আজকে আমরা আলোচনা করবঃ
Tags: # চিঠি লেখার নিয়ম বাংলা # পত্র লেখার নিয়ম বাংলা # ব্যাক্তিগত পত্র লেখার নিয়ম # ব্যাক্তিগত চিঠি লেখার নিয়ম # চিঠিপত্র লেখার নিয়ম # ব্যাক্তিগত চিঠিপত্র লেখার নমুনা।
পত্রলিখনঃ
আমাদের ব্যবহারিক জীবনে চিঠিপত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। ব্যক্তিগত ও সামাজিক নানা প্রয়োজনে আমাদেরকে চিঠি লিখতে হয়। আত্মীয়, বন্ধুর সঙ্গে যোগাযোগ এবং সংবাদ আদান-প্রদানের মাধ্যম হিসেবে চিঠির রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। অফিস-আদালত ও প্রাতিষ্ঠানিক কাজ অনেকাংশে চিঠিপত্রের ওপরই নির্ভরশীল।
সাম্প্রতিককালে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগের সুযোগ বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্যক্তিগত চিঠি লেখার গুরুত্ব কিছুটা কমেছে। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক ও অন্যান্য চিঠি লেখার প্রয়োজন এতটুকুও কমেনি।
চিঠি লেখার রীতি আমাদের সংস্কৃতির এক অনুষঙ্গী উপাদান। যোগাযোগ। ২ ভাব-বিনিময়ের এক অনুপম মাধ্যম হিসেবে চিঠি লেখার এ রীতি অব্যাহত থাকবে। কাগজ আবিষ্কারের আগে মানুষ গাছের পাতায়, গাছের ছালে, চামড়ায়, ধাতব পাতে লিখত। পাতায় লিখত বলেই এর নাম হয় ‘পত্র’। সুন্দর, শুদ্ধ চিঠির মাধ্যমে মানুষের শিক্ষা, বুদ্ধিমত্তা, রুচি ও ব্যক্তিত্বের প্রকাশ ঘটে। সুলিখিত চিঠি অনেক সময় উন্নত সাহিত্য হিসেবে বিবেচিত হয়। যেমন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ছিন্নপত্র’।
চিঠির প্রকারভেদঃ
বিষয়বস্তু, প্রসঙ্গ ও কাঠামো অনুসারে বিভিন্ন ধরনের পত্রকে নিম্নলিখিত শ্রেণিতে ভাগ করা যায় :
- ক. ব্যক্তিগত চিঠি
- খ. আবেদনপত্র বা দরখাস্ত
- গ. সংবাদপত্রে প্রকাশের জন্য চিঠি
- ঘ. মানপত্র ও স্মারকলিপি
- ঙ. বাণিজ্যিক বা ব্যবসায়িকপত্র
- চ. আমন্ত্রণ বা নিমন্ত্রণপত্র
চিঠি লেখার নিয়ম বাংলাঃ
চিঠি যে ধরনেরই হোক না কেন, তা লেখার সময় কয়েকটি দিক বিবেচনায় রাখা দরকার :
- ১. বিষয়বস্তু বা প্রসঙ্গের ওপর চিঠির কাঠামো নির্ভর করে। ব্যক্তিগত চিঠি আর ব্যবসায়িকপত্রের মধ্যে পার্থক্য আছে। তাই এক একরকম পত্রের জন্য এক-একরকম পদ্ধতি, ভাষাভঙ্গি অনুসরণ করতে হয়।
- ২. চিঠির মাধ্যমে মানুষের রুচি ও ব্যক্তিত্বের প্রকাশ ঘটে। তাই অস্পষ্ট এবং কাটাকাটি যেন না হয়, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।
- ৩. ভাষা ব্যবহারের ক্ষেত্রে যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। নির্ভুল বানান, যথাযথ শব্দ এবং বাগাড়ম্বরহীন বাক্য ব্যবহারের ওপর চিঠির মান নির্ভর করে। ভুল বানান, এলোমেলো বাক্য অনেক সময় বিভ্রান্তি তৈরি করে। তা পত্রলেখক সম্পর্কে বিরূপ ধারণার জন্ম দিতে পারে ।
- ৪. চিঠি নিজের হওয়া চাই। অর্থাৎ নিজস্ব অভিজ্ঞতা, অনুভূতি, অভিরুচি, ব্যক্তিত্বের সুস্পষ্ট ছাপ থাকতে হবে। পাঠ্যবইতে নমুনাচিঠি ধারণা তৈরি করার জন্য দেওয়া হয়। তা হুবহু মুখস্থ না করে, পাঠ্যবইয়ের নমুনা অনুসরণ করে চিঠিতে নিজস্বতা আনা উচিত।
চিঠির বিভিন্ন অংশঃ
একটি চিঠি মূলত দুটি অংশে বিভক্ত :
ক. শিরোনাম : শিরোনাম অংশে চিঠির খামের ওপর বামদিকে প্রেরকের ঠিকানা ও ডানদিকে প্রাপকের ঠিকানা লিখতে হয়। বর্তমানে সরকারি পোস্ট অফিসে প্রাপ্ত খামের সামনের অংশে প্রাপকের ঠিকানা লেখার নির্দিষ্ট ছক এবং পেছনের অংশে প্রেরকের ঠিকানা লেখার আলাদা ছাপানো ছক রয়েছে।
খ. পত্রগর্ভ : পত্রগর্ভ হচ্ছে চিঠির ভেতরের অংশ।
ব্যক্তিগত চিঠি : ব্যক্তিগত চিঠির কাঠামোতে ছয়টি অংশ থাকে। নিচে প্রদর্শিত ছকের মাধ্যমে এ ছয়টি অংশ তুলে ধরা হয়েছে-

চিত্রঃ চিঠির ছক
১. মঙ্গলসূচক শব্দ
এককালে ব্যক্তিগত চিঠির প্রথমে কাগজের পৃষ্ঠার মাঝামাঝি জায়গায় পত্রলেখক নিজ ধর্মবিশ্বাস অনুযায়ী মঙ্গলসূচক শব্দ লিখতেন। মুসলমানরা লিখতেন : এলাহি ভরসা, আল্লাহ সহায়, হাবিব ভরসা, খোদা ভরসা, বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম ইত্যাদি। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা লিখতেন : ওঁ, ওঁমা, শ্রী শ্রী দুর্গা সহায়, শ্রীহরি ইত্যাদি। এটা লেখা না-লেখা ব্যক্তিগত অভিরুচির ওপর নির্ভরশীল। আজকাল ব্যক্তিগত চিঠিতে এগুলো আর লেখা হয় না।
২. স্থান ও তারিখ
চিঠির ডানদিকে তারিখ এবং যে স্থানে বসে পত্র লেখা হচ্ছে তার নাম লিখতে হয়।
৩. সম্বোধন
পত্র লেখার শুরুতে পত্রের বামদিকে প্রাপকের সঙ্গে সম্পর্ক অনুযায়ী সম্বোধন বা সম্ভাষণ লিখতে হয়। পত্রদাতার সঙ্গে প্রাপকের সম্পর্ক অনুসারে এবং পত্র-প্রাপকের মান, মর্যাদা, সামাজিক প্রতিষ্ঠা অনুযায়ী সম্বোধনসূচক শব্দ নির্বাচন করতে হয়। ধর্ম-সম্প্রদায় অনুসারে এই সম্বোধন বা সম্ভাষণসূচক শব্দের পার্থক্য হতে পারে। যেমন :
ব্যক্তিগত পত্রের সম্ভাষণ রীতিঃ
◾ শ্রদ্ধাভাজন (পুরুষ) : শ্রদ্ধাস্পদেষু, পরম শ্রদ্ধাভাজন, মাননীয়, মান্যবরেষু, মান্যবর, শ্রদ্ধাভাজনেষু ইত্যাদি।
◾ শ্রদ্ধাভাজন (মহিলা) : মাননীয়া, মাননীয়াসু, শ্রদ্ধেয়া, শ্রদ্ধাস্পদাসু ইত্যাদি।
◾ সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি : সুধী, মান্যবর, সৌম্য ইত্যাদি।
◾ সমবয়স্ক প্রিয়জন/বন্ধু (পুরুষ) : বন্ধুবরেষু, প্রিয়বরেষু, প্রিয়, প্রিয়বর, বন্ধুবর, প্রিয়বন্ধু, সুপ্রিয়, সুহৃদবরেষু, প্রীতিভাজনেষু ইত্যাদি।
◾ সমবয়স্ক প্রিয়জন/বন্ধু (মহিলা) : সুচরিতাসু, প্রীতিভাজনীয়াসু, প্রীতিনিলয়াসু, সুহৃদয়াসু ইত্যাদি।
◾ বয়ঃকনিষ্ঠ (ছেলে) : কল্যাণীয়, কল্যাণীয়েষু, স্নেহাস্পদেষু, স্নেহভাজনেষু, স্নেহের, প্রিয়, প্রীতিভাজনেষু, প্রীতিনিলয়েষু ইত্যাদি।
◾ বয়ঃকনিষ্ঠ (মেয়ে) : কল্যাণীয়া, কল্যাণীয়াসু, স্নেহের, স্নেহভাজনীয়া, স্নেহভাজনীয়াসু ইত্যাদি।
৪. মূল পত্রাংশ (মূল বক্তব্য)
এই অংশে পত্রলেখকের মূল বক্তব্য, উদ্দেশ্য, ইচ্ছা, আবেগ, অনুভূতি, ঔৎসুক্য ইত্যাদি লিখতে হয়। সহজ, সরল ও হৃদয়গ্রাহী করে লেখার ওপরই চিঠির সার্থকতা নির্ভর করে। রচনার গুণেই চিঠি উৎকৃষ্ট ও শিল্পনিপুণ হয়ে ওঠে। চিঠির পূর্বাপর বক্তব্যের সামঞ্জস্য, সংগতি ও ধারাবাহিকতা যেন রক্ষা হয়, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।
এ জন্য বক্তব্যকে প্রয়োজন মতো অনুচ্ছেদে বিভক্ত করে লিখলে ভালো হয়। যেমন : প্রথম অনুচ্ছেদে সালাম বা শুভেচ্ছা জানিয়ে চিঠি লেখার কারণ বা পটভূমি তৈরি করতে হয়। দ্বিতীয় অনুচ্ছেদে মূল বক্তব্যকে যথাসম্ভব স্পষ্ট বাক্যে লেখা উচিত। তৃতীয় অনুচ্ছেদে ইচ্ছা বা অভিপ্রায় প্রকাশ এবং প্রয়োজনে বক্তব্যকে আরো বিস্তার ঘটিয়ে সমাপ্তি টানা যেতে পারে। ব্যক্তিগত চিঠি আন্তরিকতাপূর্ণ এবং হৃদয়স্পর্শী হতে হয়। পত্রের শেষের দিকে পত্র-সমাপ্তিসূচক বিদায় সম্ভাষণ জানানোর রীতি সৌজন্যের পরিচায়ক। পত্র- সমাপ্তিসূচক শব্দ হিসেবে সাধারণত ইতি, নিবেদন-ইতি ইত্যাদি লেখাই দীর্ঘকাল ধরে প্রচলিত। তবে এখন ইতি না লিখে শুভেচ্ছান্তে, ধন্যবাদান্তে, ধন্যবাদসহ, সালামান্তে, প্রণামান্তে, নিবেদনান্তে ইত্যাদি প্রয়োজন ও অভিরুচি অনুযায়ী ব্যবহৃত হচ্ছে।
পত্র-সমাপ্তিসূচক অভিব্যক্তির পর বিদায় সম্ভাষণ হিসেবে পত্র-প্রাপকের সঙ্গে লেখকের সম্পর্ক অনুযায়ী বিশেষণ ব্যবহৃত হয়। স্থান, কাল, পাত্রভেদে পত্র-প্রাপকের সঙ্গে সম্পর্ক অনুসারে বিশেষণ ব্যবহারের পার্থক্য দেখা যায় ।
◾ প্ৰাপক শ্রদ্ধাভাজন (পুরুষ) : স্নেহধন্য, স্নেহাকাড়ী, প্রীত্যৰ্থী, গুণমুগ্ধ, প্ৰণত, বিনীত, প্রীতিধন্য, প্রীতিস্নিগ্ধ ইত্যাদি।
◾ প্রাপক শ্রদ্ধাভাজন : প্রাপক অনাত্মীয় সম্মানীয় লোক : প্রাপক বন্ধুস্থানীয় বা প্রিয়ভাজন : (পত্ৰলেখক মহিলা) স্নেহধন্যা, প্ৰণতা, বিনীতা, গুণমুগ্ধা, প্রীতিধন্যা, প্রীতিস্নিগ্ধা ইত্যাদি।
◾ প্রাপক অনাত্নীয় সম্মানীয় লোক : (পত্ৰলেখক পুরুষ) নিবেদক, ভবদীয়, বিনীত, বিনয়াবনত ইত্যাদি। (পত্ৰলেখক মহিলা) নিবেদিকা, বিনীতা, বিনয়াবনতা, ইত্যাদি।
◾ প্রাপক বন্ধুস্থানীয় প্রিয়ভাজন : (পত্রলেখক পুরুষ) প্রীতিধন্য, প্রীতিমুগ্ধ, অভিন্নহৃদয়, আপনারই, তোমারই ইত্যাদি। (পত্ৰলেখক মহিলা) প্রীতিধন্যা, প্রীতিমুগ্ধা, অভিন্নহৃদয়া ইত্যাদি।
◾ প্রাপক বয়সে ছোট হলে : আশীর্বাদক, আশীর্বাদিকা, শুভাকাঙ্ক্ষী, শুভানুধ্যায়ী ইত্যাদি।
বিদায় সম্ভাষণ সাধারণত পত্রের ডানদিকে লিখতে হয়।
৫. নাম-স্বাক্ষর (পত্রলেখকের স্বাক্ষর)
নাম-স্বাক্ষর চিঠির গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাই চিঠির শেষে অবশ্যই স্বাক্ষর করতে হয়। মা-বাবা, নিকট আত্মীয়, ঘনিষ্ঠ বন্ধুর কাছে চিঠি লিখতে গিয়ে পুরো নাম না লিখে সংক্ষিপ্ত স্বাক্ষর বা ডাক নাম ব্যবহার করাই সংগত। নাম স্বাক্ষরের আগে কেউ কেউ ‘তোমার পুত্র’, ‘তোমার প্রিয় মুখ’, ‘তোর বন্ধু’ ইত্যাদি পরিচিতি লিখে তারপর নাম-স্বাক্ষর করে।
৬. শিরোনাম
শিরোনাম পত্র পাঠাবার খামের ওপর লিখতে হয়। খামের ওপর বাম দিকে পত্রলেখকের (প্রেরক) ঠিকানা এবং ডান দিকে পত্র প্রাপকের পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা স্পষ্টভাবে লিখতে হয়। খামের ওপরে ডান কোণে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট মূল্যের ডাক টিকিট লাগাতে হয়। আজকাল বড় বড় পোস্ট অফিসে ডাক টিকিটের পরিবর্তে মেশিনের সাহায্যে খামের ওপর ছাপ মারার ব্যবস্থা চালু হয়েছে।
ক. ব্যাক্তিগত চিঠিপত্র লেখার নমুনা
১. বাবার কাছে মেয়ের চিঠি।
০২/০২/২০২০
সদর রোড, বরিশাল
শ্রদ্ধেয় বাবা,
আমার ভক্তিপূর্ণ সালাম নেবেন। মাকেও আমার সালাম জানাবেন। ফারজানা ও ছোট্টভাই রিয়াদের প্রতি রইল অশেষ স্নেহ।
সেদিন বাস স্টপে আপনার কাছ থেকে বিদায় নেওয়ার পর ভালোভাবেই বরিশাল এসে পৌঁছেছি। যদিও সারা পথ বাড়ির কথা ভেবে কী-যে মন খারাপ লেগেছে। প্রতিবারই বাড়ি থেকে আসার সময় আমার এরকম হয়। এখানে আসার পর হোস্টেলের বান্ধবীদের পেয়ে ভালো লাগছে। আগামী ১০ই নভেম্বর থেকে আমাদের প্রাক-নির্বাচনি পরীক্ষা। তাই পড়াশোনা নিয়ে খুব ব্যস্ত হয়ে পড়েছি। বাবা, আপনার স্বপ্ন- আকাঙ্ক্ষার কথা আমার মনে আছে। আপনি শুধু আমার জন্য দোয়া করবেন, যেন আমি ভালো ফল করে আপনার মুখ উজ্জ্বল করতে পারি। মায়ের মুখে হাসি ফোটাতে পারি।
খোদার অশেষ কৃপায় আমি ভালো আছি। আপনি আমার জন্য কোনো দুশ্চিন্তা করবেন না। নিজের শরীরের প্রতি যত্ন নেবেন। চিঠিতে আপনাদের খবর বিস্তারিত জানাবেন।
ইতি
আপনার স্নেহধন্যা
শিমু

২. মায়ের কাছে ছেলের চিঠি।
২০/০৪/২০২০
মিরপুর, ঢাকা।
প্রিয় মা,
সালাম নিও। আমি কলেজের ছাত্রাবাসে নিরাপদে পৌঁছেছি।
এসেই দেখলাম আমাদের টেস্ট পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। ছুটিতে বাড়ি গিয়ে লেখাপড়ায় বেশ অবহেলা করা হয়েছে। অনেক পড়া বাকি। আমি আর দেরি করছি না। বেশি পরিশ্রম করে লেখাপড়ার সাময়িক ক্ষতি পুষিয়ে নিতে হবে। আমার জন্য দোয়া কোরো। আমি যেন তোমাদের আশা পূরণ করতে পারি। আসার সময় মিনুকে কিছুটা অসুস্থ দেখে এসেছি। এখন ও কেমন আছে জানিও। বিদেশ থেকে বাবার কোনো চিঠি এসেছে কি? আমার জন্য কোনো চিন্তা কোরো না। আমি এখানে ভালো আছি।
ইতি
তোমার স্নেহের
রাশেদ

৩. সড়ক দুর্ঘটনায় আহত বন্ধুকে সমবেদনা জানিয়ে চিঠি।
২/১১/২০২০
হালিশহর, চট্টগ্রাম।
প্রিয় রাজন,
সড়ক দুর্ঘটনায় তুমি আহত হয়েছ শুনে ভীষণ চিন্তিত আছি। আজ সকালে তুহিন ফোন করে জানাল যে, তুমি রিক্শা উল্টে পড়ে গেছ। ডান হাত আর ডান পায়ে মারাত্মক জখম হয়েছে। শুনে খুব কষ্ট পেলাম। আশা করি, জখমগুলো শরীরের স্থায়ী ক্ষতি করবে না।
পা এক্স-রে করেছ কি? ডাক্তার কী বলেছেন? ওখানে যদি ভালো চিকিৎসার ব্যবস্থা না হয়, তবে দ্রুত চট্টগ্রাম চলে এসো। আমার মামা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের বোন-স্পেশালিস্ট। মামাকে আমি তোমার কথা বলে রাখব, কোনো সমস্যা হবে না। সরাসরি আমাদের বাসায় এসে উঠবে। কোনো দ্বিধা করবে না। আমার মনে হয়, ভয়ের কিছু নেই। এখন চিকিৎসা ব্যবস্থা অনেক উন্নত হয়েছে। দরকার শুধু সময়মতো ডাক্তারের কাছে যাওয়া। আশা করি, পরম করুণাময়ের কৃপায় দ্রুত তুমি সুস্থ হয়ে উঠবে। আমাদের ফোন নম্বর তো তোমার জানা । প্রয়োজনে ফোন কোরো। তুমি দ্রুত ভালো হয়ে ওঠো এটাই কামনা করি।
ইতি
তোমার বন্ধু
মুনতাসির

৪. বন্ধুর বাবার মৃত্যুতে সমবেদনা জানিয়ে বন্ধুকে চিঠি।
০২-০৫-২০২০
ঢাকা।
প্রিয় বন্ধু মাসুদ,
তোমাকে কী বলে যে সান্ত্বনা দেব জানি না। শোকাহতকে সান্ত্বনা দেওয়ার মতো ভাষা আমার জানা নেই। তবু একান্তভাবে চাইছি, জীবনের এই বুকভাঙা শোক যেন তুমি কাটিয়ে উঠতে পার। এ কঠিন শোক সহ্য করার শক্তি যেন আল্লাহ তোমাকে দেন।
আজ স্কুলে জাভেদের কাছে শুনলাম, হার্ট অ্যাটাকে তোমার বাবা মারা গেছেন। খবরটা শুনে আমি খুবই মর্মাহত। সাথে সাথে চাচার চেহারাটা মনের পর্দায় ভেসে উঠল। যখনই তোমাদের বাড়ি গেছি, দেখেছি তাঁর হাসি হাসি মুখ। আহ্, আমাকে কী আদরটাই না করতেন! খুব ভালোমানুষ ছিলেন তিনি। আমার চোখের জল যেন বাধা মানছে না। মৃত্যুর ওপর মানুষের কোনো হাত নেই। চিরদিন কারো বাবা বেঁচে থাকে না। এই বাস্তবতা আজ তোমাকে মেনে নিতে হবে।
মাসুদ, তুমি বাবার বড় ছেলে। তোমার মা এবং ছোটবোন তোমার মুখের দিকে চেয়ে আছে। তাদের দিকে চেয়ে মনকে শক্ত কর । আর দোয়া করি, তোমার বাবার বিদেহী আত্মা যেন শান্তি পায়।
ইতি
তোমারই
রুবেল

৫. ঐতিহাসিক স্থান ভ্রমণের অভিজ্ঞতা জানিয়ে বন্ধুকে চিঠি।
০৬-১১-২০২০
মোহাম্মদপুর, ঢাকা।
প্রিয় নরেশ,
আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা নিস। অনেকদিন তোর কোনো চিঠিপত্র পাচ্ছি না। আমার কথা কি ভুলে গেছিস? কোন অভিমানে তুই চিঠি লেখা বন্ধ করেছিস জানি না। আশা করি, আমার এ চিঠি পাওয়ার পর তোর অভিমানের বরফ গলবে।
আজ তোকে লিখতে বসেছি এক ঐতিহাসিক স্থান পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা জানাতে। গত ‘মাঘী পূর্ণিমার’ ছুটিতে আমি আর রতন গিয়েছিলাম ইতিহাস প্রসিদ্ধ সোনারগাঁ দেখতে। ইতিহাস বইতে বাংলার বারোভূঁইয়াদের কাহিনী পড়েছি। সেই বারোভূঁইয়াদের একজন ছিলেন ঈশা খাঁ। তারই অমর কীর্তি সোনারগাঁ। এর প্রাকৃতিক শোভা, প্রাচীন স্থাপত্য নিদর্শনের কথা চিঠিতে লিখে ঠিক তোকে বোঝাতে পারব না।
সকাল সাতটায় নাশতা সেরে আমরা দুজন সোনারগাঁর উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। ঢাকার কাছেই, তাই পৌঁছতে বেশি সময় লাগল না। রাস্তার পাশে বিরাট দ্বিতল ইমারত। এখন ভগ্নপ্রায়। সামনে মস্ত পুকুর। চারপাশে সারি সারি গাছ। শানবাঁধানো ঘাটের পাশে পাথরে খোদাই করা বীরযোদ্ধার গর্বিত প্রতিমূর্তি। তা বাংলার অবলুপ্ত শৌর্যবীর্যের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। এখানে রয়েছে শিল্পাচার্য জয়নুলের প্রচেষ্টায় নির্মিত লোক ও কারুশিল্প জাদুঘর এবং ঈশা খাঁর রাজধানীর মূল ভবন। রাস্তার দুপাশে রয়েছে অনেক পুরানো অট্টালিকা। প্রাচীন যুগের অবাক করা সব স্থাপত্য নিদর্শন। ইতিহাসের উত্থান-পতনের কাহিনী। এসব দেখতে দেখতে যেন অতীতে হারিয়ে গেলাম।
সময় পেলে তুইও একবার দেখে আসিস বাংলার ইতিহাস প্রসিদ্ধ সোনারগাঁ। তোর পড়ালেখা কেমন চলছে জানাবি। ভালো থাকিস।
ইতি
দীপঙ্কর

৬. এসএসসি পরীক্ষার পর অবসর দিনগুলো কীভাবে কাটাবে তা জানিয়ে বন্ধুর কাছে পত্র।
৫.১.২০২০
নীলফামারী
প্রিয় মুকুল,
শুভেচ্ছা নিস। অনেকদিন পর তোর চিঠি পেলাম। চিঠিতে তুই জানতে চেয়েছিস, আসন্ন পরীক্ষার পর কী করব? কেন, তোর কোনো পরিকল্পনা আছে নাকি? সিঙ্গাপুর, কলকাতা, কাঠমান্ডু কিংবা কক্সবাজারে সমুদ্রসৈকতে আনন্দভ্রমণে যাবার প্ল্যান? আসলে পরীক্ষার পর তিনমাস সময়টা যে খুব দীর্ঘ তা নয়। দেখতে দেখতে হয়তো কেটে যাবে। তবে আমি এই সময়টা কাজে লাগাতে চাই। নিরর্থক আনন্দভ্রমণের চেয়ে আমি বরং সময়টাকে অর্থময় করে তুলতে চাই।
প্রথমে আমার ইচ্ছে, পরীক্ষার পর কিছুদিন আমি গ্রামের বাড়িতে কাটাব। সেখানে আমার একটা পরিকল্পনা আছে। আমরা গ্রামের বন্ধুরা মিলে ১০০০টি ফলজ, বনজ বৃক্ষের চারা রোপণ করব। গাছগুলো চেয়ারম্যানের অনুমতিক্রমে আমাদের গ্রামের যে নতুন রাস্তাটা আছে, তার দুপাশে লাগাব। কয়েকদিন গ্রামের বাড়িতে থাকাও হবে, বন্ধুদের নিয়ে গ্রামের জন্য কিছু করতে পারলে ভালো লাগবে। আমাদের দেশে যে হারে বৃক্ষনিধন চলছে, তাতে পরিবেশ বিপর্যয় অত্যাসন্ন।
তারপর ঢাকায় আমার বড়মামার বাসায় কিছুদিন বেড়াব। ঢাকায় বেশকিছু দর্শনীয় স্থান আমার দেখা হয়নি। মামা-মামি কতবার যেতে বলেছেন। কিন্তু পড়াশোনার জন্যে এতদিন যাওয়া হয়নি। ভাবছি মামার বাসায় বেড়ানো হবে, দর্শনীয় স্থানও দেখা হবে। আপাতত পরিকল্পনা হচ্ছে, ঢাকার রায়েরবাজারে অবস্থিত শহিদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ, সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধ, লালবাগ কেল্লা ও আহসান মঞ্জিল দেখা। সম্ভব হলে ঈশা খাঁর সোনারগাঁ পরিদর্শন করব।
তুই তো জানিস, আমার বড়মামা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। আমার মেঝমামাকে পাকিস্তানি আর্মিরা গুলি করে হত্যা করেছে। এসব আমার জন্মেরও আগের কথা। মায়ের মুখে মেজমামার নির্মম হত্যাকাণ্ডের কথা শুনতে শুনতে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি আমার গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জন্মে গেছে। তাই প্রথমে রায়েরবাজারের বধ্যভূমি এবং জাতীয় স্মৃতিসৌধ দেখতে যাব। তারপর অন্যান্য জায়গা। মোটামুটি এই আমার পরিকল্পনা। ইচ্ছে করলে তুইও আমার সঙ্গে যোগ দিতে পারিস।
আমার পরিকল্পনা তো জানালাম। এবার তোর অবসর কাটানোর পরিকল্পনা লিখে জানা। চাচা ও চাচিকে আমার সালাম দিস। তোর সুন্দর, বিকশিত জীবন কামনা করে আজকের মতো শেষ করছি।
শুভেচ্ছান্তে
নজরুল

৭. মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর ভবিষ্যৎ জীবনের লক্ষ্য জানিয়ে বন্ধুর কাছে পত্র।
৫.৩.২০২০
সুনামগঞ্জ
প্রিয় জিল্লুর,
আমার আন্তরিক ভালোবাসা নাও। গতকালই তোমার চিঠি পেলাম। চিঠিতে তুমি আমার জীবনের লক্ষ্য সম্পর্কে জানতে চেয়েছ। তবে কি তুমি নিজের জীবনের লক্ষ্য নিয়ে ভাবতে শুরু করেছ? জীবন সম্পর্কে তোমার এ সচেতনতা দেখে সত্যি আমি আনন্দিত। আসলে জীবন সম্পর্কে, জীবনের লক্ষ্য উদ্দেশ্য নিয়ে ভাবনা-চিন্তা করার এটাই উৎকৃষ্ট সময়।
তুমি জেনে খুশি হবে যে, আমার এসএসসি পরীক্ষা খুব ভালো হয়েছে। ইন্শাল্লাহ আমি ভালোভাবে উত্তীর্ণ হব। পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর আমি ভালো কোনো কলেজে ভর্তি হতে চাই। বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে চাই। তারপর মেডিকেলে ভর্তি হওয়ার আমার খুব ইচ্ছা। কারণ ভবিষ্যতে ভালো ডাক্তার হওয়াই আমার স্বপ্ন। জানি না তা কতটা সফল হবে।
কেন ডাক্তার হওয়ার কথা ভাবছি জানো? আমাদের গ্রামে এখনো কোনো এমবিবিএস ডাক্তার নেই। আমি দেখেছি, চিকিৎসার অভাবে আমাদের গ্রামে কত দরিদ্র মানুষ কষ্ট পায়, অকালে প্রাণ হারায় কত মানুষ। আমার ইচ্ছা, ভবিষ্যতে ডাক্তার হয়ে আমি এই হতদরিদ্র মানুষের সেবায় আত্মনিয়োগ করব। চিকিৎসা সেবাকে আমি মহৎ মানবিক সেবা বলে মনে করি। আমি এ সেবায় আত্মোৎসর্গ করতে চাই। এ মহৎ পেশার মাধ্যমে আমি যেন জনগণের সেবা দান করতে পারি, প্রতিষ্ঠা লাভ করতে পারি একজন মহষ্প্রাণ চিকিৎসক হিসেবে, এই দোয়াই সবার কাছে প্রত্যাশা করি। ভালো থেকো।
ইতি
তোমারই
মোস্তাফিজ

৮. গ্রামকে নিরক্ষরতার অভিশাপ থেকে মুক্ত করার ক্ষেত্রে নিজের ভূমিকার বর্ণনা দিয়ে বন্ধুর কাছে পত্র।
২২.৭.২০২০
নওগাঁ
সুপ্রিয় সাজিদ,
আমার শুভেচ্ছা নাও। আশা করি সবাইকে নিয়ে ভালো আছ। তোমার সাথে অনেকদিন কোনো যোগাযোগ করতে পারিনি। এর কারণ ‘নিরক্ষরতার অভিশাপ’ থেকে আমাদের গ্রামকে মুক্ত করার কাজে ব্যস্ত ছিলাম এতদিন। এ ব্যস্ততার কারণে তোমার কাছে চিঠি লিখতে দেরি হলো।
তুমি তো নিরক্ষরতার ভয়াবহতা সম্পর্কে অনেক বেশি সচেতন, কারণ তুমি তো শহরে থাক। কিন্তু গ্রামের নিরক্ষর মানুষ যে কী অভিশপ্ত জীবনযাপন করে, তা চোখে না দেখলে বোঝা যায় না। নিরক্ষরতার কারণে তারা প্রতিনিয়ত ঠকছে, বঞ্চিত হচ্ছে, ধোঁকা খাচ্ছে, রোগ-শোকে ধুঁকে মরছে। এসব চিত্র কোনো ক্রমেই সহ্য করতে পারছিলাম না।
তাই সমমনা কয়েকজন মিলে ‘প্রত্যয়’ নামে একটা সংগঠন গড়ে তুলি। এর প্রথম কাজ হলো, যে-কোনো মূল্যে আমাদের গ্রামকে নিরক্ষরতার অভিশাপ থেকে মুক্ত করা। তাই আমরা প্রথমে গ্রামের মুরব্বিদের সাথে কথা বলি। তাঁরা আমাদের কথা শুনে খুব খুশি হলেন এবং নানা পরামর্শ ও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলেন। ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমার উদ্যোগের কথা জেনে, তার কাছারিঘরটা নৈশ-বিদ্যালয়ের জন্য ছেড়ে দিলেন। আমরা কয়েকজন শিক্ষকের ভূমিকা পালন করি। পুরো গ্রামে উৎসাহের ধুম পড়ে গেল। নিরক্ষর ছেলে, বুড়ো, বৌ-ঝিরা এ নৈশবিদ্যালয়ে আসতে শুরু করে। আমরা প্রত্যেকে কাজ ভাগ করে নিলাম। এভাবে আজ ছয়মাস কাজ করছি। আশা করছি আর ছয়মাস কাজ করলে গ্রামের সব বয়স্কদের নিরক্ষরতার অভিশাপ থেকে মুক্ত করা যাবে।
ইতোমধ্যে উপজেলা কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক আমাদের নৈশবিদ্যালয় পরিদর্শন করে গেছেন। কিছু সাহায্যেরও আশ্বাস দিয়ে গেছেন। এ বিষয়ে ‘প্রথম আলো’ পত্রিকায় একটা সচিত্র প্রতিবেদনও ছাপা হয়েছে।
আমি বুঝলাম, আসলে উদ্যোগ নিলেই হয়। উদ্যোগ নিয়েছি বলেই আজ গ্রামের বয়স্করা নিরক্ষরতার অভিশাপ থেকে মুক্ত হতে চলছে। তুমি সময় পেলে একবার আমাদের নৈশবিদ্যালয়টি এসে দেখে যেও। আজ আর নয়। চিঠির উত্তর দিও।
ইতি
তোমার পপ্রীতিধন্য
নুরুল আমিন

৯. সম্প্রতি পড়া একটা বই সম্পর্কে মতামত জানিয়ে বন্ধুর কাছে পত্র।
২.৭.২০২০
ভেড়ামারা
প্রিয় নভেরা,
আন্তরিক শুভেচ্ছা নাও। আশা করি পরিবারের সবাইকে নিয়ে ভালো আছো। গতকাল তোমার চিঠি পেয়ে বিস্তারিত জেনে খুশি হলাম। এভাবে মাঝে মাঝে চিঠিপত্র লিখে খবরাখবর নিলে ভালো লাগে। চিঠিতে তুমি জানতে চেয়েছ পরীক্ষার ঝামেলা শেষে আমি এখন কী করছি? কীভাবে সময় কাটাচ্ছি?
আমি এখন বিভিন্নরকম বই পড়ে সময় কাটাচ্ছি। ইতোমধ্যে পড়েছি ‘ছোটদের রামায়ণ’, ‘রবীন্দ্রনাথের ছেলেবেলা’, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘মেঝদিদি’, ‘বিন্দুর ছেলে’, হুমায়ূন আহমেদের ‘তোমাদের জন্য রূপকথা’, মুহম্মদ জাফর ইকবালের ‘দীপু নাম্বার টু’ ইত্যাদি। গতকাল পড়ে শেষ করলাম বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পথের পাঁচালী’।
‘পথের পাঁচালী’র অপুর সঙ্গে আমার জীবনের অদ্ভুত কিছু মিল খুঁজে পেয়ে আমি বিস্মিত হয়েছি। ‘দুর্গা’ যেন আমার আপার হুবহু সংস্করণ। গ্রামের প্রান্তে কাশবনে লুকোচুরি খেলা, হঠাৎ রেল আসতে দেখে অবাক চোখে তাকিয়ে থাকা—এসবের মধ্যে আমি আমার কিশোরবেলাকে খুঁজে পেয়েছি। বিভূতিভূষণের বর্ণনাও অসাধারণ। যেন আমাদের দেবরামপুর গ্রাম মুহূর্তে নিশ্চিন্দপুর হয়ে গেছে। অপু, দুর্গার মা সর্বজয়া যেন আমার দুখিনী মা। সবচেয়ে কষ্ট লেগেছে দুর্গার মৃত্যু। বিশ্বাস কর, এ অংশটি পড়তে গিয়ে আমি কেঁদে ফেলেছি। রাতে ভাত খেতে পারিনি। সারারাত লেপের নিচে শুয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদেছি। আমার মা ধমকের সুরে বলেছেন, যে বই পড়ে কাঁদতে হয়, সেরকম বই পড়ার দরকার কী? মাকে কী করে বোঝাই, দুর্গার মৃত্যুতে আমার কী যে কষ্ট হচ্ছে। ইন্দিরা ঠাকুরনের চরিত্রও আমার হৃদয়কে স্পর্শ করেছে প্রবলভাবে। আজ অবধি আমি যত বই পড়েছি, তার মধ্যে ‘পথের পাঁচালী’ আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ অভিজ্ঞতা। এটি বিভূতিভূষণের একটি শ্রেষ্ঠ উপন্যাস।
আজ আর লিখছি না। ভালো থেকো। তোমার সময় কীভাবে কাটছে জানিয়ে চিঠি লিখো।
ইতি
জান্নাতুল ফেরদৌসী

১০. বিদ্যালয়ে শেষ দিনের মানসিক অবস্থা জানিয়ে বন্ধুর কাছে চিঠি।
১৭.৫.২০২০
শিবচর।
প্রিয় মনজুর,
অনেক অনেক শুভেচ্ছা। আশা করি খোদার কৃপায় ভালো আছ। অন্যরকম একটি দিনের কথা লিখতে বসেছি আজ তোমাকে। আজ আমার স্কুলজীবনের শেষদিন। এ দিনটির কথা আমি আগে কখনো ভাবিনি।
একদিকে দীর্ঘ দশ বছরের অভ্যস্ত জীবন, পরিচিত পরিবেশের মায়া ছিন্ন করার কষ্ট, অন্যদিকে স্কুলের দেয়াল ডিঙিয়ে বৃহত্তর জীবনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার আনন্দ। মনের মধ্যে এক মিশ্র অনুভূতি তৈরি হয়েছে।
এ স্কুলের প্রতিটি ইট-কাঠের সঙ্গে আমার কেমন যেন মায়াময় সম্পর্ক অনুভব করছি আজ। শ্রদ্ধেয় শিক্ষকমণ্ডলী, অগণিত ছাত্রছাত্রী, পরিবেশের সঙ্গে একধরনের আত্মিক সম্পর্ক রচিত হয়েছিল। এগুলো ছেড়ে যেতে হৃদয় হাহাকার করছে। শিক্ষকদের কাছ থেকে বিদায় নেওয়ার সময় কেন জানি অজান্তেই অশ্রু গড়িয়ে পড়ল। তাঁদের অমূল্য উপদেশ আর দোয়া নিয়ে বাসায় ফিরলাম।
স্কুলের শেষদিনে আমার মনের অবস্থা ঠিক তোমাকে বোঝাতে পারব না। আমার ক্ষুদ্র জীবনের আজ এক স্মরণীয় দিন। স্মৃতির অ্যালবামে পাতাঝরা দিনের মতো এ দিনটি গচ্ছিত থাকবে চিরদিন। তোমার খবর কী? কেমন লেগেছে স্কুলের শেষ দিনটাতে? তোমার অনুভূতি জানিয়ে চিঠির উত্তর দিও।
ইতি-
তোমারই
রফিক

১১. ছাত্রজীবনে শিক্ষামূলক সফরের উপকারিতা বর্ণনা করে বন্ধুর কাছে পত্র।
২৪/৪/২০২০
কুড়িগ্রাম।
প্রিয় জসীম,
শুভেচ্ছা নিও। আশা করি বাড়ির সবাইকে নিয়ে ভালো আছ। আমরাও খোদার কৃপায় ভালো আছি। গত সপ্তাহে আমাদের স্কুলের সবাই মিলে ইতিহাসখ্যাত বগুড়া মহাস্থানগড় শিক্ষাসফরে গিয়েছিলাম। তোমাকে আজ লিখছি আমাদের সেই শিক্ষাসফর সম্পর্কে।
সেদিন সকাল সাড়ে আটটায় স্কুল ক্যাম্পাস থেকে আমাদের বাস ছেড়েছে। গিয়ে পৌঁছতে পৌঁছতে দুপুর সোয়া বারোটা। শিক্ষাসফরে যাব বলে সবার মাঝে ছিল দারুণ আনন্দ। মহাস্থানগড়ের প্রাচীন পুরাকীর্তি, বৌদ্ধযুগের স্থাপত্য নিদর্শন ও ভাস্কর্য সম্পর্কে বইতে শুধু পড়েছি। সেখানে দাঁড়িয়ে যখন সেই লুপ্তপ্রায় ইতিহাসের কথা আমাদের মমতাজ স্যার বলতে শুরু করলেন, কল্পনায় আমি যেন মুহূর্তে ফিরে গেলাম অতীতের সেই সমৃদ্ধ যুগে। আমি উপলব্ধি করলাম, আসলে শুধু বই পড়ে পরিপূর্ণ জ্ঞান লাভ করা কখনো সম্ভব নয়। মাঝে মাঝে ঐতিহাসিক স্থানগুলোতে শিক্ষাসফরে যাওয়া উচিত। এতে জাতীয় ইতিহাসের সঙ্গে আমাদের আত্মিক সম্পর্ক যেমন গড়ে উঠতে পারে, তেমনি বইতে পড়া ইতিহাস সম্বন্ধেও আমাদের অনেক কিছু জানাও সম্ভব হয়।
বাস্তব শিক্ষার জন্য আসলে শিক্ষাসফরের কোনো বিকল্প নেই। তাই জীবনের সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে ওঠার জন্যে শিক্ষাসফরের খুবই প্রয়োজন। এতে আনন্দও হয়, আবার বাস্তবতা সম্পর্কে অনেক কিছু জানা ও বোঝার সুযোগ ঘটে। আজ আর নয়। ভালো থেকো।
ইতি-
ফিরোজ

১২. পরীক্ষায় কৃতিত্ব প্রদর্শনের জন্য বন্ধুকে অভিনন্দন জানিয়ে পত্র।
৩.৬.২০২০
ঢাকা।
বন্ধুবরেষু শাকিল,
আজ তোমাকে প্রাণঢালা শুভেচ্ছা জানাই। তোমার কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফলে আজ আমরা যারপরনাই আনন্দিত।
‘যুগান্তর’ পত্রিকায় কৃতী ছাত্র হিসেবে ছবিসহ তোমার রেজাল্টের খবর পড়ে আমি আনন্দে ও উত্তেজনায় কেঁপে উঠলাম। আমার সমস্ত হৃদয় জুড়ে যেন মহাসাগরের আনন্দহিল্লোল বয়ে গেল। চট্টগ্রাম বোর্ডের আড়াই লাখ ছাত্রছাত্রীর মধ্যে মাত্র তিনশ সাঁইত্রিশ জন এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে। তার মধ্যে তুমি একজন। তোমার এ সাফল্যে এক সোনালি ভোরের ইঙ্গিত দিচ্ছে। এ গৌরবোজ্জ্বল ফলাফলের জন্য তোমাকে আমার আন্তরিক অভিনন্দন।
নিঃসন্দেহে তুমি একদিন জাতির অন্যতম কর্ণধার হবে। তোমার জ্ঞানসাধনার সঙ্গে সততা ও নিষ্ঠা থাকবে। তুমি দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করে সমৃদ্ধ দেশ গঠনে একদিন ভূমিকা রাখবে, এ আমার দৃঢ় বিশ্বাস। তোমার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করে এখানেই শেষ করলাম। ভালো থেকো।
ইতি
তোমার প্রীতিমুগ্ধ
দিলীপ

খ. আবেদনপত্র বা দরখাস্ত
দেখতে/পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
গ. সংবাদপত্রে প্রকাশের জন্যে আবেদন/চিঠি
দেখতে/পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
ঙ. মানপত্র ও স্মারকলিপি
দেখতে/পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
চ. আমন্ত্রণ বা নিমন্ত্রণপত্র
দেখতে/পড়তে এখানে ক্লিক করুন।