আমরা অনেকেই ছাগলের দুধ পছন্দ করি না, হয়তো বা পর্যাপ্ত পরিমাণে সহজলভ্য নয় বলে, নয়তো বা অভ্যস্ত নই বলে। অনেকে আবার ছাগলের দুধ গাভীর দুধের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করেন। কেউ বা রোগীর পথ্য হিসেবে ব্যবহার করেন।
ছাগলের দুধ উৎপাদনে উৎপাদন খরচ বেশি পড়ে। ফলে গাভীর দুধ তুলনামূলকভাবে বেশি দামে কিনতে হয়।
বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে ছাগলের দুধের জন্য কোনো সরকারি বা বেসরকারি পর্যায়ে খামার গড়ে ওঠে নি। তাছাড়া ছাগলের দুধের উপকারিতা সম্বন্ধে আমরা অনেকেই অবহিত নই।
ছাগলের দুধের ব্যবহার ও উপকারিতা জানলে হয়তো বা আমরা অনেকেই এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে আগ্রহী হবো।
ছাগলের দুধের উপকারিতা/গুণাগুণ
১. ছাগলের দুধের গুণগত মান মানুষের দুধের কাছাকাছি। অনেক ক্ষেত্রে ভিটামিন, লৌহ, কোবাল্ট ও অন্যান্য খনিজ পদার্থ পরিমাণে অনেক বেশি থাকে। এ দুধ শিশু খাদ্যের কিল্প হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
২. ছাগলের দুধ সহজে হজম হয়। এ দুধের বিশেষ বৈশিষ্ট্য এই যে, পাকস্থলীস্থ জারক রস পাকস্থলীতে জমাট দুধের ননীর মধ্যে সহজেই প্রবেশ করে ভেঙে টুকরো করে দেয়। ফলে দ্রুত হজম হয়। সাধারণত গাভীর দুধ হজম হতে বেশ সময় লাগে।
৩. এলার্জি উপসর্গ যেমন একজিমা, এজমা, বমি-বমি ভাব, হাঁচি, সর্দি, পেটের ভিতর অস্বস্তি, ডায়রিয়া, চর্মরোগ ইত্যাদিতে ভুগলে অথবা যাদের গাভীর দুধে উল্লিখিত এলার্জি উপসর্গ দেখা দেয়, তাদের জন্য ছাগলের দুধ অতুলনীয়। অন্যান্য এলার্জি উপসর্গের মধ্যে এজমা যা ছাগলের দুধ নিয়মিত পান করলে উপশম হয়। আজকাল বিশেষজ্ঞ ডাক্তার এবং কবিরাজ এ সমস্ত রোগীকে ছাগলের দুধ পান করতে পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
আমাদের মহানবী হজরত মুহম্মদ (সা.) ও অন্যান্য নবী, রাসুলগণ তাদের জীবনকালে নিয়মিত ছাগীর দুধ পান করতেন। মহাত্মা গান্ধীর জীবনকাল অত্যন্ত সুস্বাস্থ্য সহকারে অতিবাহিত হয়েছে ছাগলের দুধ, দুধের মাখন, পনির ইত্যাদি গ্রহণ করার কারণে।
ছাগলের দুধ সংগ্রহ/দোয়ানোর পদ্ধতিঃ
▪ গাভীর মতো ছাগলের দুধ দোয়াতে হয়। দুধ দোয়ানোর পূর্বে পাত্রগুলো ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হয়।
▪ সাধারণত পাত্রগুলো প্রথমে ঠাণ্ডা পানি ব্যবহার করে ও পরে গরম পানি ব্যবহার করে পরিষ্কার করতে হয়।
▪ পাত্র পরিষ্কার করে কোনো সমান স্থানের পরিবর্তে র্যাকের ওপরে উপুড় করে রাখলে ভিতরে বাতাস প্রবেশ করে খুব সহজে শুকিয়ে যায়। পাত্র পরিষ্কার করার পর শুকানোর জন্য কোনো কাপড় ব্যবহার করা উচিৎ নয়।
▪ ছাগলের দুধ দোয়ানোর জন্য একটা নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করতে হয়। বিশেষ করে সকাল ৬টা হতে ৭টা এবং বিকাল ৫টা হতে ৬টার মধ্যে এ সময় নির্ধারণ করা ভালো।
▪ দু বেলা দুধ দোয়ানোর জন্য কমপক্ষে ১০ ঘণ্টা ব্যবধানের কম হলে দুধের মধ্যে মাখনের পরিমাণ কমে যায়।
▪ প্রথমে দুধ দোহনকারীর হাত সাবান পানিতে পরিষ্কার করে নিতে হবে। সামান্য গরম পানিতে ন্যাকড়া বা তোয়ালে ভিজিয়ে পালান ও বাট ভালো করে রগড়িয়ে মুছে নেওয়া দরকার। এতে পালানে দুধ ভালো করে জমে এবং জীবাণুমুক্ত হয়।
▪ পরিষ্কার পরিচ্ছন্নভাবে দুধ দোয়ানোর ব্যবস্থা থাকলে দুধ ছানা বা ফেটে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
বাংলাদেশে ছাগলের দুধ উৎপাদনঃ
আমাদের দেশি ছাগলে দুধ হয় খুব কম। অধিক দুধ উৎপাদনের জন্য ছাগলের জাত পরিবর্তন করা প্রয়োজন।
উন্নত দেশে একটা ভালো দুগ্ধবতী ছাগী বছরে ৮০০ লিটার পর্যন্ত দুধ (বাচ্চা প্রসব ও গর্ভকালীন মোট ৮ সপ্তাহ বাদে) উৎপাদনে সক্ষম। যদি মধ্যবর্তী সময়ে গর্ভবতী না হয় তবে একটা ছাগী একাধারে ২ বছর পর্যন্ত দুধ দিতে পারে। সে তুলনায় একটা গাভী ছাগীর চেয়ে ৫ হতে ১০ গুণ আকারে বেশি বড় এবং বছরে গড়ে দুধ উৎপাদন ১,৫০০ হতে ২,০০০ লিটার মাত্র।
ছাগলের বিশেষ গুণ তা হলো- তারা অত্যন্ত নিম্নমানের খাদ্যবস্তুকে অতি সহজে মাংস ও দুধে পরিবর্তন ঘটাতে সক্ষম যা সাধারণত অন্য কোনো প্রাণীতে পারে না। খাদ্য তালিকার মধ্যে ছাগলের পছন্দ সার্বজনীন।
ছাগল অন্যান্য রোমন্থনকারী পশুদের তুলনায় ছাগল শতকরা ১৫ ভাগ বেশি জাতের ঘাস, লতা-পাতা, ঝোপ, কাঁটা, গুল্ম, গাছের কচি ডাল ও বিভিন্ন গাছের পাতা ও ছাল তারা খেতে পারে।
তাই পারিবারিকভাবে বা গৃহস্থের বাড়িতে যেখানে ছাগল পালার জন্য অতিরিক্ত মজুর প্রয়োজন হয় না বরং বাড়ির উচ্ছিষ্ট ও বর্জিত খাদ্যবস্তু জমির আল বা রাস্তার পাশের ঘাস, লতাগুল্ম ইত্যাদি ব্যবহার করার সুবিধে আছে তাদের পক্ষে সস্তায় দুধ উৎপাদন করা সম্ভব।
একটা গাভীর তুলনায় ছাগলের দুধ অত্যাধিক উপাদনে করা সম্ভব। একটা গাভীর তুলনায় ছাগলের দুধ অত্যাধিক উপাদেয়, উপকারী এবং লাভজনক।
অনেক ভূমিহীন বা প্রান্তিক চাষী পরিবার গ্রামের দুঃস্থ বিধবা মহিলা ছাগল পালন করে এবং দুধ উৎপাদন করে অতিরিক্ত আয়ের উৎস করে নিতে পারেন।