ঘাসের চাষ ব্যবস্থাপনা কি ও কেন?
উন্নতজাতের ঘাসগুলো হচ্ছে নেপিয়ার, পারা গিনি, পেঙ্গোলা, ইপিল, বারশিম, ওটস, ভুট্টা, কাউপি, সেন্টোসিয়া, স্টাইলো ইত্যাদি। মাসকলাই, খেশারী, মুগ, মশুর, ছোলা বরবটি, অড়হর, শনপাট, ধৈঞ্চা ইত্যাদি শুঁটি জাতীয় ঘাস। ঘাসের চাষ জমির ধরনের ওপর নির্ভরশীল। যেখানে পানি জমেনা সেখানে নেপিয়ার, স্পেনডিডা; উঁচু নীচু ও ঢালু জমিতে পারা; গাছের ছায়ায় গিনি এবং নিচু জমিতে জার্মান ঘাস ভালো জন্মে। কয়েকটা ঘাসের চাষ পদ্ধিতি নিম্নে বর্ণনা করা হলো।
১. নেপিয়ার
- নেপিয়ার ঘাস আখের মত দীর্ঘকায় হয়, পাতাগুলোও আখের পাতার মত লম্বাও চিকন হয়।
- একবার চাস করলে অন্তত ২-৩ বছর কেটে কেটে খাওয়ানো যায়।
- উঁচু রাস্তার দু পার্শ্বের ঢালু স্থানে, বেড়ী বাঁধের দু পার্শ্বের ঢালু জায়গায়, রেল লাইনের দুধারে পতিত জমিতে, পাহাড়ী অঞ্চলের পতিত জায়গায় এ ঘাস ব্যাপক ভাবে চাষ করা যায়।
- বর্ষার আগে বৈশাখ মাসে অথবা বর্ষার শেষে আশ্বিন মাসে এ ঘাস চাষ করা যায়।
- ঢালু জায়গায় গর্ত করে ০.৫×১ মিটার দূরত্বে এ ঘাস লাগালে বাঁধ বা রাস্তার মাটি প্রবল বৃষ্টিতেও সরে যাবার আশংকা থাকে না।
- চারা লাগানোর ৬০-৭০ দিন পর ফসল পাওয়া যায়।
- মোটামুটি ভালো ভাবে চাষ করলে প্রতি একরে প্রতি বছরে ৩৫০০০ থেকে ৪০০০০ কেজি পর্যন্ত উৎপন্ন হতে পারে। এ পরিমান ঘাস দিয়ে প্রায় চারটা বয়স্ক গাভীর বাৎসরিক ঘাসের চাহিদা মেটানো যায়।
- এ ঘাসকে সাইলেজ হিসাবেও সংরক্ষণ করা যায়। ঘাসকে ছোট ছোট করে কেটে খাওয়াতে হয়।
২. পারা
- পারা উন্নত জাতের বিদেশি ঘাস।
- একবার চাষ করলে অনেকদিন যাবত এ ঘাস থেকে ফলন পাওয়া যায়।
- নিচু স্যাতসাতে জায়গায় জলাবদ্ধ স্থানে এমন কি সমুদ্র উপকূলবর্তী জেলা গুলোর লবণাক্ত জমিতেও পারা ঘাস চাষ করা যায়।
- বৈশাখ জ্যৈষ্ঠ মাসে এক পশলা বৃষ্টি হলে এ ঘাস লাগাতে হয়।
- পারা ঘাস মুল জাতীয় ঘাস।
- নেপিয়ার ও গিণি ঘাসের চেয়েও অধিক ফলন শীল।
- এ ঘাস দ্রুত বাড়ে; লাগানোর ৩ মাস পরেই কাটার উপযুক্ত হয়।
- বছরে ১২ বার কাটা যায় এবং একবার চাষ করলে ৮ বছর পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়।
- এ ঘাষ চাষে তেমন যত্নের প্রয়োজন হয় না।
- প্রতি একরে ১০০০টি চারা ০.৫×০.৫ মিটার দূরত্বে চারা লাগাতে হয়।
- বছরে একর প্রতি ফলন ৬০০০০ – ৬৫০০০ কেজি ফলন হতে পারে।
৩. গিনি
- নেপিয়ার ঘাসের মত এ ঘাসও উঁচু ঢালু জমিতে চাষ করা যায়।
- বৈশাখে প্রথম বৃষ্টির পর অথবা বর্ষার শেষে আশ্বিন মাসে গিনি ঘাসের চাষ করা যায়।
- একবার লাগালে ৫/৭ বছর চলে।
- দেড় মাস থেকে দু মাস পর পর ঘাস কেটে গরুকে খাওয়ানো যায়।
- রোপনের ৩ মাস পর প্রথম ঘাস কাটার উপযুক্ত।
- ০.৫-১ মিটার দূরত্বে চারা লাগাতে হয়। ধানের পাতার মত এ ঘাস গবাদি পশুর অত্যন্ত পছন্দনীয়।
- শুকিয়ে এ ঘাস সংরক্ষণ করা যায়।
৪. ভুট্টা
- ভুট্টা সারা বছর গো-খাদ্য হিসাবে চাষ করা যায়।
- তবে পানি নিকাশের সুবিধাযুক্ত স্থানে ভুট্টার চাষ করতে হয়।
- রসযুক্ত মাটিতে ভুট্টার আবাদ ভালো হয়।
- বন্যার পানি নেমে যাবার সাথে সাথে ভুট্টার বীজ বুনে বিনা চাষেও ভুট্টার চাষ করা যায়।
- রবি মৌসুমে ভাদ্র মাসের মাঝামাঝি থেকে আশ্বিন মাসের মাঝামাঝি এবং খরিপ মৌসুমে চৈত্র মাসের মাঝামাঝি থেকে বৈশাখ মাসের মাঝামাঝি সময়ে ভুট্টার বীজ বুনলে ভালো ফলন পাওয়া যায়।
- সাধারণ মাটিতে রস থাকা অবস্থায় ৪-৫ টি চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝরে করে ভুট্টার জমি প্রস্তুত করতে হয়।
- একরে ১৫-১৮ কেজি বীজের প্রয়োজন হয়।
- ভুট্টা বোনার ৮-১০ সপ্তাহের মধ্যে ভুট্টার ঘাস যখন সবুজ থাকে তখন কেটে গরুকে খাওয়ানো যায়।
- এ ঘাস একই জমিতে বছরে ৩-৪ বার চাষ করা যায় এবং একর প্রতি প্রায় ১০০০-১২০০ টন উৎপন্ন হয়।
- কাণ্ড যদি শক্ত হয়ে যায় তাহলে মেশিনে অথবা ধারালো কাঁচি দিয়ে ছোট ছোট টুকরো করে খাওয়ানো যায়।
- দৈনিক ৪-৫ লিটার দুধ প্রদান কারী গাভীকে পর্যাপ্ত ভুট্টা ঘাস খাওয়ালে অন্যকোন দানাদার খাদ্য দেয়ার তেমন কোন দরকার হয় না।
- এ ঘাস সাইলেজ হিসাবেও রাখা যায়।
৫. ইপিল ইপিল
- ইপিল ইপিল গাছের পাতা এবং কচি ডগা কাঁচা অথবা শুকালে গবাদি পশুর উপাদেয় খাদ্য।
- ইপিল ইপিলের জাত অনেক, তবে আমাদের দেশের উপযোগী জাত হচ্ছে পেরু টাইপ ইপিল ইপিল।
- এ জাতের গাছে ছোট অবস্থাতেই প্রচুর শাখা প্রশাখা গজায় এবং কম সময়ের মধ্যে প্রচুর পাতা এবং কচি ডগায় ভরপুর হয়ে ঝোপালো হয়ে ওঠে। তাই কম সময়ে বেশি পরিমাণে কাঁচাপাতা ও ডগা সংগ্রহ করা যায়।
- এ গাছের বীজ, চারা ও কাটিং সাধারণতঃ বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে বপন অথব রোপন করতে হয়। বছরের অন্যান্য সময়েও বোনা যায়।
- জমির আইলে লাগালে বেড়া হিসাবেও ব্যবহার করা যায়।
- বীজ ৮০° সেন্টিগ্রেড ফুটন্ত পানিতে সিদ্ধ করে বপন করলে ৭-৮ দিনের মধ্যে গজিয়ে যায়।
- ইপিল ইপিল গাছের পাতা, ডগা ইত্যাদিতে শতকরা ৭.৩৪ ভাগ আমিষ থাকে। তাই এর পাতা অন্যান্য নিম্নমানের ঘাস বা খড়ের সাথে মিশিয়ে খাওয়ানো উত্তম।