Skip to content

 

(100%) সম্পূর্ণ টিস্যু ও টিস্যুতন্ত্রঃ টিস্যু কাকে বলে? যাবতীয় উদ্ভিদ টিস্যু ও প্রাণিটিস্যুর প্রকারভেদসহ তাদের কাজ ও বিস্তারিত টিস্যু শ্রেণীবিভাগ বর্ণনা। (সুন্দর ভাবে গোছানো) (দ্বিতীয় অধ্যায় জীবকোষ ও টিস্যু)

(100%) সম্পূর্ণ টিস্যু ও টিস্যুতন্ত্রঃ টিস্যু কাকে বলে? যাবতীয় উদ্ভিদ টিস্যু ও প্রাণিটিস্যুর প্রকারভেদসহ তাদের কাজ ও বিস্তারিত বর্ণনা। (সুন্দর ভাবে গোছানো) (দ্বিতীয় অধ্যায় জীবকোষ ও টিস্যু)

এই পোষ্টটি শেষ অবধি মনোযোগের সাথে পড়লে আশা করি আপনার আর- টিস্যু ও টিস্যুতন্ত্র সম্পর্কিত কোন প্রশ্ন থাকবে না।

আজকে আমরা আলোচনা করবঃ

টিস্যু কাকে বলে?

একই বা বিভিন্ন প্রকারের একগুচ্ছ কোষ একত্রিত হয়ে যদি একই কাজ করে এবং তাদের উৎপত্তিও যদি অভিন্ন হয়, তখন তাদের টিস্যু বা কলা বলে।

প্রাণি টিস্যুর প্রকারভেদঃ

প্রাণি টিস্যু তার পঠনকারী কোষের সংখ্যা, বৈশিষ্ট্য এবং তাদের নিঃসৃত পদার্থের বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে প্রধানত চার ধরনের হয়— আবরণী টিস্যু, যোজক টিস্যু, পেশি টিস্যু এবং স্নায়ু টিস্যু।

উদ্ভিদ টিস্যুর প্রকারভেদঃ

উদ্ভিদ টিস্যু দুই ধরনের, ভাজক টিস্যু এবং স্থায়ী টিস্যু। স্থায়ী টিস্যু আবার তিন ধরনের, যথা- সরল টিস্যু, জটিল টিস্যু এবং নিঃস্রাবী (ক্ষরণকারী) টিস্যু।

উদ্ভিদ ও প্রাণীর কাজ পরিচালনায় বিভিন্ন প্রকার টিস্যু/কোষের ভূমিকা/কাজঃ

কোষ জীবদেহের (উদ্ভিদ ও প্রাণী) গঠনের একক। এককোষী ও বহুকোষী প্রাণীদের কোষের কাজ ভিন্ন ভিন্নভাবে পরিচালিত হয়। পৃথিবীর আদি প্রাণের আবির্ভাবের প্রথম দিন থেকে আজ পর্যন্ত এককোষী প্রাণী প্রোটোজোয়া পর্বের প্রজাতিগুলো তাদের দেহের সব ধরনের ক্রিয়াকলাপ—যেমন খাদ্যগ্রহণ, দেহের বৃদ্ধি ও প্রজনন ঐ একটি কোষের মাধ্যেমেই সম্পন্ন করে থাকে। বহুকোষী প্রাণীদের দেহকোষের মাঝে ভিন্নতা আছে, আছে বৈচিত্র্য।.

আমরা আগেই জেনেছি উদ্ভিদ টিস্যু দুই ধরনের, ভাজক টিস্যু এবং স্থায়ী টিস্যু। ভাজক টিস্যুর কোষগুলো বিভাজনে সক্ষম কিন্তু স্থায়ী টিস্যুর কোষগুলো বিভাজিত হতে পারে না। স্থায়ী টিস্যু তিন ধরনের, যথা- সরল টিস্যু, জটিল টিস্যু এবং নিঃস্রাবী (ক্ষরণকারী) টিস্যু। এখানে শুধু সরল এবং জটিল টিস্যু নিয়ে আলোচনা করা হবে।

(a) সরল টিস্যু (Simple tissue)

যে স্থায়ী টিস্যুর প্রতিটি কোষ আকার, আকৃতি ও গঠনের দিক থেকে অভিন্ন, তাকে সরল টিস্যু বলে।
কোষের প্রকৃতির উপর ভিত্তি করে সরল টিস্যুকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা- প্যারেনকাইমা, কোলেনকাইমা এবং স্ক্লেরেনকাইমা।

1. প্যারেনকাইমা (Parenchyma):

উদ্ভিদদেহের সব অংশে এদের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। এ টিস্যুর কোষগুলো জীবিত, সমব্যাসীয়, পাতলা প্রাচীরযুক্ত এবং প্রোটোপ্লাজম দিয়ে পূর্ণ। এই টিস্যুতে আন্তঃকোষীয় ফাঁক দেখা যায়। কোষপ্রাচীর পাতলা এবং সেলুলোজ দিয়ে তৈরি হয়। এসব কোষে যখন ক্লোরোপ্লাস্ট থাকে, তখন তাকে ক্লোরেনকাইমা (Chlorenchyma) বলে। জলজ উদ্ভিদের বড় বড় বায়ুকুঠুরিযুক্ত প্যারেনকাইমাকে অ্যারেনকাইমা (Aerenchyma) বলেপ্যারেনকাইমা টিস্যুর প্রধান কাজ সেহ গঠন করা, খাদ্য প্রস্তুত করা, খাদ্য সঞ্চয় করা এবং খাদ্যদ্রব্য পরিবহন করা।

2. কোলেনকাইমা (Collenchyma):

এগুলো বিশেষ ধরনের প্যারেনকাইমা কোষ দিয়ে তৈরি হয়। কোষপ্রাচীরে সেলুলোজ এবং পেকটিন জমা হয়ে পুরু হয়। তবে এদের কোষপ্রাচীর অসমভাবে পুরু এবং কোণাগুলো অধিক পুরু হয়। এ টিস্যুর কোষগুলো লম্বাটে ও সঙ্গীব। এরা প্রোটোপ্লাজমপূর্ণ কোষ দিয়ে তৈরি হয়। এতে আন্তঃকোষীয় ফাঁক থাকতে পারে। কোষপ্রান্ত চৌকোনাকার, সৰু বা তির্যক হতে পারে। খাদ্য প্রস্তুত এবং উদ্ভিদদেহকে দৃঢ়তা প্রদান করা এদের প্রধান কাজ। পাতার শিরা এবং পত্রবৃত্তে এদের দেখা যায়। কচি ও নমনীয় কাল্ড, যেমন কুমড়া ও দণ্ডবদসের কান্ডে এ টিস্যু দৃঢ়তা প্রদান করে। এ কোষে যখন ক্লোরোপ্লাস্ট থাকে, তখন এরা খাদ্য প্রস্তুত করে।

3. ফ্লেরেনকাইমা (Sclerenchyma):

এ টিস্যুর কোষগুলো শন্তু, অনেক লম্বা এবং পুরু প্রাচীরবিশিষ্ট হয়। প্রোটোপ্লাজমবিহীন, লিগনিনযুক্ত এবং যান্ত্রিক কাজের জন্য নির্দিষ্ট কোষ দিয়ে গঠিত টিস্যুকে স্ক্লেরেনকাইমা টিস্যু বলে। প্রাথমিক অবস্থায় কোষগুলোতে প্রোটোপ্লাজম উপস্থিত থাকলেও খুব তাড়াতাড়ি তা নষ্ট হয়ে মৃত কোষে পরিণত হয়। কোষগুলো প্রধানত দুই ধরনের ফাইবার এবং স্ক্লেরাইড। উদ্ভিদদেহে দৃঢ়তা প্রদান এবং পানি ও খনিজ লবণ পরিবহন করা এর মূল কাজ।

চিত্রঃ বিভিন্ন প্রকারের সরল টিস্যু, (ক) প্যারেনকাইমা (খ) কোলেনকাইম (গ) স্ক্লেরেনকাইমা।

চিত্রঃ বিভিন্ন প্রকারের সরল টিস্যু, (ক) প্যারেনকাইমা (খ) কোলেনকাইম (গ) স্ক্লেরেনকাইমা।

(i) ফাইবার বা ভক্ষু (Fibre):

  • এরা অত্যন্ত দীর্ঘ, পুরু প্রাচীরযুক্ত, শক্ত এবং দুই প্রান্ত সরু। তবে কখনো কখনো ভোঁতা হতে পারে।
  • প্রাচীরের গায়ে ছিদ্র থাকে, এ ছিদ্রকে কূপ বলে।
  • অবস্থান এবং গঠনের ভিত্তিতে এদের বিভিন্ন নাম দেওয়া হয়েছে, যেমন বাস্ট ফাইবার, সার্ফেস ফাইবার, জাইলেম তচ্ছু বা কাৰ্ষ্টতন্ডু।

(ii) ফ্লেৱাইড (Sclereids):

  • এদেরকে স্টোন সেলও বলা হয়। এরা খাটো, সমব্যাসীয়, কখনো লম্বাটে আবার কখনো তারকাকার হতে পারে।
  • এদের গৌণপ্রাচীর খুবই শক্ত, অত্যন্ত পুরু এবং লিগনিনযুক্ত।
  • পরিণত স্ক্লেরাইড কোষ সাধারণত মৃত থাকে এবং এদের কোষপ্রাচীর কূপযুক্ত হয়।
  • নগ্নবীজী ও দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদের কর্টেক্স, ফল ও বীজত্বকে স্ক্লেরাইড টিস্যু দেখা যায়।
  • বহিঃত্বক জাইলেম এবং ফ্লোয়েমের সাথে একত্রে পত্রবৃদ্ধে কোষপুচ্ছরূপে থাকতে পারে।

(b) জটিল টিস্যু (Complex tissues)

বিভিন্ন ধরনের কোষের সমন্বরে যে স্থায়ী টিস্যু তৈরি হয়, তাকে জটিল টিস্যু বলে। এরা উদ্ভিদে পরিবহনের কাজ করে, তাই এদের পরিবহন টিস্যুও বলা হয়।

জটিল টিস্যু দুই ধরনের, জাইলেম এবং ফ্লোয়েম। জাইলেম এবং ফ্লোয়েম একত্রে উদ্ভিদের পরিবহন টিস্যুগুচ্ছ (vascular bundle) গঠন করে।

জাইলেম (xylem):

জাইলেম দুই ধরনের, প্রাথমিক ও গৌণ জাইলেম। প্রোক্যাম্বিয়াম থেকে সৃষ্ট জাইলেমকে প্রাথমিক জাইলেম বলে। প্রাথমিক বৃদ্ধি শেষে যেসব ক্ষেত্রে গৌণবৃদ্ধি ঘটে, সেখানে গৌণ জাইলেম সৃষ্টি হয়। প্রাথমিক জাইলেম দুই ধরনের।

চিত্রঃ একটি পরিবহন টিস্যুগুচ্ছ

চিত্রঃ একটি পরিবহন টিস্যুগুচ্ছ

প্রাথমিক অবস্থায় একে প্রোটোজাইলেম এবং পরিণত অবস্থায় মেটাজাইলেম বলে। মেটাজ্জাইলেমের অভ্যন্তরীণ ফাঁকা গহ্বরটি বড় থাকে।

জাইলেমে কয়েক ধরনের কোষ থাকে, যেমন: ট্রাকিড ভেসেল, জাইলেম প্যারেনকাইমা ও জাইলেম ফাইবার।

(i) ট্রাকিড (Tracheids):

  • ট্রাকিড কোষ লম্বা। এর প্রান্তর সরু এবং সুচালো।
  • প্রাচীরে লিগনিন জমা হয়ে পুরু হয় এবং অভ্যন্তরীণ গহ্বর বন্ধ হয়ে যায়। ফলে পানির চলাচল পাশাপাশি জোড়া কূপের (paired pits) মাধ্যমে হয়ে থাকে।
  • প্রাচীরের পুরুত্ব কয়েক ধরনের হয়, যেমন- বলয়াকার, সর্পিলাকার সোপানাকার, জালিকাকার কিংবা রূপাঙ্কিত।
  • ফার্নবর্গ, নগ্নবীজী ও আবৃতবীজী উদ্ভিদের প্রাথমিক ও গৌণ জাইলেম কলায় ট্রাকিড দেখা যায়।
  • কোষরসের পরিবহন এবং অঙ্গকে দৃঢ়তা প্রদান করা এদের প্রধান কাজ। তবে কখনো খাদ্য সঞ্চয়ের কাজও এই টিস্যু করে থাকে।

(ii) ভেসেল (Vessels):

  • ভেসেল কোষগুলো খাটো চোঙের মতো। কোষগুলো একটির মাথার আরেকটি সজ্জিত হয় এবং প্রান্তীয় প্রাচীরটি গলে গিয়ে একটি দীর্ঘ নলের মতো অঙ্গের সৃষ্টি করে। এর ফলে কোষরসের উপরে ওঠার জন্য একটি সরু পথ সৃষ্টি হয়ে যায়।
  • প্রাথমিক অবস্থায় এ কোষগুলো প্রোটোপ্লাজমপূর্ণ থাকলেও পরিণত বয়সে এরা মৃত এবং প্রোটোপ্লাজমবিহীন হয়।
  • ভেসেলের প্রাচীর ট্রাকিডের মতো বিভিন্নরূপে পুরু হয়, যেমন- সোপানাকার, সর্পিলাকার, বলয়াকার, কূপাঙ্কিত ইত্যাদি। ভেসেল সাধারণত কয়েক সেন্টিমিটার লম্বা হয়। তবে বৃদ্ধ বা আরোহী উদ্ভিদে আরও অনেক লম্বা হতে পারে।
  • এদের প্রধানত গুপ্তবীজী উদ্ভিসের সব অঙ্গে দেখা যায়। নগ্নবীজী উদ্ভিদের মধ্যে উন্নত উদ্ভিদ, যেমন নিটামে (Gretum) প্রাথমিক পর্যায়ের ভেসেল থাকে।
  • পানি এবং খনিজ লবণ পরিবহনে এবং অঙ্গকে দৃঢ়তা প্রদান করা এর প্রধান কাজ।
চিত্রঃ বিভিন্ন ধরনের জাইলেম

চিত্রঃ বিভিন্ন ধরনের জাইলেম

(iii) জাইলেম প্যারেনকাইমা (Xylem parenchyma):

  • জাইলেমে অবস্থিত প্যারেনকাইমা কোষকে জাইলেম প্যারেনকাইমা বা উড প্যারেনকাইমা (wood parenchyma) বলে।
  • এদের প্রাচীর পুরু বা পাতলা হতে পারে। প্রাইমারি জাইলেমে অবস্থিত প্যারেনকাইমার কোষ পাতলা প্রাচীরযুক্ত। তবে গৌণ জাইলেমে এরা পুরু প্রাচীরযুক্ত হয়ে থাকে।
  • খাদ্য সঞ্চয় এবং পানি পরিবহন করা এদের প্রধান কাজ।

(iv) আইলেম ফাইবার (Xylem fibre):

  • জাইলেমে অবস্থিত স্ক্লেরেনকাইমা কোষই হচ্ছে জাইলেম ফাইবার। এদের উড ফাইবারও বলে।
  • এ কোষগুলো লম্বা, এদের দুষ্প্রাপ্ত সরু। পরিণত কোষে প্রোটোপ্লাজম থাকে না বলে এরা মৃত।
  • উদ্ভিদে এরা যান্ত্রিক শক্তি যোগায়।
  • দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদের সব জাইলেমে এরা অবস্থান করে।
  • পানি ও খনিজ পদার্থ পরিবহন, খাদ্য সঞ্চয়, উদ্ভিদকে যান্ত্রিক শান্তি আর দৃঢ়তা প্রদান করা জাইলেম টিস্যুর প্রধান কাজ।

ক্লোয়েম (Phloem):

উদ্ভিদ কাণ্ডে এরা জাইলেমের সাথে একত্রে পরিবহন টিস্যুপুচ্ছ তৈরি করে। সিভনল, সঙ্গীকোষ, ক্লোয়েম প্যারেনকাইমা এবং ফ্লোরেম তত্ত্ব নিয়ে ফ্লোয়েম টিস্যু গঠিত হয়। ফ্লোয়েম যেমন খাদ্যের কাঁচামাল পানি সরবরাহ করে, তেমনি ক্লোরেম পাতায় প্রস্তুত খাদ্য উদ্ভিদ দেহের বিভিন্ন স্থানে পরিবহন করে।

চিত্রঃ ক্লোয়েম টিস্যু

চিত্রঃ ক্লোয়েম টিস্যু

(i) সিভকোষ (Sieve cell):

  • এগুলো বিশেষ ধরনের কোষ। দীর্ঘ, পাতলা কোষপ্রাচীরযুক্ত এবং জীবিত এ কোষগুলো লম্বালম্বিভাবে একটির উপর একটি সজ্জিত হয়ে সিভনল (Sieve tube) পঠন করে। এ কোষগুলো চালুনির মতো ছিদ্রযুক্ত সিডপ্লেট দিয়ে পরস্পর থেকে আলাদা থাকে।
  • সিভকোষে প্রোটোপ্লাজম প্রাচীর ঘেঁষে থাকে বলে একটি কেন্দ্রীয় ফাঁপা জায়গার সৃষ্টি হয়, যেটা খাদ্য পরিবহনের নল হিসেবে কাজ করে।
  • এদের প্রাচীর লিগনিনযুদ্ধ।
  • পরিণত সিডকোষে কোনো নিউক্লিয়াস থাকে না।
  • সকল ধরনের গুপ্তবীজী উদ্ভিদের ফ্লোয়েমে সঙ্গীকোষ এবং সিভনল থাকে।
  • পাতায় প্রস্তুত খাদ্য উদ্ভিদদেহের বিভিন্ন অংশে পরিবহন করা এদের প্রধান কাজ।

(ii) সঙ্গীকোষ (Companion cell):

  • প্রতিটি সিডকোষের সাথে একটি করে প্যারেনকাইমা জাতীয় কোষ অবস্থান করে।
  • এদের কেন্দ্রিকা বা নিউক্লিয়াস বেশ বড়। ধারণা করা হয় এই নিউক্লিয়াস সিভকোষের কার্যাবলি কিছু পরিমাণে হলেও নিয়ন্ত্রণ করে।
  • এ কোষ প্রোটোপ্লাজম দিয়ে পূর্ণ এবং পাতলা প্রাচীরযুক্ত। ফার্ন ও ব্যক্তবীজী উদ্ভিদে এদের উপস্থিতি নেই।

(iii) ফ্লোয়েম প্যারেনকাইমা (Phloem parenchayma):

  • ফ্লোয়েমে উপস্থিত প্যারেনকাইমা কোষগুলোই ফ্লোয়েম প্যারেনকাইমা।
  • এদের কোষ সাধারণ প্যারেনকাইমার মতো পাতলা কোষপ্রাচীরযুক্ত এবং প্রোটোপ্লাজমযুক্ত।
  • এরা খাদ্য সঞ্চয় করে এবং খাদ্য পরিবহনে সহায়তা করে। ফার্ন জাতীয় উদ্ভিদ (Pteridophyta), নগ্নবীজী উদ্ভিদ এবং দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদের ফ্লোয়েম টিস্যুতে ফ্লোয়েম প্যারেনকাইমা থাকে।
  • একবীজপত্রী উদ্ভিদে ফ্লোয়েম প্যারেনকাইমা থাকে না।

(iv) ফ্লোয়েম ফাইবার বা তন্তু (Phloem fibre):

  • স্ক্লেরেনকাইমা কোষ সমন্বয়ে ফ্লোয়েম ফাইবার তৈরি হয়।
  • এগুলো একধরনের দীর্ঘ কোষ, যাদের প্রান্তদেশ পরস্পরের সাথে যুক্ত থাকে। এদের বাস্ট ফাইবারও বলে। পাটের আঁশ এক ধরনের বাস্ট ফাইবার।
  • উদ্ভিদ অঙ্গের গৌণবৃদ্ধির সময় এ ফাইবার উৎপন্ন হয়। এসব কোষের প্রাচীরে কূপ দেখা যায়।
  • ফ্লোয়েম টিস্যুর মাধ্যমে পাতায় উৎপাদিত শর্করা এবং মূলে সঞ্চিত খাদ্য একই সাথে উপরে নিচে পরিবাহিত হয়।

◾ বহুকোষী প্রাণিদেহে অনেক কোষ একত্রে কোনো বিশেষ কাজে নিয়োজিত থাকে। একই ভ্ৰূণীয় কোষ থেকে উৎপন্ন হয়ে এক বা একাধিক ধরনের কিছুসংখ্যক কোষ জীবদেহের কোনো নির্দিষ্ট স্থানে অবস্থান করে সমষ্টিগতভাবে একটা কাজে নিয়োজিত থাকলে ঐ কোষগুলো সমষ্টিগতভাবে টিস্যু (Tissue) বা তন্ত্র তৈরি করে।

◾একটি টিস্যুর কোষগুলোর উৎপত্তি, কাজ এবং গঠন একই ধরনের হয়। টিস্যু নিয়ে আলোচনাকে টিস্যুতত্ত্ব (Histology) বলে।

◾কোষ এবং টিস্যুর মধ্যে পার্থক্য খুবই নির্দিষ্ট। কোষ হচ্ছে টিস্যুর গঠনগত ও কার্যকরী একক, যেমন লোহিত রক্তকণিকা, শ্বেত রক্তকণিকা এবং অণুচক্রিকা বিভিন্ন ধরনের রক্তকোষ। আবার এরা একত্রে তরল যোজক টিস্যু নামে এক ধরনের টিস্যু হিসেবে পরিচিত। তরল যোজক টিস্যু রক্ত দেহের বিভিন্ন প্রয়োজনীয় শারীরবৃত্তীয় কাজে অংশ নেয়।

◾মানবদেহে নানা ধরনের কোষ আছে, যারা ভিন্ন ভিন্ন কাজে নিয়োজিত। মানবদেহের স্নায়ুকোষ দেহজুড়ে জালের মতো ছড়িয়ে থাকে। দেহের যেকোনো অংশের উদ্দীপনা গ্রহণ করে মস্তিষ্কে প্রেরণ করা, আবার মস্তিষ্কের কোনো বার্তা শরীরের নির্দিষ্ট অংশে পৌঁছে দেওয়াই এদের কাজ।

◾চোখের স্নায়ুকোষগুলো দেখতে এবং কানের স্নায়ুকোষগুলো শুনতে সাহায্য করে। মানুষের চোখের মতো বিভিন্ন ধরনের স্নায়ুকোষ না থাকায় বেশিরভাগ প্রাণীই পৃথিবীর দৃশ্যমান বস্তুগুলো রঙিন হিসেবে দেখতে পারে না, অনেক প্রাণী শুধু দিনে বা রাতে দেখতে পায়।

আমাদের কাজকর্মে, হাঁটা-চলায় এবং নড়াচড়ায় পেশিকোষ ব্যবহৃত হয়। তিন ধরনের রক্তকোষ মানব দেহের বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত।

  1. লোহিত রক্তকণিকা কোষগুলো ফুসফুসে অক্সিজেন গ্রহণ করে হৃদযন্ত্রের সাহায্যে ধমনির মাধ্যমে কৈশিকনালি হয়ে দেহের প্রতিটি কোষে অক্সিজেন সরবরাহ করে। শ্বেত রক্তকণিকা দেহের রোগ প্রতিরোধ করে। রন্ধের অণুচক্রিকা কোষগুলো শরীরের কেটে যাওয়া অংশ থেকে রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে সাহায্য করে।
  2. শরীরের ত্বকীয় কোষগুলো দেহের আবরণ দেওয়া ছাড়াও শরীরের অবস্থানভেদে বিভিন্ন কাজ করে থাকে। মাথার ত্বকীয় কোষগুলো থেকে চুল পজিয়ে থাকে। শরীরের তৃতীয় কোষগুলো নির্দিষ্ট স্থানে ঘাম নির্গমন কোষ থেকে ঘাম নির্গত করে।
  3. অস্থিকোষ দেহে অস্থি অথবা কোমলাস্থি তৈরি করে দেহের দৃঢ়তা দিয়ে থাকে। দেহের আকার, গঠন, অস্থির বৃদ্ধি ইত্যাদিতে অস্থিকোষের অবদান বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

প্রাণিটিস্যুর প্রকারভেদ: প্রাণিটিস্যু তার পঠনকারী কোষের সংখ্যা, বৈশিষ্ট্য এবং তাদের নিঃসৃত পদার্থের বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে প্রধানত চার ধরনের হয়— আবরণী টিস্যু, যোজক টিস্যু, পেশি টিস্যু এবং স্নায়ু টিস্যু।

(a) আবরণী টিস্যু (Epithelial Tissue)

এই টিস্যু বিভিন্ন অঙ্গের আবরণ (lining) হিসেবে কাজ করে। তবে অঙ্গকে আবৃত রাখাই আবরণী টিস্যুর একমাত্র কাজ নয়। এই টিস্যুর আরও চারটি কাজ হলো: অঙ্গকে আবৃত রাখা, সেটিকে বাইরের আঘাত থেকে রক্ষা করা (protection), প্রোটিনসহ বিভিন্ন পদার্থ ক্ষরণ বা নিঃসরণ করা (secretion), বিভিন্ন পদার্থ শোষণ করা (absorption) এবং কোষীয় স্তর পেরিয়ে সুনির্দিষ্ট পদার্থের পরিবহন (transcellular transport)।

আবরণী টিস্যুর কোষগুলো ঘন সন্নিবেশিত এবং একটি ভিত্তিপর্দার উপর ব্যিস্ত থাকে। কোষের আকৃতি, প্রাণিদেহে তার অবস্থান এবং কাজের প্রকৃতিভেদে এ টিস্যু তিন ধরনের হয়। যেমন:

(i) স্কোয়ামাস আবরণী টিস্যু (Squamous Epithelial Tissue):

এই টিস্যুর কোষগুলো মাছের আঁশের মতো চ্যাপটা এবং এদের নিউক্লিয়াস বড় আকারের হয়। উদাহরণ: বৃত্তের বোম্যান্স ক্যাপসুল প্রাচীর। এই টিস্যু প্রধানত আবরণ ছাড়াও ছাঁকনির কাজ করে থাকে।

(ii) কিউবয়ডাল আবরণী টিস্যু (Cuboldal Epithelial Tissue):

এই টিস্যুর কোষগুলো ঘনাকার ৰা কিউব আকৃতির অর্থাৎ কোষগুলোর দৈর্ঘ্য, প্রস্থ এবং উচ্চতা প্রায় সমান। উদাহরণ: বৃক্কের সংগ্রাহক নালিকা। এই টিস্যু প্রধানত পরিশোষণ এবং আবরণ কাজে লিপ্ত থাকে।

চিত্রঃ স্কোয়াম আবরণী টিস্যু + কিউবয়ডাল আবরণী টিস্যু + কলাম্নার এলিথেলিয়াল টিস্যু

চিত্রঃ প্রথমে স্কোয়াম (আঁইশকার) আবরণী টিস্যু + মাঝে কিউবয়ডাল (ঘণাকৃতি) আবরণী টিস্যু + শেষে কলাম্নার (স্তম্ভাকার) এলিথেলিয়াল টিস্যু

(iii) ফলামনার আবরণী টিস্যু (Columnar Epithelial Tissue):

এই টিস্যুর কোষসমূহ স্তম্ভের মতো সরু এবং লম্বা। উদাহরণ: প্রাণীর অস্ত্রের অন্তঃপ্রাচীরের কোষগুলো প্রাধনত ক্ষরণ, রক্ষণ এবং শোষণ কাজ করে থাকে।

প্রাণিদেহে ভিত্তিপর্দার উপর সজ্জিত কোষগুলোর সংখ্যার ভিত্তিতে এপিথেলিয়াল বা আবরণী টিস্যুকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা:

(i) সাধারণ আবরণী টিস্যু:

ভিত্তিপর্দার উপর কোষসমূহ একস্তরে সজ্জিত। উদাহরণ: বৃক্কের বোম্যান্স ক্যাপসুল, বৃক্কের সংগ্রাহক নালিকা, অত্র প্রাচীর।

(ii) স্ট্র্যাটিফাইড আবরণী টিস্যু:

ভিত্তিপর্দার উপর কোষগুলো একাধিক স্তরে সজ্জিত। এমন স্ট্র্যাটিফাইড আবরণী টিস্যুও আছে, যার স্তরের সংখ্যা মিনিটের মধ্যে পাল্টে যেতে পারে কখনো দেখা যায় তিন- চারটি স্তর আবার পরক্ষণেই দেখা যায় সাত-আটটি স্তর। তাই একে বলে ট্রানজিশনাল আবরণী। উদাহরণ: মেরুদণ্ডী প্রাণিদের ত্বক।

(iii) সিউডো-স্ট্র্যাটিফাইড আবরণী টিস্যু:

এই টিস্যুর কোষগুলো ভিত্তিপর্দার উপর একস্তরে বিন্যস্ত থাকে। তবে কোষগুলো বিভিন্ন উচ্চতার হওয়ায় এই টিস্যুকে দেখতে স্তরীভূত টিস্যু মনে হয়। উদাহরণ ট্রাকিয়া।

চিত্ৰঃ যৌগিক আবরণী ও সিউডো স্ট্র্যাটিফাইড এপিথেলিয়াল টিস্যু

চিত্ৰঃ স্ট্র্যাটিফাইড (স্তরীভূত) বা যৌগিক আৰৱণী টিস্যু ও সিউডো স্ট্র্যাটিফাইড এপিথেলিয়াল টিস্যু

আবরণী টিস্যুর কোষগুলো আবার বিভিন্ন কাজের জন্য নানাভাবে রূপান্তরিত হয়। যেমন-

  • (i) সিন্সিয়াযুক্ত আবরণী টিস্যু: মেরুদণ্ডী প্রাণীদের শ্বাসনালির প্রাচীরে দেখা যায়।
  • (ii) ফ্লাজেলাযুক্ত আবরণী টিস্যু: হাইড্রার এন্ডোডার্মে থাকে।
  • (iii) ক্ষণপদযুক্ত আবরণী টিস্যু: হাইড্রার এন্ডোডার্মে এবং মেরুদণ্ডী প্রাণীদের অত্রে দেখা যায়।
  • (iv) জনন অঙ্গের আবরণী টিস্যু: বিশেষভাবে রূপান্তরিত আবরণী টিস্যু যা থেকে শুক্লাপু এবং ডিম্বাণু কোষ উৎপন্ন হয়। এরা প্রজননে অংশগ্রহণ করে প্রজাতির ধারা অক্ষুন্ন রাখে।
  • (v) এন্থি আবরণী টিস্যু: বিভিন্ন ধরনের রস নিঃসরণ করে।

আবরণী টিস্যু কোনো অঙ্গের বা নাগির ভিতরের ও বাইরের অংশ তৈরি করে থাকে। আবার এই টিস্যু রূপান্তরিত হয়ে রক্ষণ, ক্ষরণ, শোষণ, ব্যাপন, পরিবহন এই সব কাজে অংশ নেয়। আবরণী টিস্যু রূপান্তরিত হয়ে এন্থি টিস্যু এবং জনন টিস্যুতে পরিণত হয় এবং দেহের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজে অংশগ্রহণ করে থাকে।

(b) যোজক টিস্যু (Connective Tissue)

যোজক বা কানেকটিভ টিস্যূতে মাতৃকার (Matrix) পরিমাণ তুলনামূলকভাবে বেশি এবং কোষের সংখ্যা কম। গঠন এবং কাজের ভিত্তিতে কানেকটিভ টিস্যু প্রধানত তিন ধরনের হয়। যথা-

(i) ফাইব্রাস যোজক টিস্যু (Fibrous Connective Tissue):

এই ধরনের যোজক টিস্যু সেহত্বকের নিচে পেশির মধ্যে থাকে। এদের মাতৃকায় বিভিন্ন ধরনের তন্তুর আধিক্য দেখা যায়।

(ii) স্কেলিটাল যোজক টিস্যু (Skeletal Connective Tissue):

  • দেহের অভ্যন্তরীণ কাঠামো পঠনকারী টিস্যুকে স্কেলিটাল যোজক টিস্যু বলে।
  • এই টিস্যু দেহের অভ্যন্তরীণ কাঠামো গঠন করে। দেহকে নির্দিষ্ট আকৃতি এবং দৃঢ়তা দেয়। অঙ্গ সঞ্চালন এবং চলনে সহায়তা করে। মস্তিক্ষ, মেরুরজ্জু, ফুসফুস, হৃৎপিণ্ড এরকম দেহের নরম ও নাজুক অঙ্গগুলোকে রক্ষা করে। বিভিন্ন ধরনের রপ্তকণিকা উৎপাদন করে। ঐচ্ছিক পেশিগুলোর সংযুক্তির ব্যবস্থা করে।
  • গঠনের ভিত্তিতে স্কেলিটাল যোজক টিস্যু দুধরনের হয়। যেমন: কোমলাস্থি এবং অস্থি।
  • কোমলাস্থি (Cartillage): কোমলাস্থি এক ধরনের নমনীয় স্কেলিটাল যোজক টিস্যু। মানুষের নাক ও কানের পিনা কোমলাস্থি দিয়ে তৈরি।
  • অস্থি: অস্থি বিশেষ ধরনের দৃঢ়, তপুর এবং অনমনীয় স্কেলিটাল কানেকটিভ টিস্যু। এদের মাতৃকায় ক্যালসিয়াম জাতীয় পদার্থ জমা হয়ে অস্থির দৃঢ়তা প্রদান করে।

(iii) তরল যোজক টিস্যু (Fhid connective tissue):

  • তরল টিস্যুর মাতৃকা তরল। মাতৃকায় বিভিন্ন ধরনের জৈব পদার্থ দ্রবীভূত অবস্থায় থাকে।
  • এই টিস্যুর প্রধান কাজ দেহের অভ্যন্তরে বিভিন্ন দ্রব্যাদি পরিবহন করা, রোগ প্রতিরোধ করা এবং রক্ত জমাট বাঁধায় বিশেষ ভূমিকা রাখা। তরল যোজক টিস্যু দুই ধরনের, রপ্ত এবং লসিকা।
চিত্রঃ কানেক্টিভ টিস্যু

চিত্রঃ কানেক্টিভ টিস্যু

রক্ত:

◾ রক্ত এক ধরনের ক্ষারীর, ঈষৎ লবণাত্ত এবং লালবর্ণের তরল যোজক টিস্যু।

◾ ধমনি, শিরা ও কৈশিকনালির মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে রক্ত অভ্যন্তরীপ পরিবহনে অংশ নেয়।

◾ উষ্ণ রক্তবাহী প্রাণীর দেহে রক্ত তাপমাত্রার ভারসাম্য রক্ষা করে।

◾ রক্তের উপাদান দুটি – রক্তরস এবং রক্তকণিকা। রক্তরস (Plasma) রতন্তর তরল অংশ, এর রং ঈষৎ হলুদাভ। এর প্রায় 91-92% অংশ পানি এবং 8-9% অংশ জৈব ও অজৈব পদার্থ। এসব রপ্তরসের ভিতর বিভিন্ন ধরনের প্রোটিন এবং বর্জ্য পদার্থ থাকে।

◾ রক্তকণিকা তিন ধরনের, যথা- লোহিত রক্তকণিকা (Erythrocyte বা Red blood corpuscles বা RBC), শ্বেভ রক্তকণিকা (Leukocyte বা white blood corpuscles বা WBC) এবং অণুচক্রিকা (Thrombocytes ৰা Blood platelet)।

◾ লোহিত রক্তকণিকায় হিমোগ্লোবিন নামে একটি পৌহজাত যৌগ থাকে, যার জন্য রক্ত লাল হয়। হিমোগ্লোবিন অক্সিজেনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে একটি অক্সিহিমোগ্লোবিন যৌগ গঠন করে এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে অক্সিজেন পরিবহন করে।

◾ শ্বেত রক্তকণিকা জীবাণু ধ্বংস করে দেহের প্রকৃতিগত আত্মরক্ষায় অংশ নেয়। মানবদেহে বেশ কয়েক ধরনের শ্বেত রক্তকণিকা থাকে।

◾ অণুচক্রিকা রক্ত জমাট বাঁধায় অংশ নেয়।

চিত্রঃ বিভিন্ন ধরণের রক্তকণিকা

চিত্রঃ বিভিন্ন ধরণের রক্তকণিকা

লসিকা:

মানবদেহে বিভিন্ন টিস্যুর মধ্যবর্তী ফাঁকা স্থানে (Intercellular space) যে জলীয় পদার্থ জমা হয় তাকে লসিকা বলে। এগুলো ছোট নালির মাধ্যমে সংগৃহীত হয়ে একটি আলাদা নালিকাতন্ত্র পঠন করে, যাকে লসিকাতন্ত্র (Lymphatic system) বলে। লসিকা ঈষৎ ক্ষারীয় স্বচ্ছ হলুদ বর্ণের তরল পদার্থ। এর মধ্যে কিছু রোগপ্রতিরোধী কোষ থাকে, এদের লসিকাকোষ (Lymphold cell) বলে।

(c) পেশি টিস্যু (Muscular Tissue)

◾ শূণের মেসোডার্ম থেকে তৈরি সংকোচন ও প্রসারণশীল বিশেষ ধরনের টিস্যুকে পেশি টিস্যু বলে।

◾ এদের মাতৃকা প্রায় অনুপস্থিত। পেশিকোষগুলো সরু, লম্বা এবং তন্তুময়। যেসব তক্ষুতে আড়াআড়ি ডোরাকাটা থাকে, তাদের ডোরাকাটা পেশি (Striated muscle) এবং ভোরাবিহীন তন্তুকে মসৃণ পেশি (Smooth muscle) বলে।

◾ পেশিকোষ সংকোচন এবং প্রসারণের মাধ্যমে দেহের বিভিন্ন অঙ্গ সঞ্চালন, চলন ও অভ্যন্তরীণ পরিবহন ঘটায়।

অবস্থান, গঠন এবং কাজের ভিত্তিতে পেশি টিস্যু তিন ধরনের, ঐচ্ছিক পেশি, অনৈচ্ছিক পেশি এবং হৃৎপেশি।

চিত্রঃ বিভিন্ন ধরনের পেশি

চিত্রঃ বিভিন্ন ধরনের পেশি

(i) ঐচ্ছিক পেশি (Voluntary) বা ডোরাকাটা পেশি (Striated muscle):

  • এই পেশি প্রাণীর ইচ্ছানুযায়ী সংকুচিত বা প্রসারিত হয়।
  • ঐচ্ছিক পেশিটিস্যুর কোষগুলো নলাকার, শাখাবিহীন ও আড়াআড়ি ডোরাযুক্ত হয়।
  • এদের সাধারণত একাধিক নিউক্লিয়াস থাকে।
  • এই পেশি দ্রুত সংকুচিত এবং প্রসারিত হতে পারে।
  • ঐচ্ছিক পেশি অস্থিতন্ত্রে সংলগ্ন থাকে।
  • উদাহরণ: মানুষের হাত এবং পায়ের পেশি।

(ii) অনৈচ্ছিক পেশি (Invohuntary muscle) বা অসৃণ পেশি (Smooth muscle):

  • এই পেশি টিস্যুর সংকোচন ও প্রসারণ প্রাণীর ইচ্ছাধীন নয়।
  • এ পেশি কোষগুলো মাকু আকৃতির। এদের গায়ে আড়াআড়ি দাগ থাকে না। এজন্য এ পেশিকে মসৃপ পেশি বলে
  • মেরুদণ্ডী প্রাণীদের রক্তনালি, পৌষ্টিকনালি ইত্যাদির প্রাচীরে অনৈচ্ছিক পেশি থাকে।
  • অনৈচ্ছিক পেশি প্রধানত দেহের অভ্যন্তরীণ অঙ্গাদির সঞ্চালনে অংশ নেয়। যেমন, খাদ্য হজম প্রক্রিয়ায় অস্ত্রের ক্রমসংকোচন।

(iii) কার্ডিয়াক পেশি বা ৎপেশি (Cardiac muscle):

  • এই পেশি মেরুদণ্ডী প্রাণীদের হৃৎপিণ্ডের এক বিশেষ ধরনের অনৈচ্ছিক পেশি।
  • এই টিস্যুর কোষগুলো নলাকৃতি (অনেকটা ঐচ্ছিক পেশির মতো), শাখান্বিত ও আড়াআড়ি দাগযুক্ত।
  • এ টিস্যুর কোষগুলোর মধ্যে ইন্টারক্যালাটেড ডিস্ক (Intercalated disc) থাকে।
  • এদের সংকোচন ও প্রসারণ প্রাণীর ইচ্ছাধীন নয়। অর্থাৎ কার্ডিয়াক পেশির গঠন ঐচ্ছিক পেশির মতো হলেও কাজ অনৈচ্ছিক পেশির মতো।
  • কার্ডিয়াক পেশির কোষগুলো শাখার মাধ্যমে পরস্পর যুক্ত থাকে।
  • হৃৎপিণ্ডের সব কার্ডিয়াক পেশি সমন্বিতভাৰে সংকুচিত ও প্রসারিত হয়।
  • মানব ভ্রুণ সৃষ্টির একটা বিশেষ পর্যায় থেকে মৃত্যুর পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত হৃৎপিণ্ডের কার্ডিয়াক পেশি একটা নির্দিষ্ট গতিতে সংকুচিত ও প্রসারিত হয়ে দেহের মধ্যে রক্ত চলাচলের প্রক্রিয়া সচল রাখে।

(d) স্নায়ু টিস্যু (Nerve tissue)

◾ দেহের বিশেষ সংবেদী কোষ নিউরন বা স্নায়ুকোষগুলো একত্রে স্নায়ু টিস্যু গঠন করে। স্নায়ু টিস্যু অসংখ্য নিউরন দিয়ে গঠিত।

স্নায়ু টিস্যু পরিবেশ থেকে উদ্দীপনা, যেমন তাপ, স্পর্শ, চাপ ইত্যাদি গ্রহণ করে দেহের ভিতরে মস্তিষ্কে বহন করে এবং মস্তিষ্কের বিশ্লেষণের পর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী উপযুক্ত কাজ করে থাকে।

একটি আদর্শ নিউরনের তিনটি অংশ থাকে, কৌষদেহ, ডেনড্রাইট এবং অ্যাক্সন।

নিউরন কোষ বহুভুজাকৃতি এবং নিউক্লিয়াসযুক্ত। কোষের সাইটোপ্লাজমে মাইটোকন্ড্রিয়া, পলঞ্জিবতি, রাইবোফ্লোম, এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম ইত্যাদি থাকে, তবে নিউরনের সাইটোপ্লাজমে সক্রিয় সেন্ট্রিওল থাকে না বলে নিউরন বিভাজিত হয় না।

কোষদেহের চারদিকের শাখাযুক্ত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রলম্বিত অংশকে ডেনড্রন বলে। ডেনড্রন থেকে যে শাখা বের হয়, তাদের ডেনড্রাইট বলে। ডেনড্রাইটের সংখ্যা এক বা একাধিক হতে পারে।

নিউরনের কোষদেহ থেকে একটি লম্বা স্নায়ুতন্তু পরবর্তী নিউরনের ডেনড্রাইটের সাথে যুক্ত থাকে, তাকে অ্যাক্সন বলে। একটি নিউরনের একটি মাত্র অ্যাক্সন থাকে।

পরপর দুটি নিউরনে প্রথমটির অ্যাক্সন এবং পরেরটির ডেনড্রাইটের মধ্যে একটি স্নায়ুসন্ধি গঠিত হয়, তাকে সিন্যাপস (Synapse) বলে। সিন্যাপসের মধ্য দিয়েই একটি নিউরন থেকে উদ্দীপনা পরবর্তী নিউরনে পরিবাহিত হয়।

স্নায়ুটিস্যু উদ্দীপনা গ্রহণ করে মস্তিক্ষে প্রেরণ করে এবং মস্তিষ্ক তাতে সাড়া দেয়। উচ্চতর প্রাণীতে স্নায়ুটিস্যু স্মৃতি সংরক্ষণ (Memorise) করাসহ দেহের বিভিন্ন অঙ্গের কাজ নিয়ন্ত্রণ এবং তাদের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে।

চিত্রঃ একটি নিউরন

চিত্রঃ একটি নিউরন

”আমাদের মস্তিষ্কের মাত্র দশ শতাংশ ব্যবহার করতে পারি” ধারণাটি কতটুকু সত্য?

অনেকের মধ্যে একটা ধারণা প্রচলিত আছে যে আমরা আমাদের মস্তিষ্কের মাত্র দশ শতাংশ ব্যবহার করতে পারি। ধারণাটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে স্বাভাবিক অবস্থায় মানুষ বা অন্য সব প্রাণী তার মস্তিষ্কের একশো শতাংশ ব্যবহার করে থাকে।

এটা ঠিক যে সবসময় একই সাথে মস্তিক্ষের সকল অংশ সমানভাবে সক্রিয় থাকে না। কিন্তু মস্তিষ্কের সবগুলো অংশ কখনো না কখনো আমরা কোনো না কোনোভাবে ব্যবহার করে থাকি।

এমনকি এটাও ঠিক নয় যে একটা নির্দিষ্ট সময়ে মস্তিষ্কের দশ শতাংশের বেশি ব্যবহার করা যায় না। এরকম কোনো সীমা নেই। বিবর্তনগতভাবে এরকম কোনো সীমা আরোপিত হওয়ার কোনো কারণও নেই।

Copyright Notice

কপি করা নিষিদ্ধ!