প্রিয় খামারি বন্ধুরা, আজকের পর্বে আমরা ঘাসের উন্নত জাত পরিচিত, পুষ্টিমান এবং উন্নত ঘাস চাষ বা ঘাস চাষ করার নিয়ম নিয়ে একটি সংক্ষিপ্ত আলোচনা করার চেষ্টা করি আশা করি খামারিয়ান এর সাথেই থাকাবেন।
১. নেপিয়ার ঘাস
এটি একটি বহুবর্ষী ঘাস যা একবার লাগালে ৪-৫ বছর পর্যন্ত ঘাস উৎপন্ন হয়। বছরের যে কোন সময় চাষ করা যায়, তবে উত্তম সময় হচ্ছে ফায়ুন চৈত্র মাস। জলাবদ্ধ স্থান ছাড়া বাংলাদেশের যে কোন ধরনের মাটি এমনকি পাহাড়ী ঢল ও লবণাক্ত জমিতেও এ ঘাস জন্মে।
প্রতি কেজি কাচা ঘাসের পুষ্টিমানঃ শুষ্ক পদার্থ ২৫০ গ্রাম, জৈব পদার্থ ২৪০ গ্রাম, প্রােটিন ২৫ গ্রাম ও বিপাকীয় শক্তি (প্রতি কেজি ঘাসে) ২.০ মেগাজুল।
নেপিয়ার চাষ করার পদ্ধতিঃ প্রচলিত পদ্ধতিতে উত্তমরুপে জমি চাষ দিতে হবে। বন্যা পরবর্তীতে কাদামাটিতে চাষ ছাড়াই রোপন করা যায়। হেঃ প্রতি ২৫-২৬ হাজার কাটিং/মোথা প্রয়ােজন। লাইন থেকে লাইন ও কাটিং থেকে কাটিং এর দুরত্ব যথাক্রমে ৭০ সে. মি. এবং ৩৫ সে. মি.।
সার প্রয়ােগ পদ্ধতিঃ জমি প্রস্তুতকালে হেঃ প্রতি ইউরিয়া ৫০ কেজি, টিএসপি ৭০ কেজি ও এমপি ৩০ কেজি সার দিতে হবে। পরবর্তীতে ঘাস লাগানোর ১ মাস পরঃ হেঃ প্রতি ৫০ কেজি ইফরিয়া এবং প্রতি কাটিং পরঃ হেঃ প্রতি ৫০ কেজি ইউরিয়া দিতে হবে।
সেচ পদ্ধতিঃ খরা মৌসুমে ১৫-২০ দিন পর পর পানি সেচ দিতে হবে।
ঘাস কাটার সময়ঃ গ্রীষ্মকালে ৩০-৪৫ দিন পর পর এবং শীতকালে ৫০-৬০ দিন পর পর (সেচ সুবিধা সাপেক্ষে) ঘাস কাটার যায়।
কাটিং সংখ্যা/বৎসরঃ ১ম বছর ৬-৮ বার এবং পরবর্তী বছরগুলোতে ৮-১০ বার ঘাস কাটিং করা যায়। ঘাস উৎপাদন ও ১৫০-২০০ টন/হেক্টর/বছর।
২. জার্মান ঘাস
জার্মান ঘাস অনেকটা লতা জাতীয় ঘাসের মতো। ইহা উঁচু, নীচু, ঢালু, জলাবদ্ধ, সঁাতাতে এবং অন্য কোন ফসল বা শস্য হয় না ঐ সমস্ত জমিতে চাষ করা যায়। এ ঘাস গোবর সার ও গো-শালা বিধৌত পানিতে খুব ভাল জন্মে। এ সমস্ত জমিতে কোন সারের দরকার হয় না।
প্রতি কেজি কাঁচা ঘাসের পুষ্টিমান: শুষ্ক পদার্থ ২৫০ গ্রাম, জৈব পদাথ ২৪০ গ্রাম, প্রােটিন ১৮ গ্রাম এবং বিপাকীয় শক্তি ২.৫ মেগাজুল।
জার্মান ঘাস চাষ পদ্ধতি: প্রচলিত পদ্ধতিতে উত্তমরুপে জমি চাষ দিতে হবে। বন্যা পরবর্তীতে কাদামাটিতে চাষ ছাড়াই রোপন করা যায়। হেঃ প্রতি ২৮-৩০ হাজার কাটিং প্রয়ােজন হয়। লাইন থেকে লাইন ও কাটিং থেকে কাটিং এর দুরত্ব যথাক্রমে ৫০ সে. মি. এবং ২৫ সে. মি.।
সার প্রয়ােগ পদ্ধতি: জমি প্রস্তুতকালে হেঃ প্রতি ইউরিয়া ৫০ কেজি, টিএসপি ৭০ কেজি ও এমপি ৩০ কেজি সার লাগে। ঘাস লাগানোর ১ মাস পরঃ হেঃ প্রতি ৫০ কেজি ইউরিয়া এবং প্রতি কাটিং পরঃ হেঃ প্রতি ৫০ কেজি ইউরিয়া দিতে হবে।
সেচ পদ্ধতি: খরা মৌসুমে ১৫-২০ দিন পর পর সেচ দিতে হয়।
ঘাস কাটার সময়: গ্রীষ্মকালে ৩০-৩৫ দিন পর পর এবং শীতকালে ৩৫-৪৫ দিন পর পর (সেচ সুবিধা সাপেক্ষে) ঘাসের কাটিং করা যায়।
কাটিং সংখ্যা/বৎসর: ১ম বছর ৬-৭ বার এবং পরবর্তী বছরগুলোতে ৮-১০ বার কাটিং করা যায়।
ঘাস উৎপাদন: ১৩০-১৫০টন/হেক্টর/বছর।
৩. জাম্বু ঘাস
এটি একটি বহুবর্ষী ঘাস। একবার লাগালে ২-৩ বছর পর্যন্ত ঘাস উৎপন্ন হয়। বছরের যে কোন সময় চাষ করা যায়, তবে উত্তম সময় হচ্ছে ফাল্গুন চৈত্র মাস। জলাবদ্ধ, লবণাক্ত ও পাহাড়ী ঢাল ছাড়া সব ধরনের মাটিতেই এ ঘাস জন্মে।
কাঁচা ঘাসের পুষ্টিমান প্রতি কেজি ঘাসে: শুষ্ক পদার্থ ১৯০ গ্রাম, জৈব পদার্থ ১৮০ গ্রাম, প্রােটিন ২১ গ্রাম এবং বিপাকীয় শক্তি ১.৯৫ মেগাজুল।
জাম্বু ঘাস চাষ পদ্ধতি: প্রচলিত পদ্ধতিতে উত্তমরুপে জমি চাষ দিতে হবে। বন্যা পরবর্তীতে কাদামাটিতে চাষ ছাড়াই রোপন করা যায়। প্রতি হেক্টরে ৭-১০ কেজি বীজ বপণ করতে হবে। অথবা হেঃ প্রতি ৩৫ -৪০ হাজার মোথা প্রয়ােজন। লাইন থেকে লাইন ও কাটিং থেকে কাটিং এর দুরত্ব যথাক্রমে ৭০ সে. মি. এবং ৩৫ সে. মি.।
সার প্রয়ােগ পদ্ধতি: জমি প্রস্তুতকালে হেঃ প্রতি ইউরিয়া ৫০ কেজি, টিএসপি ৭০ কেজি ও এমপি ৩০ কেজ সার দিতে হয়। ঘাস লাগানোর ১ মাস পরঃ হেঃ প্রতি ৫০ কেজি ইউরিয়া এবং প্রতি কাটিং পরঃ হেঃ প্রতি ৫০ কেজি ইউরিয়া দিতে হয়।
সেচ পদ্ধতি: খরা মৌসুমে ১৫ -২০ দিন পর পর এবং খরা মৌসুমে ১৫-২০ দিন পর পর সেচ দিতে হয়।
ঘাস কাটার সময়: গ্রীষ্মকালে ৩০-৩৫ দিন পর পর এবং শীতকালে ৩৫-৪৫ দিন পর পর (সেচ সুবিধা সাপেক্ষে) ঘাস কাটিং করা যায়।
কাটিং সংখ্যা/বৎসরঃ ১ম বছর ৫-৬ বার এবং পরবর্তী বছরগুলোতে ৭ -৮ বার কাটিং করা যায়।
ঘাস উৎপাদন: ১০০-১৫০ টন/হেক্টর/বছর।
সকল প্রকার ঘাসের নাম জানতে চায়