আজকে আমরা আলোচনা করব ছাগলের জ্বরের চিকিৎসা বিষয়ে। ছাগলের জ্বরের ঔষধ ও ছাগলের জ্বরের লক্ষণ কি? ছাগলের জ্বর হলে কি করা উচিত বা প্রাথমিক চিকিৎসা কিভাবে করবেন? বিস্তারিত আলোচনা থাকবে আমাদের আজকের এই পোষ্টটিতে। পেষ্টিটি স্কিপ না করে অবশ্যই মনোযোগ সহকারে শেষ অবধি পড়বেন। পোষ্টটি পড়ার পর যদি ভালো লাগে অবশ্যই আমাদের ফেসবুক পেইজে একটা লাইক করতে ভুলবেন না। চলুন শুরু করা যাক আলোচনাটি।
ছাগলের জ্বর কাকে বলা হয়?
⇒ শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি হয়ে যাওয়ার পরিস্থিতিকেই জ্বর বলা হয়।
ছাগলের জ্বর কেন হয়?
⇒ বিভিন্ন কারণে হতে পারে যেমন আবহাওয়ার পরিবর্তন। লক্ষ্য করবেন যখন একটা ঋতু বিদায় নিচ্ছে এবং আরেকটি ঝতুর আগমন ঐ সময় কিন্তু বেশি জ্বর দেখা যায় উদাহরণস্বরূপ বর্ষাকালে এক ধরনের তাপমাত্রা ছিল কিন্তু শরৎকালের আরেক ধরনের তাপমাত্রা। আস্তে আস্তে তাপমাত্রা সেটা চেঞ্জ হয়ে যাচ্ছে দিনের বেলায় গরম আবার রাত্রে ঠাণ্ডা বর্ষাকালের দুই-তিন মাসে তাপমাত্রা তাদের শরীর অভ্যস্ত হয়ে গেছে কিন্তু এখন শরৎকালের আবহাওয়ার পরিবর্তন হচ্ছে যার জন্য তাপমাত্রাও বদলে যাচ্ছে। আর ঐ তাপমাত্রাকে শরীর হঠাৎ করে মানিয়ে নিতে পারে না যার কারণে কিন্তু শরীরের মধ্যে জ্বর চলে আসে।
⇒ এখানে আরেকটি কথা প্রত্যেকে ছাগলের জ্বর নাও হতে পারে মনে রাখবেন যাদের বডি ইমিউনিটি পাওয়ার বেশি তাদের সহজে জ্বর হবে না কিন্তু যাবে বডি ইমিউনিটি কম তাদের কিন্তু সরাসরি জ্বর চলে আসবে এবং জ্বরের সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের রোগ হতে পারে এছাড়াও কিন্তু কোন ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ও প্রোটোজোয়ার সংক্রমণেও জ্বর হয়। হঠাৎ করে কোন ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া যদি তার শরীরে আক্রমণ করে সেটার থেকে কিন্তু শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায় এবং শরীরের মধ্যে জ্বর চলে আসে।
⇒ এছাড়াও ফিজিক্যাল কারণেও শরীরে জ্বর আসতে পারে যেমন আঘাত লাগা। শরীরের কোন অঙ্গটি আঘাত পায় সেই চোটের কারণে ব্যথা হবে ও ব্যথার কারণে শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা বেড়ে যাবে।
⇒ এরকম আরো বহু কারণে শরীরের মধ্যে জ্বর আসতে পারে যেমন স্থান পরিবর্তন আপনি যখন দূর থেকে কোনো ছাগলকে গাড়িতে লোডিং করে নিয়ে আসবেন গাড়ির ভেতরে প্রচন্ড গরম, অ্যামোনিয়া গ্যাস, শরীরের ডিহাইড্রেশন এবং সময়মত খাবার নেই, শরীর ক্লান্ত ও দুর্বল হয়ে পড়ে, গাড়ির ভেতরেই এমোনিয়া গ্যাস যার কারণে ঠান্ডা লেগে যায়, ঠান্ডা লেগে গেলে তার শ্বসনতন্ত্রে ব্যথা হয়, ইনফ্লামেশন হয়, এর কারণে কিন্তু শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় বেড়ে যায়।
অন্য কোনো রোগের কারণেও কিন্তু জ্বর হতে পারে যেমন লিভার যদি খারাপ থাকে পেটে যদি প্রচণ্ড ব্যথা হয় আর সে সময় কিন্তু এই জ্বর কিন্তু দেখা যায়।
ছাগলের জ্বর হয়েছে কিভাবে বুঝবেন?
⇒ প্রথম লক্ষণ ছাগল একটু ঝিমিয়ে থাকবে।
⇒ ছাগলের শরীরের লোম একটু খাড়া খাড়া থাকবে।
⇒ ছাগল লেজ নামিয়ে থাকবে সাধারণ একটা সুস্থ ছাগল লেজ উঁচু করে থাকে কিন্তু জ্বর হলে বা অন্য কোন রোগে আক্রান্ত হলে তার লেজ নিচু করে থাকবে
⇒ ছাগলের মাথাটা একটু ডাউন করে থাকবে।
⇒ অসুস্থ বাকি ছাগলদের থেকে আলাদা ভাবে থাকবে জ্বরের অবস্থায় স্বাভাবিকের তুলনায় খাওয়া দাওয়া কমিয়ে দেবে।
⇒ ছাগলটি যোগানি কম করবে।
এই সব লক্ষণগুলো দেখা দিলে বুঝবেন ছাগলটা জ্বর হয়েছে।
থার্মোমিটার দিয়ে কিভাবে ছাগলের জ্বর পরিমাপ করবেন?
⇒ এর জন্য আপনাকে থার্মোমিটার ব্যবহার করতে হবে মনে রাখবেন মেনুয়াল থার্মোমিটার যেটা পারদ যুক্ত সেই থার্মোমিটার কে ঝেরে জিরোতে নিয়ে ছাগলের রেকটোমে ঢুকিয়ে দেবেন বা মলদ্বারে ঢুকাবেন।
⇒ মনে রাখবেন থার্মোমিটার যখন ঢুকাবেন সোজাসুজি রাখবে না সেটাকে ত্যারা করে ঢোকাবেন সোজাসুজি করে ধরলে তার রেকটোমে যে মল থাকবে সে মলের টেম্পারেচার আসবে আর ত্যারা করে ধরলো ওর শরীরের টেম্পারেচার আসবে।
⇒ থার্মোমিটার যখন ঢুকাবেন যেন তার রেকটোমের ওয়ালে ঠেকে যায় থার্মোমিটার এর মাথাটা। এর পর থার্মোমিটার রিড করবেন দেখবেন তার শরীরের তাপমাত্রা কত হয়েছে।
জ্বরের সাধারণ চিকিৎসা কিভাবে করবেন?
⇒ মনে রাখবেন যদি আপনার ট্রেনিং নেওয়া নাও থাকে প্রাথমিক ট্রিটমেন্টটা নিজেকে করা উচিত যেহেতু একজন আপনি খামারি।
⇒ প্রাথমিক করার জন্য প্রথমে আপনি ট্যাবলেট ফর্মে তাকে মেডিসিন দেবেন। যদি সঠিকভাবে ট্রিটমেন্ট করাতে চান প্রথমে আপনাকে একটা এন্টি-এলার্জির ট্যাবলেট দিতে হবে যেমন ”ফেনামাইন” বা ”এন্টি-হিস্টামাইন” পার কেজি বডি ওয়েটে ফাইভ এমজি অনুপাতে।
⇒ এবারের মেডিসিন anti-inflammatory এন্ড এনালজেসিক অ্যান্টিপাইরেটিক অর্থাৎ প্রদাহ, ব্যথা এবং সুজনের মেডিসিন যেমন ”ম্যালোকসিক্যাম” বা “ম্যালোনিক্স” ট্যাবলেট এই ট্যাবলেটটা ১০০ কেজি বডি ওয়েটে হাফ ট্যাবলেট দিতে হবে এরপর আপনাকে এন্টিবায়োটিক ট্যাবলেট প্রয়োগ করতে হবে। এই কারণে আপনার জানা নেই যে কি কারণে জ্বর হয়েছে? এটা কোন ভাইরাস এবং কোন ব্যাকটেরিয়াল কারণেও হতে পারে।
⇒ এছাড়াও জ্বরের কারণে ছাগলের কোনো ভাইরাল বা ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশনও হতে পারে। এ জন্য কিন্তু আপনাকে এই এন্টিবায়োটিক প্রয়োগ অনিবার্য যেমন ”অ্যান্ড্রফ্লোক্সাসিন” বা “ইউনিফ্লক্স” এই ট্যাবলেটা আপনাকে পার কেজি বডি ওয়েটে 3 থেকে 5 এমজি অনুপাতে প্রয়োগ করতে হবে।
⇒ এরপরে আপনাদেরকে একবার সাপ্লিমেন্ট ট্যাবলেট ব্যবহার করতে হবে। এজন্যই যে শরীর যখন অসুস্থ হয় শরীরের যদি এন্টিবায়োটিক প্রয়োগ করা হয় শরীর দুর্বল হয়ে যায়। ছাগলের ডাইজেস্টিভ সিস্টেম কমজোর হয়ে যায়। সেটা যেন না হয় এবং শরীর যেন স্ট্রং হয় এ জন্য একটা সাপ্লিমেন্ট ট্যাবলেট প্রয়োগ করা অনিবার্য। বহু সাপ্লিমিন্ট ট্যাবলেট বাজারে রয়েছে যেগুলা সাধারনত প্রাপ্তবয়স্ক ছাগলকে হাফ ট্যাবলেট পরিমাণে খাওয়াতে হয়।
⇒ ট্যাবলেট এর ট্রিটমিন্ট বাদে যদি আপনি ইনজেকশনের মাধ্যমে ট্রিটমেন্ট করতে চান সেটাও করতে পারবেন এখানে এন্টি এলার্জিক জন্য ”এভিল” বা ”ফেনিরামাইন” ব্যবহার করতে পারবেন। একটা প্রাপ্তবয়স্ক ছাগলের জন্য 2ml অনুপাতে এর সঙ্গে মিক্স করতে পারবেন anti-inflammatory মেডিসিন যেমন ”মেলোনেক্স প্লাস” এরপরে এন্টিবায়োটিক ”এন্ড্রোফ্লাক্সাসিন” ঐ একই পরিমানে পার কেজি বডি ওয়েটে 3 থেকে 5 এমজি অনুপাত এর প্রয়োগ করতে হবে।
⇒ এরপর একটা ভিটামিন বি কমপ্লেক্স ইঞ্জেকশন করতে পারবেন।
⇒ এই প্রাথমিক ট্রিটমেন্ট করারপর যদি আপনার পশু সুস্থ না না হয় বা অন্য কিছু মনে হচ্ছে তো খুব শীঘ্রই নিকটবর্তী পশু হাসপাতালের ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
⇒ তবে মনে রাখবেন এখানে একটা সাধারণ জ্বরের ট্রিটমেন্ট বলা হলো বিভিন্ন কারণে জ্বর হয় এর জন্য মেডিসিন কিন্তু আলাদা আলাদা হয় একেক জায়গায় একেক ধরনের মেডিসিন প্রয়োগ হয় পশুর শরীরের বিভিন্ন লক্ষণ অনুযায়ী।
বন্ধুরা কেমন লাগলো আমাদের আজকের এই পোষ্টিটি কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাবেন। আজকে এখানেই বিদায় নিচ্ছি আবার ফিরে আসবো পরবর্তী নতুন কোন টপিক এর নতুন আলোচনা নিয়ে সকলে ভাল থাকুন সুস্থ থাকুন খামারিয়ান এর সাথেই থাকুন।