ছাগলের ভিটামিন বি কমপ্লেক্স নিয়ে আজকের এই প্রতিবেদনে আমরা আলোচনা করব। ভিটামিন বি কমপ্লেক্স এর মধ্যে কোন কোন উপাদান গুলি থাকে? এবং কোন উপাদানের কি কাজ? প্রয়োগ বিধি। ভিটামিন বি কমপ্লেক্স আমরা কি কি ভাবে শরীরে প্রয়োগ করতে পারে? বিস্তারিত জানতে আমাদের আজকের এই প্রতিবেদনটি সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়বেন। সম্পূর্ণ প্রতিবেদনটি দেখার পর যদি ভালো লাগে অবশ্যই আামাদের ফেসবুক পেইজে একটা লাইক করতে ভুলবেন না, আপনাদের একটা লাইক আমাদের পরবর্তী প্রতিবেদন তৈরিতে উৎসাহিত করে। তোলে চলুন শুরু করা যাক আজকের প্রতিবেদন।
ছাগলের ভিটামিন বি কমপ্লেক্স এর মধ্যে যে উপাদান গুলি থাকেঃ
- থাইমিন
- রাইবোফ্লাভিন
- পাইরেডক্সিইন
- সাইনোকোবালামিন
অর্থাৎ ভিটামিন বি-1, বি-2, বি-6 এবং বি-12 এই চারটি উপাদান যখন একত্রিত ভাবে থাকে, সেটাকে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স বলা হয়ে থাকে।
» প্রথমে আমরা আলোচনা করব ভিটামিন বি ওয়ান বা থায়মিন নিয়ে। ভিটামিন বি ওয়ান এর থাইমেন পাচন ক্রিয়াকে সক্রিয় করে তোলে। মাংসপেশি এবং নার্ভকে মজবুত রাখে এবং শরীরকে মজবুত করে তোলে ভিটামিন বি ওয়ান থাইমিন একটা প্রাণীদেহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
» এবারে আমরা আলোচনা করব ভিটামিন বি টু বা রাইবোফ্লাভিন নিয়ে। রাইবোফ্লাভিন এটিও পাচনক্রিয়াকে সক্রিয় করে মাংসপেশি এবং নার্ভকে মজবুত করে। এছাড়াও কিন্তু ভিটামিন বি টু ত্বকের এর মধ্যে বিভিন্ন রকম রোগের প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। ত্বকের রোগ গুলির মধ্যে যেমন ডার্মাটাইটিস, একজিমা এইসব রোগের প্রতিরোধক হিসেবে খুবই কার্যকরী ভিতামিন বি টু।
» এবারে আমরা আলোচনা করব ভিটামিন বি সিক্স বা পাইরেডক্সিইন নিয়ে। পাইরেডক্সিইনি এর কাজ হলো এটি মূলত প্রাণী দেহের চামড়া কে মজবুত করে এবং চামড়ার উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে তোলে।
» এবারে আমরা আলোচনা করব সাইনোকোবালামিন বা ভিটামিন বি টুয়েলভ নিয়ে। ভিটামিন বি টুয়েলভও প্রাণী দেহে পাচন ক্রিয়াকে সক্রীয় করে, মাংসপেশি এবং নার্ভকে মজবুত করে তোলে। এছাড়াও ভিটামিন বি টুয়েলভ শরীরে লাল রক্ত কণিকা তৈরিতে সহায়ক।
» এইসব উপাদান নিয়ে সম্পূর্ণভাবে আলোচনা করলে দেখা যায় যে, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স একটি প্রাণীদেহে কতটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। কোন পশু যদি রোগে আক্রান্ত হয় সে সময় তার মাংস বেশি কমজোর হয়ে যায়। তার নার্ভ কমজোর হয়ে যায়, পাচন শক্তি কমে যায়। তখন কিন্তু সে সময় যদি আমরা ভিটামিন বি কমপ্লেক্স প্রয়োগ করে তার পাচন ক্রিয়াকে সক্রিয় করে তুলবে, মাংসপেশিকে মজবুত করবে এবং তার নার্ভ কে মজবুত করে তুলবে।
» আর এই জন্যই যদি অসুস্থ হয় তার সে অসুস্থ তার চিকিৎসা সঙ্গে সঙ্গে যদি আমরা ভিটামিন বি কমপ্লেক্স প্রয়োগ করি তাহলে সেই পশু টিকে কে খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ করে তোলা যায়।
ছাগলের ভিটামিন ”বি”ঔষধ এর নাম
● Popular-pharma এর “B1B2 vet” এতে VITAMIN B1 & VITAMIN B2 আছে।
● স্কয়ার ফার্মাসিটিক্যালস এর তৈরি ”Prithi WS Powder” এতে Vitamin B1, B2 & B6 আছে। এটি বাংলাদেশের স্কয়ার কম্পানি এর তৈরি করা।
● Popular-pharma এর তৈরি ”ULTRAVITA-3” তে আছে Vitamin B1 ,Vitamin B2 & Vitamin B3।
● স্কয়ার ফার্মাসিটিক্যালস এর এটি ভিটামিন বি কমপ্লেক্স। ”Becevit-Vet Powder” ভিটামিন পাউডার এটাতে Vitamin B-Complex & Vitamin C রয়েছে। অর্থ্যাৎ, এতে ভিটামিন বি এর B1, B2, B6, B12 এই চারটি উপাদানই রয়েছে। এর সাথে রয়েছে প্রয়োজনীয় পরিমাণ ভিটামিন ”সি”।
100 গ্রাম বেসভিট-ভেটে পাউডার রয়েছে –
- ভিটামিন বি 1 200 মিলিগ্রাম
- ভিটামিন বি 3 750 মিলিগ্রাম
- ভিটামিন বি 2 400 মিলিগ্রাম
- ফলিক অ্যাসিড 25 মিলিগ্রাম
- ভিটামিন বি 550 মিলিগ্রাম বায়োটিন 1.5 মিলিগ্রাম
- ভিটামিন বি 6 150 মিলিগ্রাম
- ভিট-সি 500 মিলিগ্রাম
- ভিটামিন বি 12 1000 এমসিজি।
ছাগলের ভিটামিন ”বি” এনজেকশন এর নাম
● Popular-pharma এর ”Becovet” যেটি একটি VITAMIN B COMPLEX। এটাতে B1, B2, B6, B12 এই চারটি উপাদানই রয়েছে। এক সপ্তাহে পরপর 3 দিনের জন্য প্রতিদিন 1-2 মিলি আইএম ইনজেকশন দিতে হয়।
● Square Pharma এর ভিটামিন বি কমপ্লেক্স হিসেবে বি 50-ভেট ইনজেকশনটি টি দিতে পারেন। বি 50-ভেট ইনজেকশনটি অন্তঃসত্ত্বিক বা ইন্টারমাস্কুলার ভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। বড় প্রাণী (গবাদি পশু, মহিষ, ঘোড়া) -: এক সপ্তাহে প্রতিদিন তিনবার 5-10 মিলি। ছোট প্রাণী (ভেড়া, ছাগল, কুকুর, বিড়াল): এক সপ্তাহে প্রতিদিন তিনবার 1-2 মিলি। এই ভিটামিনটি স্কয়ার কম্পানির যা বাংলাদেশের বাজারে 10 মিলি শিশি এবং 100 মিলি শিশি পাওয়া যায়।
» আমরা যারা ছাগল পালন করি প্রত্যেকটি আমরা ভাবি ছাগল কম সময়ে কিভাবে বড় করা যায়? এবং কম সময়ে ছাগল কিভাবে আমরা বিক্রি করব তাকে যত ছাগল আমরা বিক্রি করতে পারব ততবেশি আমাদের থেকে ইনকাম হবে।
» তো ফার্মে ছাগল যদি কম সময়ে বড় করা যায় তাহলে আমাদেরকে কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে খাওয়া-দাওয়ার দিকে ভালো করে নজর রাখতে হবে। ছাগল জন্য পুষ্টিকর খাবার পায় সেদিকে আমাদেরকে চিন্তা ভাবনা করতে হবে এবং খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদেরকে কিছু ভিটামিন ও ক্যালসিয়াম এবং লিভার টনিক সঠিক সময়ে খাওয়াতে হবে।
» যদি আমরা সঠিক সময়ে ভিটামিন ক্যালসিয়াম লিভার টনিক না খাওয়াই তাহলে ছাগল বিভিন্ন সমস্যার মধ্যে পড়বে এবং ছাগল রোগাক্রান্ত হয়ে যাবে। ছাগল যেন রোগাক্রান্ত না হয় সেদিকে নজর রেখে আমরা ছাগলকে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ক্যালসিয়াম এবং সঠিক সময়ে ছাগলকে কৃমিমুক্ত করাব।
» যদি সঠিক সময়ে কৃমিমুক্ত না করা হয় ছাগলের বাচ্চা ছাগল সঠিক সময়ে প্রেগনেন্ট হয় না এবং সঠিক সময়ে প্রেগনেন্ট না হওয়ার যদি সঠিক সময়ে বাচ্চা না দেয় তাহলে ভয় কিন্তু বেশি ইনকাম করা যায় না।
» সর্বপ্রথমে ছাগলকে ডিওয়ার্মিং করাতে হবে করানোর পর লিভার টনিক ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন পরিমানমতো দিতে হবে। যেদিন ডিওয়ার্মিং করাবেন তার পরের দিন থেকে লিভার টনিক চালাতে হবে এবং সঙ্গে দিতে হবে এর পরে দিতে ভিটামিন গুলো এবং যে খাবার ছাগলকে খাওয়ানো হবে সেই হওয়ার সঙ্গে মিনারেল মিক্সার খাওয়াতে হবে বিভিন্ন ধরনের ফিড সাপ্লেমেন্ট গুলো পাওয়া যায় সেই ফিড সাপ্লেমেন্ট গুলো ছাগলকে নিয়মিত খাওয়াতে হবে এবং ছাগল যেন জল বেশি করে খায় সেদিকে নজর রাখতে হবে।
» ছাগলকে যে সমস্ত খাবার খাওয়াবেন তার মধ্যে দানাদার খাবার খাওয়াতে হবে। ছাগলকে মোটাতাজা করতে কিভাবে দানাদার খাবার তৈরি করবেন সে বিষয়ে আমি এর আগে একটি আলোচনা আপনাদের সাথে শেয়ার করেছি।
» আমি প্রায় প্রত্যেক আলোচনায় ছাগলের ডিওয়ার্মিং নিয়ে আলোচনা করে থাকি এর কারণ হচ্ছে ছাগলের পেটে যদি কৃমি থাকে সেখানে যদি আমরা ডিওয়ার্মিং না করি যে খাবার আমরা খাওয়াব তার চার ভাগের মধ্যে তিনবার খাবার সেই কৃমিগুলো খেয়ে ফেলবে এবং এক ভাগ খাবার ছাগল পাবে কিন্তু এক ভাগ খাবার দিয়ে ছাগলের কোন কাজ হবে না।
» এজন্য ছাগলকে আমরা যতই খাবার খায় না কেন যদি ছাগলের পেট থেকে কৃমি দূর করা না হয় তাহলে কোন খাবারে ছাগল কাজে লাগবে না। কোন ভিটামিনের ছাগলে কাজে লাগবে না। কোন ক্যালসিয়াম ও ছাগলের কাজে লাগবে না। এর জন্য সর্বপ্রথম ছাগলকে ডিওয়ার্মিং করাতে হবে এবং ডিওয়ার্মিং প্রত্যেক মাসে নিয়মিতভাবে করাতে হবে এবং প্রত্যেক মাসে ছাগলকে আলাদা আলাদা ওষুধ দিয়ে করাতে ডিওয়ার্মিং হবে তারপর সঠিক সময়মত লিভার টনিক ভিটামিন এবং ক্যালসিয়াম দিতে হবে।
যে সকল দর্শক আমাদের ব্লগে নতুন ফার্মিং সম্বন্ধীয় সঠিক তথ্য গুলো পেতে আমাদের ব্লগটিকে নিয়মিত ভিজিট করবেন। গুগোলে “খামারিয়ান লিখে সার্চ করলেই প্রথমেই আমাদের ব্লগ পেয়ে যাবেন। ধন্যবাদ।