ছাগীর বাচ্চার নানা প্রকার রোগঃ
১. বুকের রোগ
- অনেক সময় নবজাত ছাগলের বাচ্চার বুকে সাঁই-সাঁই শব্দ শোনা যায়।
- বুকে শ্লেষ্মা জমার ফলে এ জাতীয় শব্দ হয়ে থাকে।
- এ অবস্থায় বাছুরের শ্বাস নিতে খুবই কষ্ট হয়।
ছাগলের বাচ্চার বুকের রোগ রোগের অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসা/ঔষধ :
এ জাতীয় ক্ষেত্রে অ্যাম্পিসিলিন জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। একটানা ৫-৭ দিন এ ঔষুধ ব্যবহারে উপকার পাওয়া যায়।
২. মলমূত্র ত্যাগ না হওয়া
- সাধারণ নিয়মানুসারে ছাগীর বাচ্চার জন্মের পর-পরই প্রস্রাব ও পায়খানা করে থাকে।
- কিন্তু যেক্ষেত্রে জন্মের পর বেশ কিছু সময়ের মধ্যে যদি বাচ্চা প্রস্রাব-পায়খানা না করে সেক্ষেত্রে চিকিৎসা প্রয়োজন হয়ে পড়ে।
আনুষঙ্গিক ব্যবস্থা :
জন্মের পর বাছুরের প্রস্রাব না হলে গ্লুকোজ পানিতে গুলে অল্প অল্প করে খাওয়ালে প্রসাবে হয়ে যায়।
ছাগলের বাচ্চার মলমূত্র ত্যাগ না হওয়া রোগের অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসা/ঔষধ :
এক্ষেত্রে বিশেষ ঔষধের ব্যবহার প্রচলন নেই।
৩. নাভীর পুঁজ/ছাগলের বাচ্চার নাভীতে পোকা
- সাধারণত জন্মের কয়েক দিনের মধ্যে বাচ্চার নাভী শুকিয়ে গিয়ে আপনি খসে পড়ে কিন্তু কোনো-কোনো ক্ষেত্রে নাভী শুকিয়ে না গিয়ে ঐ স্থানে পুঁজ জমা হয়।
- নাভীর চারপাশ পাতলা পানির মতো পুঁজ বেরিয়ে থাকে।
- পুঁজ দেখা দেবার সাথে সাথে চিকিৎসা শুরু করা প্রয়োজন।
- চিকিৎসা শুরু করতে বিলম্ব হলে স্পেটিসিমিয়া হয়ে বাচ্চা মারা যেতে পারে।
ছাগলের বাচ্চার নাভীর পুঁজ রোগের অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসা/ঔষধ :
সাধারণত এ জাতীয় ক্ষেত্রে খাবার জন্য কোনো ওষুধ দেওয়া হয় না। কেবল আক্রান্ত অংশে দিনে দুবার করে ২ মার্ককিউরোক্রম্ লাগালে পুঁজ জমা বন্ধ হয়ে ঘা শুকিয়ে যায়।
৪. বাছুরের উদরাময়
- অনেক সময় নানা কারণে বাচ্চার উদরাময় হয়ে থাকে।
- সাধারণত ভিজে ঘাস খাওয়ার জন্য এ জাতীয় উদরাময় হায়ে থাকে।
- কোনো কোনো ক্ষেত্রে বুকে ঠাণ্ডা লাগার পরেও এ জাতীয় উদরাময় হয়ে থাকে।
ছাগলের বাচ্চার/বাছুরের উদরাময় রোগের অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসা/ঔষধ :
কেবল উদরাময়ের ক্ষেত্রে মেট্রোনিডাজল ওষুধ 400 mg দিনে ৩বার করে মোট ৫ দিন ব্যবহার করা যেতে পারে। যেক্ষেত্রে উদরাময়ের সাথে বুকে ঠাণ্ডা লাগা থাকে সেখানে মেট্রোনিডাজলের সাথে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।
৫. ছাগীর বাচ্চার চক্ষুপ্রদাহ
- এই রোগটি নবজাত বাচ্চার প্রায়ই হয়ে থাকে।
- চোখ ফুলে যায়, চোখ লাল হয়, চোখের পাতা বুজে থাকে, চোখ থেকে পুঁজের স্রাব নির্গত হয়।
- ভিজে স্যাতসোঁতে স্থানে থাকলে বা ধোঁয়ার মধ্যে থাকলে নবজাত বাছুরের এ রোগ হয়ে থাকে।
ছাগীর বাচ্চার চক্ষুপ্রদাহ রোগের অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসা/ঔষধ :
চোখ স্যালাইন পানির সাহায্যে পরিষ্কার করে দিতে হবে। চোখে রেনিকল ড্রপ ব্যবহার করা যায়। যদি দেখা যায় যে, চোখে ওষুধ দেবার পর বাছুরের বেশি কষ্ট হচ্ছে, তবে চোখে ঐ ওষুধ দেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হবে। এ ছাড়া এ অবস্থায় অ্যান্টিবায়োটিক জাতীয় ওষুধ প্রয়োজনে ব্যবহার করা যেতে পারে।
৬. নবজাত বাচ্চার ধনুষ্টংকার
- নবজাত বাচ্চার মধ্যে প্রায়ই এ রোগটি হতে দেখা যায়।
- জন্মের ২-৩ দিনের মাথায় এ রোগটি হতে দেখা যায়।
- এটি একটি ভয়ংকর প্রকৃতির সংক্রামক রোগ।
- প্রথমে ঠিকভাবে মার দুধ টেনে খেতে পারে না।
- মাথা নিচু করে বাছুর এক জায়গায় চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে, দেখলে মনে হয় মাথাটি নিচের দিকে ঝুলে পড়েছে।
- এরপর ধীরে ধীরে ঘাড় শক্ত হয়, ঘাড়টি পিছনের দিকে বেঁকে যায় এবং কিছু সময়ের মধ্যে বাছুরটি মারা যায়।
- সাধারণত বাছুরের নাভীর ঘা থেকে এ রোগের সূত্রপাত হয়।
ছাগলের নবজাত বাচ্চার ধনুষ্টংকার রোগের চিকিৎসা/ঔষধ :
প্রথমেই আক্রান্ত বাচ্চাকে অন্যান্য ছাগল থেকে আলাদা করে রাখা হবে। আক্রান্ত বাছুরটি যে স্থানে থাকে ঐ স্থান যত তাড়াতাড়ি সম্ভব জীবাণু শূন্যকরণ করতে হবে। এক্ষেত্রে ঐ স্থানেডি.ডি.টি স্প্রে করা যেতে পারে। আক্রান্ত বাছুরের চিকিৎসা বাড়িতে রেখে করা উচিৎ নয়। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নিকটবর্তী ছাগল ও অন্যান্য পশু হাসপাতালে নিয়ে যাবার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন এবং হাসপাতালে রেখেই চিকিৎসা করা হবে। সাধারণত আক্রান্ত অধিকাংশ বাচ্চাকে এ রোগে মারা যায়।
৭. ছাগলের বাঁটে ঘা ফলে ছাগলে বাচ্চা দুধ না পাওয়া
- অনেক সময় ছাগীর বাঁটে ঘা হতে দেখা যায়।
- বাঁট ফেঁটে যায়।
- এ অবস্থা প্রচণ্ড যন্ত্রণাদায়ক।
- এ বাচ্চাকে মা ছাগী কিছুতেই দুধ দিতে চায় না কারণ দুধ টানার সময় ছাগীর যন্ত্রণা হয়।
- এ জাতীয় রোগে অন্যান্য স্তন্যপায়ী ছাগল ও অন্যান্য পশু আক্রান্ত হতে পারে।
- সবক্ষেত্রেই মোটামুটি একই জাতীয় লক্ষণ প্রকাশ পেয়ে থাকে।
- এ অবস্থায় বাচ্চাকে দুধ খেতে যাবে না কারণ, বাছুর দুধ টেনে আক্রান্ত স্থানের ঘা বেড়ে যেতে পারে।
- এ ছাড়া ছাগী যন্ত্রণায় কষ্ট পায় এবং বাছুরের শরীরের ভিতর রোগ জীবাণু দুধের সাথে প্রবেশ করতে পারে।
ছাগলের বাঁটে ঘা রোগের অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসা/ঔষধ :
বাঁট ডেটল পানিতে প্রতিদিন ধুয়ে পরিষ্কার করে অ্যান্টিবায়োটিক মলম লাগাতে হবে।