ছাগলের ঠান্ডা জ্বর হয়ে গেলে ছাগলের জ্বরের চিকিৎসা ও ছাগলের ঠান্ডা লাগার চিকিৎসা কিভাবে করবেন? ছাগলের জ্বরের ঔষধ ও ছাগলের ঠান্ডার ওষুধ কি কি ব্যবহার করা যেতে পারে? বিশদ জানতে পোষ্টটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন এবং এই ধরণের পোষ্ট আরও পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে রাখুন।
বর্ষাকালে ছাগলের ঠান্ডা জ্বর লাগা এটি কিন্তু খুব সাধারন একটি সমস্যা কিন্তু এই রোগটির যদি সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা না করা হয় এটি কিন্তু নিউমোনিয়াতে পরিণত হতে পারে এবং আলটিমেটলি ছাগল কিন্তু মারা যেতে পারে।
ছাগলের জ্বর ও ঠান্ডা লাগার ফলে কোন লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়?
⇒ ছাগলের নাক দিয়ে সর্দি পড়ে।
⇒ ছাগল জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।
⇒ ছাগলের গায়ের লোম দাঁড়িয়ে থাকে।
⇒ ছাগল অত্যন্ত দুর্বল হয়ে যাচ্ছে।
⇒ টেম্পারেচার 100 থেকে 105 ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত থাকে।
ছাগলের জ্বরের ঔষধ এবং ছাগলের ঠান্ডার ওষুধ কি কি খাওয়াতে হবে?
নাম্বারঃ০১
⇒ প্রথমে যে ওষুধ ব্যবহার করব সেটি হচ্ছে- ”মেলোনেক্স প্লাস” এবং ”প্যারাসিটামল”। যা জ্বর কমাতে সাহায্য করবে।
⇒ এটি আমরা প্রতি 10 কেজি বডি ওয়েটে 1 মিলি হারে ইন্টার মাসকুলার অর্থাৎ মাংসপেশিতে প্রয়োগ করব এবং এটি প্রয়োগ করার কিন্তু আধঘন্টা থেকে এক ঘণ্টার মধ্যে জ্বর কমতে শুরু করবে।
নাম্বারঃ০২
⇒ এবার প্রয়োগ করবেন “বেলামাইল ইঞ্জেকশন” (Belamyl Injection) যেটি ভিটামিন বি কমপ্লেক্স এবং লিভার এক্সট্রাক্ট এর একটি মিশ্রণ।
⇒ এটি ফলে ছাগলের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে ওঠে এবং ছাগলের দুর্বলতা কাটাতে সাহায্য করে।
⇒ এটিও একই মাত্রায় অর্থাৎ প্রতি 10 কেজি বডি ওয়েটে 1 মিলি হারে ইন্টার মাসকুলার অর্থাৎ মাংসপেশিতে প্রয়োগ করবেন বা ব্যবহার করবেন।
নাম্বারঃ০৩
⇒ এরপর তৃতীয় যে মেডিসিন আমরা প্রয়োগ করব তা হলো এন্টিবায়োটিক। এন্টিবায়োটিক সম্পর্কে কিছু কথা সংক্ষেপে বলে নিই। এন্টিবায়োটিক হলো সেই মেডিসিন যা ব্যকটিরিয়ার বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করে। ব্যাকটেরিয়া মূলত দুই ধরনের gram-positive এবং gram-negative।
⇒ যেই চার ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক উক্ত দুই ধরনের ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করে তাদেরকে ব্রটস্পেকট্রাম এন্টিবায়োটিক বলে থাকি এর মধ্যে পড়ে অক্সিটেট্রাসাইক্লিন, জেন্টামাইসিন, সালফাডিমিডিন এবং এনরোফ্লক্সিসিন। কাজেই এই চার ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক যদি আপনি আপনার ফার্মে রাখেন তাহলে বিভিন্ন রকম রোগের চিকিৎসায় কাজে লাগাতে পারবেন।
⇒ কিন্তু এন্টিবায়োটিক প্রয়োগ করার কতগুলি সাবধানতা অবলম্বন করার বিশেষ প্রয়োজন। যে এন্টিবায়োটিকের কিন্তু সবসময় কিছু না কিছু সাইডএফেক্ট থাকে। কিছু কিছু অ্যান্টিবায়োটিক আছে যেগুলো গর্ভাবস্থার জন্য অর্থাৎ গাভীন ছাগলের ক্ষেত্রে অত্যন্ত ক্ষতিকারক এবং এটার কিন্তু 24 ঘণ্টার মধ্যে দুবার এন্টিবায়োটিক প্রয়োগ করা যায় না অর্থাৎ আজকে সকাল সাতটায় দেখবেন অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে থাকেন অবশ্যই কালকে সকাল সাতটার আগে কিন্তু আরেকবার এন্টিবায়োটিক প্রয়োগ করতে পারবেন না।
⇒ প্রথমে আমরা যে এন্টিবায়োটির নাম বলছি সেটা ”অক্সিটেট্রাসাইক্লিন” এটি কিন্তু ঠান্ডা লাগা ও জ্বরের ক্ষেত্রে খুব ভালো কাজ করে। এটিও 1 মিলি প্রতি 10 কেজি বডি ওয়েটে আপনি মাংসপেশিতে প্রয়োগ করতে পারেন কিন্তু এটি প্রেগনেন্সি সেইফ নয় অর্থাৎ গাভীন ছাগলের উপরেই প্রয়োগ করেন তাহলে কিন্তু গর্ভস্থ শিশুর ক্ষতি হতে পরে তাই গাভীন ছাগলের ওষুধ ব্যবহার করা যাবে না।
⇒ উক্ত এন্টিবায়োটি যখন মাংসপেশিতে প্রয়োগ করবেন মাংসপেশির একটু বেশি গভীরে নিয়ে গিয়ে আপনাকে এটা প্রয়োগ করতে হবে এবং আপনি এক্ষেত্রে ”লং অ্যাক্টিং অক্সিটেট্রাসাইক্লিন” ব্যবহার করেন তাহলে কিন্তু আজকে ওষুধ দেওয়ার পর পরবর্তী 72 ঘণ্টা পর্যন্ত এর কার্যক্ষমতা থাকবে। কাজেই আজকে যদি আপনি ওষুধ প্রয়োগ করেন 72 ঘণ্টার তিনদিন পরে কিন্তু আবার আপনাকে এই ওষুধ ব্যবহার করতে হবে। কাজেই “অক্সিটেট্রাসাইক্লিন” ব্যবহার করার সময় অবশ্যই এই কথাগুলি মাথায় রাখবেন।
⇒ এছাড়া আপনি “অক্সিটেট্রাসাইক্লিন” এর পরিবর্তে হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন সেটা হচ্ছে ”ইনরোফ্লোক্সাসিন” এটিও কিন্তু খুব ভালো একটি কাজ করে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পাওয়া যায় কিন্তু এক্ষেত্রে সাবধানতা বলে দই এটি কিন্তু ছোট বাচ্চাদের ব্যবহার করা যাবে না এবং এটি প্রেগনেন্সি নিরাপদ অর্থাৎ গাভীন ছাগলকেও দিতে পারেন অথবা আপনি ব্যবহার করতে পারেন খুব কার্যকরী একটি ছোট বড় সকলকে দেওয়া এবং অথবা আপনি “সালফাডিমাডিন” ব্যবহার করতে পারেন এটিও খুব ভালো কাজ করে এবং এটাও কিন্তু ছোট বড় যে কোন ছাগলকে দেওয়া যায় ও প্রেগনেন্ট ছাগলে দিলে কোন অসুবিধা নেই।
নাম্বারঃ০৪
⇒ চতুর্থ প্রসপেক্টটামটি হলো “জেন্টামাইসিন” এটাও একই হারে মানে 1 মিলি প্রতি 10 কেজি বডি ওয়েটে ইন্টার মাসকুলার ইঞ্জেকশন করতে পারেন। এটিও কিন্তু প্রেগনেন্সি সেইফ এবং বিশেষভাবে বাচ্চা ছাগলের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা সুবিধাজনক।
⇒ এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করলেই তার সাথে কিন্তু একটি অ্যান্টি-হিস্টামিন বা অ্যান্টি-অ্যালার্জিক ড্রাগস ইউজ করা প্রয়োজন। কাজেই এক্ষেত্রে আমরা “এনিস্টামিন” ব্যবহার করব প্রতি 10 কেজির জন্য 1 মিলি হারে মাংস পেশিতে প্রয়োগ করতে হবে।
ছাগলের জ্বর ও ঠান্ডা থেকে বাঁচার প্রতিষেধক কি?
⇒ উপরে আমরা আলোচনা করলাম প্রতিরোধক বা চিকিৎসার ব্যাপার কিন্তু প্রি-কওশন মানে রোগ আসেনি অথচ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলার জন্য আমরা কি করতে পারি? সেক্ষেত্রে কিন্তু হোমিওপ্যাথি ওষুধ খুব ভালো কাজ করে।
⇒ আপনি এক্ষেত্রে ”একোনাইট” বা ”ব্রায়োনিয়া” এই দুটি ওষুধের মধ্যে যেকোনো একটি প্রতিদিন তিন চার ফোঁটা করে ব্যবহার করতে পারেন।
⇒ তাছাড়া সরষের তেল এবং তার সাথে হলুদ প্রতি 1 লিটারে 100 গ্রাম হারে হলুদ মিশিয়ে টেবিল চামচ করে প্রতিদিন খাওয়াতে পারেন এবং তার সাথে আপনি কাঁচা রসুন ও প্রত্যেকদিন খালি পেটে খাওয়াতে পারেন। তাহলেও কিন্তু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে উঠবে। তাছাড়া সর্দির কারণে যদি ছাগল এর নাক বন্ধ থাকে তাহলে নাকে সর্ষের তেল দিয়ে দিলে ছাগলের শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে সুবিধা হয়।