Skip to content

 

ছাত্রদের জন্য মোটিভেশনাল কথা

বিষয়: ছাত্রদের জন্য মোটিভেশনাল কথা।
হ্যাশট্যাগ: # ছাত্রদের জন্য মোটিভেশনাল কথা।

ছাত্রজীবনে অধ্যাবসায়ের গুরুত্ব অনেক।

ধৈর্য ধরে কঠিন অধ্যাবসায় করলে যে কোন খারাপ ছাত্রই কালক্রমে পরিণত হতে পারে আকাংক্ষিত ভাল ছাত্র হিসেবে।

ছাত্রজীবনে সবার আগে অর্জন করতে হবে পবিত্রতা, ধৈর্য ও অধ্যাবসায়।

পবিত্রতার অর্থ সব রকমের মলিনতা থেকে মুক্তি। চঞ্চলতা ঈর্ষা, আলস্য ও তীব্র আসক্তি দূর করলে তবেই মন পবিত্র হয়। চঞ্চলতা মানে একাগ্রতার অভাব। ফালুক ফুলুক করা। কোন কিছুই সিরিয়াস ভাবে না নেওয়া এগুলো চঞ্চলতার লক্ষণ।

ঈর্ষার কথা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না।

আমরা সবাই কম বেশী ঈর্ষাপরায়ণ এবং কম বেশী অন্যের ঈর্ষার শিকার। ঈর্ষা থেকেই আত্মবিশ্বাসের অভাব ঘটে। ও কয়েকটি পরীক্ষায় লেটার পেয়েছে, কারণ ওর বাবার টাকা আছে। গাদা গাদা প্রাইভেট টিউটর রেখেছে- কোচিং করেছে। সুতরাং পরীক্ষায় সে ভাল করতেই পারে- এই ধরনের চিন্তাই ঈর্ষা। আর এক কথা যত আমি ভাবব ততই আমার কাজেকর্মে উৎসাহ কমতে থাকবে।

কারণ ঈর্ষাপরায়ণ হওয়া মানেই নিজেই আগে ভাগ্যে পরাজয় স্বীকার করে নেওয়া।

ঈর্ষাকে জয় করতে গেলে সমস্ত মনোযোগ অন্যের দিকে না দিয়ে নিজের দিকে দিতে হবে।

আমরা ইংরেজদের ঈর্ষা করি। ওরা শোষণকারি, বেনিয়া, সাম্রাজ্যবাদী কতকিছু বলে ওদেরকে গালি দিই। আবার ঈর্ষাকাতর হয়ে ওদের মত হবার জন্য ওদের সাজপোশাক, সমাজ ব্যবস্থার নকল করি। ভাবি অনুকরণ করে সাহেব হলেই ওদের সমকক্ষ হবো। কিন্তু ওদের চরিত্রের নানা ইতিবাচক দিকগুলি কখনও গ্রহণ করার চেষ্টা করিনা।

তোমাদের মধ্যে এমন অনেকেই আছে যারা ভাল ছাত্র বা ছাত্রীদের প্রতি গভীর বিদ্বেষপূর্ণ ঈর্ষা পোষণ করে। ভাবে, একমাত্র বড়োলোকের সন্তান বলেই তারা এত ভাল ফলাফল অর্জন করতে পেরেছে।

কিন্তু বাস্তবে সবাই তাই নয়।

এমনও দেখা গেছে তোমাদের মধ্যেই এমন সফল ছাত্র আছে যারা নিজের পরিবারের উপর নির্ভরশীল না হয়ে নিজেদের পরিশ্রমে, উদযোগে ভাল ছাত্র হবার সাধনা করে চলেছে।

এমন অনেক ছাত্র বা ছাত্রীর খোঁজ আমি দিতে পারি- যারা একবেলা নিজেদের শ্রম দিয়ে উপার্জন করে অপর বেলায় পড়াশোনা করে।

আমাদের বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাতে এমন কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান আছে যেখানে শ্রমজীবী শিশুদের পড়াশোনা করানো হয়। এইসব প্রতিষ্ঠানে সেইসব ছেলেমেয়েরা পড়তে আসে- যারা সারাবেলা অন্যের বাড়িতে কাজ করে। এবং দিনের একটি নির্দিষ্ট সময়ে তারা এখানে পড়তে আসে।

উক্ত প্রতিষ্ঠানের এমন অনেক ছাত্র বা ছাত্রীকে আমি তোমাদের সামনে প্রমাণ হিসেবে হাজির করতে পারি- যারা এখন এক একজন সফল ব্যক্তিত্ব।

এগুলো ঘটেছে প্রবল আত্মবিশ্বাস আর অধ্যাবসায়ের জোরে।

তাদের লক্ষ্য ছিল তারা তাদের বর্তমান অবস্থাকে অতিক্রম করে সফল মানুষ হিসেবে সমাজে আত্মপ্রকাশ করবে।

এদের মধ্যে যে সবাই তা করতে পেরেছে তা কিন্তু নয়।

তবে যদি তাদের মধ্যেকার অর্ধেক অংশও এই কাজে সফল হয়- সেটাও কি সমাজ বা সংসারের জন্য বিশাল পাওয়া নয়?

সঠিকভাবে ভাল ছাত্র বা ছাত্রী হতে হলে তোমাকে অধ্যাবসায়ী হতে হবে।

ধৈর্য ধারণ করতে হবে।

সফলতা একবারে আসে না। ভাল কোন কাজ করতে গেলে বার বার তোমাকে হোঁচট খেতে হতে পারে।

প্রকৃত অধ্যাবসায়ের অর্থ হলো— কোন কাজ সম্পন্ন করতে গিয়ে কখনও কখনও মানুষকে বিফলও হতে হয়। এই বিফলতাকে অগ্রাহ্য করে সফলতার আশায় আবার সেই কাজে নিজেকে নিয়োজিত করার নামই অধ্যাবসায়।

নিজের ভেতর প্রবল ইচ্ছা বা আকাঙ্ক্ষার সাথে সাথে দৃঢ় মানসিক শক্তি বা মনের প্রকৃত গতি সঞ্চয় করে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াটাই আসল অধ্যাবসায়ীর লক্ষণ।

অনেক প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিদের জীবনী থেকে আমরা জেনেছি একটা ইংরেজি বাক্য- Failures are the pillars of success অর্থাৎ অসফলতা হচ্ছে সফলতার স্তম্ভস্বরূপ।

সুতরাং তুমি একবার অসফল হলেই যে বারবার তাই ঘটবে তা কিন্তু মোটেই নয়। বরং তুমি যদি প্রবল আত্মবিশ্বাসের সাথে অধ্যাবসায়ের মাধ্যমে বারবার চেষ্টা করে যাও— তাহলে দেখবে একদিন না একদিন তুমি সফল হবেই হবে।

একটা কথা মনে রাখতে হবে তোমাকে কোন মানুষই রাতারাতি সফল হতে পারে না। প্রকৃত অর্থে সফল হতে হলে তাকে স্বীকার করতে হয় নানা ত্যাগ আর শ্রম।

তুমি যদি একবার পরীক্ষায় ফেল করে মনে করো তোমার দ্বারা আর ভাল ফল আশা করা বৃথা। তাহলে বলবো তুমি সত্যিকার অর্থেই অসফল ব্যক্তি।

তোমার ভুলে যাওয়া উচিত নয়, যে কোন মানুষ যদি উদ্যম না হারিয়ে বারবার মানসিক শক্তি দিয়ে গভীর আত্মপ্রত্যয়ের সাথে কাজ করে যায় তাহলে সফলতা সে অর্জন করবেই করবে।

ইতিহাসের পাতা উল্টালে আমরা এমন অনেক অসফল ব্যক্তিত্বের সন্ধান পাই— যারা একবার অসফল হয়েই সবকিছু বিসর্জন দেননি। বরং বারবার চেষ্টা করে চূড়ান্ত পরিণতিতে সফল হতে পেরেছেন।

রবার্ট ব্রুশ ইংল্যান্ডের সাথে যুদ্ধ করেছিলেন পরপর ছয়বার। এই ছয়বারই তিনি পরাজিত হয়েছিলেন। লোকবল, অর্থবল অনেককিছুই তিনি হারিয়েছেন এই ছয়বারের যুদ্ধে। কিন্তু তিনি হাল ছাড়েন নি। কঠোর অধ্যাবসায়ের মাধ্যমে অনেক ত্যাগ স্বীকার করেও যুদ্ধ চালিয়ে গিয়েছেন। সাতবারের বেলায় ঠিকই তিনি জয়ী হয়েছিলেন।

মোঘল সম্রাট বাবর একবার এক যুদ্ধে পরাজিত হয়ে হতোদ্যম অবস্থায় যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালিয়ে এক গুহায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। সেইসময় তিনি দেখেছিলেন একটি পিঁপড়া গুহার পাথুরে দেয়াল বেয়ে উপরে ওঠার চেষ্টা করছে, কিন্তু পারছে না। কৌতূহলী বাবর লক্ষ্য করলেন, পিঁপড়াটি ঊনষাটবার উঠতে গিয়ে অকৃতকার্য হলো এবং ষাটবারের বেলায় ঠিকই উঠে পড়তে পারল। দৃশ্যটি বাবরের মনে গভীরভাবে রেখাপাত করল। তিনি ভাবলেন, একটি ক্ষুদ্র প্রাণী পিঁপড়া যদি ঊনষাটবার অকৃতকার্য হবার মতো শক্তি রেখে পরবর্তীতে ষাটবারের মতো শক্তি সঞ্চয় করতে পারে তাহলে আমি কেন পারব না। সত্যি কথা বলতে কী এই দৃশ্য দেখেই সম্রাট বাবরের মনে প্রবল উদ্দিপনা জাগ্রত হল। তিনি উঠে দাঁড়ালেন। আবার যুদ্ধে যোগদান করলেন। এবার তাঁর জয় ঠিকই হলো।

বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক ডাঃ লুৎফর রহমান বলেছেন, “গিরিশির হতে যখন পাহাড় খন্ড নামতে থাকে, তখন তাকে প্রথমটা দেখে মনে হয় এই নগন্য পাহাড়ের টুকরোটা কিছুই নয়। ক্রমে যখন সে নীচে নেমে আসে, তখন তার শক্তি হয় অতি ভয়ানক। সম্মুখে যা কিছু পায়— ভেঙ্গে চূর্ণ করে নিয়ে যায়।

আমার বাড়ির সামনে একটি পানের দোকান আছে। আমার ঘরের জানালা দিয়ে সেই দোকানটি দেখা যায়। আমি রোজই দেখি একটি লোক সামান্য একটু জায়গার মধ্যে পা মুড়ে ঘন্টার পর ঘন্টা, দিনের পর দিন বসে পান বিক্রি করছে।

পৃথিবীতে কত কী ঘটে যাচ্ছে। তারই চারপাশে এ শহরে হাজার হাজার মানুষ সিনেমা থিয়েটারে যাচ্ছে, নানা ধরনের প্রমোদখানা থেকে বেরুচ্ছে। খেলা দেখে ফিরছে, বাড়ি গিয়ে তারা চা থেতে খেতে টিভির সামনে বসবে। কিন্তু এই পানওয়ালা হাঁটু মুড়ে বসে তেমনি রাত বারোটা পর্যন্ত এভাবে পান সেজে যাবে। ‘খদ্দের এলো তো এলো। না এলো তো না এলো। ধৈর্য ও নিষ্ঠা কী আমরা এদের কাছ থেকে শিখতে পারি না?

ধৈর্য ও অধ্যাবসায় ছাড়া কোন কিছু লাভ করা যায় না। একটা সাধারণ বাড়িও দেড় বছরের আগে হয় না

তাজমহল গড়তে ২২ বছর লেগেছিল। একজন মহাপুরুষের আগমনের জন্য কত প্রজন্ম অপেক্ষা করতে হয়।

অনেক অকৃতকার্য ছাত্র-ছাত্রী আম’কে প্রশ্ন করতে পারো, ধৈর্য তো

ধরলাম, কিন্তু যদি শেষ পর্যন্ত ফল না পাই।

নাও পেতে পারো। কিন্তু ধৈর্য ধরলে ফল পাওয়ার শতকরা ৭৫ ভাগ আশা থাকে।

তবে সেই ধৈর্যের সাথে যুক্ত করতে হয় আত্মবিশ্বাসের সাথে পথ চলা।

শুধু আত্মবিশ্বাস থাকলে যেমন কাজ হবে না। তেমনি শুধু ধৈর্য ধরে ঘরে বসে থাকলেও কাজ হবে না।

কোন কাজের মধ্যে ধৈর্য না ধরলে পাওয়ার আশা শূন্য।

ছিপ ফেলে বসে থাকলে মাছ পেলেও পেতে পারো। কিন্তু ছিপ না ফেললে মাছ পাবার আশা করবে কী করে?

শিক্ষাজীবন-শেষে একজন ডাক্তার বা উকিল হলেই যে পসার হবে মানে নেই। কিন্তু ডাক্তারি বা ওকালতি পাশ করে প্র্যাকটিস না করা পর্যন্ত তুমি তো বুঝতে পারছো না তোমার পসার হবে কি হবে না।

ধৈর্য আশার সন্তান। আশাবাদী না হলে বিশ্বাসী ধৈর্য ধরা যায় না। আর একমাত্র আত্মবিশ্বাসী ছাড়া আশ্বাদী হওয়া যায় না।

যারা নিজের ওপরেই আশা নেই সে অন্য কোন বস্তুর ওপর আশা করবে কী ভাবে?

অসাধারণ মানুষ বলে যাঁরা পরিচিত তাঁদের সঙ্গে সাধারণ মানুষের বিদ্যাবুদ্ধির যে খুব ফারাক তা নয়, তফাৎটা হল, বিরাট লোকদের দৃঢ়সঙ্কল্পের পরিধিটা বিরাট আর সাধারণ লোকের দৃঢ় সঙ্কল্পের পরিধি ছোট।

সাধারণ মানুষের ভাবনাটাও সাধারণ আর বিরাট মানুষের ভাবনাটাই বিরাট।

যা হারিয়েছো তার জন্য অনর্থক শোক না করে যেটুকু রয়েছে সেটুকুর দিকেই তাকাও। আগুন লেগে যাদের বাড়ি পুড়ে যায় তারা কতখানি ক্ষতি হয়েছে তার হিসাব করতে বসে না, কতটুকু বাঁচানো যায় তার চেষ্টা করে। তারপর আত্মবিশ্বাস দিয়ে পুনরায় সেগুলি গড়ে তোলার চেষ্টা করে।

উপরের এইসব উদ্ধৃতি দেখে নিশ্চয় বুঝতে পারছো- তোমার মধ্যেই এক অপরিশীম শক্তি অবদমিত হয়ে আছে। যে শক্তির সাহায্যে অকৃতকার্যদের তালিকা থেকে তুমি নিজেকে অনায়াসে কৃতকার্যদের তালিকায় উজ্জ্বল করে তুলতে পার।

প্রতিভাধর যে মানুষকেই তুমি দেখবে- তাদের প্রতিভার সাথে কঠিন অধ্যাবসায় এবং গভীর আত্মবিশ্বাসও যুক্ত হয়ে আছে। এই আপাত শক্তির সাহায্য ছাড়া সে কিছুতেই উপরে উঠতে পারবে না। দরিদ্রের ঘরে জন্ম নিয়েও সফলতার শিখরে উঠে আসার নিদর্শন আছে অনেক। নিজের অবস্থার উন্নতির জন্য চেষ্টা করাটাই হচ্ছে সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ।

আমি স্বীকার করি, পড়াশোনাটা একটা কঠিন মানসিক এবং কায়িক শ্রমের কাজ। কিন্তু তাই বলে এই শ্রমকে অস্বীকার করা তো যাবে না। কিন্তু তাই বলে, পরিশ্রমের ভয়ে পিছিয়ে গেলে তো চলবে না।

ইংরেজিতে একটা কথা আছে, God helps those who help themselves. অর্থাৎ সৃষ্টিকর্তা তাকেই সাহায্য করেন- যে নিজেকে সাহায্য করে।

সুতরাং তোমাকে ঈর্ষা ত্যাগ করে সুপরিমিত মাত্রার ধৈর্য ধারণের মাধ্যমে আত্মবিশ্বাসের সাথে অধ্যাবসায়ী হতে হবে। তবেই তুমি তোমার ইপ্সিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবে।

সবসময় মনে রাখবে, যে যত বেশি আত্মবিশ্বাসী সে তত অধ্যাবসায়ী। কোন কাজের দুরূহতার কথা চিন্তা করে সেই কাজ পরিহার করবে না। তোমার লক্ষ্যে তোমাকে পৌঁছাতেই হবে। সুতরাং এই পথে যে বাধাই আসুক না কেন- সেটাকে জয় করতে হবে তোমাকেই।

সমাপ্ত: ছাত্রদের জন্য মোটিভেশনাল কথা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Copyright Notice

কপি করা নিষিদ্ধ!