তাগুত কি কাকে বলেঃ
মহান আল্লাহকে ছেড়ে যাদের ইবাদত করা হয় এবং তাতে তারা সন্তুষ্ট ও খুশী থাকে ইসলামি পরিভাষায় তাদেরকেই তাগুত বলা হয় । আল্লাহ তাআলা প্রতিটি যুগে অসংখ্য নবী-রাসূল প্রেরণ করেছেন এ নির্দেশ দিয়ে যে, তারা যেন লোকদের এক আল্লাহর ইবাদত ও তাগুত পরিহার করার প্রতি দাওয়াত দেয়।
আল্লাহ তাআলা বলেন :
وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَسُولًا أَنِ اُعْبُدُوا اللَّهَ وَاجْتَنِبُوا الطَّاغُوتَ (النحل 36)
অর্থাৎ, আর আমি অবশ্যই প্রত্যেক জাতির নিকট একজন রাসূল প্রেরণ করেছি যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর এবং তাগুতকে পরিহার কর। (সূরা নাহল : আয়াত ৩৬)
তাগুত কারা ও কত প্রকারঃ
আমরা আগেই জেনেছি যে,মহান আল্লাহকে ছেড়ে যাদের ইবাদত করা হয় এবং তাতে তারা সন্তুষ্ট ও খুশী থাকে ইসলামি পরিভাষায় তাদেরকেই তাগুত বলা হয় । এছাড়াও ইসলামি পরিভাষায় নিম্নোক্ত ব্যক্তিদেরকেও তাগুতের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
১। শয়তান, যে মানুষকে আল্লাহ ব্যতীত অন্যের ইবাদতের দিকে ডাকে।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন :
হে বনি আদম! আমি কি তেমাদেরকে এ মর্মে নির্দেশ দেইনি যে, তোমরা শয়তানের উপাসনা করো না। নি:সন্দেহে সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু । ( সূরা ইয়াসীন: আয়াত ৬০)
২। অত্যাচারী বিচারক, যে আল্লাহর হুকুম-আহকামকে বদলে ফেলে। ইসলামি চেতনা বিরোধী আইন প্রণয়ন করে।
নতুন শরিয়ত প্রবর্তণকারী মুশরিকদে ধিক্কার দিয়ে আল্লাহ বলেন,
أَمْ لَهُمْ شُرَكَاءُ شَرَعُوا لَهُمْ مِنَ الدِّينِ مَا لَمْ يَأْذَنْ بِهِ اللَّهُ (الشوري 21)
অর্থাৎ, তাদের জন্য কি এমন কিছু শরিক আছে, যারা তাদের জন্য দ্বীনের বিধান দিয়েছে, যার অনুমতি আল্লাহ দেননি? (সূরা শুরা : আয়াত ২১)
৩। যে সব বিচারক-শাসনকর্তা মহান আল্লাহ প্রবর্তিত আইনকে বর্তমান যুগে প্রযোজ্য নয় মর্মে ধারণা করে সেসব আইনে বিচার-শাসন পরিচালনা করে না, এবং যারা কোরআন-সুন্নাহ বিরোধী আইনকে বৈধ জ্ঞান করে।
আল্লাহ তাআলা বলেন :
আর আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন যারা সেই মতে বিচার-ফায়সালা করে না তারাই কাফির। (সূরা মায়েদা : আয়াত, ৪৪)
৪। ভবিষ্যৎ বা অদৃশ্য সম্বন্ধে জানে বলে যারা দাবী করে।
কারণ আল্লাহ তাআলা বলেন :
قُلْ لَا يَعْلَمُ مَنْ فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ الْغَيْبَ إِلَّا اللَّهُ (النمل 65)
অর্থাৎ, বল, আল্লাহ ছাড়া আসমানসমূহে ও জমিনে যারা আছে তারা গায়েব জানে না। (সূরা নামল : আয়াত ৬৫)
৫। আল্লাহকে ছেড়ে লোকেরা যার ইবাদত করে, বিপদাপদে ডাকাডাকি করে, আর এতে সে সন্তুষ্ট ।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
আর তাদের মধ্যে যে-ই বলবে, তিনি ছাড়া আমি ইলাহ, তাকেই আমি প্রতিদান হিসেবে জাহান্নাব দেব; এভাবেই আমি জালিমদের আযাব দিয়ে থাকি। ( সূরা আম্বিয়া : আয়াত, ২৯)
সুতরাং প্রতিটি মুমিনের উপর জরুরি হল, যাবতীয় তাগুতকে অস্বীকার ও পরিহার করা। যাতে পরিপূর্ণ মুমিন হতে পারে।
কারণ, আল্লাহ তাআলা বলেন :
যে ব্যক্তি তাগুতকে অস্বীকার করে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনে, অবশ্যই সে মজবুত রশি আঁকড়ে ধরে, যা ছিন্ন হবার নয়। আর আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। (সূরা বাকারা : আয়াত ২৫৬)
উপরোক্ত আয়াত এটাই প্রমাণ করে যে, আল্লাহর ইবাদত ততক্ষণ পর্যন্ত উপকার দিবে না যতক্ষণ না তাঁকে ছেড়ে অন্যের ইবাদত করা হতে বিরত হবে। এ সম্বন্ধে রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
مَنْ قَالَ لاَ إلهَ إلا اللهُ وَكَفَرَ بِمَا يُعْبَدُ مِنْ دُوْنِ اللهِ حَرُمَ مَالُهُ وَدَمُهُ. (رواه مسلم)
অর্থাৎ, যে বলবে, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, এবং তিনি ব্যতীত যাদের ইবাদত করা হয় তাদেরকে অস্বীকার করবে, তার সম্পদ ও জীবন হারাম (নিরাপদ) বলে বিবেচিত হবে। (মুসলিম)।