সঠিকটা পরিপূর্ণভাবে ডেইরি ফার্ম করার নিয়ম জেনে, পড়াশোনা করে, তারপর একটি ডেইরি খামার শুরু করুন।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট নিম্নরূপ:
1. ডেইরি খামার হলে আগে গাভীর জাত এবং বংশ সম্পর্কে জানুন
সাধারণত গরু, মহিষ, ছাগল (খামারের জন্য ভাল) বা মহিষ (দক্ষিণ এশিয়ায়) দুগ্ধজাতের জন্য ভাল প্রাণী। এগুলোর প্রত্যেকটিতেই বেশ কয়েকটি দুগ্ধজাত জাত রয়েছে।
গাভীর জাত নির্বাচনে সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করার জন্য স্থানীয় অভিজ্ঞ ডেইরি খামারির কাছে থেকে, সরকারী সংস্থা, বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি সম্প্রসারণ এবং প্রতিষ্ঠিত ডেইরি ফার্ম থেকে তথ্য সংগ্রহ করুন।
আপনার এলাকার আবহাওয়া সহ্য করতে পারে না এমন জাতগুলিকে বাদ দিন।
দুধের প্রতি ইউনিট উৎপাদন খরচ গণনা করতে প্রতিটি জাতের বার্ষিক দুধ উৎপাদন দ্বারা বার্ষিক রক্ষণাবেক্ষণ খরচকে ভাগ করুন।
সেই জাতের দুধের স্থানীয় চাহিদা আছে কি? (জাত এবং দুধের চর্বির শতাংশের উপর ভিত্তি করে)
একটি মাদী বাছুরকে দুগ্ধজাত প্রাণী হতে কত সময় এবং অর্থ লাগবে? আমি একটি পুরুষ পশু কত টাকায় বিক্রি করতে পারি?
ইত্যাদি বিষয়ে মাথায় রাখুন।
2. গাভীর খাদ্যের উৎস সম্পর্কে চিন্তা করুন তারপর ডেইরি ফার্ম করুন
নতুন ডেইরি খামারগুলি প্রায়শই ম্যানেজমেন্ট ইনটেনসিভ রোটেশনাল গ্রেজিং (MIRG) মেনে খরচ চললে তা কিছু কমিয়ে দেয়৷ আপনার জমির ভাড়া দেখুন এবং সিদ্ধান্ত নিন প্রতি শতাংশে কতগুলি প্রাণী পালন করা যেতে পারে৷
প্রাণীদের প্রতিদিন তাদের ওজনের প্রায় 4% সমপরিমাণ খাদ্য প্রয়োজন। আপনার চারণভূমি বা যেখানে ঘাস, ভূট্টা ইত্যাদি চাষ করবেন তা পিক সিজনে প্রয়োজন এর চেয়ে বেশি উৎপাদন হওয়া উচিত। যাতে আপনি গ্রীষ্ম-শীত মৌসুমের জন্যও হে, খড় বা সাইলেজ হিসেবে সংরক্ষণ করতে পারেন।
নতুন ডেইরি খামারের জন্য জমি কেনার চেয়ে ভাড়া নেওয়া ভালো। আপনার ফার্ম ভালভাবে প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন এবং আপনার ভাড়া জমিতেই ঘাস চাষ করুন।
3. ডেইরি ফার্ম করার পূর্বেই গাভীর প্রজনন পরিকল্পনা (ব্রিডিং প্ল্যান) প্রস্তুত করুন
ষাঁড়গুলিকে সারা বছর ধরে তাদের লালন-পালন করা একটি ব্যয়বহুল ব্যাপার।
তাই একটি নিরাপদ বিকল্প হল প্রজননের সময় কৃত্রিম প্রজনন (AI) ব্যবহার করা। AI সর্বদা সবচেয়ে সস্তা বিকল্প, এবং সঠিকভাবে করা হলে (একজন প্রশিক্ষিত AI প্রযুক্তিবিদ দ্বারা) সাফল্যের সমান বা বেশি সম্ভাবনা থাকে।
কৃত্রিম প্রজনন কর্মসূচি এখন বাংলাদেশ, ভারত এবং অনেক আফ্রিকান দেশে খুবই জনপ্রিয়। খরচ তত বেশি নয়। প্রজনন পক্রিয়ার সঠিক নিয়ম মেনে ও গুণমান এর প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে।
একটি অল্প বয়স্ক ষাঁড় সাধারণত 20-25টি গাভীর প্রজনন করতে পারে, একটি সুস্থ, পরিণত ষাঁড় দ্বারা 40টি পর্যন্ত গাভীর প্রজনন করানো যেতে করতে পারে।
4. ডেইরি খামার পরিচালনা করার পক্রিয়া ও পদ্ধতি অধ্যয়ন করুন
আপনার যদি ইতিমধ্যেই দুগ্ধ চাষের অভিজ্ঞতা না থাকে, তাহলে প্রজনন, বাছুর পালন, গোবর ব্যবস্থাপনা, দুধ ছাড়ানো, দুধ খাওয়ানো এবং শস্য ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে জানতে কিছু সময় নিন।
কৃষিকাজের জন্য অনেক সময়, কাজ এবং জ্ঞানের প্রয়োজন, তাই চোখ খোলা রেখে এই কাজে হাত দিন। যদি এটি আপনার কাছে নতুন হয় তবে প্রথমে অন্য ডেইরি ফার্মে কাজ করে কিছু অভিজ্ঞতা অর্জন করুন।
5. আপনার ডেইরি ফার্মে মূলধন বিনিয়োগ করুন
একটি ডেইরি খামার শুরু করতে একটি বিশাল একক খরচ আছে। একটি প্রতিষ্ঠিত ডেইরি ফার্ম ক্রয় করলে কাজটিকে কিছুটা সহজ করে তোলে এবং আপনি নিজে উক্ত ফার্মের কিছু মেরামত করলে আপনার কিছু টাকাও বাঁচাতে পারে।
আপনি পুরাতন ডেইরি ফার্ম কিনুন কিনুন বা নতুন করে ফার্ম তৈরি করুন, নিশ্চিত করুন যে আপনার খারের নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যগুলিতে রয়েছে:
- দুধ সংগ্রহের জন্য জীবাণুমুক্ত এবং প্রয়োজনে পাস্তুরাইজ করার জায়গা রাখুন।
- বৃষ্টি এবং তাপমাত্রার পরিবর্তন থেকে রক্ষা করার জন্য শুষ্ক, ছাদযুক্ত শেড বা ঘের
- ফিড স্টোরেজ এবং সার স্টোরেজ রাখতে হবে।
- বাছুর ছাখার আলাদা স্থান থাকতে হবে।
- চাষাবাদ করার সরঞ্জাম।
- গবাদি পশুকে জল দেওয়ার জন্য টিউবয়েল বা কূপ।
- জমিতে সেচ ব্যবস্থা রাখা।
- সর্বপরি, আপনার গবাদি পশুর বৃদ্ধির কথা বিবেচনায় রাখুন।
6. ডেইরি গাভী সংগ্রহের উৎস খুঁজুন
কোথায় ভালো গাভী পাওয়া যায়? তা খোজ খবর রাখুন হাট থেকে কনিবেন নাকি কোন প্রতিষ্ঠিত খামার থেকে কিনবেন সিদ্ধান্ত নিন।
কেনার আগে সমস্ত দুগ্ধজাত গাভীকে নিজেই দেখে নিন এবং সম্ভব হলে পাশাপাশি কয়েকটি দুধের পরীক্ষাও (Fat%) করবেন।
পশুকে সুস্থ থাকতে হবে এবং রোগের বিরুদ্ধে টিকা দিতে হবে।
সাধারনত, অোপনাকে এটা নিশ্চিত করতে হবে, যাতে আপনার ডেইরি খামারে পুরো বছর দুধ উৎপাদন অব্যহত থাকে। .
7. স্থানীয় দুধের বাজার নিয়ে গবেষণা করুন
আপনি যদি মাত্র কয়েকটি গাভী দিয়ে শুরু করেন, তাহলে আপনার আশেপাশের খামারিদেরদের সাথে পরামর্শের জন্য কথা বলুন।
কোন স্থানীয় দোকান এবং ব্যক্তিদের কাছে আপনি দুধ বিক্রি করতে পারেন তার সম্ভাবনা যাচাই করুন।
যদি আপনার ডেইরি ফার্মের গাভী যদি সামান্য বড় হয়, তাহলে আপনি একটি কোম্পানির কাছে দুধ বিক্রি করতে পারেন যা আপনাকে একটি স্থির আয় প্রদান করবে। যেমন প্রান, মিল্কভিটা ইত্যাদি।
8. প্রাণীসম্পদ অফিসের সাথে যোগাযোগ রাখুন
সরকারের কাছ থেকে খামার চালানোর জন্য খমার রেজিস্ট্রেশন ও ডেইরি ব্যাবসা পরিচালনা করার জন্য ট্রেড লাইসেন্স এর প্রয়োজন হবে। দুধ বিক্রি করতে, জমিতে সেচ দেওয়ার জন্য, লোন নেওয়ার জন্য অথবা অন্যান্য কাজে এগুলো প্রয়োজন হতে পারে।
খামার রেজিস্ট্রেশনের সুবিধা সমূহ দেখুন এখানে: খামার রেজিস্ট্রেশন করবেন কিভাবে? খামার রেজিস্ট্রেশন এর সুবিধা কি? গরুর ছাগলের ভেড়ার খামার নিবন্ধন
আরও পড়ুনঃ ডেইরি খামার করার জন্য জায়গা নির্বাচন করবেন কিভাবে? 10 টি নিয়ম