Skip to content

 

ছাগল পালনঃ (৮টি) ছাগল পালনের সুবিধা ও (১০টি) ছাগল পালনের উপকারিতা এবং (৫টি) ছাগল পালনের সাধারণ পদ্ধতি সহ।

ছাগল পালনঃ (৮টি) ছাগল পালনের সুবিধা ও (১০টি) ছাগল পালনের উপকারিতা এবং (৫টি) ছাগল পালনের সাধারণ পদ্ধতি সহ।
  • বিভক্ত খুরবিশিষ্ট (Cloven hoofed) রোমন্থক (Ruminant) প্রাণীদের মধ্যে ছাগল ও ভেড়া প্রথম গৃহপালিত পশু। প্রায় দশ হাজার বছর পূর্বে প্রথমে বুনো ভেড়া ও পরে বুনো ছাগলকে পোষ মানানো হয়েছিল।এরা অত্যন্ত উপকারী প্রাণী ।
  • এদের দুধ ও মাংস অত্যন্ত পুষ্টিকর খাদ্য। চামড়া, লোম/পশম ও অন্যান্য উপজাত দ্রব্য বিক্রি করে প্রচুর অর্থ উপার্জন করা যায়।
  • ছাগল পালন অত্যন্ত সহজ। এরা আকারে ছোট, তাই জায়গা কম লাগে। এদের রোগব্যাধি গরুর তুলনায় অনেক কম। এরা অত্যন্ত উৎপাদনশীল;
  • একটি স্ত্রী ছাগল বা ছাগী থেকে বছরে অন্তত চারটি বাচ্চা পাওয়া যায়। তাই ছাগল পালন করে সহজেই লাভবান হওয়া যায়।
  • বাংলাদেশে প্রধানত ‘ব্ল্যাক বেঙ্গল গোট (Black Bengal goat)’ বা ‘বাংলার ছাগল’ জাতটিই বেশি পাওয়া যায়।এদেশের ৯৮% ছাগলই গ্রামে পারিবারিকভাবে পালন করা হয়।
  • বেশির ভাগ পালনকারী ভূমিহীন কৃষক। যাদের পক্ষে গাভী কেনা সম্ভব নয়, তারা সহজেই ছাগল কিনে পালন করতে পারেন। ছাগলকে তাই ‘গরীবের গাভী’ বলা হয়।
  • এদেশের অসংখ্য বেকার ও ভূমিহীন লোক এবং দুঃস্থ মহিলারা ছাগল পালনের মাধ্যমে সহজেই আত্বকর্মসংস্থান করতে পারেন।

নিম্নোক্ত প্রধানত পাঁচ পদ্ধতিতে ছাগল পালনের ব্যবস্থা করা যায়-

১। গ্রাম্য পদ্ধতি (Village system),

২। এক্সটেনসিভ পদ্ধতি (Extensive system),

৩। সেমি-ইনটেনসিভ পদ্ধতি (Semi-intensive system),

৪। বাস্তবিক ইনটেনসিভ পদ্ধতি (Very intensive system) এবং

৫। ফসল উৎপাদনের সাথে সমন্বিত পদ্ধতি (Integrated with cropping system)।

১। গ্রাম্য পদ্ধতি (Village system) :

  • গ্রাম্য পদ্ধতি পালন ব্যবস্থায় ছাগলকে দু’ভাবে খাওয়ানো যায়।
  • দ্বিতীয় পদ্ধতিতে গ্রামের বাড়ীর ধারে একই স্থানে ছাগলকে বেঁধে বিভিন্ন প্রাপ্য শস্য উপজাত বা অবশিষ্টাংশ খাওয়ানো যায়। তাছাড়া উভয় পালন পদ্ধতিতে রন্ধনশালার অবশিষ্টাংশ ছাগলকে খাওয়ানো হয়। এ পদ্ধতির উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো ছাগলকে গ্রামের বাড়ীর কাছাকাছি রেখে পালন করা যায় ।
  • একটি হলো দড়ি দিয়ে ঘাস বহুল স্থানে বেঁধে পালন। এক্ষেত্রে ১ হতে ৫টি ছাগল পালন করা যায়। সে সব অঞ্চলে ফসলের উৎপাদনের জমি রয়েছে সেসব এলাকায় এ ব্যবস্থায় ছাগল পালন করা হয়।

২। এক্সটেনসিভ পদ্ধতি (Extensive system) :

  • এ পদ্ধতি-১-১৫টি ছাগল পালন করা যায় এবং অনেক ক্ষেত্রে ছাগল ও মেষ একসাথে এমনকি কয়েকজ
  • মালিকের ছাগল একসাথে পালন করা যায়।
  • যেসব অঞ্চলে সাধারণত চারণভূমি অথবা শস্যক্ষেত্রের পর্যাপ্ত আইল রয়েছে সেসব এলাকায় এ পদ্ধতিতে ছাগল পালন করা হয়। এক্ষেত্রে পরিবারের মহিলা সদস্য ও ছেলে মেয়ে ছাগল চরানোর কাজ করে থাকে।

৩। সেমি-ইনটেনসিভ পদ্ধতি (Semi-intensive system) :

  • ছাগল চরানোর স্থিতিকাল পরিবর্তনশীল। তবে প্রতিদিন ৪ থেকে ৬ ঘণ্টা চরানো উত্তম।
  • ছাগল ঘরে বেঁধে রাখার সময় কাটা ঘাস, গাছের পাতা এবং শস্যের উচ্ছিষ্ট অংশ খেতে দেয়া হয়।
  • কদাচিৎ দানাদার খাদ্য খাওয়ানো হয়।
  • এক্সটেনসিভ এবং ইনটেনসিভ পদ্ধতির সমন্বয়ে সেমি-ইনটেনসিভ পদ্ধতি। আবদ্ধ খোঁয়াড়ে ছাগল পালন। তবে মাঝে মাঝে চরানো হয়। এ পদ্ধতি মোটামুটি গ্রাম্য পদ্ধতির মতই।

৪। বাস্তবিক ইনটেনসিভ পদ্ধতি (Very intensive system) :

  • ঘাসের টাইপ ও জমিতে সার প্রয়োগের উপর ভিত্তি করে প্রতি হেক্টর ৩৭ থেকে ১২৬টি ছাগল পালন করা যায়।
  • বাস্তবিক ইনটেনসিভ পদ্ধতি দু’ধরনের যথা— (ক) চাষকৃত ঘাস খাওয়ানো এবং (খ) খোঁয়াড়ে বেঁধে খাওয়ানো।
  • ঘাস চাষ ছাড়াও এ পদ্ধতিতে ছাগল পালন করা যায় তবে শ্রমিক ও মূলধন অধিক প্রয়োজন হয়।
  • যদিও ছাগল ঘাস চরে খাওয়ার তুলনায় গাছের পাতা খাওয়া অধিক পছন্দ করে তবুও দুধ ও মাংস উৎপাদনে জন্য চাষকৃত ঘাস খাওয়ানো যায় ।

৫। ফসল উৎপাদনের সাথে সমন্বিত পদ্ধতি (Integrated with cropping system) :

  • এ পদ্ধতিতে গাছ জাতীয় ফসলের সাথে ছাগল পালন করা হয়। যেমন- নারিকেল, রাবার, পাম ওয়েল ইত্যাদি। পদ্ধতির নিম্নোক্ত সুবিধা রয়েছে।
  • অপ্রয়োজনীয় উদ্ভিদ খেয়ে আগাছা বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে।
  • আগাছানাশক ব্যবহার ও সারের অপচয় কমে।
  • সমন্বিত এ পদ্ধতিতে পশু ও পশুজাত দ্রব্য এবং ফসল উৎপাদন লাভজনক হয়।
  • ছাগলের মলমূত্র মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করে।

  1. ছাগলের মাংস অত্যন্ত সুস্বাদু ও পুষ্টিকর। এগুলো মোলায়েম ও নরম আঁশযুক্ত, তাই সহজে হজম হয়। খাসির মাংস সকল ধর্মের লোকের কাছেই অত্যন্ত প্রিয়। এদেশে ছাগলের মাংসের দাম তুলনাম লকভাবে বেশি বলে বাণিজ্যিকভাবে অধিক লাভজনক।
  2. বাংলাদেশের ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের চামড়ার গুণগতমান অতি উন্নত, তাই বিশ্বব্যাপী এর ব্যাপক চাহিদা। এই চামড়া রপ্তানি করে বাংলাদেশ প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে থাকে।
  3. ছাগল দ্রুত বংশবৃদ্ধি করতে সক্ষম। এরা ৬/৭ মাস বয়সেই প্রজননের (breeding) উপযোগী হয়। ছাগী গর্ভবতী হওয়ার প্রায় পাঁচ মাস পরেই বাচ্চা প্রসব করে এবং প্রতিবারে অন্তত ২/৩টি বাচ্চা দেয়। কাজেই একটি ছাগী থেকে বছরে অন্তত চারটি বাচ্চা পাওয়া যায়।
  4. ছাগল ছোট প্রাণী; তাই এদের জন্য জায়গা কম লাগে। এরা নিরীহ বলে ছোট ছোট ছেলেমেয়েরাও পালন করতে পারে। ছাগল পালনে পুঁজি কম লাগে। এটি ভূমিহীন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি চাষিদের অতিরিক্ত আয়ের উৎস।
  5. যে পরিবেশ বা আবহাওয়ায় গরু মহিষ জীবনধারণ করতে পারে না ছাগল সেখানে সহজেই খাপ খাইয়ে নেয়।
  6. গরু মহিষের তুলনায় এদের জন্য খাদ্য কম লাগে। কারণ, ছাগল খাদ্য রূপান্তরে (Feed conversion) গরুর থেকে বেশি দক্ষ । এরা বিভিন্ন ধরনের গাছের পাতা, ঘাস, লতা খেয়ে সহজেই জীবনধারণ করতে পারে।
  7. গরুর তুলনায় ছাগল রোগব্যাধিতে কম আক্রান্ত হয়।
  8. ছাগলের দুধের চর্বির কণিকাগুলো (Fat globules) অত্যন্ত ক্ষুদ্র হওয়ায় গরুর দুধের তুলনায় সহজে হজম হয়। তাই বৃদ্ধ ও শিশুদের জন্য এই দুধ অধিক উপযোগী, উপাদেয় এবং উৎকৃষ্ট।
ছাগল পালনঃ ৮টি ছাগল পালনের সুবিধা ও ১০টি ছাগল পালনের উপকারিতা এবং ৫টি সাধারণ পদ্ধতি সহ। 2 ছাগল পালনঃ (৮টি) ছাগল পালনের সুবিধা ও (১০টি) ছাগল পালনের উপকারিতা এবং (৫টি) ছাগল পালনের সাধারণ পদ্ধতি সহ। কৃষি ছাগল পালন ছাগল পালন ⭐⭐⭐⭐⭐ ছাগল পালনঃ (৮টি) ছাগল পালনের সুবিধা ও (১০টি) ছাগল পালনের উপকারিতা এবং (৫টি) ছাগল পালনের সাধারণ পদ্ধতি সহ।

১। ছাগলের দুধ (Goat milk)

◾ এদেশের ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল অত্যন্ত অল্প পরিমাণ অর্থাৎ ২৫০-৫০০ মি.লি. দুধ দিয়ে থাকে। অন্যদিকে, যমুনাপারি ছাগল তুলনামূলকভাবে বেশি দুধ দেয়। তবে, অল্প হলেও ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের দুধ অত্যন্ত পুষ্টিকর। গুণগতমানে এই দুধ মানুষ বা গরুর দুধের থেকেও সেরা।

◾ গরুর দুধের তুলনায় এই দুধ সহজে হজম হয়। দুধের চর্বির কণিকা ক্ষুদ্র ও সহজপাচ্য। তাই এই দুধ রোগীদের জন্য পথ্য ও শিশুদের জন্য উপযুক্ত খাদ্য হিসেবে বিবেচিত হয়।

◾ শিশুদের জন্য মায়ের দুধের বিকল্প হিসেবে ছাগলের দুধ গরুর দুধের থেকে বেশি উপযোগী। কারণ, এতে যক্ষ্মা রোগের জীবাণু থাকার সম্ভাবনা অত্যন্ত কম।

◾ ছাগলের দুধ অ্যালার্জিক পদার্থমুক্ত এবং বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানে ভরপুর। এই দুধে ভিটামিন-এ, নিকোটিনিক অ্যাসিড, কোলিন, ইনসিটল ইত্যাদি বেশি পরিমাণে এবং ভিটামিন-বি৬ ও ভিটামিন-সি অল্প পরিমাণে রয়েছে।

◾ দুধ একটি আদর্শ খাদ্য হলেও গরুমহিষের দুধে ভিটামিন-সি-এর অভাব থাকায় একে মানুষের জন্য একটি সম্পূর্ণ খাদ্য বলা যায় না। ছাগলের দুধে মানুষ ও গরুর দুধের তুলনায় ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও ক্লোরিন বেশি এবং লোহা কম থাকে। এছাড়াও এ দুধে যথেষ্ট পরিমাণে সোডিয়াম, কপার বা তামা ও অন্যান্য খনিজপদার্থ থাকে।

◾ কিন্তু ছাগলের দুধের এত গুণ থাকা সত্ত্বেও আমাদের মধ্যে অনেকেই ছাগলের দুধ পছন্দ করেন না। ছাগলের দুধ পানে অনভ্যস্ততা এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে সহজলভ্য না হওয়াকেই এর প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করা যায়।

ছাগী, গাভী ও স্পীলোকের দুধে উপস্থিত বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানের তুলনা করা হলো-

প্রজাতি পানি (%)আমিষ (%)চর্বি (%)দুগ্ধ শর্করা বা ল্যাকটোজ (%)খণিজপদার্থ (%)
ছাগী৮৭.৩০৩.৫০৩.৯০৪.৫০০.৮০
গাভী৮৭.২৫৩.৫০৩.৮০৪.৮০০.৬৫
স্পীলোক৮০.৩০১.১৯৩.১১৭.১৮০.২১

২। ছাগলের মাংস (Goat meat)

◾ ছাগলের মাংস এদেশে খাসির মাংস নামেই বেশি পরিচিত। ইংরেজিতে ছাগলের মাংস চেভন নামে পরিচিত। খাসির মাংস অত্যন্ত সুস্বাদু ও পুষ্টিকর প্রাণিজ আমিষজাতীয় খাদ্য। এ মাংস দেখতে অনেকটা কালচে বা গাঢ় লাল (dark red) এবং এতে চর্বি পাতলাভাবে সন্নিবেশিত থাকে।

◾ উন্নত বিশ্বে ছাগলের মাংস তেমন জনপ্রিয় নয়। সেখানে এই মাংস গরীবের মাংস হিসেবে বিবেচিত হয়, তাই দামে বেশ সস্তা। কিন্তু, বাংলাদেশসহ পাক-ভারত উপমহাদেশে ছাগলের মাংসের অত্যন্ত চাহিদা। গরুর মাংস খেলে যাদের অ্যালার্জি হয় তারা খাসির মাংসের ওপরই বেশি নির্ভর করেন।

◾ ছাগলের মাংস বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদানে ভরপুর। ৬-১২ মাস বয়সের ছাগলের মাংস উৎকৃষ্ট। এই বয়সের ছাগল থেকে ৪৩-৫৩% মাংস পাওয়া যায়।

◾ পাঠার মাংসে বৈশিষ্ট্যপূর্ণ গন্ধ থাকে বলে অনেকেই তা পছন্দ করেন না। বাচ্চা ছাগলের মাংস কিছুটা আঠালো, নরম ও বিশেষ ঘ্রাণযুক্ত হয়। এই মাংস দিয়ে বিভিন্ন ধরনের উপাদেয় খাদ্যদ্রব্য তৈরি করা যায়।

◾ তবে, এদেশের লোকেরা সাধারণত ১৮-২৪ মাস বয়সের চর্বিযুক্ত খাসির মাংস বেশি পছন্দ করেন। কিন্তু, যাদের হজমশক্তি দুর্বল ও যারা উচ্চ রক্তচাপে ভোগেন তাদের জন্য চর্বিযুক্ত মাংস ক্ষতিকর ।

ছাগলের মাংসে উপস্থিত বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানের পরিমাণ-

পুষ্টি উপাদানপরিমাণ
পানি
আমিষ
চর্বি
খণিজপদার্থ
ক্যালসিয়াম
ফসফরাস
৭৪.২%
২১.৪%
৩.৬%
১.১%
১২.০ মিলিগ্রাম/১০০ গ্রাম
১৯৩.০ মিলিগ্রাম/১০০ গ্রাম

উৎকৃষ্ট ছাগলের মাংসের বৈশিষ্ট্য

◾ মাংসের রঙ কালচে বা গাঢ় লাল হবে।

◾ চর্বি অত্যন্ত তাজা হবে যা ভেড়ার মাংসের ন্যায় আঁশের ভাঁজে ভাঁজে থাকবে না। বরং মাংসের উপরে একটা পাতলা আবরণের মতো থাকবে। চর্বি সাদা থেকে হলুদ বর্ণের হতে পারে।

◾ উৎকৃষ্ট মাংসের মধ্যে রক্তের শিরা-উপশিরাগুলো রক্তশ ন্য থাকবে।

◾ মাংসের মধ্যে কোনো ধরনের অস্বাভাবিক গন্ধ থাকবে না ।

◾ মাংস তাজা ও উজ্জ্বল হবে।

৩। ছাগলের চামড়া (Goat skin)

◾ ছাগলের চামড়া অত্যন্ত মূল্যবান সম্পদ। এই চামড়াতে সারবস্থা ও দানাদার অংশ ভেড়ার চামড়ার তুলানায় বেশি থাকে।

◾ ছাগলের লোম ভেড়ার পশমের মতো পেঁচানো বা কোঁকড়ানো নয় এবং এদের গোড়া ভেড়ার মতো চামড়ার বেশি গভীরে প্রবেশ করে না। ফলে চামড়া পাকা করার পর লোমের গোড়া শোষক বা স্পঞ্জি (spongy) হিসেবে চামড়ার মধ্যে থেকে যায় না। তাই চামড়ার মান হয় অতি উন্নত।

◾ ছোট, রেশমি ও সুন্দর লোমে আবৃত চামড়া বড়, লম্বা ও রুক্ষ লোমে আবৃত চামড়া থেকে বেশি উন্নতমানের হয়। সাধারণত মাংস উৎপাদনের জন্য পালিত ছাগল থেকে ভালোমানের চামড়া পাওয়া যায়।

◾ অধিক চর্বিযুক্ত ও মোটাসোটা ছাগলের তুলনায় কম চর্বিযুক্ত ছিপছিপে ছাগলের চামড়া উৎকৃষ্ট। বাণিজ্যিক দিক দিয়ে একটি ছাগলের চামড়ার মূল্য প্রাণীটির মূল্যের ৫-১০% হয়ে থাকে। তাই চামড়া ছাড়ানোর সময় যত্নবান হতে হবে যেন তা কেটে না যায়।

◾ জাতভেদে একটি পূর্ণবয়স্ক ছাগলের চামড়া প্রক্রিয়াজাত করার পর ০.৭৫-২.০ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে।

◾ সাধারণত ৯-১৮ মাস বয়সের ছাগলের চামড়া থেকে ভালোমানের জুতো, ব্যাগ, সুটকেস, পরিধেয় বস্ত, জ্যাকেট, তাবু ইত্যাদি তৈরি হয়। কিন্তু দস্তানা তৈরি, বই বাঁধানো প্রভৃতি কাজের জন্য ৬ মাস বয়সের ছাগলের চামড়া ভালো।

◾ বাংলাদেশের ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের গায়ের লোম ছোট, মসৃণ ও নরম। তাই চামড়া নরম, পুরু ও উন্নতমানের। চামড়ার তন্ত্র (fibre) অত্যন্ত ঘনভাবে সন্নিবেশিত থাকে এবং চামড়া অত্যন্ত স্থিতিস্থাপক (elastic) হয়। এই চামড়া যে কোনো আবহাওয়ায় বেশি দিন টিকে । আর্দ্র জলবায়ু এবং পানিতেও সহজে নষ্ট হয় না। এসব কারণে ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের চামড়ার চাহিদা বিশ্ববাজারে অত্যন্ত বেশি। তবে, চামড়ার সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ ব্যবস্থা উন্নত করতে পারলে চাহিদা আরও বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে।

৪। ছাগলের লোম/পশম (Hair / fleece )

◾ বিভিন্ন জাতের ছাগল থেকে বিভিন্ন ধরনের লোম (hair) উৎপন্ন হয়। কোনো কোনো জাতের ছাগল, যেমন- অ্যাংগোরা ও কাশ্মিরির পশম (fleece or wool) থেকে ভেড়ার উলের থেকেও উন্নতমানের উল উৎপন্ন হয়। এগুলো যথাক্রমে মোহেয়ার (mohair) ও পশমিনা (pashmina) নামে পরিচিত।

◾ লোম ও পশম কিন্তু এক জিনিস নয়। সাধারণত ভেড়ার লোমকেই উল বলে (ব্যতিক্রম- অ্যাংগোরা ও কাশ্মিরি ছাগলের উল)।

◾ পশমের পৃষ্ঠতল খাঁজকাটা; এগুলো কোঁকড়ানো বা ঢেউ খেলানো ও অত্যন্ত স্থিতিস্থাপক। পশমের অভ্যন্তর ভাগে বহু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কোষ রয়েছে। পক্ষান্তরে লোমের পৃষ্ঠতল মসৃণ; এগুলো কোঁকড়ানো নয় এবং স্থিতিস্থাপকও নয়।

◾ জাতভেদে ছাগলের লোম/পশম খাটো বা লম্বা এবং নানা বর্ণের হতে পারে।

◾ এসব লোম/পশম থেকে কার্পেট, কম্বল, মূল্যবান শীতের পোষাক, বিখ্যাত কাশ্মিরি শাল, এমনকি, রশিও তৈরি করা হয়।

◾ এদেশে (বাংলাদেশ) ছাগলের লোম কোনো কাজেই ব্যবহার করা হয় না। অথচ এগুলো বিদেশে রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব।

◾ ছাগলের লোম/পশম রপ্তানির ক্ষেত্রে পাকিস্তান শীর্ষস্থানীয় ।

৫। মোহেয়ার

তুরস্কের অ্যাংগোরা জাতের ছাগল থেকে প্রাপ্ত সাদা, নরম, উজ্জ্বল ও উন্নত গুণসম্পন্ন সুতোর মতো পশমই মোহেয়ার নামে পরিচিত। এগুলো ১০-২৫ সে.মি. লম্বা হয়। দামি চাদর ও কম্বল তৈরিতে মোহেয়ার ব্যবহৃত হয়। প্রতিটি ছাগল থেকে বছরে ২.৫-৪.৫ কেজি মোহেয়ার পাওয়া যায়।

৬। পশমিনা

কাশ্মিরি ছাগলের লোমকে পশমিনা বলা হয়। পশমিনা মোটা ও রঙিন হতে পারে। এগুলো দেখতে উলের মতোই তবে আকারে লম্বা, গড়ে ২.৫ সে.মি. হয়ে থাকে। প্রতিটি ছাগল থেকে বছরে গড়ে ১০০-১২০ গ্রাম পশমিনা উৎপন্ন হয় উৎপাদন কম বলে দাম অনেক বেশি। পশমিনা সূক্ষ্মতা বা মিহিত্বের (fineness) জন্য বিখ্যাত।

৭। হাড় ও নাড়িভুঁড়ি (Bones and offals)

ছাগলের দেহের বিভিন্ন অংশ থেকে প্রাপ্ত হাড় গুঁড়ো করার পর তা প্রক্রিয়াজাত করে হাঁসমুরগি ও গবাদিপশুনে খাওয়ানো যেতে পারে। হাড়ের গুঁড়ো উৎকৃষ্টমানের সার হিসেবেও জমিতে ব্যবহার করা যায়। হাড়ের গুঁড়ো, নাড়িভুঁড়ি মানুষের খাবার অনুপযোগী মাংস দিয়ে হাঁসমুরগি, কুকুরবিড়াল প্রভৃতির খাদ্য তৈরি করা যায়। তবে, পশুপাখির খাদ্য হিসেে ব্যবহার করার পূর্বে এগুলোকে অবশ্যই জীবাণুমুক্ত করে নিতে হবে।

৮। রক্ত (Blood)

রক্তে রয়েছে উন্নতমানের আমিষ ও খণিজদ্রব্য। রক্ত থেকে তৈরি ‘ব্লাড মিল (Blood meal)’ গবাদিপশু, হাঁস, মুরগি কোয়েলের খাদ্যতালিকা বা রেশন (Ration) তৈরিতে সহজেই ব্যবহার করা যায়। তবে, খাদ্যতালিকায় ব্লাড মিলের পরিমা ২-৩%-এর বেশি থাকা উচিত নয়। মনে রাখতে হবে যে, রক্ত সংগ্রহ ও সংরক্ষণ সঠিকভাবে না হলে জীবাণুর সংক্রম ঘটার সম্ভাবনা থাকে। ফলে এই খাদ্য খেয়ে পশুপাখি রোগাক্রান্ত ও হতে পারে।

৯। মলমূত্র (Urine and feces)

ছাগলের মলমূত্র বা গোবর ও চনা মূল্যবান জৈব সার। এগুলো জমির উর্বরতা বাড়ায়। কারণ, এতে পটাশ, নাইট্রোজেন ফসফরাস উল্লেখযোগ্য পরিমাণে থাকে। সবুজ সার হিসেবে গোবর ও চনা বাংলাদেশসহ ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংক ইন্দোনেশিয়া প্রভৃতি দেশে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়।

ছাগল পালনঃ ৮টি ছাগল পালনের সুবিধা ও ১০টি ছাগল পালনের উপকারিতা এবং ৫টি সাধারণ পদ্ধতি সহ। 3 ছাগল পালনঃ (৮টি) ছাগল পালনের সুবিধা ও (১০টি) ছাগল পালনের উপকারিতা এবং (৫টি) ছাগল পালনের সাধারণ পদ্ধতি সহ। কৃষি ছাগল পালন ছাগল পালন ⭐⭐⭐⭐⭐ ছাগল পালনঃ (৮টি) ছাগল পালনের সুবিধা ও (১০টি) ছাগল পালনের উপকারিতা এবং (৫টি) ছাগল পালনের সাধারণ পদ্ধতি সহ।

ছাগল অত্যন্ত উপকারী প্রাণী। এদেশের ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল উন্নত জাতের। এরা আকারে ছোট। গরুর তুলনায় এদে রোগব্যাধি কম। ছাগী বছরে ২-৪টি বাচ্চা প্রসব করে। ছাগলকে ‘গরীবের গাভী’ বলা হয়। এদের দুধ ও মাংস পুষ্টিকর খাদ্য চামড়া, লোম/পশম, হাড়, রক্ত, নাড়িভুঁড়ি, মলমূত্র প্রভৃতি উপজাতদ্রব্য থেকে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা যায়। ছাগ পালন অত্যন্ত সহজ। বেকার ও ভূমিহীন লোক এবং দুস্থ মহিলারা ছাগল পালন করে সহজেই আত্বকর্মসংস্থান করতে পারেন।

Copyright Notice

কপি করা নিষিদ্ধ!