মাচা তৈরির পদ্ধতিঃ
● ছাগলের ঘর যে ধরনের হোক না কেন ঘরের ভেতরে বাঁশ বা কাঠের মাচা তৈরি করে তার ওপর ছাগল রাখতে হবে। একটি মাচা তৈরি করতে ১৫০-২০০ টাকা খরচ হয়।
● বিভিন্নভাবে ছাগলের মাচা তৈরি করা যায়। বাঁশের বাতা দিয়ে চকির মতো করে করা যায়। আবার বাঁশের বাতা মোটা সুতা দিয়ে বুনিয়ে ফোল্ডিং (Folding) মাচা তৈরি করা যায়, যা রাতে ছাগলের জন্য ব্যবহার করে সকালে মুড়িয়ে/গুটিয়ে উঠিয়ে রাখা যায়। কম জায়গায় ফোল্ডিং মাচা ব্যবহার করা সুবিধাজনক।
● কাঠের চকিও মাচার বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যায়। মাচার উচ্চতা ১.৫ মিটার (৫ ফুট) এবং মাচা থেকে ছাদের উচ্চতা ৬-৮ ফুট হতে হবে।
● গোবর ও প্রস্রাব পড়ার সুবিধার্থে বাঁশের চটা বা কাঠকে ১ ইঞ্চি ফাঁকা রাখতে হবে।
● মাচার নিচে থেকে সহজে গোবর ও প্রস্রাব সরানোর জন্য ঘরের মেঝে বরাবর উঁচু করে দুই পাশে ঢালু (২%) রাখতে হবে।
● মেঝে মাটির হলে সেখানে পর্যাপ্ত বালু মাটি দিতে হবে।
● ছাগলের ঘরের দেয়াল, মাচার নিচের অংশ ফাঁকা এবং মাচার ওপরের অংশ এম এম ফ্ল্যাক্সিবল নেট হতে হবে।
● শীতকালে রাতে মাচার ওপর দেয়াল চট দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। শীতের সময় মাচার ওপর ৪-৫ ইঞ্চি পুরু খড়ের বেডিং বিছিয়ে দিতে হবে।
● প্রতিদিন মাচা পরিষ্কার করতে হবে। সপ্তাহে ১ দিন জীবাণুনাশক ওষুধ স্প্রে করতে হবে। ভেঙে গেলে সাথে সাথে মেরামত করতে হবে। মাচা শক্ত ও মজবুত হতে হবে।
ছাগলের ঘর নির্মাণে বিবেচ্য বিষয়সমূহঃ
● ছাগল সাধারণত পরিষ্কার শুষ্ক, দুর্গন্ধমুক্ত উষ্ণ, পর্যাপ্ত আলো ও বায়ু চলাচলকারী পরিবেশ বেশি পছন্দ করে। অপরিষ্কার, স্যাঁতস্যঁতে, বদ্ধ, অন্ধকার ও পুঁতিগন্ধময় পরিবেশে ছাগল বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়। যেমন- নিউমোনিয়া, একথিওমা, পিপিআর, ডায়রিয়া, চর্মরোগ, উকুন ইত্যাদি, অপর দিকে ছাগলের উৎপাদন কমে যায়।
● পূর্ব-পশ্চিম লম্বালম্বী দক্ষিণ দিকে খোলা স্থানে ঘর তৈরি করতে হবে। খামারের তিন দিকে ঘেরা পরিবেশ বিশেষ করে উত্তর দিকে গাছপালা লাগাতে হবে। এ ক্ষেত্রে কাঁঠাল, ইপিল ইপিল, কসভা, ডেউয়া ইত্যাদি গাছ লাগানো যেতে পারে, যার পাতা ছাগল খায়।
● সেমি-ইন্টেনসিভ পদ্ধতিতে ছাগলকে সাধারণত ১৪-১৬ ঘণ্টা সময় ঘরে আবদ্ধ রাখা হয়। এ জন্য প্রতিটি ছাগলের জন্য গড়ে প্রায় ৮-৯ বর্গফুট জায়গা প্রয়োজন, অর্থাৎ ১৬ ফুটত্র১২ ফুট ঘরে ২০টি ছাগল পালন করা যায়।
মাচায় ছাগল পালনের সুবিধাসমূহঃ
● প্রস্রাব, গোবর সাথে সাথে নিচে পড়ে যায়। ফলে শরীর পরিষ্কার থাকে।
● শীতকালে ঠাণ্ডা কম লাগে।
● কৃমি, উকুন, চর্মরোগ কম হবে।
● সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়া রোগ হবে না।
●মাচার ওপর ও নিচ দিয়ে বাতাস চলাচল করে বিধায় মাচা শুকনো থাকে,যা ছাগলের জন্য আরামদায়ক।
● সর্বোপরি ছাগলের স্বাস্থ্য ভালো থাকে ও উৎপাদন বৃদ্ধি পায়।
টিপসঃ
ছাগলকে পরিমাণ মতো দানাদার খাদ্য ও ঘাস, লতা-পাতা দিতে হবে। উকুন, মেঞ্জ নিধন করতে হবে। ৪ মাস পরপর কৃমিনাশক সেবন করাতে হবে। ৬ মাস পরপর PPR রোগের টিকা প্রয়োগ করতে হবে। ওলান পাকা রোগ প্রতিরোধ করতে হবে। প্রজনন করানোর জন্য একটি পাঠা এক এলাকায় ২ বছরের বেশি ব্যবহার করা যাবে না। তথ্য সূত্র : ১. দেশি ছাগল পালন- BLRI, সাভার, ঢাকা।