প্রিয় খামারি বন্ধুরা, খামারিয়ান লাইভস্টক ফার্ম এর পক্ষ থেকে আপনাদের সবাইকে আমার শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করতে চলেছি আজকের ছাগল পালনে লাভ লস এর মূল কারণ নিয়ে এই পোষ্টটি।
পড়তে একটু বোরিং আলোচনাটি অবশ্যই মনোযোগ সহকারে পড়বেন। যারা নতুন করে ফার্মিং করতে চান তাদের ক্ষেত্রে এই পোষ্টটি খুবই উপকারে লাগবে।
আপনাদের পড়ার সুবিধার্থে এক টানা না লিখে। 18 প্যারাতে ভাগ করে লিখা হলো।
আজকের এই আলোচনাটির মাধ্যমে আপনাদেরকে বোঝার চেষ্টা করব নতুন একজন ফার্মার যদি ছাগল খামার শুরু করতে যায় তাহলে কি কি পরিকল্পনা নিয়ে শুরু করা উচিত?
1 ⇒ নতুন করে যারা ছাগল খামার শুরু করতে চান। তাদের প্রথমে জানা উচিত বিজনেসটা সম্পর্কে। এই বিজনেসটা কিভাবে করা সম্ভব? এর জন্য কতটা জায়গা প্রয়োজন? এদের জন্য কি কি খাবারের প্রয়োজন? এবং এই ফার্মি বিজনেস শুরু করলে তার নেগেটিভ পয়েন্টগুলি কি রয়েছে?
2 ⇒ প্রথমে আমাদের জানতে হবে নেগেটিভ পয়েন্টগুলো। আমরা যদি খামারের নেগেটিভ পয়েন্ট গুলো চিন্তা না করি তাহলে কিন্তু আমরা এর পজিটিভ পাবো না অর্থাৎ যে বিজনেসটা করবা বা ফার্মিংটা যদি শুরু করি এর যদি আমরা নেগেটিভ পয়েন্টগুলো আগে থেকেই জেনে রাখি তাহলে ভবিষ্যতে সেই নেগেটিভ পয়েন্ট বা সমস্যার সমাধান বের করতে পারব।
3 ⇒ আর যদি আমরা সেই সমস্যাগুলি না জানি তাহলে কিন্তু এর সমাধান হবে না। এজন্য প্রথমে আপনাদের বিজনেসটা সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হবে এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যেগুলি, খাবার, তাদের পরিচর্যা এবং তার রোগ। এই জিনিসগুলো আমাদের জেনে রাখা প্রয়োজন।
4 ⇒ আমরা বিভিন্ন ছাগলের খামার ভিজিট করে থাকি ও বেশিরভাগ ফার্ম এর মধ্যে তিনটি ভুল দেখতে পায়। এই ভুলের কারণে কিন্তু সাধারণত গোট ফার্ম গুলি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বা ছাগল খামারে তারা লাভ করতে পারছে না। তার কারণ ছাগল খামারিরা তিনটি ভুল থাকে ও এই তিনটি ভুল কিন্তু মারাত্মক ভুল যার কারণে আপনার ফার্ম কিন্তু নষ্ট হয়ে যেতে পারে। যারা নতুন করে শুরু করবেন এই ভুলের কারণে কিন্তু আপনিও হয়তো আপনার ফার্ম সফল করতে পারবেন না।
ছাগল পালনে লাভ লস এর মূলে থাকা সেই তিনটা ভুল কী?
প্রথম ভুল হচ্ছে, ভুল ছাগলের জাত নির্বাচন।
দ্বিতীয় ভুল হচ্ছে, পর্যাপ্ত খাবার বা পুষ্টি।
দ্বিতীয় ভুল হচ্ছে, সঠিক রোগ নির্ণয় করতে না পারা।
এখন চলুন বিস্তারিন আলোচনায়ঃ
5 ⇒ বেশির ভাগ ফার্মে দেখা যায়, যে মা ছাগলগুলো রাখা হয় তাদের শরীর-স্বাস্থ্য তেমন ভালো না এবং কোয়ালিটি ভালো নয়। তাদের শরীর স্বাস্থ্য এবং কোয়ালিটি ভালো না থাকার কারণে তাদের যে বাচ্চাগুলি হয় অপুষ্টিতে বেশিরভাগ মারা যায়। মায়ে শরীরে পুষ্টির ঘাতটি থাকা অবস্থায় বাচ্চা বড় হতে থাকে এত বাচ্চা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা খুব কম থাকে এবং সেই বাচ্চা প্রসব হওয়ার পর মায়ের সঠিক দুধ পায় না। কেননা তাদের সঠিক খাবার না থাকার কারণে মায়ের শরীরে অপুষ্টি চলে আসে এবং অপুষ্টির কারণে দুধের অভাব ঘটে আর দুধের অভাবের কারণে বাচ্চাগুলো আবার বেশি অপুষ্টিতে ভোগে। এর ফলে তারা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয় কিছুদিনের মধ্যে মারা যায় এবং যদিও যে বাচ্চাগুলো টিকে থাকে তাদের শরীরে তেমন বৃদ্ধি থাকে না। একটু বড় হয়ে যাওয়ার পর গায়ের লোম উঠে যাচ্ছে, পেট ফুলে যাচ্ছে, নাকে সর্দি, এবং আস্তে আস্তে আস্তে আস্তে তারা মারা যায়।
6 ⇒ এই কথাটা আমাদের ভালোভাবে জেনে রাখা দরকার যদি সঠিক খাবার না থাকে সঠিক খাবার না থাকার কারণে কিন্তু তাদের বিভিন্ন ধরনের ডেফিসিয়েন্সি চলে আসে।আজকে একটা ছাগলের শরীরে যদি ৭০% প্রোটিনের প্রয়োজন পড়ে ও সে জায়গায় যদি আমি টুয়েন্টি পার্সেন্ট প্রোটিন দেই, তো তার পেটে বাচ্চা হবে সেই বাচ্চা শরীরেও কিন্তু সেই ঘাতটিটা চলে আসবে। যখন বাচ্চা প্রসব করবে, বাচ্চা প্রসব হওয়ার পরে তার শরীরে প্রোটিনের মাত্রা আরও কমে যাবে। তার শরীরের গ্রেথ থাকবে না। তাদের বডিতে কোন ইমুনিটি পাওয়ার থাকবে না। যার কারণে কিন্তু এই সমস্যাগুলি দেখা যায়।
7 ⇒ আমি বারবার এক কথাই বলব যারা নতুন করে খামার শুরু করবেন। ছোট করে শুরু করুন। বড় করে শুরু না করে ছোট করে শুরু করেন এবং আস্তে আস্তে সেটা কে এগিয়ে নিয়ে যান। একসঙ্গে অনেকগুলো ভালো ব্রিড আপনারা স্থানিয়ভাবে কালেকশন করতে পারবেন না। যার জন্য আপনাদের বিভিন্ন গ্রামগঞ্জ-হাটবাজারে ঘুরতে হবে যেখান থেকে ভালো ব্ল্যাক বেঙ্গল কালেকশন করতে পারবেন, যদি ব্ল্যাক বেঙ্গল দিয়ে করেন। আর যদি বারবারি ব্রিডের উপর ফার্ম করেন তো সুন্দর সঠিক বারবার ব্রিড কালেকশন করবেন এবং অন্য যেকোন ব্রিড দিয়ে ফার্ম করুন না কেন সঠিক ব্রিড কিন্তু নির্ণয় করে তারপরে ফার্মিং শুরু করবেন।
8 ⇒ পর্যাপ্ত পরিমাণে আপনার যতটা ছাগল থাকবে সেটা হিসাব করে প্রতিদিন একটা ছাগলের জন্য কতটুকু খাবারের প্রয়োজন ততটুকু খাবার তাদের যোগান দিতে পারবেন কিনা সেটা ঠিক রেখে তারপর কিন্তু ছাগল ওঠাবেন। এর পরেই আপনারা ফার্মিং শুরু করবেন।
9 ⇒ যদি খাবার জোগাড় না থাকে তার কারণেই কিন্তু বিভিন্ন ধরনের সমস্যা চলে আসে। হয়তো প্রেগনেন্ট হয়েছে দশখানা ছাগল কিন্তু ছাগল প্রেগনেন্ট থাকাকালীন যে পরিমাণে খাবার দেওয়া প্রয়োজন সে খাবার আমি দিতে পারছিনা। যার কারণে মায়ের স্বাস্থ্য খারাপ হয়ে যাবে এবং পেটের ভিতর বাচ্চা সেটাও কিন্তু খারাপ হয়ে যাবে।
10 ⇒ এর পরে হচ্ছে চিকিৎসা। ছাগলেরর যে কি কি রোগ হয় সেটাই আমরা ভালেভাবে জানি না যার কারণে ফার্ম কিন্তু নষ্ট হয়ে যায়। আজকে ছাগল কোন এক রোগে আক্রান্ত হয়েছে কিন্তু আমরা আসলেই জানিনা এটা কি রোগ। যার কারেনে আমরা যে ট্রিটমেন্ট দিচ্চি সব আন্দাজ। আনাদাজে ছাগলের চিকিৎসা দেওয়ার জন্যও কিন্তু ফার্মগুলো নষ্ট হয়ে যায়।
11 ⇒ সঠিক ছাগল নির্বাচন, সুষম খাবার, সঠিক রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা। এই তিনটা জিনিসি যদি আপনারা ঠিক রাখতে পারেন তাহলে আশা করা যায় ১০০% ছাগলের খামারে সফলতা পাবেন। আর যদি এই তিনটা জিনিসের কোন একটা যদি আপনার কম থাকে তাহলে কিন্তু সাকসেস পাওয়া সম্ভব নয়। বহু মানুষ চেষ্টা করছে কিন্তু তাদের এই তিনটা থেকে যেকোন একটা ভুল থেকেই যায় ও ফার্ম নষ্ট হয়ে যায়।
12 ⇒ যদিও আপনি পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবার রেখেছেন কিন্তু সঠিক ট্রিটমেন্ট নেই আপনারঅ যার কারণে ফার্মে যদি কোন রোগ চলে আসে সেই সমস্যা বা রোগের সমাধান করতে পারছেন না। সমাধান করতে না পারার কারণে কিন্তু ছাগল মারা যাবে এবং একই রোগে যদি অন্যান্য ছাগল আক্রান্ত হয় সেগুলোও মারা যাবে।
13 ⇒ ছাগল পালনের সমস্যা ও রোগগুলি জানুন তার সমাধান বের করতে পারবেন। যারা নতুন করে ফার্ম শুরু করবেন প্রথমে ছোট করে করবেন নিজের এক্সপেরিমেন্টের জন্য। কেননা আগের ঘরের প্রতি বেশি ইনভেস্ট করবেন না। না করে ছাগলে প্রতি ইনভেস্ট করুন এবং বেশি ছাগল দিয়ে শুরু করবেন না। ম্যাক্সিমাম 10 টা ও মিনিমাম পাঁচটা দিয়ে শুরু করতে পারেন। এরপর যদি আপনি এতে সাকসেস পান তখন ধীরে ধীরে ফার্ম বড় করতে পারেন।
14 ⇒ সবসময় মনে রাখবেন সুন্দর একটি জায়গা, সুন্দর ফার্ম হাউজ, সুন্দর শেড বানিয়ে, সুন্দর গ্রাউন্ড রেখে কোন লাভ নেই। আজকে আপনি সোনার খাঁচা তৈরি করতে পারেন কিন্তু সোনার খাঁচায় যদি একটা কাক রেখে দেওয়া যায় ঠিক একই পরিস্থিতি দাঁড়ায়। আপনি এত সুন্দর অনেক কয়েক লক্ষ টাকা খরচা করে পনেরো কুড়ি লাখ টাকার একটি সুন্দর শেড বানালেন, শেডের ভেতর যে আপনি ছাগলগুলো রাখবেন সে ছাগলগুলোই যদি আপনার ঠিক না থাকে তাহলে কিন্তু সুন্দর শেড করে কোন লাভ নেই।
15 ⇒ যদি আপনি একটা বাঁশের খাঁচায় যদি আপনি একটা যদি তোতাপাখি কে রেখে দেন তবুও কিন্তু আপনার বাঁশের খাঁচাটাি কেউ দেখবে না দেখবে আপনার পাখিটাকে। সেইরূপ আপনার ফার্ম হাউস কেউ দেখবে না দেখবে আপনার ফার্মের প্রোডাকশন। আপনার ফার্মের ছাগল। যার জন্য ঠিক আছে শেডটা বানাবেন কিন্তু সে হাই ফাই কোয়ালিটির নয়, নরমাল কোয়ালিটি শেট বানাবেন।
16 ⇒ শেডের খরচ কম করুন। ভবিষ্যতে যখন আপনার ফার্ম ডেভলপ হবে তারপর আপনি শেডের প্রতি খরচ করুন। তার আগে আপনি নর্মাল আপনার অঞ্চলে যে বাঁশের বা সিমেন্টের খুঁটি এগুলো দিয়ে শেড তৈরি করতে পারেন। আগেই বেশি ইনভেস্ট করবেন না। যদি আপনার সফল হয়ে যায় ভবিষ্যতে আপনি ভালো করে শেড বানিয়ে নিতে পারবেন।
17 ⇒ প্রথমে আপনার হচ্ছে এক্সপেরিমেন্ট এবং এক্সপেরিএন্স। এক্সপেরিএন্স যদি না থাকে, যদি আপনি এক্সপেরিমেন্ট না করেন আপনার এক্সপেরিয়েন্স হবে না, আর এক্সপেরিয়েন্স না থাকলে কিন্তু ফার্মিং করতে পারবেন না। যার জন্য আপনাদের ফার্মিং করতে গেলেই জিনিসগুলি অবশ্যই প্রয়োজন।
18 ⇒ আপনি যখন ছোট করে ফার্ম শুরু করবেন আমি বলব যদি আপনার টার্গেট থাকে চার লক্ষ টাকা ইনভেস্ট করার, আপনি সেখানে এক লক্ষ টাকা ইনভেস্ট করুন। 1 লক্ষ টাকা ইনভেস্ট করে সেটা পরীক্ষামূলক ভাবে শুরু করে দিন এবং আপনি নিজেই দেখতে থাকুন যে কি কি সমস্যা গুলো হচ্ছে এবং ফার্মের কি কি সমস্যার সমাধান গুলি কি এইসব বিষয় আপনি ক্লিয়ার করুন। তারপরে কিন্তু আপনি বাকি টাকা ইনভেস্ট করুন। আর একসঙ্গে যদি চার লক্ষ টাকা ইনভেস্ট করে দেন তাহলে কিন্তু আপনার টাকা নষ্ট হয়ে যাবে।
তো খামারি ভায়েরা আজ এখানেই ইতি টানছি। আমাদের এই পোষ্টটি পড়ার পর যদি একটুও ভালো লেগে থাকে লাইক কমেন্ট শেয়ার অবশ্যই করবেন এবং যারা আমাদের এই ওয়েবসাইটে নতুন আমাদের ওয়েবসাইটে রেজিস্ট্রেশন করে রাখবেন পরবর্তি আলোচনাগুলির নোটিফিকেশন পাওয়ার জন্য। যদি পরামর্শগুলো ভাল লেগে থাকে অবশ্যই কমেন্ট করবেন। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন খামারিয়ান এর সাথেই থাকুন। ধন্যবাদ।
আমার একটা ছাগল তেমন খাচ্ছেনা আগের মতো আবার ঝিমনি দিয়ে শুয়ে থাকে হাটতেও চায়না তেমন কারণ কি এটার?