দুধ উপাদনকারী ১০টি গাভী পালনে আয় ব্যয় হিসাব করে গাভী পালনে লাভ হিসাব নির্ণয় করা সম্ভব। গাভী পালনে লাভবান হওয়ার জন্য আয় ব্যয়ের হিসাব রাখা অতি জরুরী। চলুন জেনে নেই দুধ উপাদনকারী ১০টি গাভী পালনের হিসাব সম্পর্কে।
⊚ খরচের হিসাবঃ
১। গাভীর ঘর নির্মাণ ২০ ফিট * ২০ ফিট (উপরে টিন, চারদিকে দেয়াল) ৮০,০০০ টাকা;
২। ১০ টি গাভী ক্রয় (বাছুরসহ দুধের গাভী) প্রতিটি ৮০,০০০ করে, মোট ৮,০০,০০০ টাকা;
৩। খানার পাত্রসহ আনুষঙ্গিক খরচ ১০,০০০ টাকা; ৪। প্রতিদিন দানাদার খাদ্য খরচ (১টির জন্য ২০০ টাকা) ১০ টির জন্য (২০০০ * ৩০) :৬০,০০০ টাকা (প্রতি মাসে)
৫। কাচা ঘাস এবং খড় এছাড়াও অন্যান্য খাবার বাবদ মাসে খরচ, ১ টির জন্য ১০০ টাকা হিসেবে ১০ টির জন্য ১ মাসে খরচ ১০০০ * ৩০: ৩০০০০ টাকা
৬। ওষুধ, ভিটামিন (মাসিক) ৫০০০ টাকা; ৭। টিউবওয়েল স্থাপন ৮,০০০ টাকা;
৮। পানি সাপ্লাইয়ের মোটর ৮,০০০ টাকা;
৯। ৮ টি ফ্যান ২০০০ টাকা, মোট ১৬,০০০ টাকা; সর্বমোট খরচ: ৯,৪৮,০০০ টাকা।
১০। লেবার খরচ ২ জন ৫০০০ টাকা প্রতি মাসে, মোট ১০০০০ টাকা
১১। বিদ্যুবিল প্রতি মাসে ৫০০০ টাকা। এখানে স্থায়ী খরচ যেটা একবার লাগবে পরবর্তীতে শুধু মেরামত বাবদ কিছু খরচ লাগবে। স্থায়ী খরচ: ৯,২২০০০ টাকা।
চলতি খরচ হবে প্রতি মাসে: ১১০০০০ টাকা, আর ১২ মাসে চলতি খরচ আসবে ১৩২০০০০ টাকা।
⊚ দুধ বিক্রি থেকে আয়ের হিসাবঃ
১। প্রতিটি গাভী দৈনিক ১০ লিটার দুধ দেবে। প্রতি লিটারের দাম ৫০ টাকা। একটি গাভীর দুধ থেকে প্রতিদিন গড়ে পাওয়া যাবে ৫ * ১০ = ৫০০ টাকা। তাহলে ১০ টি গাভীর দুধ থেকে প্রতিদিন ৫০০ * ১০ = ৫০০০ টাকা আয় হবে। ফলে ৩০ দিনে ১০ টি গাভীর দুধ বিক্রি থেকে ৫০০০ * ৩০ = ১,৫০০০০ টাকা।
২। গাভী প্রায় ৮ মাস ধরে গড়ে ১০ লিটার দুধ দেবে। এরপর দুধের পরিমাণ কমতে থাকবে। দুধ বিক্রি থেকে ৮ মাসে আয় ১,৫০০০০ * ৮ = ১২,০০০০০ টাকা।
৩। ১২ মাসে চলতি খরচ ৮,৮০,০০০ টাকা।
৪। এবার, ৮ মাস পর দুধ দেয়ার পরিমাণ কমে যাবে। গড়ে ৫ লিটারে নেমে আসবে। তাহলে ১০ টি গাভী থেকে ৫০ লিটার দুধ পাওয়া যাবে। ৫০ টাকা লিটার দরে বিক্রি করলে ৫০ লিটার দুধ থেকে দৈনিক আয় ২৫০০ টাকা। ৬০ দিনে আয় ২৫০০ * ৬০ = ১,৫০০০০ টাকা।
৫। তাহলে প্রথম ৮ মাসে দুধ বিক্রি থেকে আয় ১২,০০০০০ টাকা + পরবর্তী ২ মাসে আয় ১,৫০০০০ টাকা। ১০ টি গাভীর এক বছরে মোট দুধ বিক্রি থেকে আয় ১৩,৫০০০০ টাকা ও মোট খরচ ১৩২০০০০ টাকা।
অর্থ্যাৎ বছরে মোট দুধ বিক্রি ও মোট খরচ প্রায় সমান।
⊚ নিট লাভ হিসাবঃ
১। নিট লাভটা হলো বাছুর বা গরুর থেকে পাওয়া বাচ্চাগুলো। যেহেতু বছরে মোট দুধ বিক্রি ও মোট খরচ প্রায় সমান। সেহেতু উক্ত ১০টি গাভী থেকে যে ৮ থেকে ১০টি বাচ্চা পাওয়া যাবে সবগুলো নিজের নিট লাভ থাকবে।
২।বাচ্চা দেবার ১ থেকে ২ মাসের মাঝে গরু হিটে আসলে কৃত্রিম প্রজনন দিতে হবে। কৃত্রিম প্রজনন দেয়ার প্রায় ৮-৯ মাস পর গাভী বাচ্চা দেবে। এরপর প্রতিবার ১২-১৫ লিটার করে দুধ দেবে। এ গাভী ৪ থেকে ৫ বছর পর্যন্ত পোষা যাবে। ১ বছর পর এক-একটি বাছুর প্রায় ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করা যাবে। ৩ বছর পর বাছুরগুলো আবার গর্ভবতী হবে। তখন এক-একটির দাম ৫০ থেকে ৭০ হাজার টাকায় দাঁড়াবে। এ কারণে বাছুরগুলো রেখে ষাঁড়গুলো বিক্রি করে দিতে হবে।
৩। গাভীকে দানাদার খাদ্য, কঁচা ঘাস, খড়, চালের কুঁড়া ও প্রচুর পরিমাণে পানি দিতে হবে। পরবর্তী বছরগুলোতে ঘর নির্মাণ খরচ লাগবে না, গাভীও কিনতে হবে না। ৮ মাস পর আবার গাভীগুলো দুধ দেবে। আগের বাছুর বড় হবে। এসময় ঘর নির্মাণ খরচ, গাভী ক্রয় খরচ, টিউবওয়েল নির্মাণ খরচ আর লাগবে না, তবে খাদ্য খরচ বেড়ে যাবে।
৪। আগের ১০টি গাভী, ১০ টি বড় বাছুর, নতুন ১০ টি ছোটট বাছুর সব মিলে ৩০ টি গরু হবে। আগের বাছুরের মধ্যে যদি ষাঁড় থাকে তাহলে বিক্রি করে দিতে হবে। ১০ টি বাছুরের মধ্যে যদি ৫ টি ষাঁড় থাকে তাহলে প্রতিটি ২৫ হাজার টাকায় বিক্রি করলে ২৫,০০ * ৫ = ১,২৫০০০ টাকা আয় হবে। এর বেশিও আয় হতে পারে।।
৫। এছাড়া প্রতি বছর বাছুর বিক্রি থেকে এবং গোবর বিক্রি করেও টাকা অর্জন করা যাবে। গাভীগুলো ৪ থেকে ৫ বছর পর্যন্ত দুধ দেয়ার পর এগুলো বিক্রি করে দিতে হবে। এ ধরনের একটি গাভী ৬০ থেকে ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি করা যাবে।
উল্লেখ্য, ডেইরী ফার্মে খুব বেশী লাভ হয় না প্রথম দিকে, দুধ উপাদনের খরচ এবং দুধ বিক্রিতে যা আয় হয় তা খুবই কম তবে হ্যা প্রতি বছর বছর যে বাচ্চা পাবেন সেটাই আপনার ভালো লাভ বয়ে আনবে।