খামারিয়ান.কম এর, এই পোষ্টে উপস্থাপন করা হচ্ছে- গর্ভবতী গাভীর যত্ন ও পরিচর্যা, প্রসবকালীন গাভীর যত্ন ও দুগ্ধবতী গাভীর যত্ন সমূহের সুন্দর ও সহজ একটি তালিকা। অশা করি এটা খামারিদের দক্ষতা বৃদ্ধি ও খামারের মান উন্নয়তে কাজে দিবে।
(১০টি) গর্ভবতী গাভীর যত্ন ও পরিচর্যাঃ
১। দুগ্ধ খামারের মূল অর্থনীতি গাভীর দুধ উৎপাদন ও নবজাত বাছুরের অবস্থার উপর নির্ভরশীল। তাই পর্যাপ্ত দুধ ও সুস্থ সবল বাছুরের জন্য গর্ভাবস্থায় গাভীর বিশেষ যত্ন নেয়া প্রয়োজন ।
২। বাচ্চা প্রসবের দু’মাস পূর্ব থেকে গাভীকে পূর্ণ বিশ্রামের সাথে সুষম খাদ্য সরবরাহ করা উচিৎ। খাদ্যে যাতে সহজ পাচ্য হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। এসময় কাঁচা ঘাসের সাথে গাভীর স্বাস্থ্যের অবস্থার উপর ভিত্তি করে ২-৩ কেজি দানাদার খাদ্য খাওয়ানো ভাল ।
৩। গর্ভবতী পশুর ঘর যাতে অতিরিক্ত ঠাণ্ডা বা গরম না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। এছাড়া ঘরে বৃষ্টির পানি না ঢুকতে পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
৪। গর্ভবতী গাভীকে পিচ্ছিল রাস্তায় নেয়া যাবে না কারণ পড়ে গেলে মারাত্মক ক্ষতি হবার সম্ভাবনা থাকে।
৫। সাধারণত গাভীকে প্রত্যহ ১৪/১৫ কেজি কাঁচা ঘাস, ৩/৪ কেজি খড়, ২/৩ কেজি দানাদার খাদ্য ও পর্যাপ্ত পানি খাওয়াতে হয়। গর্ভবতী গাভীর দানাদার খাদ্যে ৪০% গমের ভূষি, ৪০% খেসারি ভাঙ্গা, ১০% খৈল, ২% চাউলের কুড়া, ৬% চিটা গুড়, ১.৫% খনিজ মিশ্রণ (প্রিমিক্স) এবং ০.৫% লবণ মিশিয়ে তৈরি করতে হবে।
৬। প্রসবের অন্তত এক মাস পূর্বে গর্ভবতী গাভীকে পাল থেকে সরিয়ে পৃথকভাবে নিরাপদ ঘরে রাখতে হবে।
৭। গাভী সাধারণত ২৮২ দিন বাচ্চা গর্ভে ধারণের পর প্রসব করে। গাভীর গর্ভাবস্থায় বয়স অনুযায়ী গাভীর খাদ্য ও যত্নের প্রয়োজন।
৮। গর্ভাবস্থায় শেষ পর্যায়ের তিন মাস ফিটাস অতি দ্রুত বাড়ে। এই সময় গাভীর স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য ও গর্ভস্থ বাচ্চার স্বাভাবিক বাড়ন অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য অতিরিক্ত খাদ্য ও বিশেষ যত্নের প্রয়োজন হয়।
৯। দুধ উৎপাদনকারী গর্ভবতী গাভীর দুধ উৎপাদনের শেষ ভাগে দেহের সঞ্চিত ভিটামিন, খনিজ পদার্থ, চর্বি ও অন্যান্য পুষ্টিকর উপাদানসমূহ দুধের মাধ্যমে প্রায় নিঃশেষ হয়ে যায়। তাই গর্ভাবস্থায় শেষ ২-৩ মাস গাভীকে সুষম খাদ্য সরবরাহ করা প্রয়োজন।
১০। গর্ভবতী গাভীকে নিয়মিত গোসল করানো প্রয়োজন। এছাড়া মশা, মাছি ও হিংস্র প্রাণীর আক্রমণ থেকে গাভীকে রক্ষা করার ব্যবস্থা করতে হবে।

(৯টি) প্রসবকালীন গাভীর যত্নঃ
১। প্রসবকালীন সময় প্রধানত নিম্নোক্তভাবে গাভীর যত্ন ও পরিচর্যা করা প্রয়োজন।
২। প্রসবের ৮-১২ ঘণ্টার মধ্যে যদি ফুল না পড়ে তবে পশু চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
৩। গাভীর প্রসবকালীন সময় দুগ্ধ জ্বর ও ওলান ফোলা রোগ হবার সম্ভাবনা থাকে। তাই এসব রোগ প্রতিরোধের জন্য পশু চিকিৎসকের পরামর্শমত দুগ্ধবতী গাভীর যত্ন নিতে হবে।
৪। গাভীর ওলান ও বাট কুসুম গরম পানি দিয়ে ভালভাবে ধুয়ে বাঁট টেনে শাল দুধ বের হচ্ছে কিনা দেখে বাটে বাছুরের মুখ লাগিয়ে শাল দুধ খাওয়াতে হবে।
৫। সুস্থসবল গাভীর ক্ষেত্রে প্রসবের সময় তেমন কোন অতিরিক্ত সাহায্যের প্রয়োজন হয় না। তবে অনেক সময় প্রসবে জটিলতা দেখা দিতে পারে। তাই বাচ্চা প্রসব না হওয়া পর্যন্ত সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণের প্রয়োজন হয়। এ প্রসবকালীন সময় গাভীকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন জায়গায় রাখতে হবে।
৬। গাভীর বাচ্চা প্রসবের পর অল্প গরম পানিতে ০.০১% পটাসিয়াম পারম্যাঙ্গানেট মিশিয়ে গাভীর যৌন অঙ্গ, দেহের পশ্চাদ অংশ ও লেজ ভালভাবে পরিষ্কার করে দিতে হবে।
৭। গাভীর যেন ঠাণ্ডা না লাগে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। এছাড়া প্রসবের পর অল্প গরম পানি বা অল্প গরম গুড়ের সরবত গাভীকে খাওয়ানো ভাল।
৮। স্ফীত ওলান কোন রকম কাটা বা ভাঙ্গা কাচের টুকরা লেগে যাতে ক্ষত না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
৯। গাভীর প্রসবের ২-৪ ঘণ্টার মধ্যে ফুল পড়ে যাবার কথা। ফুল পড়ে গেলে তা সাথে সাথে মাটির নীচে পুতে রাখতে হবে। গাভী যাতে ফুল খেয়ে ফেলতে না পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। কারণ ফুল খেয়ে ফেললে গাভীর মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।

(১১টি) দুগ্ধবতী গাভীর যত্নঃ
১। দুগ্ধবতী গাভীর উপযুক্ত যত্ন ও পরিচর্যা না হলে দুধ উৎপাদন কমে যায় ও নানান রোগ ব্যাধির আক্রমণও ঘটতে পারে। তাই দুগ্ধবতী গাভীর সর্বোচ্চ দুধ উৎপাদন, উর্বরতা ও স্বাস্থ্যরক্ষার জন্য নিম্নোক্ত যত্ন ও পরিচর্যার প্রয়োজন হয়।
২। দুধ দোহনের কালে গাভীকে আঘাত বা বিরক্ত করা, লাল কাপড় দেখানো ইত্যাদি ঠিক নয়। আবার কোন আগন্তক ব্যক্তি বা আশেপাশে যাতে কুকুর বিড়াল না থাকে সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে। এসবের কারণে দুধ কমে যেতে পারে।
৩। গাভীর শরীর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা প্রয়োজন। গ্রীষ্মকাল প্রতিদিন এবং শীতকালে সপ্তাহে দু’বার স্নান করাতে হবে। স্নানের পর কাপড় দিয়ে মুছে নেয়া উত্তম। এছাড়া ব্রাশ দিয়েও গাভীর শরীর সকাল বিকালে পরিষ্কার করা যায়।
৪। গাভীর দুধ উৎপাদনের পরিমাণ খাদ্য খাওয়ানোর উপর নির্ভর করে। গাভীর দৈহিক ওজন, উৎপন্ন করতে হবে। উপযুক্ত পরিমাণ সুষম খাদ্য প্রতিদিন খাওয়াতে হবে। খাদ্যের পাশাপাশি পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করতে হবে।
৫। গাভীর আরামদায়ক শয়নের জন্য গোশালার মেঝেতে শুকনো খড় বিছিয়ে দিতে হবে।
৬। গাভীকে দিবারাত্র গোশালায় রেখে পালন করলে স্বাস্থ্যহানি ঘটে। তাই গাভীকে প্রতিদিন ২-৩ ঘণ্টার জন্য ছেড়ে দেয়া উত্তম। একেবারে ছেড়ে দেয়ার অসুবিধা থাকলে লম্বা দড়ি দিয়ে মাঠে বেঁধে দেয়া যাবে। এ ব্যবস্থায় গাভীর ব্যায়ামের কাজ হয়।
৭। নবজাত বাছুরকে শালদুধ খাওয়াতে হবে। এতে বাছুরের উপকার হবে উপরন্ত গাভীর দুধদান ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। অন দিকে শাল দুধ ওলানে থেকে গেলে গাভীর ওলানফোলা রোগ হবার সম্ভাবনা থাকে এবং গাভীর দুধ দান ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় না।
৮। দুগ্ধবতী গাভীকে খাদ্য খাওয়ানো, শরীর পরিষ্কার, দুগ্ধ দোহন, ব্যায়াম প্রভৃতি কাজে নিয়মিত যথাসময়ে করতে হয়।
৯। প্রত্যহ কম পক্ষে দু’বার গোশালার মেঝে পরিষ্কার করতে হয়। এছাড়া গোশালার দেয়াল, মেঝে, নালা, নর্দমা ইত্যাদি ডেটল বা ফিনাইল মিশ্রিত পানি দিয়ে প্রত্যহ পরিষ্কার করতে হবে।
১০। দুধ দোহনের পূর্বে ওলান, বাঁট ও পিছনের অংশ অল্প গরম পানিতে ডেটল মিশিয়ে কাপড় চুবিয়ে ভালভাবে মুছে দিলে বিশুদ্ধ ও পরিষ্কার দুধ পাওয়া যাবে।
১১। দুগ্ধবতী গাভী গরম হলে কৃত্রিম প্রজননের ব্যবস্থা করতে হবে।
উপরে উল্লিখিত, গর্ভবতী গাভীর যত্ন ও পরিচর্যা, প্রসবকালীন গাভীর যত্ন ও দুগ্ধবতী গাভীর যত্ন সমূহ পালন বা মেনে চলার চেষ্টা করেবন। এ ধরণের আরও পরামর্শ পেতে নিয়মিত খামারিয়ান,কম এর ভিজিট করবেন। আল্লাহ আপনার ব্যাবসায় বরবত দান করুন। আমিন।