অ্যানথ্রাক্স হল প্রাণীদের একটি ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ, যা সাধারণত গরু, ভেড়া এবং ছাগলের মধ্যে দেখা যায়। এটি একটি ছোঁয়াছে রোগ, খামারের বা এলাকার একটি প্রাণীর হলে তার যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে অন্যান্য সকল প্রাণীরও রোগটি হয়। অ্যানথ্রাক্স সাধারণত দ্বারা দূষিত খাদ্য এবং জল দ্বারা ছড়িয়ে যায়, যা মাটিতে বহু বছর ধরে থাকতে পারে। পশুচারণে অ্যানথ্রাক্সের প্রাথমিক লক্ষণ হল আকস্মিক মৃত্যু, এছাড়াও কিছু লক্ষণ নিচে আলোচনা করা হলো।
▶ তড়কা বা এ্যানথ্রাক্স রোগের লক্ষণ সমূহঃ
(01) অ্যানথ্রাক্স ব্যাকিলিয়াম অ্যানথ্রাক্সিস ব্যাকটিরিয়া দ্বারা সৃষ্ট হয় ,অ্যানথ্রাক্স দ্বারা মারা যাওয়া প্রাণীদের হাড়ে এই জীবাণু 50 বছর পর্যন্ত এবং 200 বছর পর্যন্ত মাটিতে বেঁচে থাকতে পারে।
(02) ব্যাসিলাসগ্যানথাসিস নামক এক ধরণেরব্যাকটেরিয়া দ্বারা এ রোগ হয়|
(03) শরীরেরতাপমাত্রা বেড়ে যায় যা ১০৩-১০৭ ডিগ্রিফারেনহাইট।
(04) খাওয়াদাওয়া বন্ধ করে দেয়।
(05) জাবরকাটে না।
(06) শ্বাসকষ্ট হয়।
(07) নাকমুখ দিয়ে লালা পড়ে।
(08) পেটফুলে ওঠে।
(09) রক্তমিশ্রিত পায়খানা হয় ।
(10) এ রোগে আক্রান্ত ছাগল লক্ষণ প্রকাশের আগেই অনেক সময়মারা যায় |
(11) ছাগলটলতে টলতে পড়ে গিয়েহাঁপাতে থাকে, খিঁচুনি দেখা যায় এবংমারা যায় |
(12) রোগেরতীব্রতা বৃদ্ধির সাথে সাথে মলকালো হতে হতে আলকাতরারমত হয়ে যায় ।
(13) মরাছাগলের নাক ও মুখদিয়ে রক্ত মিশ্রিত ফেনাবের হয় ।
(14) তড়কা বা এ্যানথ্রাক্সএকটি মারাত্বক ব্যাধি | রোগ লক্ষণ দেখা দেওয়ার সাথে সাথে দেরী না তড়কা আক্রান্ত ছাগলকে চিকিৎসা প্রদান করতে হবে |
(15) এ জীবাণুর মূল উৎস মাটি।
(16) দীর্ঘদিন (অন্তত ৩/৪ দশক) রড আকৃতির এই জীবাণু স্পোর মাটিতে টিকে থাকতে পারে।
(17) গবাদিপশু বা কোনো তৃণভোজী প্রাণি মাটি থেকে ঘাস খাবার সময় সহজেই এ রোগের জীবাণু (Spore) দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে।
(18) এ রোগের জীবাণু সংক্রমিত পানি পান করলেও গবাদিপশু এ্যানথ্রাক্স দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে।
▶ রোগ প্রতিরোধের জন্য পদক্ষেপঃ
(01) কোন অবস্থাতেই মৃত ছাগলের চামড়া ছাড়ানো যাবে না ।কারণ চামড়া এ রোগের জীবানু বহন করে ।
(02) আক্রান্ত প্রাণি বা মৃতদেহ কোন অবস্থাতেই ব্যবচ্ছেদ করা যাবে না।
(03) মৃত ছাগলের ব্যবহৃত সকল জিনিস পুড়ে ফেলতে হবে ।
(04) লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার সাথে সাথে আক্রান্ত প্রাণিকে পৃথক করে চিকিৎসা দিতে হবে । অসুস্থছা গলকে বিক্রি করা যাবে না। অসুস্থ ছাগলকে এক স্থান হতেঅন্য স্থানে চলাচল করানো যাবে না ।
(05) সুস্থছাগলকে নিয়মিত ১ বছর পরপর এ্যানথ্রাক্স রোগের টিকা প্রদান করতেহবে ।
(06) মৃত ছাগলকে মাটিতে পুড়িয়ে ফেলতে হবে বা মাটির গর্তে চুন বা ব্লিচিং পাউডার দিয়ে তার উপর মৃতদেহ রেখে মৃতদেহের উপর আবার চুন বা ব্লিচিং পাউডার দিয়ে মাটি চাপা দিতে হবে ।
(07) গবাদিপশু এ রোগ দ্বারা আক্রান্ত হলে এর চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করা হয় এন্টিবায়োটিক। মাংসপেশিতে দেয়া হয় পেনিসিলিন ইনজেকশন। শিরায় ক্রিস্টালিন পেনিসিলিন ইনজেকশন দিয়েও রোগের উপশম করা যায়।
(08) ব্যথা ও জ্বর কমানোর জন্য ব্যবহার করা হয় ক্লোফেনাক জাতীয় ঔষধ। আর রোগের প্রতিষেধক হিসেবে ব্যবহার করা হয় ভেকসিন।
▶ নোটঃ
মানুষের শরীরে প্রধানত ৩ ধরনের এ্যানথ্রাক্স-এর উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। এগুলো হলো, ত্বক সংক্রান্ত এ্যানথ্রাক্স, শ্বাসজনিত এ্যানথ্রাক্স এবং পরিপাকতন্ত্রের এ্যানথ্রাক্স। সাধারণত ত্বকের এ্যানথ্রাক্স সহজেই দৃষ্টিগোচর হয়। তাতে হাত ও পায়ের ত্বকে কালো রঙের ক্ষত সৃষ্টি হয়। দ্রুত চিকিৎসা না নিলে তা সারা দেহেই ছড়িয়ে পড়তে পারে। কিছুদিন পর আক্রান্ত স্থান ফুলে যায় এবং তাতে ভীষণ ব্যথা অনুভুত হয়। মানব দেহ এ্যানথ্রাক্স সংক্রমিত হলে ৮/১০ দিনের মধ্যেই তা প্রকাশ পায়। তবে চিকিৎসা নিলে তা নিরাময় হয়ে যায়।
এ্যানথ্রাক্স গবাদিপশুর একটি ভয়ানক রোগ। এর জীবাণু মানুষের জন্য সমরাস্ত্র হিসেবেও ব্যবহূত হয়। বিশ্বের পরাক্রমশালী দেশগুলো বিশেষ করে আমেরিকা ও রাশিয়া এ রোগের জীবাণু অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। ইরাক যুদ্ধের সময় চিঠির এনভেলপে করে এ্যানথ্রাক্স জীবাণু প্রেরণ করা হয়েছে আমেরিকায়। তাতে অনেকে রোগাক্রান্ত হয়েছে। ধারণা করা হয়, জঙ্গীবাদের সঙ্গে যুক্ত সন্ত্রাসীরাও এ্যানথ্রাক্স ব্যবহার করতে পারে জীবাণু অস্ত্র হিসেবে।
প্রাণি থেকে এ রোগ মানুষেও ছড়ায়। এটি জোনোটিক (zoonotic) রোগ। তবে মানুষ থেকে মানুষে এ রোগের বিস্তার ঘটেনা।