◊ ছাগল প্রজনন করতে কোন প্রজাতির সঙ্গে ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের ক্রস করানো উচিত? যাতে করে খুব সহজেই ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের মধ্যে বাচ্চা বড় হতে পারে এবং খুব সহজেই সেটাকে ডেলিভারি করতে পারে এবং প্রস্রাবের পর বাচ্চাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে দুধ দিতে পারে সে সকল ব্রিড যার সঙ্গে আমরা ব্লাক বেঙ্গলকে ক্রস করাব। আজকের এই পোষ্ট এ আমারা উক্ত বিশয়ে আলোচনা করব। বিস্তারিত জানতে আমাদের সম্পূর্ণ লেখাটি পড়ুন। চলুন শুরু করা যাক আজকের আলোচনা।
◊ যে সকল বন্ধুরা ব্লাক বেঙ্গল গোট ফার্মিং শুরু করেছেন কিন্তু বারবার ভাবছেন করাবেন ব্লাক বেঙ্গলকে কোন প্রজাতির মেইল দিয়ে প্রজনন করানো যেতে পারে। দুটো আলাদা প্রজাতির ছাগলকে যদি আপনারা ক্রস ব্রিডিং করাতে চান কোন কোন দিক গুলি আমাদের জেনে রাখা অত্যন্ত জরুরী। দুটি আলাদা প্রজাতির ছাগল দিয়ে যখন আপনি প্রজনন করাবেন। আমাদের প্রথম দেখতে হবে বৈশিষ্ট্য। দুটি ব্রিডের বৈশিষ্ট্য টা দেখতে হবে এবং বিশিষ্ট যেন অনেকটা মিল থাকে।
আজকে আমরা আলোচনা করবঃ
ব্লাক বেঙ্গল + সিরহি
● ব্লাক বেঙ্গল এটি আমাদের পশ্চিমবঙ্গের একটা ব্রিড। যার উচ্চতা খুবই কম। ব্লাক বেঙ্গল এক এক বার একধিক বাচ্চা প্রসব করে থাকে এবং 14 মাসে প্রায় দুবার বাচ্চা প্রসব করে। সেই ক্ষেত্রে সিরহি এটি রাজস্থানের একটি যেটি 14 থেকে 16 মাসে বাচ্চা প্রসব করে। সিরহি ছাগলের দেখা যায় সিক্সটি পার্সেন্ট একটা করে বাচ্চা প্রসব করে এবং ফরটি পার্সেন্ট দুটো করে বাচ্চা প্রসব করে। অর্থাৎ ব্লাক বেঙ্গল এর সাথে শিরোহি ব্রিডিং করানো যেতে পারে।
● এবার ব্রিডিং করানোর পদ্ধতি নিয়ে কথা বলা যাক। যেহেতু সিরহি পাঠার তুলনায় ব্লাক বেঙ্গল এর উচ্চনা অনেক কম এজন্য যখন আপনারা যখন ব্রীডিং করাবেন ফিমেলকে কোনো উঁচু জায়গায় রাখবেন, রেখে মেইলটাকে নিচে রেখে দেবেন। এই পদ্ধতিতে তাকে ব্রিডিং করাবেন।
● অথবা দুটো গাছের মধ্যে একটা লম্বা করে বাঁশ বেধে দিবেন এবং বাশের উপর ফিমেল বা ছাগীকে উঠাবেন। উঠানোর পর ব্রিডিং করাবেন।এই দুটি পদ্ধতির মাঝে যে কোন একটি ঐ পদ্ধতিতে ব্রীডিং করাতে পারেন, না হলে কিন্তু আপনারা সঠিক ব্রিডিং করাতে পারবেন না।
● এবারে আমরা আলোচনা করব ব্ল্যাক বেঙ্গল ও শিরোহি ক্রসে কেমন বাচ্চা হবে। প্রথমে বাচ্চার কালারের বর্ণনা দিচ্ছি। মনে রাখবেন যে কোন ব্রিডের সঙ্গে যখন ক্রস করাবেন ৮০% পার্সেন্ট কালার মায়ের নিয়ে থাকে আর গ্রথ বাবার নেয়। সে ক্ষেত্রে দেখা যায় শিরোহি যেহেটু স্পোর্টস কালার। ক্রস বাচ্চাটি ব্ল্যাক বেঙ্গল ব্ল্যাক এর কালো কালার বা অন্য কোনো কালার হতে পারে। সে ক্ষেত্রে যেহেতু মায়ের কালার ব্ল্যাক, বেশির ভাগ বাচ্চা কিন্তু ব্ল্যাক কালারের বাচ্চা হবে। কিছু কিছু দেখা যাবে হয়তো মা এবং বাবার দুটো কালার মিক্স থাকবে এবং খুব কম দেখা যায় যে পুরোপুরি সিরহির মত কালারের বাচ্চা হয়।
● এবারে সিরহি ও ব্ল্যাক বেঙ্গল এর ক্রস এ জন্ম নেওয়া বাচ্চা শরীরের কিছু বর্ণনা। পা গুলো লম্বা হবে, আগের তুলনায় অনেকটা হাইট হবে লম্বা হবে, কানগুলো ঝুলে থাকবে, ব্লাক বেঙ্গলের যেরকম কান এরোপ্লেন এর মত দু সাইডে থাকে তা থঅকবে না কান একটু নিচের দিকে ঝুলে যাবে।
● এবারে গ্রোথ নিয়ে আলোচনা করা যাক। সাধারণত যদি ব্ল্যাক বেঙ্গল মা ছাগল ভালো হয় এবং সে মায়ের যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে দুধ হয় ওর একটা পাঠা বাচ্চা আপনাকে ৬ মাসে ছয় কেজি মাংস দেবে। সেই ক্ষেত্রে ওই মায়ের যদি সিরহি ও ব্ল্যাক বেঙ্গল এর ক্রসিংয়ের বাচ্চা আপনাকে ৬ মাসে ৮ থেকে ১০ কেজি মাংস দেবে অর্থাৎ প্রথমবার ব্রীডিং এই প্রায় ৪০% সিরহির যে গ্রোথ তা পাবেন।
ব্ল্যাক বেঙ্গল + বারবারি
● এবারে আমরা আলোচনা করব, ব্ল্যাক বেঙ্গল এর সঙ্গে বারবারি ছাগলের ক্রসিং নিয়ে। তুলনামূলক ভাবে দেখা যায়, সিরহির সঙ্গে ব্ল্যাক ব্যাঙ্গালের সে তুলনায় বারবারির সঙ্গে ব্ল্যাক বেঙ্গল ক্রসের বাচ্চা অনেক বেটার হয়।
● এর দুটি বৈশিষ্ট্য অনেকটাই মিল আছে যেমন ব্ল্যাক বেঙ্গল 14 মাসের বাচ্চা হয় কিন্তু বারবারির বছরে দুইবার বাচ্চা প্রসব করে। বারবারি মিডিয়াম প্রজাতির একটি ছাগল, ব্ল্যাক বেঙ্গল ছোট প্রজাতির ছাগল। এজন্য এই দুই প্রজাতির সহজেই ক্রস করানো যায়। বারবারির কান ছোট হয় আর ব্ল্যাক বেঙ্গল এর ও কান ছোট হয়। যার জন্য এই দুটো প্রজাতির অনেকটা মিল রয়েছে। ব্ল্যাক বেঙ্গল এর মাংস যে রকম সুস্বাদু, বারবারির মাংসও সুস্বাধু। তবে ব্ল্যাক বেঙ্গল এর তুলনায় বারবারই অনেক গুণে বেটার। এ জন্যই যে এদের মিল্ক প্রডাকশন ভালো, এদের শরীরে ইমুনিটি সিস্টেম সেটা অনেক ভালো এবং স্টল ফিডিংয়ের খুব সহজে বারবারি পালন করা সম্ভব।
● আজকে শিরহিকে যখন আপনি স্টল ফিডিংএ ফার্মিং করবেন কিছু কিছু প্রবলেম দেখা দেয়। সেটা হচ্ছে বাচ্চা হওয়ার পর শরীরের মধ্যে যে ঘাটতি সেই ঘাটতি পূরণ হতে অনেক সময় লাগে। কিন্তু বারবারির শরীরের যে ঘাটতি খুব তাড়াতাড়ি রিকভার করে নেয় এবং দ্বিতীয়বার তুলনামূলকভাবে তাড়াতাড়ি হিটে আসে।
● আমরা যদি ব্ল্যাক বেঙ্গল এর সঙ্গে বারবারি এর ক্রস করাযই তো অনেক বেটার। যেসব জায়গায় বড় ব্রিড এর প্রচলন আছে সেসব জায়গায় সিরহির সঙ্গে ব্ল্যাক বেঙ্গল ক্রস করাতে পারেন আর যেসব জায়গায় বড় ব্রিড এর চাহিদাও কম সেখানে বারবারির সঙ্গে ব্ল্যাক বেঙ্গল ক্রস করাবেন। তাহলে খুব ভালো রেজাল্ট পাবেন।
ব্ল্যাক বেঙ্গল + বিটল বা অন্যন্য
● এছাড়া অন্যান্য প্রজাতির সঙ্গেও করাতে পারেন তবে একটা কথা মনে রাখবেন দুটো প্রজাতিকে যখন আপনি শংকর প্রজনন করাবেন দুটো প্রজাতির বৈশিষ্ট্যের মিল খুঁজবেন যদি মিল থাকে তবেই করাবেন। না হলে জটিল সমস্যা হতে পারে।
● যেমন আজকে যদি আপনি ব্ল্যাক বেঙ্গল কে বিটেল এর সাথে ক্রস করান তো কি কি সমস্যা আসতে পারে? বিটেল প্রথম 24 মাসে উপযুক্ত হয় বলতে দুবছর। এবারে ক্রস ব্রিডিং করানোর পর যে বাচ্চা হবে সেটাও যদি ফিমেল বাচ্চা হয় এরও কিন্তু তখন সময় লেগে যাবে প্রায় 14 মাস প্রথম উপযুক্ত হতে প্রজননের জন্য। যে জায়গায় একটা ব্ল্যাক বেঙ্গল বাচ্চা 10 মাসে উপযুক্ত হয় ব্ল্যাক বেঙ্গলকে বিটলের সাথে প্রজনন করালে তখন 14 মাস লাগবে প্রথম প্রজনন উপযুক্ত হতে। যেমন ব্ল্যাক বেঙ্গল ১৪ মাসে দুবার বাচ্চা দিত সে ক্ষমতাটা আর তার থাকবে না তখন দেখবেন 18 থেকে 20 মাসে দুবার বাচ্চা প্রসব করাবে।
● এজন্য যেকোনো দুটি প্রজাতির যখন শংকর প্রজনন করাবেন তখন উভয়ের বৈশিষ্টের মিল দেখবেন। এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের প্রজাতির সঙ্গে মানুষ করে ব্রিডিং কড়ায় বা এর উপর অনেকই অনেক এর ওপর ভিডিও বানিয়েছে সেসব এর প্র্যাকটিক্যাল এর কোনো প্রমাণ নেই। সেটা আপনারা নিজেরাও বুঝতে পারবেন যখন প্র্যাকটিক্যালে শংকর প্রজনন করাবেন।
সারকথা
● আজকে আমাদের এই পোষ্টে যেটা আলোচনা করা হল তা হলো সিরহির সঙ্গে ব্ল্যাক বেঙ্গল এবং বারবারির সঙ্গে ব্ল্যাক বেঙ্গল। এগুলোর প্র্যাকটিক্যাল অনেক বার হয়ে যাচ্ছে। আমাদের ফার্মে আমাদের যত প্রজনন কেন্দ্র আছে এর রেজাল্ট কিন্তু প্যাকটিকেল বলা হচ্ছে। অতএব দুটো প্রজাতির শংকর প্রজনন করালে একটু দেখে শুনে করাবেন যেন ভবিষ্যতে কোন প্রবলেম না হয়। যখন ক্রস ব্রিডিং করাবেন আরেকটা জিনিস লক্ষ্য রাখবেন ফিমেইল টা থাকবে ব্লাক বেঙ্গলের তার জন্য আগেই দুই থেকে তিনবার বাচ্চা হয়ে গেছে এরকম ব্ল্যাক বেঙ্গল নেবেন এবং তার শরীর স্বাস্থ্য পেট যেন বড় থাকে।
● ব্ল্যাক বেঙ্গল এর ইউট্রাস যদি ছোট হয় যখনই আপনার সংকর প্রজনন করাবেন যেহেতু এর ভ্রূণের বৃদ্ধি বেশি বাচ্চাটা অনেক বড় হয় সেক্ষেত্রে তার ইউট্রাস এর মধ্যে জায়গা কম থাকার জন্য বাচ্চার সেরকমভাবে বাড়তে পারবে না। যদিওবা বাচ্চা বৃদ্ধি পেলেও তাকে প্রসব করাতে খুব কষ্ট হবে। প্রসবের সময় বিভিন্ন ধরনের সমস্যা আসতে পারে। তারা ইউট্রাস বেরিয়ে আসতে পারে বা তার ভেজাইনা বেরিয়ে আসতে পারে সেখান থেকে বিভিন্ন নতুন সমস্যা আসতে পারে।
◊ বন্ধুরা কেমন লাগলো আমাদের আজকের এই পোষ্ট? যদি ভালো লেগে থাকে অবশ্যই কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাবেন আর যারা আমাদের চ্যানেলে নতুন যদি এই ধরনের পোষ্ট পেতে অবশ্যই আমাদের ফেসবুক পেজকে লাইক করবেন আমাদের এই ব্লগে কেবলমাত্র ফার্মিং রিলেটেড আলোচনা নিয়ে আসা হয় আজকের আলোচনা শেষ করে দিচ্ছি দেখা হবে পরবর্তী পোষ্টে সকলে ভাল থাকুন সুস্থ থাকুন খামারিয়ান এর সাথেই থাকুন। মূল আলোচনাটি সংগ্রহিত।