একটি দেশী বকনা দুই থেকে আড়াই বছর বয়সে প্রথম প্রজননের উপযুক্ত হয়। সংকর জাতের বকনা দেড় থেকে দুই বৎস বয়সে প্রজননের জন্য প্রথম উপযুক্ত হয়।
প্রজননের ২৮০ দিন (কম বেশি ১০ দিন) পর গাভী বাচ্চা প্রসব করে। বাচ্চা দেওয়ার ৬০ দিন পর পুনরায় ডাকলে গাভীকে প্রজনন করতে হয়। তবে ৯০ দিন পার হওয়ার পরও গাভী না ডাকলে ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়।
আজকে আমরা আলোচনা করবঃ
গাভী হিটে আসার/গরম হবার/ঋতুকালের লক্ষণঃ
- পশু অন্য পশুর উপর উঠতে চায় এবং অন্য পশুকে নিজের উপর উঠতে দেয়।
- গাভীর যোনীমুখ ফুলে যায় এবং লাল দেখায়। যোনীমুখ থেকে পরিষ্কার স্বচ্ছ আঠালো শ্লেষা বের হয় এবং লেজের গোড়ায় ও পেছনে তা লেগে থাকে।
- গাভীর অস্থিরতা বাড়বে, ঘন ঘন ডাকবে।
- ঘন ঘন প্রস্রাব করবে, দুধ কমে যাবে।
- গাভীর খাওয়া কমে যায়।

কৃত্রিম প্রজনন পদ্ধতির সুবিধাঃ
- সকলের পক্ষে ভালো জাতের ষাঁড় রাখা সম্ভব হয় না। উন্নত জাতের ষাঁড় পালন ব্যয়বহুল এবং শ্রমসাধ্য। তাই কৃত্রিম প্রজনন পদ্ধতির জন্য ঘরে ঘরে ষাঁড় পালনের প্রয়োজন হয় না।
- এ পদ্ধতিতে উন্নত জাতের ষাঁড়ের বীজ দিয়ে অতি অল্প সময়ে দেশী গরুর জাত উন্নয়ন করা যায়।
- একটি ষাঁড় দ্বারা একটি বকনা বা গাভীকে স্বাভাবিক পদ্ধতিতে একবার প্রজনন করানো যায়। কিন্তু একটি ষাঁড়ের কবার সংগৃহীত বীজ দ্বারা ২০০ পর্যন্ত বকনা বা গাভীকে কৃত্রিম প্রজনন করানো যায় ।
- কৃত্রিম প্রজনন পদ্ধতিতে ষাঁড় হতে বকনা বা গাভীতে রোগ ছড়ানোর আশঙ্কা অত্যন্ত কম থাকে।
কৃত্রিম প্রজনন সফল না হওয়ার কারণঃ
কৃত্রিম প্রজনন অনেক সময় সফল হয় না। এর প্রধান কারণগুলো হলো—
- প্রজননের জন্য ব্যবহৃত বীজ বা শুক্রাণু মৃত হলে।
- অনিয়মিত গরম হওয়া বকনা বা গাভীকে প্রজনন করালে।
- নোংরা পরিবেশ, অপরিচ্ছন্ন যন্ত্রপাতি জীবাণু মুক্ত না করে অবৈজ্ঞানিক উপায়ে কৃত্রিম প্রজনন করালে।
- ঋতুকালের নির্দিষ্ট সময়ে গাভীকে প্রজনন না করানো।
- ঠিকমত প্ৰজনন না করালে অর্থাৎ প্রজনন কাজে ত্রুটি থাকলে।
- যে কোন প্রকারের যৌন রোগাক্রান্ত বকনা বা গাভীকে প্রজনন করালে।
- পরিশ্রান্ত বকনা বা গাভীকে কাজ করানোর পরপরই বা অনেক দূর হতে হাটিয়ে কৃত্রিম প্রজনের জন্য আনা হয় এবং পশুকে বিশ্রাম না দিয়ে সাথে সাথে কৃত্রিম প্রজনন করা হয়। তারপর আবার বিশ্রাম না দিয়ে কাজে লাগানো হয় বা হাঁটিয়ে বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়। এতে গাভী গর্ভবতী নাও হতে পারে।
গর্ভবতী গাভীর লক্ষণঃ
গর্ভ ধারনের লক্ষণ দুই ভাবে প্রকাশ পায় ১। বাহ্যিক ২ । আভ্যন্তরীণ।
গর্ভবতী গাভীর প্রধান বাহ্যিক পরিবর্তনগুলো হলো-
১। বাহ্যিক লক্ষণ :
- পশুর পেট ক্রমশ বড় হতে থাকবে।
- গর্ভবতী হলে বকনা বা গাভীর ঋতুচক্র বন্ধ হয়ে যাবে, পশু ডাকে আসবে না।
- গাভীর দুধ উৎপাদন আস্তে আস্তে কমতে থাকবে।
- গর্ভকালের শেষ দিকে ওলান আস্তে আস্তে বড় হবে।
২। আভ্যন্তরীণ লক্ষণ :
- গর্ভ পরীক্ষায় বাচ্চার অবস্থান বুঝা যায়।
- বাচ্চার বৃদ্ধির সাথে সাথে জরায়ু বেড়ে সম্মুখে ও নিচের দিকে প্রসাবিত হয়।
- জরায়ু মুখ বন্ধ হয়ে যায়।
গর্ভ ধারনের পর গাভীর দৈহিক ও প্রকৃতিগত অনেক পরিবর্তন হয়ে থাকে। এই পরিবর্তন অবশ্য সকল পশুতে সমভাবে দেখা যায় না। তবে গর্ভ ধরনের ৩ মাস পর লক্ষণগুলো প্রকাশ পেতে থাকে।