রলাপস হতে দেখা যায়।
উপসংহার
গাভীর গর্ভফুল আটকে যায়, এর কারন, লক্ষন, চিকিৎসা ও প্রতিরোধ সম্পর্কে ধারনা থাকলে এ সমস্যা বহুলাংশে এড়ানো সম্ভব। গাভীর গর্ভফুল না পড়লে করণীয় ও সমস্যার কারণ বিশ্লেষন। গাভীর গর্ভফুল আটকে যাওয়া (Retained Placenta) এখন খুবই সাধারণ ঘটনা। গাভীর গর্ভফুল না পড়লে করণীয় বিষয় নিয়ে আলোচনার আগে এর কারণ ও লক্ষণ নিয়ে আলোকপাত করা প্রয়োজন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই রোগটি মিল্ক ফিভার (milk fever) ও ডিসটোসিয়া (dystocia) এর সাথে সম্পৃক্ত। এটি একটি গবাদি পশুর প্রজনন তন্ত্রের রোগ।
আজকের মত এখানেই বিদায় নিচ্ছে। আগমী পর্বে আমরা আলোচনা করব। গাভীর গর্ভফুল না পড়লে করণীয়, গাভীর গর্ভফুল সমস্যার প্রতিকার ও গাভীর গর্ভফুল না পড়ার চিকিৎসা নিয়ে। খামারিয়ান এর সাথেই থাকুন।
আমার জল আটকে পড়ে আছে প্রায় ২৪ ঘটনা এখন কি করব