Skip to content

 

জীবের বংশগতিঃ ক্রোমোজোম, ডিএনএ (DNA), আরএনএ (RNA), জিন  (Gene), DNA অনুলিপন (DNA replication) এবং ডিএনএ টেস্ট।

জীবের বংশগতিঃ ক্রোমোজোম, ডিএনএ (DNA), আরএনএ (RNA), জিন (Gene), DNA অনুলিপন (DNA replication) এবং ডিএনএ টেস্ট।

জীবের বংশগতি ও বিবর্তনঃ

মানুষ, শিম্পাঞ্জি, ওরাংওটাং ও ম্যাকাক বানরের খুলির তুলনামূলক ছবি মাতা-পিতার আকৃতি ও প্রকৃতিগত বৈশিষ্ট্যাবলি বংশানুক্রমে সন্তান-সন্ততিতে সঞ্চারিত হয়। মাতাপিতা থেকে বৈশিষ্ট্য সন্তানে কীসের মাধ্যমে কীভাবে স্থানান্তরিত হয়, তা আমরা এ অধ্যায়ে জানতে পারব। এ অধ্যায়ে আরও জানতে পারব যে জীবজগতের মধ্যে বিভিন্ন শ্রেণি বর্তমান এবং তারা তাদের পূর্বপুরুষ (Ancestor) থেকে উদ্ভূত হয়ে বিবর্তন বা ক্রমবিকাশের মাধ্যমে ক্রমাগত পরিবর্তিত ও রূপান্তরিত হয়ে বর্তমান রূপ ধারণ করেছে।

জীবের বংশগতিঃ

পৃথিবীর সব জীব তার নিজস্ব চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। স্বকীয় বৈশিষ্ট্যগুলো পরবর্তী প্রচ্ছন্মে প্রায় অবিকল স্থানান্তর ও পরিস্ফুটিত হয়। পৃথিবীর সব জীবের ক্ষেত্রেই এই প্রাকৃতিক নিয়ম প্রযোজ্য। তাই আমরা ধানগাছের বীজ থেকে ধানগাছ, আমের বীজ থেকে আমগাছ, পাটের বীজ থেকে পাটগাছ জন্মাতে দেখি। এভাবেই বংশানুক্রমে প্রজাতির বৈশিষ্ট্য বজায় থাকে।

পিতামাতার বৈশিষ্ট্যগুলো বংশানুক্রমে সন্তান সন্ততির দেহে সঞ্চারিত হওয়ার প্রক্রিয়াই হলো “বংশগতি” (Heredity)। বংশগতি সম্বন্ধে বিশদ আলোচনা ও গবেষণা করা হয় বংশগতিবিদ্যা (Genetics) নামের জীববিজ্ঞানের বিশেষ শাখায়।

চিত্রঃ নিউক্লিয়াসের ভিতরে ক্রোমোজোমের অবস্থান

চিত্রঃ নিউক্লিয়াসের ভিতরে ক্রোমোজোমের অবস্থান

a) ক্রোমোজোম (Chromosome)

বংশগতির প্রধান উপাদান হচ্ছে ক্রোমোচ্ছোম। তোমরা জান, এটি নিউক্লিয়াসের নিউক্লিওপ্লাজমে বিস্তৃত এবং সূত্রাকার ক্রোমাটিন দিয়ে গঠিত। বিজ্ঞানী Strasburger (1875) প্রথম ক্রোমোল্লোম আবিষ্কার করেন। প্রজাতির বৈশিষ্ট্যভেদে কোষে এর ডিপ্লয়েড (দুই সেট ক্রোমোল্লোম, যার একসেট পিতা থেকে আসে এবং আর একসেট মাতা থেকে আসে) সংখ্যা 2 হতে 1600 পর্যন্ত হতে পারে। একটি ক্রোমোজোম দৈর্ঘ্যে সাধারণত 3.5 থেকে 30.0 মাইরুন এবং প্রস্থে 0.2 থেকে 2.0 মাইক্লন হয়ে থাকে। (1 মাইরুন = 1/1000 মিমি)।

ক্রোমোজোমের কাজ হলো মাতাপিতা থেকে জিন (যা জীবের বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণ করে) সন্তান সন্ততিতে বহন করে নিয়ে যাওয়া। মানুষের চোখের রং, চুলের প্রকৃতি, চামড়ার পঠন ইত্যাদি বৈশিষ্ট্য ক্রোমোজোম কর্তৃক বাহিত হয়ে বংশগতির ধারা অক্ষুণ্ণ রাখে। এ কারণে ক্রোমোজোমকে বংশগতির ভৌতভিত্তি (Physical basis of heredity) বলে আখ্যায়িত করা হয়।

b) ডিএনএ (DNA)

ক্রোমোজোমের প্রধান উপাদান ডিএনএ হলো ডিঅক্সিরাইবো নিউক্লিক এসিড (Deoxyribo Nucleic Acid)। এটি সাধারণত দুই সূত্রবিশিষ্ট পলিনিউক্লিওটাইডের সর্পিলাকার গঠন। একটি সূত্র অন্যটির পরিপুরক। এতে পাঁচ কার্বনযুক্ত শর্করা, নাইট্রোজেনঘটিত বেস বা ক্ষার (এডিনিন, গুরানিন, সাইটোসিন ও থাইমিন) এবং অজৈব ফসফেট থাকে। এই তিনটি উপাদানকে একত্রে নিউক্লিওটাইড’ বলে।

DNA ক্রোমোজোমের স্থায়ী পদার্থ। মার্কিন বিজ্ঞানী Watson এবং ইংরেজ বিজ্ঞানী Crick 1953 সালে প্রথম DNA অণুর ডাবল হেলিক্স (Double helix) বা দ্বি-সূখী কাঠামোর বর্ণনা দেন এবং এ কাজের জন্য তাঁরা নোবেল পুরস্কার পান।

নাইট্রোজেন বেসগুলো দুধরনের, পিউরিন এবং পাইরিমিডিন। এডিনিন (A) ও গুয়ানিন (G) বেস হলো পিউরিন এবং সাইটোসিন (c) ও থায়ামিন (T) বেস হলো পাইরিমিডিন। একটি সূত্রের এডিনিন (A) অন্য সূত্রের খারামিন (T)-এর সাথে দুটি হাইড্রোজেন বন্ড দিয়ে যুক্ত (A=T) থাকে এবং একটি সূত্রের গুয়ানিন (G), অন্য সূত্রের সাইটোসিনের (C) সাথে তিনটি হাইড্রোজেন বন্ড দিয়ে যুক্ত (G=C) থাকে। অর্থাৎ এই বন্ধন সর্বদা একটি পিউরিন এবং একটি পাইরিমিডিনের মধ্যে হয়ে থাকে।

সুতরাং দুটি সূত্রের একটি অন্যটির পরিপূরক কিন্তু এক রকম নয়। হেলিক্সের প্রতিটি পূর্ণ ঘূর্ণন 34 A (Angstrom) দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট এবং একটি পূর্ণ ঘূর্ণনের মধ্যে 10টি নিউক্লিওটাইড থাকে। সুতরাং পার্শ্ববর্তী দুটি নিউক্লিওটাইডের দূরত্ব (উপর থেকে নিচে) 3.4A (1A10 মিটার)।

চিত্রঃ ডিএনএ

চিত্রঃ ডিএনএ

DNA-এর দুটি পলিনিউক্লিওটাইড সূত্র বিপরীতভাবে (Antiparallel) অবস্থান করে। অনেকটা প্যাঁচানো সিঁড়ির ধাপের মতো, ক্ষারগুলো পারিভাবে (Flat) প্রধান অক্ষের সাথে লম্বভাবে অবস্থান করে। অর্থাৎ DNA অণুর বাইরের দিকের দণ্ড দুটি (প্রধান অক্ষ) পর পর সুপার এবং ফসফেট দিয়ে গঠিত এবং এদের ভিতরের দিকে N2 বেস অবস্থান করে। প্রকৃত কোষেও DNA সূক্ষ্ম সুতার মতো কিন্তু আদি কোষের DNA সাধারণত গোলাকার হয়ে থাকে এবং এর দৈর্ঘ্য কয়েক মাইক্রন থেকে কয়েক সেন্টিমিটার পর্যন্ত হতে পারে। এটি হাজার হাজার নিউক্লিওটাইডের বা নিউক্লিক এসিডের সমন্বয়ে গঠিত।

DNA ডবল হেলিক্সের ব্যাস সর্বত্র 20Å। DNA ক্রোমোজোমের প্রধান উপাদান এবং বংশগতির রাসায়নিক ভিত্তি (Chemical basis of heredity)। DNA-ই জীবের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের প্রকৃত ধারক এবং বাহক, যা জীবের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য সরাসরি বহন করে মাতাপিতা থেকে তাদের বংশধরে নিয়ে যায়।

(c) আরএনএ (RNA)

RNA হলো রাইবোনিউক্লিক এসিড (Ribonucleic Acid)। অধিকাংশ RNA-তে একটি পলিউক্লিওটাইডের সূত্র থাকে। এতে পাঁচ কার্বনবিশিষ্ট রাইবোজ শর্করা, অজৈব ফসফেট এবং নাইট্রোজেন বেস (এডিনিন, গুয়ানিন, সাইটোসিন এবং থায়ামিনের পরিবর্তে ইউরাসিল) থাকে।

RNA ভাইরাসের ক্রোমোজোমে স্থায়ী উপাদান হিসেবে RNA পাওয়া যায়। কিন্তু কিছুসংখ্যক ভাইরাসের ক্ষেত্রে (যেমন— TMV, Tobacco Mosaic Virus) DNA অনুপস্থিত। অর্থাৎ যে সমস্ত ভাইরাস DNA দিয়ে গঠিত নয় তাদের নিউক্লিক এসিড হিসেবে থাকে RNA। এসব ক্ষেত্রে RNA-ই বংশপতির বস্তু হিসেবে কাজ করে।

চিত্রঃ আরএনএ

চিত্রঃ আরএনএ

(d) জিন  (Gene)

জীবের সব দৃশ্য এবং অদৃশ্যমান লক্ষণ বা বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণকারী এককের নাম জিন। এর অবস্থান জীবের ক্রোমোজোমে। ক্রোমাজোমের যে স্থানে জিন অবস্থান করে, তাকে লোকাস (Locus) বলে। সাধারণত একটি বৈশিষ্ট্যের জন্য একটি নির্দিষ্ট জিন থাকে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে একাধিক জিন মিলিতভাবে একটি বৈশিষ্ট্য প্রকাশে সহায়তা করে। আবার কোনো কোনো সময় একটি জিন একাধিক বৈশিষ্ট্যও নিয়ন্ত্রণ করে।

বিভিন্ন গবেষণার তত্ত্ব থেকে জানা গেছে, জিনই বংশগতির নিয়ন্ত্রক। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে দ্বিসূত্রক DNA নিজের হুবহু অনুলিপি করতে পারে। আবার, DNA থেকে প্রয়োজনীয় সংকেতের অনুলিপি নিয়ে RNA সাইটোপ্লাজমের রাইবোজোমে আসে এবং সেই সংকেত অনুসারে সেখানে প্রোটিন তৈরি হয়। সুকেন্দ্রিক কোষের ক্ষেত্রে সেই প্রোটিন প্রথমে জমা হয় এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলামে। সেখান থেকে গলজি বস্তু এবং ভেসিকলগুলোর দ্বারা সেই প্রোটিনে নানাবিধ পরিবর্তন হয় এবং তা উপযুক্ত স্থানে বাহিত হয়। প্রাককেন্দ্রিক কোষে অবশ্য সরাসরি প্রোটিনগুলো গন্তব্যে পৌঁছায়। প্রোটিনগুলোই মূলত নির্ধারণ করে প্রাণরাসায়নিক বিক্রিয়াগুলোর গতি-প্রকৃতি এবং তা থেকেই পরিবেশের সাপেক্ষে নির্ধারিত হয় জীবের বৈশিষ্ট্যাবলি। কোনো জীবের গঠন থেকে আচরণ পর্যন্ত সবই এই বৈশিষ্ট্যগুলোর আওতায় পড়ে। তাই বলা যায়;

DNA → RNA → প্রোটিন → বৈশিষ্ট্য।

বিভিন্ন জীবে জিনের সংখ্যা এক নয়। তবে একই প্রকৃতির জীবে তা প্রায় সবসময় একই থাকে। জিনগুলো সাধারণ নিয়মে ক্রোমোজোমের DNA অনুসূত্রের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত পৃথক ও রৈখিকভাবে পরপর সাজানো থাকে।

একই জিনের বিভিন্ন সংস্করণ একই ধরনের বৈশিষ্ট্যকে বিভিন্ন রূপে বা মাত্রায় প্রকাশ করতে পারে। যেমন: মটরশুঁটির উচ্চতা নির্ধারিত জিনের লম্বা সংস্করণটি হলো T এবং খাটো সংস্করণটি হলো। যখন এ দুটি একত্রে থাকে (Tt), তখন লম্বা হওয়ার বৈশিষ্ট্যটিই প্রকাশ পায়। তাই t-এর সাপেক্ষে T কে প্রকট (dominant) বলে এবং T-এর সাপেক্ষেt কে বলে প্রচ্ছন্ন (recessive)। যখন কোনো জীবে জিনের দুটি সংস্করণই প্রচ্ছন্ন হয়, কেবল তখনই প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্যটি প্রকাশ পায়। যেমন: শুধু tt হলেই মটরশুঁটি খাটো হয়। একই জিনিসের বিভিন্ন সংস্করণকে সেই জিসের আ্যালির বল। এখানে T এবং t মটরশুঁটির উচ্চতা নির্ধারণকারী জিনের দুটি আ্যলিল নির্দেশ করছে।

গ্রেগর জোহান মেন্ডেল 1866 সালে মটরশুঁটি নিয়ে গবেষণাকালে বংশগতির ধারক ও বাহকরূপে যে ফ্যাক্টরের (factor) কথা উল্লেখ করেছিলেন সেটি আজ ‘জিন’ রূপে পরিচিত হয়েছে। গ্রেগর জোহান মেন্ডেলকে বংশগতিবিদ্যার জনক বলা হয়।

মাতা-পিতার বৈশিষ্ট্য উদ্ভিদের বংশধরদের মধ্যে কীভাবে প্রকাশ পায়, সে সম্বন্ধে বিজ্ঞানী গ্রেগর জোহান মেন্ডেল মটর গাছ নিয়ে পরীক্ষার মাধ্যমে মূল্যবান তত্ত্ব আবিষ্কার করেছিলেন।

মেন্ডেল একটি লম্বা ও একটি খাটো মটর গাছ নিয়ে কৃত্রিম উপায়ে লম্বা গাছের পরাগরেণু খাটো গাছের গর্ভমুণ্ডে এবং খাটো গাছের পরাগরেণু লম্বা গাছের গর্ভমুণ্ডে স্থানান্তর করে এদের প্রজনন ঘটান। অন্য কোনো পরাগরেণু যাতে আসতে না পারে, সেজন্য তিনি যথাযথ ব্যবস্থা নেন। যেহেতু লম্বা গাছের জিন প্রকট, তাই এ থেকে উৎপন্ন বীজ বুনে দেখা গেল সব গাছই লম্বা হয়েছে; কোনো খাটো গাছ নেই। এই গাছগুলোতে কোনো খাটো গাছের জিন বাহক হিসেবে রয়ে গেছে কি না পরীক্ষা করার জন্য এদের একটি গাছকে স্বপরাপায়নের মাধ্যমে প্রজনন ঘটিয়ে তা থেকে উৎপন্ন বীজ বুনে দেখা গেল যে এতে লম্বা ও খাটো দুরকমের গাছই রয়েছে, যার মধ্যে তিন ভাগ গাছ লম্বা এবং এক ভাপ গাছ খাটো।

চিত্রঃ মেন্ডেল পরীক্ষা

চিত্রঃ মেন্ডেল পরীক্ষা

মেন্ডেলের এই তত্ত্ব উদ্ভিদ ও প্রাণীর সুপ্রজননে প্রয়োগ করা হয়। কাঙ্ক্ষিত বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন উদ্ভিদ বা প্রাণীর মধ্যে নিয়ন্ত্রিত যৌন প্রজনন ঘটিয়ে বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন বংশধর সৃষ্টি করা হয়। এদের মধ্যে থেকে কাঙ্খিত বৈশিষ্ট্য বেছে নিয়ে সুপ্রজননের মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত বৈশিষ্ট্যের উদ্ভিদ ও প্রাণী সৃষ্টি করা হয়। বর্তমানে উন্নত জাতের শস্য উৎপাদনের এই পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়।

DNA অনুলিপনঃ (DNA replication)

এই প্রক্রিয়ার একটি DNA অণু থেকে আরেকটি নতুন DNA অণু তৈরি হয় বা সংশ্লেষিত হয়। DNA অর্ধ-রক্ষণশীল পদ্মতিতে অনুলিপিত হয়। এই পদ্ধতিতে হাইড্রোজেন বন্ধন ভেঙে গিয়ে DNA সূত্র দুটি আলাদা হয়ে যায়। তখন কোষের ভিতর ভাসমান নিওক্লিওটাইডগুলো থেকে A-এর সাথে T, T আর সাথে A, C-এর সাথে G এবং G-এর সাথে C যুক্ত হয়ে সূত্রদুটি তার পরিপুরক (Complementary) নতুন সূত্র তৈরি করে। DNA এর দুটি সুত্রের ভিতর একটি পুরাতন সূত্র রয়ে যায়, তার সাথে একটি নতুন সূত্র যুক্ত হয়ে পরিপূর্ণ DNA অণুর সৃষ্টি হয়। এভাবে সৃষ্ট DNA এর প্রতিটিতে অর্ধেক পুরাতন এবং অর্ধেক মুতন সূত্র থাকায় একে অর্ধ-রক্ষণশীল পদ্ধতি বলে। 1956 সালে Watson Crick এ ধরনের DNA অনুলিপন প্রক্রিয়ার প্রস্তাব করেন।

চিত্রঃ ডিএনএ অনুলিপন

চিত্রঃ ডিএনএ অনুলিপন

ডিএনএ টেস্টঃ

বর্তমান শতাব্দীতে ডিএনএ প্রযুক্তির গুরুত্ব এবং এর ব্যবহার চিকিৎসাবিজ্ঞান, কৃষি, মৎস্য, প্রাণিসম্পদ এবং ঔষধশিল্পে এক নতুন অধ্যায়ের সৃষ্টি করেছে। প্রচলিত সাক্ষ্য-প্রমাণ ও প্রত্যক্ষদর্শীনির্ভর বিচারব্যবস্থার পাশাপাশি আজ বাংলাদেশেও সুবিচার পাওয়ার এক নতুন উপায় হচ্ছে এই ডিএনএ টেস্ট।

ডিএনএ টেস্টের বিজ্ঞানভিত্তিক এক ব্যবহারিক পদ্ধতিকে বলা হয় ডিএনএ ফিঙ্গার প্রিন্টিং। এ ধরনের প্রক্রিয়াগুলোর ডিএনএ টাইপিং, ডিএনএ টেস্টিং ইত্যাদি নামও প্রচলিত আছে। ডিএনএ টেস্ট সুসম্পন্ন করার জন্য প্রথম প্রয়োজন জৈবিক নমুনা। ব্যক্তির হাড়, দাঁত, চুল, রম্ভ, লালা, বীর্য বা টিস্যু ইত্যাদি মূল্যবান জৈবিক নমুনা হতে পারে।

অপরাধস্থল কিংবা অপরাধের শিকার এমন ব্যক্তির কাছ থেকে সংগ্রহ করা জৈবিক নমুনার ডিএনএ নকশাকে (DNA profile) সন্দেহভাজনের কাছ থেকে নেওয়া রন্ত বা জৈবিক নমুনার ডিএনএ নকশার সাথে তুলনা করা হয়। এই পদ্ধতিতে প্রথমে নমুনা থেকে রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় ডিএনএ আলাদা করে নিতে হয় এবং একাধিক সীমাবদ্ধ এনজ্জাইম (restriction enzyme) দিয়ে ডিএনএগুলো কেটে ছোট ছোট টুকরা করা হয়। তারপর এক বিশেষ পদ্ধতিতে (ইলেকট্রোফোরেসিস্ জীবের বংশগতি ও বিবর্তন (electrophoresis) দ্বারা এগারোজ বা পলিএরিলামাইড জেন্স) ডিএনএ টুকরোগুলো তাদের দৈর্ঘ্য অনুসারে বিভিন্ন ব্যান্ড আকারে আলাদা করা হয়। এরপর এক ধরনের বিশেষ নাইট্রোসেলুলোজ কাগজে রেডিও অ্যাকটিভ আইসোেটাপ ডিএনএ প্রোবের সাথে হাইব্রিডাইজ করে এক্স-রে ফিল্মের উপর রেখে অক্টোরেডিওগ্রাফ পদ্ধতিতে দৃশ্যমান ব্যান্ডের সারিগুলো নির্ণয় করা হয় এবং অপরাধস্থল থেকে প্রাপ্ত নমুনার সাথে সন্দেহভাজন নমুনার মিল ও অমিল চিহ্নিত করে তুলনা করা হয়। এই পদ্ধতিটিকে ডিএনএ ফিশার প্রিন্টিং বলা হয়।

বর্তমানে পলিমারেজ চেইন বিক্রিয়া (Polymerase chain reaction) বা পিসিআর (PCR) পদ্ধতিতে আরও নিপুণভাবে অল্প নমুনা ব্যবহার করে নির্ভুলভাবে শনাক্তকরণ করা সম্ভব হচ্ছে।

Copyright Notice

কপি করা নিষিদ্ধ!