প্রত্যক খামারিদের গাভী বা বকনাকে সঠিক সময়ে পাল দেয়া বা প্রজনন করানোর জন্য গরম হওয়ার মুখ্য ও সাহায্যকারী গরু গরম হওয়ার লক্ষণ সম্পর্কে ভাল জ্ঞান থাকা দরকার।
⇒ প্রিয় খামারী, গরু ডাকে আসার লক্ষণ সমূহের মাঝে একটি স্পষ্ট লক্ষন হল যোনী পথা দিয়ে স্বচ্ছ, আঠালো ডিমের সাদা অংশের মত শ্লেষ্মা জাতীয় পদার্থ বের হওয়া। এই পদার্থ যোণীমুখ, নিতম্ব, পা, পিঠ এবং তলপেটে লেগে থাকতে দেখা যায়।
⇒ গাভী বা বকনা অন্য গরুকে যখন তার উপরে লাফিয়ে উঠার অপেক্ষায় থাকে বা অন্য গরু তার উপরে লাফিয়ে উঠলে দ্রুত সরে যায় না তখনই বুঝা যায় এটা গরু হিটে আসার লক্ষণ। এই অবস্থা ১৫-১৮ ঘন্টা স্থায়ী হয়। কোন কোন গরুতে ৮-৩০ ঘন্টা পর্যন্ত মুখ্য লক্ষণ থাকতে পারে। প্রধান গরু গরম হওয়ার লক্ষণ দেখা দেয়ার ১২-১৮ ঘন্টার মধ্যে প্রজনন করাতে হয়।
গরু গরম হওয়ার লক্ষণ 15 টি নিম্নরূপঃ
- গাভী বা বকনা সহজে বসবে না, সে বেশির ভাগ সময় দাড়িয়ে থাকবে।
- ঝিমানি ভাব থাকবে।
- গরু গরম হওয়ার সময় যোনীমুখ ফুলে যায়
- যোনী পথা দিয়ে স্বচ্ছ, আঠালো ডিমের সাদা অংশের মত শ্লেষ্মা জাতীয় পদার্থ বের হওয়া।
- গাভী ঘন ঘন প্রসাব করবে।
- লেজের গোড়া বা তার আশপাশের জায়গায় শুকনা আঁঠালো পদার্থ লেগে থাকবে।
- পাশে থাকা অন্য গাভির উপর লাফিয়ে উঠবে।
- খামারের অন্য গাভী লাফিয়ে উঠলে সে নীরব থাকে।
- অন্তরঙ্গতা বৃদ্ধি পায়, অন্য গরুর গা, মুখ ও যোনীতে ঘসে এবং শুকতে থাকবে।
- লেজ উচিয়ে রাখে অর্থাৎ যোনীর মুখ থেকে লেজটি বারবার সরিয়ে রাখে।
- দুধ উৎপাদন কমে যাবে।
- কিছু কিছু সময় রক্ত ঝিল্লি বের হয়।
- গরু খাওয়া কমিয়ে দেয়।
- গাভী অস্থির থাকে ও ছটফট করে।
- অনবরত ডাকতে থাকে।
⇒ সাধারণত একটি গাভী বাচ্চা দেয়ার ৬ থেকে ৮ সপ্তাহ পর এবং বকনার বয়োঃসন্ধি হওয়ার পর প্রতি ১৭ দিন থেকে ২৪ দিন পর পর হিটে আসে বা গরু গরম হওয়ার লক্ষণ প্রকাশ পায়।
⇒ গাভী গরম হলে সাধারনত এই গরু ডাকে আসার লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়। তবে সবগুল লক্ষন একই গরুতে প্রকাশ নাও পেতে পারে।সেক্ষেত্রে দু’একটা লক্ষন দেখেই বুঝে নিতে হবে গরুটি ডাকে এসেছে কিনা।
⇒ আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই গরু গরম হওয়ার লক্ষণই প্রকাশ নাও পেতে পারে।এই সব ক্ষেত্রে গাভী ডাকে এসেছে কিনা সেটা বুঝা মুশকিল হয়ে পড়ে। কিন্তু ঘটনা খুব কম।
⇒ তাই এই ১৫টি গরু গরম হওয়ার লক্ষণ জানলেই আপনি মোটামুটিভাবে বুঝে যাবেন আপনার গরূটি ডাকে এসেছে কিনা। আর কখন প্রজনন করাবেন। হিটে আসা বা গরম হওয়ার সময় কাল ১৬/১৮ ঘন্টা এবং এই সময়ের মধ্যে গাভী বা বকনাকে প্রজনন করাতে হবে।
গাভী হিটে আসার ধাপ ৪ টি যথাঃ
- প্রস্তুতি পর্ব
- উত্তেজনা পর্ব
- কামত্তোর পর্ব
- নিষ্ক্রিয় পর্ব
(ক) প্রস্তুতিপর্ব
গাভী হিটে আসার ৩ দিন পূর্বে থেকে এই প্রস্তুতি পর্ব শুরু হয়। হিটে আসার পূর্বের এই সময় কে প্রস্তুতি পর্ব বলে। প্রস্তুতি পর্বের গরু গরম হওয়ার লক্ষণঃ
1. গাভী বা বকনা সহজে বসবে না, সে বেশির ভাগ সময় দাড়িয়ে থাকবে।
2. ঝিমানি ভাব থাকবে।
3. গরু গরম হওয়ার সময় যোনীমুখ ফুলে যায় গোলাপী বর্ণ ধারণ করে।
⇒ গরু গরম হওয়ার সময় যোনীমুখ ফুলে যায় এবং ভিতরের দিক লাল হয় ও ভেজা থাকে। সাধারণত প্রকৃত গরম হওয়ার পূর্বে এরূপ হয় এবং এই অবস্থা ক্ষণস্থায়ী।
⇒ যে খামারী নিয়মিত গাভীটি দেখা শোনা করেন উনি একটু খেয়াল করেই দেখতে পারেন প্রস্রাবের রাস্তা যাকে বিজ্ঞানের ভাষায় যোনীমুখ বলে (vulvar lips) একটু ফুলে গেছে। এই জায়গাটি স্বাভাবিক অবস্থায় একটু কুঁচকানো থাকে। যোনী মুখের ভিতরের দিকে লাচলে হয়ে যায়।সাধারনত ডাকে আসার একটু আগে এ ঘটনা ঘটে যা বেশিক্ষন স্থায়ী হয় না। পরবর্তীতে তা গাড় গোলাপী বর্ন ধারন করে। এটি একটি গরু গরম হওয়ার লক্ষণ।
4. যোনী পথা দিয়ে স্বচ্ছ, আঠালো ডিমের সাদা অংশের মত শ্লেষ্মা জাতীয় পদার্থ বের হওয়া গরু গরম হওয়ার লক্ষণ।
⇒ গাভীর ডাকে থাকা অবস্থা প্রায় ২ থেকে ১৮ ঘন্টা স্থায়ী হয়৷ এ সময়ে প্রথম ৮ থেকে ১০ ঘন্টা গাভী অস্থির থাকে, তার যৌনদ্বার দিয়ে স্বচ্ছ সুতোর ন্যায় আঠাযুক্ত বিজল পড়ে এবং অন্য গাভীর উপর লাফিয়ে উঠতে চেষ্টা করে।
⇒ সাধারনত ডাকে আসা গাভীর শরীরে ইষ্টোজেন হরমোন বেড়ে যাওয়ার কারনে এ ঘটনা ঘটে।তবে গরু গরম হওয়ার আগে থেকে শুরু করে,গরম হওয়া এবং গরম চলে যাওয়ার পরও এই শ্লেষ্কা দেখা যেতে পারে।
⇒ মজার বিষয় হল,কিছু কিছু গরু ডাকে আসলে কোন ধরনের শ্লেষ্মাই দেখা যাই না।কেবল মাত্র কৃত্রিম প্রজননের সময় জরায়ুতে চাপ দিলে এই শ্লেষ্মা দেখা যায় না।এই জন্য অনেক গরু ডাকে আসলেও বুঝতে পারে না।এক্ষেত্রে বুঝার সহজ উপায় হল,অন্যান লক্ষঙ্গুলো ভালভাবে খেয়াল করা।
(খ) যৌন উত্তেজনা
এই উত্তেজনা পর্ব এর গরু গরম হওয়ার লক্ষণ ১ দিন বা ২৪ ঘন্টা স্থায়ী থাকে। আর আমাদের খামারি ভাইয়েরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এই পর্বেই বিজ দিয়ে থাকেন। এই পর্বে বিজ দিলে কন্সেপ্ না করার হার ৯৮%। সুতারাং এই ধাপে কখনোই গাভীকে বীজ বা সিমেন দেওয়া যাবে না। উত্তেজনা পর্বের গরু গরম হওয়ার লক্ষণঃ
1. গাভী ঘন ঘন প্রসাব করবে।
⇒ ডাকে আসা গাভীটি ঘন ঘন অল্প অল্প প্রস্রাব করে।এই লক্ষনটিও অন্য লক্ষনের সাথে মিলিয়ে নিতে পারেন।
2. লেজের গোড়া বা তার আশপাশের জায়গায় শুকনা আঁঠালো পদার্থ লেগে থাকবে।
⇒ যোনী পথা দিয়ে স্বচ্ছ, আঠালো ডিমের সাদা অংশের মত শ্লেষ্মা জাতীয় পদার্থ বের হওয়া।এই পদার্থ যোণীমুখ,নিতম্ব,পা,পিঠ এবং তলপেটে লেগে থাকতে দেখা যায়। যেগুলো লেজ, উরু বা আশে পাশের জায়গাতে লেগে থাকে।
⇒ লেজের গোড়া বা তার আশপাশের জায়গায় শুকনা আঁঠালো পদার্থ লেগে আছে কিনা তা দেখতে হবে। এছাড়া আগের মাসের ডাকে আসার সঠিক দিনক্ষণ মনে রেখে সে অনুযায়ী বর্তমান ১৮ দিন মিলিয়ে অথবা কোনো ষাঁড়ের সাথে রেখে এ ধরনের মৃদু ডাকে আসা গাভী সহজে সনাক্ত করা যায়।
3. পাশে থাকা অন্য গাভির উপর লাফিয়ে উঠবে।
⇒ অপুষ্টি, আবহাওয়া, জলবায়ু, জাতের প্রভাব এবং বিশেষ করে প্রসবের পর ২/৩ ঋতুচক্রের সময় অনেক গাভীর ডাকে আসার লক্ষণ খুবই মৃদুভাবে প্রকাশ পায়৷ এসব ক্ষেত্রে সতর্কতার সাথে ডাকের লক্ষণগুলি কমপক্ষে ২ ঘন্টা পর পর কাছ থেকে নজর রাখতে হয়।
4. খামারের অন্য গাভী লাফিয়ে উঠলে সে নীরব থাকে।
⇒ চূড়ান্ত ডাকে আসার গুরুত্বপূর্ণ গরু গরম হওয়ার লক্ষণ হলো চূড়ান্ত ডাকে আসা গাভীর উপর খামারের অন্য গাভী লাফিয়ে উঠলে সে নীরব থাকে। সাধারণত ডাকের লক্ষণ শুরু হওয়ার ১২ থেকে ১৮ ঘন্টা পর চূড়ান্ত ডাক আসে।
5. অন্তরঙ্গতা বৃদ্ধি পায়, অন্য গরুর গা, মুখ ও যোনীতে ঘসে এবং শুকতে থাকবে।
⇒ ডাকে আসা গরুটি অনু গরুর যোনীর ঘ্রান নেয় এবং মাথা উচুঁ করে জিহ্বা বের করে দেয়।
⇒ গাভী ডাকে আসলে অন্য গাভীর সাথে তার অন্তরঙ্গতা বেড়ে যায়।অনেক সময় দেখা যায় অন্য গাভীর গা চাটে,মুখে মুখ ঘসে এমনি অন্য গরুর যোনিতে মুখ ঘসতেও দেখা যায় এবং অন্য গরুও ডাকে আসে গরুটি যোনিমুখ ঘসতে দেখা যায়।যদি একাধিক গরু এক সাথে ডাকে আসে তাহলে তাদের নিজেরদের মধ্যে দল পাকানোর প্রবনতা দেখা যায়।
6. লেজ উচিয়ে রাখে অর্থাৎ যোনীর মুখ থেকে লেজটি বারবার সরিয়ে রাখে।
⇒ ডাকে আসা গরুটিলেজ উচিয়ে রাখে অর্থাৎ যোনীর মুখ থেকে লেজটি বারবার সরিয়ে রাখে।
7. দুধ উৎপাদন কমে যাবে।
⇒ গাভী যখন ডাকে আসে তখন অন্যান্য দিনেরভ তুলনায় দুধ উৎপাদন কমে যায়। শুধু মাত্র এই একটি গরু গরম হওয়ার লক্ষণ দিয়েও গরু গরম হয়েছে কিনা সেটা বুঝে নিতে হয়। তবে এক্ষেত্রে অনেক দক্ষতার প্রয়োজন।
8. রক্ত ঝিল্লি বের হয়।
⇒ অনেক সময় কিছু কিছু গাভীর যোনী দিয়ে রক্ত ঝিল্লি বের হতে দেখা যায়।
(গ) কামত্তোর পর্ব
এটি গাভীকে বীজ দেওয়ার সঠিক সময়। এই পর্বের স্থায়িত্ব কাল ১ থেকে ২ দিন। এই সময় বিজ দিলে কনসিভ করার হার ৯৯%।
1. গরু খাওয়া কমিয়ে দেয়।
⇒ ডাকে আসা বা গরম হওয়া গরুটি খাবারের প্রতি তার মনোযোগ হারিয়ে থাকে, ফলে তার খাদ্য গ্রহণ কমে যায়।
2. গাভী অস্থির থাকে ও ছটফট করে।
⇒ গরু সাধারন লাফালাফি খুব একটা পছন্দ করে না।কিন্তু যখন সে ডাকে আসে তখন সে এই কাজটি শূরু করে।একটু খেয়াল করলেই দেখতে পাবেন,গরুটি যদি ডাকে আসে তাহলে সে অন্য গরুর উপর লাফানোর চেষ্ট করে। আবার অনেক সময় দেখা যায় তার উপর অন্য গরু লাফিয়ে উঠলেও খুব একটা বিরক্ত হয় না। তখন মোটামুটি ভাবে ধরে নিতে পারেন গাভীটি ডাকে এসেছে।
3. অনবরত ডাকতে থাকে।
⇒ এই গরু গরম হওয়ার লক্ষণটি খামারীর খুব সহজেই চোখে পড়ে।যেই খামারী গাভীকে নিয়মিত দেখা শুনা করে তিনি সহজে এই পরিবর্তনট বুঝতে পারে।এই ক্ষেত্রে আপনি খেয়াক করবেন গাভীটি এদিক ওদিক হাঁটা হাটি করবে।ঘন ঘন ডাকা ডাকি করবে।
(ঘ) নিস্ক্রিয় পর্ব
⇒ গাভী হিটে আসার শেষ ধাপটি থাকে ১৫ দিন। যদি গাভিকে বীজ না দেওয়া হয় তাহলে গাভির জরায়ু থেকে বের হওয়া ডিম্বানু গুলো মারা যাবে এবং গাভির সমস্ত জনন অঙ্গ স্বাভাবিক হবে। এর পর কয়েক দিনের মধ্যে আবার হিটে আসার ধাপ গুলো শুরু হবে।
⇒ গরম হবার ১-৩ দিন পরে কোন কোন গাভী বা বকনার যোনীপথ দিয়ে রক্ত বের হয়। এতে বুঝা যায় যে সে গরম হয়েছিলো।
⇒ এই ঘটনাটি ডাক চলে যাওয়ার পরপরই ঘটে।অর্থা ডাক চলে যাওয়া দুই-তিন দিন পর ঘটে। এটি দ্বারা বুঝা যাই গাভীটি ডাকে এসেছিল এবং ১৫-২০ দিন পর পুনরায় ডাকে আসবে বা গরু গরম হওয়ার লক্ষণগুরো দেখা যাবে।
আরও পড়ুনঃ গাভী গরম না হওয়ার কারণ 16 টি? বকনা গরু হিটে না আসার কারণ? গরু ডাকে না আসার কারন? https://khamarian.com/গরু-গরম-করার-উপায়/ https://khamarian.com/গরু-হিটে-আনার-ইনজেকশন/ https://khamarian.com/গরু-হিটে-আসার-ঔষধ/