▷PPR বা পিপিআর রোগ কি?
⇒ পিপিআর ছাগলের একটি ভাইরাস জনিত মারাত্বক রোগ| এ রোগের জীবানু ছাগলের দেহে প্রবেশের ৪-৫ দিন পররোগের লক্ষণপ্রকাশ পায়। এই রোগে আক্রান্ত ছাগলের নাকে মুখ হতে তরল নির্গত হতে থাকে ও পাতলা পায়খানা করে দুর্গন্ধযুক্ত এসময় ব্যাপক পানির চাহিদা করে প্রাণীটি এছাড়াও এই রোগে আক্রান্ত প্রাণীটির মুখে ঘা হয় একারণে খাবার গ্রহণ করতে পারে না এবং প্রচন্ড তাপমাত্রা ১০৩থেকে১০৮ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায় যার দরুণ রোদে থাকতে চায়। এটি একটি ভাইরাস জনিত রোগ হওয়ায় এর নির্দিষ্ট কোন চিকিৎসা নাই তবে অভিজ্ঞ ভেটেরিনারি চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা যেতে পারে।দ্রুতচিকিৎসা না করালে ছাগলমারা যেতে পারে। চিকিৎসায় বিলম্ব হলে ৫-১০দিনের মধ্যে ছাগল মারা যায় ।

▷ পিপিআর প্রতি রোধের উপায় কি?
⇒ এরোগ প্রতিরোধের জন্য প্রতিষেধকটিকা ব্যবহার করা প্রয়োজন।বাচ্চার ৪ মাস বয়সেটিকা প্রদান করতে হয় | অনেকসময় ঝুঁকি এড়াতেবাচ্চার ২ মাস বয়সেটিকা দেওয়া হলে পুনরায় ৪মাস বয়সে বুষ্টার ডোজ দিলে ভালফল পাওয়া যায়।একবার টিকা দিলে ১বছর পর্যস্ত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাথাকে।
▷ পিপিআর সাধারনত কোন প্রাণীদের হয়?
⇒ পিপিআর সাধারনত গবাদিপশু যেমন ছাগল, ভেড়া, গাড়ল এর মাঝে দেখা যায়। পিপিআর ছোট তৃণভোজী প্রাণীদের মধ্যে বিশেষ করে ছাগলের একটি মারাত্মক ভাইরাস জনিত সংক্রামক রোগ। সব বয়সের ছাগলই এই রোগের ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়ে থাকে। তবে, এক বছর পর্যন্ত বয়সের ছাগল এই রোগে বেশী আক্রান্ত হয় এবং এদের মৃত্যুর হারও বেশী।
▷ পিপিআর রোগের কি কি লক্ষণ প্রকাশ পায়?
⇒ অসুস্থ প্রাণীটির ওজন হ্রাস পায়। ধীরে ধীরে শুকিয়ে যেতে থেকে প্রাণীটি।
⇒ রোগের এক পর্যায়ে মুখ ফুলে যেতে পারে। মুখের ভেতরে নরম টিস্যুগুলো আক্রান্ত হতে পারে। দাঁতের গোড়ার মাংস পেশিতে ঘা হতে পারে। তাছাড়া দাঁতের মাঝখানে ফাঁকে ফাঁকে, মুখের ভেতরে তালুতে, ঠোঁটে, জিহ্বায় ক্ষত তৈরি হতে পারে।
⇒ পিপিআর আক্রান্ত ছাগলে, অসুস্থ হওয়ার কয়েক দিনের মধ্যে শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়।
⇒ অসুস্থ পশুটির চোখও এ রোগের আক্রান্ত হতে পারে। সে ক্ষেত্রে, ছাগলের চোখের পাতা ফুলে যেতে পারে। অনেক সময় ঘন দানাদার পদার্থ নিঃসৃত হয়ে চোখের পাতা বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
⇒ অসুস্থ হওয়ার পাঁচ থেকে দশ দিনের মধ্যে প্রাণীটি মারা যেতে পারে।
⇒ ছাগলের নাক, মুখ, চোখ দিয়ে প্রথমে পাতলা তরল পদার্থ বের হয়। পরবর্তীতে তা ঘন ও হলুদ বর্ণ ধারণ করে। ধীরে ধীরে তা আরও শুকিয়ে নাকের ছিদ্র বন্ধ করে দিতে পারে। ফলে প্রাণীটির শ্বাসকষ্ট হতে পারে।
⇒ আক্রান্ত ছাগলটি যদি গর্ভবতী হয়, তাহলে গর্ভপাতের সম্ভবনা থাকে।
⇒ শরীরের তাপমাত্র হঠাৎ করে অনেক বেড়ে যেতে পারে। এ তাপমাত্রা ১০৫ ডিগ্রি থেকে ১০৭ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত হতে পারে।
⇒ অল্প বয়স্ক পশুগুলো এ রোগে অধিক আক্রান্ত হয়।
⇒ ভেড়ার চেয়ে ছাগলের মধ্যে এ রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা যায়।
⇒ অনেক সময় অসুস্থ প্রাণীটির মধ্যে মারাত্মক রকমের ডাইরিয়া দেখা দিতে পারে। ডাইরিয়ার ফলে প্রচুর পরিমাণ তরল শরীর থেকে বের হয়ে যায়। ফলে প্রাণীটি প্রচ- রকমের পানি শূন্যতায় ভোগেন। এ পানি শূন্যতার কারণেও প্রাণীটি মারা যেতে পারে।
⇒ সাধারণ পিপিআর রোগের জীবাণু শরীরে প্রবেশের ৩-৬ দিনের মধ্যে এ রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়।
▷ পিপিআর কিভাবে সংক্রমিত হয়?
⇒ যে প্রাণীর শরীরে জীবাণু আছে কিন্তু এখনও রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়নি সেসব প্রাণীর মাধ্যমে রোগ এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় স্থানান্তর হতে পারে।
⇒ অসুস্থ প্রাণীর চোখ, নাক, মুখ থেকে নিঃসৃত তরল, পায়খানা ইত্যাদির মাধ্যমে এ রোগ ছড়াতে পারে।
⇒ অসুস্থ প্রাণীর হাঁচি-কাশির মাধ্যমেও এ রোগ সুস্থ প্রাণীকে আক্রান্ত করতে পারে।
⇒ যেসব প্রাণী অসুস্থ প্রাণীর সংস্পর্শে থাকে শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে সে রোগ সুস্থ প্রাণীকে আক্রান্ত করতে পারে।
⇒ পানি, খাদ্য পাত্র এবং অসুস্থ প্রাণীর ব্যবহৃত আসবাবপত্র দিয়েও এ রোগ ছড়াতে পারে।
⇒ দেহের বাইরে এ রোগের জীবাণু বেশিক্ষণ টিকে থাকতে পারে না।
▷ পিপিআর রোগের চিকিৎসা কি?
⇒ অতি দ্রুত নিকটস্থ প্রাণিসম্পদ দপ্তরে যোগাযোগ করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
⇒ শ্বাসতন্ত্রের ২য় পর্যায়ের সংক্রমণ রোধে অক্সিটেট্রাসাক্লিন ও ক্লোর টেট্রাসাইক্লিন খুব কার্যকর।
⇒ গবেষণায় দেখা গেছে, ফুড থেরাপি এবং জীবাণুরোধী ওষুধ যেমন- ইনরোফ্লোক্সাসিন, সেফটিফোর নির্দিষ্ট ডোজে ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
⇒ মুখের ক্ষত ৫% বরো-গ্লিসারিন দিয়ে মুখ ধুয়ে দিলে অনেক ভালো হয়ে যায়।
⇒ তবে চোখের চারপাশে, নাক, মুখ পরিষ্কার কাপড় এবং কটন টিউব দিয়ে পরিষ্কার করে দিতে হবে দিনে ২-৩ বার করে।
⇒ অসুস্থ ছাগলকে যত দ্রুত সম্ভব আলাদা করে ফেলতে হবে।
⇒ পিপিআর রোগের নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। তবে ওষুধ প্রয়োগের মাধ্যমে ২য় পর্যায়ের ব্যাকটেরিয়ার এবং পরজীবী সংক্রমণ রোধ করে মৃত্যুর হার কমিয়ে আনা যায়।
⇒ অসুস্থ প্রাণীটি মারা গেলে অবশ্য ভালোভাবে পুঁতে ফেলতে হবে অথবা পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
▷ পিপিআর রোগের টিকা দেওয়ার পদ্ধতি কি?
⇒ টিকা সরবরাহ কেন্দ্র থেকে কুল ভ্যান/ফ্লাক্সে পর্যাপ্ত বরফ দিয়ে টিকা বহন করতে হবে।
⇒ ডিসপোসেবল সিরিঞ্জ দিয়ে টিকা প্রদান করতে হবে এবং সব রকম জীবাণুমুক্ত ব্যবস্থা করতে হবে।
⇒ টিকা দেয়ার পূর্বে ১০০ মিলি ডাইলুয়েন্টের বোতল কমপক্ষে ১২ ঘণ্টা+৪ ডিগ্রি থেকে+৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় রেখে ব্যবহার করতে হবে।
⇒ ডাইলুয়েন্ট মিশ্রিত টিকা ১-২ ঘণ্টার মধ্যে ব্যবহার করতে হবে।
⇒ টিকা প্রয়োগের মাত্রা প্রতি ছাগল বা ভেড়ার জন্য ১ মিলি. মাত্রা চামড়ার নিচে প্রয়োগ করতে হবে।
⇒ বাচ্চার বয়স ৪ মাস হলেই এ টিকা প্রয়োগ করা যায়। ২ মাস বয়সের বাচ্চাকেও এ টিকা দেয়া যায়।
⇒ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় ১ বছর পর পুনরায় (বুস্টার) টিকা প্রয়োগ করতে হবে।
⇒ প্রসবের ১৫ দিন আগে গর্ভবতী ছাগল/ভেড়াকে এ টিকা প্রয়োগ করা যাবে না।
⇒ পুষ্টিহীন প্রাণিকে এ টিকা প্রয়োগ না করাই উত্তম।
⇒ টিকা প্রয়োগের ১৫ দিন আগে কৃমিনাশক খাওয়ানো গেলে টিকার কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়।
⇒ খামারে নতুন ছাগল/ভেড়া আনলে ১০ দিন পর টিকা প্রয়োগ করতে হবে।
⇒ আক্রান্ত ছাগল/ভেড়াকে এ টিকা প্রয়োগ করা যাবে না।
⇒ ব্যবহৃত টিকার বোতল বা অবশিষ্ট টিকা যথাযথভাবে নষ্ট করে ফেলতে হবে।
▷ খামারে রোগ ছড়িয়ে গেলে করণীয় কি হবে?
⇒ ছাগলের থাকার ঘর জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে।
⇒ অসুস্থ প্রাণীকে আলাদা করে চিকিৎসা করাতে হবে।
⇒ অসুস্থ প্রাণীর নাক, মুখ, চোখ দিয়ে নিসৃত তরল যাতে অন্য প্রাণীর শরীরে না লাগে সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে।