আজকে আমরা আলোচনা করবঃ
৩টি ছাগলের ভিটামিন অভাব জনিত রোগ
(১) অপুষ্টি জনিত রক্তশূন্যতা:
- শরীরে আয়রনের অভাব হলে রক্তশূন্যতা দেখা যায়।
- কপার, কোবাল্ট ও ভিটামিন-বি এর অভাব হলেও রক্তশূন্যতা হয়ে থাকে।
- পরজীবির আক্রমনেও ছাগলে রক্তশূন্যতা দেখা দিতে পারে।
- এ রোগে ছাগল ফ্যাকাশে হয়ে যায়, ক্ষুধামন্দা দেখা যায়, পর্যায়ক্রমে শুকিয়ে যায় এমনকি মৃত্যুবরণ করতে পারে।
- সুষম খাদ্য প্রদানের মাধ্যমে রক্তশূন্যতা এড়ানো সম্ভব।
(২) গলগন্ড বা গয়টার:
- শরীর আয়োডিনের অভাব হলে এ রোগ দেখা যায়।
- এ রোগে গলা ফুলে যায়।
- প্রজনন অক্ষমতা দেখা দেয় এবং দূর্বল বাচ্চা জন্ম হয়।
- ছাগলের খাদ্যে আয়োডিনযুক্ত লবন যোগ করে ছাগলকে খাওয়ালে এই রোগ থেকে প্রতিকার পাওয়া যায়।
(৩) অস্টিওম্যালাসিয়া:
- শরীরে ভিটামিন ডি এর অভাব হলে অস্টিওম্যালাসিয়া রোগ হয়।
- ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের অভাব হলে বা খাদ্যে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের অনুপাত ঠিক না থাকলে অস্টিওম্যালাসিয়া রোগ হয়।
- এ রোগে ছাগলের ক্ষুধামন্দা দেখা যায়, পায়ের গিড়া ও জয়েন্ট ফুলে যায়, দুধ উৎপাদন কমে যায়।
- ক্রনিক অবস্থায় ছাগল চলাফেরা করতেএমনকি দাড়াতে অক্ষম হয়ে পড়ে।
- অস্টিওম্যালাসিয়া রোগে আক্রান্ত পাঁঠাকে প্রজনন কর্মকান্ডে ব্যবহার করা যায় না।
৭টি ছাগলের মিনারেল এর অভাব জনিত রোগ
১. সেলেনিয়াম :
পৃথিবীতে অনেক স্থানে সেলেনিয়াম এর পরিমান কম এ জাতীয় মাটি আছে যেখানে ঘাস চাষ করলে সেই ঘাসে ও ভিটামিন ই এর অভাব থাকে। যার ফলে ওই স্থানের গবাদি পশুর ভিটামিন ই অভাব জনিত রোগ দেখা যায়। ভিটামিন ই অভাব জনিত রোগ হলো white muscle disease (nutritional muscular dystrophy), বাচ্চা জন্মানোর পর পিছনের পায় দাঁড়াতে না পারা বা দুর্বল হওয়া, বাচ্চা জন্মানোর পর দুর্বল মাংস পেশীর কারণে নিউমোনিয়া হওয়া জোরে জোরে শ্বাসপ্রস্বাস করা ইত্যাদি। এক্ষেত্রে বাচ্চা হওয়ার পরপর সেলেনিয়াম ভিটামিন E ইনজেকশন দিতে হবে।
২. জিঙ্ক :
জিঙ্ক এর অভাব জনিত রোগ এবং লক্ষণ মুখ থেকে লালা পড়া, খুড়ার আকৃতি অস্বাভাবিক হওয়া, পায়ের গিট এ ব্যাথা হওয়া, চামড়া বিভিন্ন ধরণের রোগ, পাঠার অন্ডকোষ ছোট আকৃতির হওয়া, ক্রস করতে আগ্রহী না হওয়া ইত্যাদি।
৩. কপার :
কপার ছাগলের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ মিনারেল। কপার অভাব জনিত রোগ পশম এর রং ফ্যাকাশে হওয়া, বাচ্চা পরে যাওয়া, মরা বাচ্চা হওয়া, রক্ত শূন্যতা, হাড় ভেঙ্গে যাওয়া, ক্ষুদা মন্দা, ওজন কমে যাওয়া, দুধ উৎপাদন কমে যাওয়া। কপার ভেড়ার জন্য খুবই ক্ষতিকর কিন্তু ছাগলের জন্য অত্তন্ত গুরুত্বপূর্ণ, পর্যাপ্ত নাহলে উপরোক্ত রোগ গুলি হতে পারে। তাই উন্নত দেশে ছাগলকে বছরে একবার কপার বোলাস দেয়া হয় যা কিনা পেটে গিয়ে ছড়িয়ে পরে এবং কপার গুঁড়া গুলো আস্তে আস্তে গলতে থাকে। এধরণের একটি বোলাস এক বছর পর্যন্ত কাজ করে।
৪. আয়রন :
আয়রন খুব একটা দরকার হয়না কিন্তু যদি ক্রেমি আক্রম করে তবে আয়রন খুবই জরুরি মিনারেল। যাকিনা রক্ত শূন্যতা থেকে রক্ষা করে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আয়রন ইনজেকশন ও দিতে হতে পারে।
৫. আয়োডিন :
এর অভাবে গলগন্ড রোগ হতে পারে। প্রতিদিন খাবারে ১% আয়োডিন যুক্ত লবন থাকা জরুরি।
৬. ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাস :
ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাস অনুপাত ২:১ হওয়া খুব জরুরি, এর কম বেশি হলে পাঠার প্রস্রাবের রাস্তা বাধা গ্রস্থ হবে (urinary calculi)। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ছাগল মারা পর্যন্ত যায়। তাছাড়া বাচ্চা জন্মের সময় বিভিন্ন সমেস্যা দেখাযায়, হাড়ের গঠন সুগঠিত হতেপারে না। দানাদার খাবারে ফসফরাস এর পরিমান অনেক বেশি তাই দানাদার খাবার বেশি দিলে অবশ্যই ক্যালসিয়াম এর মাত্রা বাড়াতে হবে। যারা ঘাস চাষ করতে মুরগির লিটার ব্যবহার করেন তাদের ও এই ব্যাপারে সতর্ক থাকা জরুরি কারণ মুরগির লিটার এ ফসফরাস বেশি থাকে যা ফসলের ফসফরাস এর পরিমান বাড়িয়ে দেয়।
৭. ম্যাঙ্গানিজ :
ম্যাঙ্গানিজ এর অভাব এ বাচ্চার গ্রোথ কমে যায়, কনসিভ % কমে যায়, বাচ্চা সময়ের আগে পরে যায় বা এবরশন হয়। পায়ের গঠন ত্রুটিপূর্ণ হয় এবং হাটতে সমস্যা হয়। অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম ম্যাঙ্গানিজকে শরীরে শোষণ করতে বাধা দেয়।
ছাগলকে কেন ভিটামিন ঔষধ খাওয়াতে হবে?
আমরা যারা ছাগল পালন করি প্রত্যেকে আমরা ভাবি ছাগল কম সময়ে কিভাবে বড় করা যায় এবং কম সময়ে ছাগল কিভাবে আমরা বিক্রি করব তাকে যত ছাগল আমরা বিক্রি করতে পারবো তত বেশি আমাদের থেকে ইনকাম হবে।
তো ফার্মে ছাগল যদি কম সময়ে বড় করতে হয় তাহলে আমাদেরকে কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে, খাবার এর দিকে ভালো করে নজর রাখতে হবে, ছাগল জন্য পুষ্টিকর খাবার পায় সেদিকে আমাদেরকে চিন্তা ভাবনা করতে হবে এবং খাবারের সঙ্গে সঙ্গে আমাদেরকে কিছু ভিটামিন ও ক্যালসিয়াম ঔষধ লিভার টনিক সঠিক সময়ে খাওয়াতে হবে।
যদি আমরা সঠিক সময়ে ভিটামিন ক্যালসিয়াম ঔষধ লিভার টনিক না খাওয়াই তাহলে ছাগল বিভিন্ন সমস্যার মধ্যে পড়বে এবং ছাগল রোগে আক্রান্ত হয়ে যাবে। ছাগল যেন রোগ আক্রান্ত না হয় সেদিকে নজর রেখে আমরা ছাগলকে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ক্যালসিয়াম ঔষধ এবং সঠিক সময়ে ছাগলকে কৃমিমুক্ত করতে হবে। ছাগলকে নির্ধারিত মাত্রায় বছরে দুইবার কৃমিনাশক ঔষধ প্রদান করতে হবে।
ছাগলকে কখন কোন ভিটামিন ঔষধ খাওয়াবেন?

● যেকোনো গরু ছাগল ভেড়া অসুস্ত হওয়ার পর দুর্বলতা কাটাতে Vitamin B1 (thiamine) খুব জরুরি। বাজারে অনেক ভিটামিন বি জাতীয় ছাগলের ভিটামিন ঔষধ পাওয়া যায় সেগুলেঅ মাঝে যেকোন একটি খাওয়াতে পারেন। খাওয়া কমে গেলে, ঘাড় বাঁকা, পায়ে সমস্যা পোলিও , চোখের মনি ঘুরতে থাকা, অরুচি, লিভার ইত্যাদি সমস্যা জন্য Vitamin B1 (thiamine) খুব উপকারী।



ছাগলের ২ টি ভিটামিন ঔষধ এর নাম
● Rena-Breeder ভিটামিন প্রিমিক্সঃ এত রয়েছে ভিটামিন এ ,ভিটামিন ডি 3 ,ভিটামিন ই ,ভিটামিন কে 3 ,ভিটামিন বি 1 ,ভিটামিন বি 2 ,ভিটামিন বি 6 ,ভিটামিন বি 12 ,নিকোটিনিক অ্যাসিড ,ক্যালসিয়াম-ডি প্যান্টোথিনেট ,ফলিক এসিড ,বায়োটিন ,কোবাল্ট ,তামা ,আয়রন ,আয়োডিন ,ম্যাঙ্গানিজ ,দস্তা ,সেলেনিয়াম ,ডিএল-মেথিওনিন ,এল-লাইসাইন ও ক্যালসিয়াম।
● Becevit-Vet ছাগলের পাউডার ভিটামিনঃ এটি স্কয়ার ফার্মাসিটিক্যালস তরি একটি ভিটামিন বি কমপ্লেক্স। এই ভিটামিন পাউডারটিতে Vitamin B-Complex & Vitamin C রয়েছে। অর্থ্যাৎ, এতে ভিটামিন বি এর B1, B2, B6, B12 এই চারটি উপাদানই রয়েছে। এর সাথে রয়েছে প্রয়োজনীয় পরিমাণ ভিটামিন ”সি”।
ছাগলের ২ টি ভিটামিন ইনজেকশনের নাম
● বি 50-ভেট ইনজেকশনঃ এতে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স আছে। এটা এক সপ্তাহে প্রতিদিন তিনবার 1-2 মিলি করে দিতে হয়।ইন্টারমাস্কুলার ভাবে প্রয়োগ করতে হয়।
● এস-এডিই ইনজেকশনঃ ভিটামিন এ, ডি 3 এবং ই ভিটামিন এবং খনিজ পরিপূরক। ইন্ট্রামাসকুলার বা সাবকুটেনিয়াস ভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। ছাগলকে 2-4 মিলি করে দিতে হয় বা নিবন্ধিত ভেটেরিনারি ডাক্তার দ্বারা নির্ধারিত হিসাবে দিতে হবে।
ছাগলের ভিটামিন ঔষধ সম্পর্কিত আরো কিছু প্রশ্নের উত্তর
ভিটামিন ”এ” ছাগলের শরীরের কোন কোন কাজে ভূমিকা পালন করে থাকে?
এছাড়াও এ ভিটামিন এ এবং ভিটামিন বি টুয়েলভ এর চাহিদা আমরা কিভাবে পূরণ করতে
শরীরের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে তোলে।
শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
ভিটামিন এ প্রজনন ক্ষমতা কে বাড়িয়ে তোলে।
ভিটামিন এ ছাগলের দুধ বৃদ্ধিতে সহায়ক।
ভিটামিন এ খাওয়ালে মায়ের দুধ বৃদ্ধি হয় ও বাচ্চা সুস্থ থাকে এবং বাচ্চা হওয়ার পরেও এই ভিটামিন প্রয়োগ করলে পারে দুধ বৃদ্ধি করবে এবং ছাগল খুব তাড়াতাড়ি তার শরীরে ডেফিসিয়েন্সি সেটাকে রিকভার করে নেবে।
এবারে আমরা আলোচনা করব ছাগলের শরীরে ভিটামিন ”ডি” এর গুরুত্ব কি?
ভিটামিন ডি এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলির মধ্যে একটি হ’ল ক্যালসিয়াম এবং ফসফেটের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে যা শরীরের দ্বারা শোষিত হয়। আর এজন্যই ছাগল গাভীন অবস্থায় থাকলে ভিটামিন খুবই জরুরি।
ভিটামিন এ ভিটামিন এ শরীরের কতটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
ভিটামিন এ পায়ের ক্ষুর বৃদ্ধি করে।
প্রজনন ক্ষমতা কে বাড়িয়ে তোলে।
শরীরের মাংসপেশি কে মজবুত করে।
ভিটামিন বি টুয়েলভ একটা ছাগলের কতটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে?
ভিটামিন বি টুয়েলভ পাচনতন্ত্র এবং শরীরের মাংসগুলোকে মজবুত করে তোলে এবং শরীরে রক্ত কণিকা তৈরিতে সহায়ক।
ভিটামিন প্রয়োগের পূর্ব লক্ষণীয় বিষয়গুলো কি?
যে কোন ভিটামিন যখন কোন ছাগলকে দেবেন সেটা যেন রাত্রেবেলা দেওয়া হয় রাত্রি দিলে খুবই ভাল কাজ করে যে কোন ভিটামিন প্রয়োগের আগে একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা মনে রাখতে হবে আর সেটা হচ্ছে যে কোন ভিটামিন প্রয়োগের আগে ডিওয়ার্মিং করা এবং লিভার টনিক দেওয়া উচিত এর পরে কিন্তু যে কোন ভিটামিন আপনারা করতে পারেন।