বিষয়: জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ইসলাম।
হ্যাশট্যাগ: #জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ইসলাম।
জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ইসলাম: জন্মনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা সম্পর্কে মাসআলা মাসায়েল
জন্মনিয়ন্ত্রণের জন্য প্রচলিত তিনটি ব্যবস্থা রয়েছে। যথাঃ
১. স্থায়ী ব্যবস্থা : যেমন পুরুষের জন্য ভ্যাসেকটমি ও মহিলাদের জন্য লাইগেশন। এ ব্যবস্থায় অপারেশনের মাধ্যমে পুরুষ বা নারীর সন্তান দেয়ার ও নেয়ার ব্যবস্থা চিরতরে বন্ধ করে দেয়া হয়।
২. মেয়াদী ব্যবস্থা : যেমন নির্ধারিত মেয়াদের জন্য ইনজেকশন, নিরাপদকাল মেনে চলা এবং আই,ইউ,ডি (এক ধরনের প্লাষ্টিক কয়েল) ব্যবহার করা ইত্যাদি।
৩. সাময়িক ব্যবস্থা : যেমন কনডম ব্যবহার করা, জন্মনিরোধক পিল/বড়ি ব্যবহার করা ইত্যাদি।
* জন্মনিয়ন্ত্রণের স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা কোন অবস্থাতেই জায়েয নয় বরং হারাম, উদ্দেশ্য বা কারণ যাই হোক না কেন। কেননা, এর মাধ্যমে আল্লাহ্র দেয়া একটা ক্ষমতা (প্রজনন ক্ষমতা)কে নষ্ট করা হয় এবং আল্লাহর সৃষ্টিকে বিকৃত করে দেয়া হয়, যা সম্পূর্ণ হারাম।
* জন্মনিয়ন্ত্রণের দ্বিতীয় পদ্ধতি (মেয়াদী ব্যবস্থা) গ্রহণ করা মাকরূহ তাহরীমী। আর মাকরূহ তাহরীমী হারামের কাছাকাছি।
* জন্মনিয়ন্ত্রণের তৃতীয় পদ্ধতি (সাময়িক ব্যবস্থা) গ্রহণের পেছনে যদি উদ্দেশ্য এই থাকে যে, এতে করে পৃথিবীর লোক সংখ্যা নিয়ন্ত্রিত থাকবে, খাদ্যের সংকট হবে না, বাসস্থানের সংকট হবে না ইত্যাদি, তাহলে এটা ঈমান বিরোধী চেতনা থেকে হওয়ার কারণে জায়েয নয়। মনে রাখতে হবে- আল্লাহ্র পরিকল্পনা সকলের পরিকল্পনার চেয়ে উত্তম, তিনি ভূত ভবিষ্যত এমনভাবে জানেন যা কেউ জানে না, তিনি সৃষ্টি করেছেন এবং সৃষ্টি জীবের রিকের দায়িত্বও গ্রহণ করেছেন।
* আর তৃতীয় পদ্ধতি যদি স্ত্রী বা সন্তানের স্বাস্থ্য রক্ষার প্রয়োজনে অভিজ্ঞ দ্বীনদার ডাক্তারের পরামর্শক্রমে গ্রহণ করা হয় তাহলে তা জায়েয।
* আর তৃতীয় পদ্ধতি যদি বিলাসিতার উদ্দেশ্যে গ্রহণ করা হয় এই ভেবে যে, সন্তান কম হলে ঝামেলা কম হবে, ছিমছাম থাকা যাবে ইত্যাদি, তাহলে স্ত্রীর অনুমতি সাপেক্ষে তা গ্রহণ করা জায়েয, তবে এটা খেলাফে আওলা বা অনুত্তম। কেননা এটা ধর্মীয় চাহিদা বিরোধী। ধর্ম চায় রাসূলের উম্মত বৃদ্ধি পাক, রাসূলের উম্মত বৃদ্ধি পেলে রাসূল (সাঃ) কিয়ামতের দিন এ নিয়ে গর্ব করবেন বলে হাদীছে উল্লেখ এসেছে।
(জন্মনিয়ন্ত্রণ সম্পর্কিত উপরোক্ত মাসায়েল মুফতী মুহাম্মদ শফী সাহেবের ফতওয়া এবং দারুল উলূম দেওবন্দ-এর স্বনামধন্য মুহাদ্দিস ও মুফতী হযরত মাওলানা সাঈদ আহমদ পালনপূরী [দামাত বারাকাতুহুম)-এর বয়ান থেকে গৃহীত।)
* উল্লেখ্য যে, হাদীছে কোন কোন সাহাবী ব্যক্তিগতভাবে অনুমতি প্রার্থনা করার পর হযরত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আযল (সঙ্গমকালে বীর্য স্ত্রী যোনির বাইরে স্খালন করা)-এর অনুমতি দিয়েছেন বলে পাওয়া যায়। তবে অনুমতি দেয়ার সময় রাসূলসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈমানও দুরস্ত করে দিয়েছেন এই বলে যে, জেনে রেখ কিয়ামত পর্যন্ত যত সন্তান দুনিয়াতে আসার তারা আসবেই। তাছাড়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ অনুমতি প্রদানের সময় এটা না করার জন্য উৎসাহিত করেছেন এই বলে যে, না করলে তোমাদের ক্ষতি কি?
* সারকথা- রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আযল (একটা সাময়িক ব্যবস্থা) সম্পর্কে অনুমতি দিয়েছেন ঈমান দুরস্ত করে- নষ্ট করে নয়, আবার তার জন্য অনুৎসাহিত করেছেন এবং এই অনুমতি প্রদান ছিল ব্যক্তিগত পর্যায়ে। এখন এই আযলের অনুমতি দেখে (যা সাময়িক ব্যবস্থা) জন্ম নিয়ন্ত্রণের স্থায়ী ব্যবস্থাকে জায়েয বলা ঠিক হবে না।
* তাছাড়া বর্তমানে প্রচলিত মেয়াদী ও সাময়িক অন্যান্য পদ্ধতিগুলোকেও এই আযলের উপর ঢালাওভাবে কেয়াছ বা অনুমান করা ঠিক নয়। কেননা বর্তমানে প্রচলিত এসব পদ্ধতিগুলোকে ব্যক্তিগত ব্যাপারে সীমাবদ্ধ রাখা হয়নি বরং তাকে সামাজিক আন্দোলনে রূপ দেয়া হয়েছে। আর বর্তমানে এর জন্য অনুৎসাহিত করা নয় বরং উৎসাহ দেয়া হচ্ছে, অধিকন্তু বাধ্যতামূলক করার চিন্তা ভাবনা চলছে।
* সর্বোপরি এসব পদ্ধতি গ্রহণের জন্য উৎসাহিত করা হচ্ছে এমন সব বক্তব্য দিয়ে যা ঈমানী চেতনা বিরোধী। অতএব দেখা গেল- হাদীছে আযলের অনুমতি দেয়া হয়েছিল যে আঙ্গিকে এবং যে মানসিকতার ভিত্তিতে, প্রচলিত জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিতে তার সম্পূর্ণ ভিন্ন আঙ্গিক ও ভিন্ন মানসিকতা গ্রহণ করা হয়েছে। তাই হাদীছের আযলের অনুমতি থেকে বর্তমানে প্রচলিত জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি সমূহকে ঢালাওভাবে অনুমোদন দেয়ার কোনই অবকাশ নেই।
সমাপ্ত: জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ইসলাম।