পানি না পাওয়ার কারণে, পবিত্রতা অর্জনের উদ্দেশে চেহারা ও দুহাত পবিত্র মাটি দিয়ে মাসেহ করাকে তাইয়াম্মুম বলে।
তায়াম্মুমের ফরয
তায়াম্মুমের ফরয ৩টি।
- পবিত্রতার নিয়ত করা
- সমস্ত মুখ একবার মাসাহ করা
- দুই হাতের কনুইসহ মাসাহ করা
তায়াম্মুমের সুন্নাত
তায়াম্মুমের সুন্নত ৬ টি।
- তায়াম্মুমের শুরুতে বিসমিল্লাহ পড়া।
- উভয় হাতের তালু মাটিতে রেখে সামনে ও পিছনে একবার টানা সুন্নাত।
- মাটিতে হাত রাখার সময় আঙ্গুল একটু ফাঁকা রাখা।
- মাটি থেকে হাত উঠানোর সময় হাত ঝাঁড়া দেওয়া।
- প্রথমে মুখ ও পরে উভয় হাত মাসেহ করা।
- মুখ ও উভয় হাত মাসেহ করার মাঝে দেরী না করা সুন্নাত।
(তায়াম্মুম করার নিয়ম সংক্ষিপ্তভাবে বর্ণনা করা হলো)
তায়াম্মুমের নিয়ত করে বিসমিল্লাহ বলে তায়াম্মুম শুরু করতে হয়। তায়াম্মুম করার জন্য হাতে মাটি লাগিয়ে নিতে হয়। আঙ্গুল ছড়িয়ে দুই হাত এমনভাবে পাক-পবিত্র মাটির ওপর থাপড়াতে হয় যাতে স্বাভাবিকভাবেই হাতের তালুতে কিছু ধূলা লেগে যায়। অতঃপর উভয় হাত দিযে সমস্ত মুখমণ্ডল মাসেহ করতে হয়। এরপর আবার মাটিতে হাত থাপড়িয়ে ধূলা লাগিয়ে নিয়ে প্রথমে বাম তালু দিয়ে ডান হাত কনুই পর্যন্ত এবং পরে ডান তালু দিয়ে বাম হাত কনুই পর্যন্ত মাসেহ করতে হয়।
(ধারাবাহিকভাবে তায়াম্মুম করার নিয়ম বর্ণনা করা হলো)
- পানি না পাওয়ার কারণে যাকে তাইয়াম্মুম করতে হবে পানি পাওয়ার প্রবল ধারণা থাকলে মোস্তাহাব ওয়াক্ত পার হওয়ার পূর্ব প অপেক্ষা করা তার জন্য মোস্তাহাব। আর কেউ পানি দেয়ার ওয়াদা করলে অবশ্যই তাকে অপেক্ষা করতে হবে, যদিও ওয়াক্ত শেষ হওয়ার আশংকা হয়।
- তাইয়াম্মুমের শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা সুন্নাত।
- মেসওয়াক করা উযুর ন্যায় তাইয়াম্মুমেরও সুন্নাত।
- নিয়ত করা ফরয। (পবিত্রতা অর্জন করা বা নাপাকী দূর করার নিয়ত করবে। কিম্বা নামায, সাজদায়ে তিলাওয়াত প্রভৃতি এমন মৌলিক ইবাদতের নিয়ত করবে যা পবিত্রতা ব্যতীত সহীহ হয় না।
- নিয়ত মুখেও উচ্চারণ করা উত্তম। নিয়তের জন্য নির্দিষ্ট কোন বাক্য নেই। উদাহরণস্বরূপ এরূপ বাক্যে নিয়ত করা যায়:
তায়াম্মুমের নিয়ত:
نويت أن أتيمم لرفع الحدث واستباحة للصلوة وتقربا إلى الله تعالى
অর্থ: আমি নাপাকী দূর করার, নামায বৈধ করার এবং আল্লাহ্ তাআলার নৈকট্য অর্জন করার উদ্দেশ্যে তাইয়াম্মুমের নিয়ত করছি।
- নিয়ত করার পর পবিত্র মাটি বা মাটি জাতীয় বস্তু (যার উপর তাইয়াম্মুম করা যায়)-এর উপর উভয় হাতের তালু মারবে।
- হাত মারার সময় আঙ্গুলগুলো খোলা রাখা সুন্নাত।
- হাত মারার পর উভয় হাত ঐ স্থানে রাখা অবস্থায় একবার সামনের মদিকে একবার পেছনের দিকে নিবে। এটা সুন্নাত।
- হাত এমন ভাবে ঝাড়বে, যেন আলগা ধুলা ঝরে যায়। পুরো মুখ ঐ হাত দ্বারা মাসেহ করবে। এটা ফরয।
- দাড়ি খেলাল করা সুন্নাত। তবে ই বিষয়ে মত ভেদ রয়েছে। যেমন: হযরত ইমাম আবূ ইউসুফের মতে তাইয়াম্মুমের মধ্যে দাড়ি খেলাল করা সুন্নাত নয়।
- আবার মাটিতে অনুরূপভাবে হাত মারবে। (আঙ্গুলের মধ্যে ফাঁক রেখে) হাত সামনে এবং পেছনের দিকে নিবে। এটা সুন্নাত।
- এখানেও (হাত মাসেহের পূর্বেই) উযূর মত উভয় হাতের আঙ্গুল খেলাল করবে। এটা সুন্নাত।
- পূর্বের ন্যায় হাত ঝাড়বে।
- প্রথমে ডান হাত কনুইসহ মাসেহ করবে।
- তারপর বাম হাত কনুইসহ মাসেহ করবে। হাত মাসেহ করা ফরয।
- মাসেহ করার সুন্নাত নিয়ম হলো: বাম হাতের চার আঙ্গুলের পেট (বৃদ্ধ আঙ্গুল ছাড়া) ডান হাতের চার আঙ্গুলের পিঠে রাখবে। তারপর ডান হাতের পিঠের উপর দিয়ে কনুইর দিকে টেনে নিয়ে যাবে। অতঃপর বাম হাতকে উল্টে বাম হাতের তালু এবং বৃদ্ধ আঙ্গুলের পেট দিয়ে ডান হাতের পেটের দিক থেকে আঙ্গুলের দিকে এমনভাবে টেনে নিয়ে যাবে যেন বাম হাতের বৃদ্ধ আঙ্গুলের পেট ডান হাতের বৃদ্ধ আঙ্গুলের পিঠের উপর দিয়ে চলে যায়। অনুরূপভাবে ডান হাত দিয়ে বাম হাত মাসেহ করবে।
- আংটি চুড়ি ইত্যাদিকে তার স্থান থেকে সরিয়ে এমনভাবে হাত মাসেহ করবে যেন সব স্থানে মাসেহ করা হয়।
- তাইয়াম্মুমের মধ্যেও উযুর ন্যায় একের পর এক অঙ্গগুলো লাগাতার (অর্থাৎ, বেশী বিরতি না দিয়ে) করে যাওয়া সুন্নাত।
- তাইয়াম্মুম উযর ন্যায়, তাই উযুর মধ্যে মুখ ও হাত ধোয়ার যে দোয়া পড়া হয়, এমনিভাবে উযুর শেষে যে সব দোয়া পড়া হয়, তাইয়াম্মুমের বেলায়ও সেগুলো পড়ার হুকুম একই হবে।
কি কি বস্তু দ্বারা তাইয়াম্মুম করা জায়েয? তায়াম্মুমের উপকরণ:
পাক মাটি, কংকর, বালি, চুনা, মাটির তৈরী কাঁচা অথবা পাকা ইট, ধুলা-বালি, মাটি, পাথর ইটের তৈরী দেয়াল, পাকা বাসন, (তেল লেগে না থাকলে)। লাকড়ী বা কাপড়ে অথবা অন্য কোন পাক বস্তুতে ধুলাবালি লেগে থাকলে এসব বস্তু দ্বারা তাইয়াম্মুম করা যাবে।
কোন অপবিত্রতায় তায়াম্মুম করা যায়?
উপরে অপ্রকৃত নাপাকীর (নাজাছাতে হুক্মী তথা বে-উযূ বে-গোসল হওয়ার অবস্থা) বর্ণনা করা হয়েছে। ছোট বড় যে কোন অপ্রকৃত নাপাকী অবস্থায় তাইয়াম্মুম দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করা যায়। তবে প্রকৃত নাপাকীর বেলায় তাইয়াম্মুম করলে যথেষ্ঠ হবে না বরং ধৌত করতে হবে।
উল্লেখ্য যে, উযূ ও গোসলের জন্য এক রকম তাইয়াম্মুমই করতে হবে। এক তাইয়াম্মুমই উভয়ের জন্য যথেষ্ট হবে।
কখন তাইয়াম্মুম করতে হবে?
নিম্নলিখিত কারণগুলো ব্যতীত তাইয়াম্মুম করা জায়েয নয়।
১. পানি এক মাইল অথবা তদুর্ধ অথবা এর চেয়েও দূর হতে হবে।
২. পানির কূপ আছে, কিন্তু পানি উঠাবার কোন ব্যবস্থা না থাকলে।
৩. পানির নিকট কোন ক্ষতিকর প্রাণী অথবা কোন শত্রু থাকলে এবং কাছে গেলে কোন বিপদের আশংকা থাকলে।
৪. রেলগাড়ী, উড়োজাহাজ অথবা মোটর গাড়ীতে আরোহণ অবস্থায় পানি না পাওয়া গেলে অথবা উযূ করার সুযোগ না থাকলে বা উযূ করতে গেলে গাড়ী ছেড়ে দেয়ার ভয় থাকলে। তবে রেলগাড়ী বা মোটরে তাইয়াম্মুমের জন্য শর্ত হলো (এক) রেলগাড়ীর অন্য কোন ডাব্বায় (বগিতে) পানি নেই (দুই) পথিমধ্যে এক মাইলের (১.৬৩ কিঃ)-এর মধ্যে পানি অর্জন করা যাবে- এরূপ জানা নেই।
৫. পানি ব্যবহার করলে রোগ বৃদ্ধি অথবা রোগ সৃষ্টি অথবা স্বাস্থ্যের উপর প্রতিক্রিয়া সৃষ্টির ভয় হলোে। অবশ্য এসব ব্যাপারে অনর্থক সন্দেহ করে তাইয়াম্মুম না করা চাই। তবে রোগ বৃদ্ধি পাওয়ার অথবা রোগ সৃষ্টি হওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত হলোে, যেমন, সর্দি, কাশিতে আক্রান্ত লোক শীতকালে ঠান্ডা পানি ব্যবহার করলে ক্ষতি হয়, এমতাবস্থায় গরম পানি দিয়ে গোসল অথবা উযূ করা দরকার। গরম পানি সংগ্রহ করতে না পারলে অথবা গরম পানি ব্যবহার করলেও ক্ষতির আশংকা হলোে তাইয়াম্মুম করবে।
৬. অল্প পানি থাকায় উযূ করলে পিপাসায় কষ্ট করতে হবে অথবা খাবার পাক করতে অসুবিধার সম্ভাবনা আছে।
৭. পানি আছে, কিন্তু নিজে উঠে গিয়ে আনতে সক্ষম নয়, আর পানি এনে দেয়ার জন্য অন্য লোকও না পাওয়া যায়।
৮. যে নামাযের কাযা হয় না, উযূ অথবা গোসল করতে গেলে এমন নামায ছুটে যাওয়ার আশংকা দেখা দিলে। যেমন দু-ঈদের নামায, জানাজার নামায। এগুলোতে উযূ ব্যতীত তাইয়াম্মুম করা যায়।
- উল্লেখ্য, কোন লোকের গোসলের প্রয়োজন, কিন্তু গোসল করলে ক্ষতির আশংকা রয়েছে, উযূ করলে কোন ক্ষতি হবে না, তখন সে গোসলের জন্য তাইয়াম্মুম করে নিবে এবং প্রত্যেক নামাযের জন্য নতুন করে উযূ করে নামায পড়েব। পানির পরিমাণ যদি অল্প হয় ও মাত্র একবার করে মুখ হাত ও পা ধৌত করা যায়, এমতাবস্থায় তায়াম্মুম করবে না- উযূর অঙ্গগুলো একবার করে ধৌত করলেই হবে, উযূর সুন্নাত অর্থাৎ কুলি করা ও নাকে পানি দেওয়া ছেড়ে দিতে হবে। তাইয়াম্মুম করে নামায আদায় করার পর কোন লোক জানতে পারলে যে পানি নিকটেই আছে, তখন তাকে দ্বিতীয়বার নামায পড়তে হবে না। পানি পাওয়ার জন্য চেষ্টা করে থাকলে তখন এ হুকুম প্রযোজ্য হবে; নতুবা উযূ করে দ্বিতীয়বার নামায পড়তে হবে। নামাযের শেষ ওয়াক্তে পানি পাওয়ার সম্ভবনা থাকলে শেষ ওয়াক্তেই নামায পড়া মোস্তাহাব। যেমন রেলগাড়ী অথবা মোটরে আরোহণ করার পর জানতে পারল যে, নামাযের শেষ ওয়াক্তে রেলগাড়ী অথবা মোটর গাড়ী যথাস্থানে পৌঁছে যাবে যেখানে পানি আছে, তখন বিলম্ব করেই নামায পড়বে। তবে গাড়ী পৌঁছার ব্যাপারে সন্দেহ হলোে তাইয়াম্মুম করেই নামায পড়বে।
- কোন লোক পানি অনুসন্ধান করে তাইয়াম্মুম করে নামায আদায় করল, অথচ নামাযের সময় থাকতেই পানি পাওয়া গেল, তখন তাকে দ্বিতীয়বার নামায পড়তে হবে না।
- রেলগাড়ীতে বা উড়োজাহাজে ভ্রমণ করলে মাটি ও পানি না পাওয়া গেলে উযূ ও তাইয়াম্মুম ব্যতীত নামায পড়ে নিবে অর্থাৎ, নামাযের নিয়ত ছাড়া শুধু নামাযের মত উঠা-বসা ইত্যাদি করবে। এমনিভাবে কোন লোক জেলখানায় থাকাকালীন পানি ও মাটি না পেলে উযূ ও তাইয়াম্মুমবিহীন অনুরূপভাবে নামাযের ন্যায় করবে। তবে উভয় অবস্থায় পানি পাওয়ার পর দ্বিতীয়বার নামায পড়তে হবে। মানুষের সৃষ্ট কোন অপারগতায় কেউ উপনীত হলোে এর হুকুমও পূর্ববৎ। যেমন কোন লোকের জেলখানায় থাকা অবস্থায় অন্য কেউ তার উযূর পানি বন্ধ করে দিল, তখন তাইয়াম্মুমের ব্যবস্থাও করতে না পারলে সে অনুরূপভাবে নামাযের ন্যায় করবে।
তাইয়াম্মুম ভঙ্গের কারণ
১. যে যে কারণে উযূ নষ্ট হয় তাইয়াম্মুমও ঐসব কারণে ভঙ্গ হয়।
২. যে সমস্ত কারণে গোসল ফরয হয় ঐ সমস্ত কারণে তাইয়াম্মুম নষ্ট হয়।
৩. যে সব কারণে তাইয়াম্মুম করা হয়েছিল, ঐসব কারণ রহিত হয়ে গেলে তাইয়াম্মুম ভঙ্গ হয়ে যাবে।
৪. পানি পাওয়ার পর তাইয়াম্মুম ভঙ্গ হয়ে যায়।
তায়াম্মুমের আয়াত
আল্লাহ তাআলা বলেন,
فَلَمْ تَجِدُواْ مَاء فَتَيَمَّمُواْ صَعِيدًا طَيِّبًا فَامْسَحُواْ بِوُجُوهِكُمْ وَأَيْدِيكُم مِّنْهُ مَا يُرِيدُ اللّهُ لِيَجْعَلَ عَلَيْكُم مِّنْ حَرَجٍ وَلَـكِن يُرِيدُ لِيُطَهَّرَكُمْ وَلِيُتِمَّ نِعْمَتَهُ عَلَيْكُمْ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ
বাংলায় অনুবাদ- অতঃপর পানি না পাও, তবে তোমরা পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করে নাও-অর্থাৎ, স্বীয় মুখ-মন্ডল ও হস্তদ্বয় মাটি দ্বারা মুছে ফেল। আল্লাহ তোমাদেরকে অসুবিধায় ফেলতে চান না; কিন্তু তোমাদেরকে পবিত্র রাখতে চান এবং তোমাদের প্রতি স্বীয় নেয়ামত পূর্ণ করতে চান-যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
(فَلَمۡ تَجِدُواْ مَآءٗ فَتَيَمَّمُواْ صَعِيدٗا طَيِّبٗا فَٱمۡسَحُواْ بِوُجُوهِكُمۡ وَأَيۡدِيكُم مِّنۡهُۚ )
অতঃপর পানি না পাও, তবে পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করো। সুতরাং তোমাদের মুখ ও হাত তা দ্বারা মাসেহ করো।
তায়াম্মুম প্রবর্তনের কারণ ও ইতিহাস
মুহাম্মদ এর স্ত্রী আয়েশা সংশ্লিষ্ট একটি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পানির অভাবে মাটি দিয়ে তায়াম্মুম করার আদেশ জারী হয়।
১- উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য সহজ করা
২- যেসব অবস্থায় পানি ব্যবহারের ফলে ক্ষতির আশঙ্কা থাকে তা দূর করা, যেমন অসুস্থ হয়ে পড়া, প্রচণ্ড ঠাণ্ডা থাকা ইত্যাদি।
৩- ইবাদতের সাথে সম্পর্ক অব্যাহত রাখা, পানি না থাকার কারণে ইবাদত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে না যাওয়া।
তায়াম্মুম এর কিছু মাসআলা মাসায়েল
১. পানি ব্যবহারে অক্ষম হলোে তায়াম্মুম করে নামাজ পড়া পেশাব পায়খানার চাপের মুখে অজু রক্ষা করে নামাজ পড়ার চেয়ে অনেক উত্তম।
২. দেয়াল অথবা কার্পেটের ওপর ধুলোবালি থাকলে সেখানে হাত মেরে তায়াম্মুম করা বৈধ হবে।
৩. তায়াম্মুমকারী তায়াম্মুম ভঙ্গ না হওয়া পর্যন্ত যত ইচ্ছা ফরজ ও নফল নামাজ আদায় করতে পারে।
৪. অজুকারী তায়াম্মুমকারীর পেছনে নামাজে ইক্তেদা করতে পারে; কেননা আমর ইবনে আস রাযি.যখন প্রচন্ড ঠান্ডার কারণে তায়াম্মুম করে তাঁর সাথীদের ইমামতি করেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তা নাকচ করে দেননি। (বর্ণনায় আবু দাউদ)
৫. যে ব্যক্তি তায়াম্মুম করে নামাজ পড়ল অতঃপর সময় চলে যাওয়ার পূর্বেই পানি পেল, সে নামাজ পুনরায় পড়বে না। আবু সাঈদ খুদরী রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘দুই ব্যক্তি সফরে বের হলোো। পথিমধ্যে নামাজের ওয়াক্ত হলোো তবে তাদের সাথে কোনো পানি ছিল না। অতঃপর তারা পবিত্র মাটি দিয়ে তায়াম্মুম করল। নামাজ পড়ল। এরপর নামাজের সময় শেষ হওয়ার পূর্বেই পানি পেয়ে গেল। দু’জনের একজন অজু করে পুনরায় নামাজ আদায় করল। পক্ষান্তরে অন্যজন করল না। এরপর উভয়েই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এল। ঘটনার বর্ণনা দিল। যে ব্যক্তি নামাজ পুনরায় পড়েনি, তাকে তিনি বললেন,‘তুমি সুন্নত অনুযায়ী আমল করেছ এবং তোমার নামাজ শুদ্ধ হয়েছে। আর যে অজু করে পুনরায় নামাজ পড়েছে তাকে তিনি বললেন, ‘তোমার ছাওয়াব দ্বিগুণ হয়েছে।’ (বর্ণনায় আবু দাউদ)
৬. যে ব্যক্তি নামাজের পূর্বে বা মাঝখানে পানি পেল তার উচিত হবে পানি দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করা। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,‘পবিত্র মাটি মুসলমানের পবিত্রতা অর্জনের বস্তু। যদিও সে দশ বছর পর্যন্ত পানি না পায়। আর যদি পানি পায় তবে সে যেন তা তার চামড়ায় স্পর্শ করায়। কেননা এটা তার জন্য উত্তম।’
৭. মুসলমানকে কোনো কিছুই নামাজ থেকে ফিরিয়ে রাখে না, মুসলমান নামাজকে সুনির্দিষ্ট সময় থেকে পিছিয়েও দেয় না। সে হিসেবে যদি কেউ পানি ব্যবহার করতে অপারগ হয়, অথবা পানি না পায়, তাহলোে সে তায়াম্মুম করে নেবে। আর যদি তায়াম্মুম করতেও অপারগ হয় তবে পবিত্রতা ব্যতীতই নামাজ পড়ে নেবে।
৮. যে পানি ও মাটি কোনোটাই পাবে না সে পবিত্রতা ব্যতীতই সময়মতো নামাজ আদায় করে নেবে। এবং তা আর পুনরায় আদায় করতে হবে না। আল্লাহ তাআলা বলেন, (فَٱتَّقُواْ ٱللَّهَ مَا ٱسۡتَطَعۡتُمۡ ) {অতএব তোমরা যথাসাধ্য আল্লাহকে ভয় কর।} [আত-তাগাবুন:১৬]
তায়াম্মুম শেষ সময় পর্যন্ত পিছিয়ে দেয়া জায়েয আছে যদি পানি পাওয়ার আশা থাকে। আর যদি পানি পাওয়ার আদৌ কোনো আশা না থাকে তাহলোে নামাজের সময় আসার পরপরই নামাজ আদায় করা উত্তম হবে। কেননা উত্তম হলোো সময়মতো নামাজ পড়ে নেয়া।
৯. যদি কেউ নামাজের সময় চলে যাওয়ার আশঙ্কা করে, অতঃপর পানি থাকা সত্ত্বেও তায়াম্মুম করে নামাজ পড়ে নেয় তবে তা জায়েয হবে না। বরং এ অবস্থায় আবশ্যিক হবে অজু করা যদিও নামাজের ওয়াক্ত চলে যায়।
১০. ফরয গোসলের পরিবর্তে তায়াম্মুম করে দেহপবিত্রকরণের বিধান রয়েছে।
১১. মৃত ব্যক্তিকে দাফনের পূর্বে গোসল দিতে হয়। তবে প্রয়োজনীয় পানি না-পাওয়া গেলে তায়াম্মুম করাতে হয়।
১২. পানির অনুপস্থিতে অথবা পানি ব্যবহার করা অসম্ভব হলোে যেসব বিষয়ের জন্য পবিত্রতা ফরজ সেসবের জন্য তায়াম্মুম করা ফরজ। আর যেসবের জন্য পবিত্রতা মুস্তাহাব সেসবের জন্য তায়াম্মুম করা মুস্তাহাব, যেমন কুরআন তিলাওয়াত করা।
পোষ্টটি লিখতে নিম্নক্তো বই/লেখকের লিখনী থেকে সাহায্য নেওয়া হয়েছে: আহকামে জিন্দেগী (মাকতাবাতুল আবরার প্রকাশনী) মাওলানা মুহাম্মদ হেমায়েত উদ্দীন শায়খুল হাদীস, জামেয়া ইসলামিয়া আরার্বিয়া, তাঁতী বাজার, ঢাকা-১১০০ মুহাদ্দিছ, জামিয়া ইসলমিয়া দারুল উূলুম মাদানিয়া, ৩১২, দক্ষীণ যাত্রাবাড়ি, ঢাকা-১২৩৬