ইসলাম ধর্মে গোঁপ দাড়ি রাখার বিধান ও মাসায়েল + নখ কাটার সুন্নত ও মাসায়েল + মাথার চুল ও শরীরের অবাঞ্চিত চুল এবং গোপনাঙ্গের লোম কাটার মাসায়েল সম্পর্কে এই পোষ্টটিতে তুলে ধরা হবে। ইসলাম শুধু ধর্ম নয়, একটি পূর্ণ জীবন ব্যবন্থা, তাই জীবনের সকল পদে রয়েছে নির্দশনা। তো চলুন আলোচনা শুরু করা যাক।
গোঁপ দাড়ি রাখার বিধান ও মাসায়েল
* পুরুষের জন্য দাড়ি রাখা ওয়াজিব এবং অন্ততঃ এক মুস্তি লম্বা রাখা ওয়াজিব। দাড়ি মুন্ডানো বা এক মুঠের চেয়ে কম রেখে ছাঁটা বা উপড়ানো হারাম। এক মুঠের চেয়ে লম্বা হলে তা ছেঁটে ফেলানো দোরস্ত আছে। এরূপ চতুর্দিক থেকে সমান করার জন্য কিছু কিছু ছেঁটে ফেলা দোরস্ত আছে। ( ڈاڑھی اور انبیاء کی سنتیں اور صفائی معاملات)
* দাড়ি এক মুঠের চেয়ে খুব বেশী লম্বা রাখা সুন্নাতের খেলাফ।
* গোঁপ দুই দিক থেকে লম্বা করা জায়েয আছে কিন্তু যেন ঠোটের উপর না পড়ে- এভাবে ছোট রাখা সুন্নাত।
* গোঁপ মুণ্ডানো জায়েয কি-না এ ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে- কোন কোন আলেম বিদআত বলেছেন। অতএব না মুণ্ডানো ভাল ৷ গোঁপ ছেঁটে এত ছোট করে রাখবে যেন মুণ্ডানোর ন্যায় হয়ে যায়, এরূপ করা উত্তম।
* মহিলার গোঁপ দাড়ি হলে মুণ্ডানো জায়েয বরং দাড়ি হলে মুণ্ডিয়ে ফেলা মোস্তাহাব। কোনভাবে মূল থেকে তুলে ফেলতে পারলে আরও উত্তম।
* ভাল দেখানোর জন্য পাকা দাড়ি উপড়ে ফেলা নাজায়েয।
* গালের উপরের পশম দাড়ি নয়। এরূপ পশম মুণ্ডন করে রেখার ন্যায় বানানো জায়েয, তবে খেলাফে আওলা।
* হলকূমের পশম কামানো চাইনা, তবে হযরত ইমাম আবূ ইউসূফ (রহঃ) জায়েয বলেন।
* নীচের ঠোটের নিম্নের পশম (বাচ্চা দাড়ি) কামানোকে ফকীহগণ বিদআত বলেছেন, অতএব তা কামানো চাইনা। (ছাফাইয়ে মোআমালাত)
নখ কাটার সুন্নত ও মাসায়েল
* হাত পায়ের নখ কেটে ফেলা সুন্নাত। প্রতি সপ্তাহে একবার কাটা মোস্তাহাব। জুমুআর নামাযের পুর্বেই এ থেকে পাক সাফ হয়ে মসজিদে যাওয়া উত্তম। অন্ততঃ দু সপ্তাহে একবার কাটলেও চলবে। চল্লিশ দিনের বেশী না কাটা অবস্থায় অতিবাহিত হলে গোনাহ হবে।
* দাঁত দিয়ে নখ কাটা মাকরূহ। এতে শ্বেত রোগ হওয়ার আশংকা আছে।
* জানাবাতের অবস্থায় অর্থাৎ, গোসল ফরয থাকা অবস্থায় নখ কাটা মাকরূহ।
* কেউ কেউ শামী গ্রন্থের বরাত দিয়ে নিম্নোক্ত তারতীবে নখ কাটাকে সুন্নাত বলেছেন- হাতের নখ কাটতে প্রথমে ডান হাতের শাহাদাৎ (তর্জনী) আঙ্গুল হতে শুরু করে কনিষ্ঠ আঙ্গুল পর্যন্ত কাটবে। তারপর বাম হাতের কনিষ্ঠ আঙ্গুল হতে শুরু করে বাম হাতের বৃদ্ধাঙ্গুল পর্যন্ত কাটবে, সব শেষে ডান হাতের বৃদ্ধ আঙ্গুলের নখ কাটবে। আর পায়ের নখ কাটতে প্রথমে ডান পায়ের কনিষ্ঠ আঙ্গুল থেকে শুরু করে বৃদ্ধাঙ্গুল পর্যন্ত তারপর বাম পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুল থেকে শুরু করে কনিষ্ঠ আঙ্গুলে শেষ করবে। তবে উল্লেখ্য যে, দুররে মুখতার গুন্থকার হাফেয ইবনে হাজারের বরাত দিয়ে এবং স্বয়ং স্বামী গ্রন্থকারও আল্লামা সুয়ূতী ও ইবনে দাকীকুল ঈদ-এর বরাত দিয়ে উপরোক্ত তারতীব সুন্নাত হওয়া সম্পর্কিত বর্ণনা ও রেওয়ায়েত গ্রহণযোগ্য নয় বলে উল্লেখ করেছেন। অতএব যে কোন ভাবে সম্ভব কেটে নিবে। তবে প্রথমে ডান হাতের তারপর বাম হাতের নখ কাটা সুন্নাত হবে এতে কোন সন্দেহ নেই।
* কাটা নখ মাটির নীচে দাফন করে দেয়া উত্তম। অন্ততঃ কোন ভাল জায়গায় ফেলে দেয়াও দুরস্ত আছে। নাপাক ও খারাপ জায়গায় ফেলা চাইনা।
মাথার চুল ও শরীরের অবাঞ্চিত চুল এবং গোপনাঙ্গের লোম কাটার মাসায়েল
* সমস্ৰ মাথায় কানের মধ্য পর্যন্ত বা কানের লতি পর্যন্ত্ৰ বা কাঁধ পর্যন্ত চুল রাখা (অর্থাৎ, বাবরি রাখা) এবং হজ্জ ও উমরার সময় সমস্ৰ মাথা মুণ্ডিয়ে ফেলা সুন্নাত। সব স্থানে সমান করে ছেঁটে ফেলা জায়েয। বাবরি রাখলে তার যত্ন নেয়া কর্তব্য।
* মাথার কিছু অংশ কামানো আর কিছু অংশে চুল রাখা নাজায়েয। রোগ ব্যাধির কারণে হলেও জায়েয নয়। মুণ্ডাতে হলে সমস্ৰ মাথায় চুল মুণ্ডিয়ে ফেলবে।
* মাথায় টিকি রাখা বা কোন দরগায় মান্নত মেনে জন্মচুল রাখা নাজায়েয।
* মহিলাদের ন্যায় পুরম্নষের চুল রেখে খোপা বাধা বা বেণী বাধা জায়েয নয়।
* মাথা না মুণ্ডিয়ে শুধু গর্দানের পশম মুণ্ডানো জায়েয, তবে উত্তম নয়।
* মহিলাদের মাথা যুণ্ডানো বা চুল ছাঁটা হারাম। হাদীস শরীফে এরূপ মহিলাদের প্রতি লা’নত এসেছে।
* ভাল দেখানোর জন্য পাকা চুল উঠিয়ে ফেলা নাজায়েয। অবশ্য জেহাদের ময়দানে কাফেরদের অন্তরে ভীতি সঞ্চারের জন্য এরূপ করা জায়েয আছে।
* দাড়িতে কলপ/খেযাব লাগানোর যা মাসায়েল, চুলের কলপ/খেযাব লাগানোর মাসআলাও অনুরূপ। দেখুন ৪৭৬ পৃষ্ঠা।
* নাভির নীচের পশম পুরম্নষের জন্য কামিয়ে ফেলা উত্তম। কোন রকম লোম নাশকের দ্বারা উপড়ে ফেলাও জায়েয আছে। মেয়েদের জন্য উপড়ে ফেলাই সুন্নাতের মোয়াফেক।
* নাভির নীচের পশম কামানোর সময় নাভির দিক থেকে শুরম্ন করা নিয়ম। অন্ডকোষ, তার নীচে ও মলদ্বারে পশম থাকলে সবই কামিয়ে ফেলবে।
* নাকের মধ্যের পশম না উপড়িয়ে কাঁচির দ্বারা কাটা উত্তম।
* বগলের পশম উপড়ে ফেলাই উত্তম, তবে কামানোও জায়েয।
* কানের মধ্যে পশম থাকলে তাও কেটে ফেলবে।
* বুক ও পিঠের পশম কামানো জায়েয আছে তবে ভাল নয়।
* উপরে উল্লেখিত স্থানসমূহ ব্যতীত শরীরের অন্যান্য স্থানের পশম যেমন পায়ের নলা, রান ও হাত ইত্যাদির পশম রাখা এবং কাটা উভয়ই দোরস্ত আছে।
* বগলের পশম, নাভির নীচের পশম, গোঁপ ইত্যাদি প্রত্যেক সপ্তাহে একবার পরিষ্কার করা মোস্তাহাব। শুক্রবার জুমুআর নামাযের আগেই এসব থেকে পাক সাফ হয়ে মসজিদে যাওয়া উত্তম। দু’ সপ্তাহে একবার করলেও জায়েয। একেবারে শেষ সীমা চল্লিশ দিন। এ সব থেকে পাক সাফ না হওয়া অবস্থায় চল্লিশ দিন অতিবাহিত হয়ে গেলে গোনাহ হবে।
* জানাবাতের অবস্থায় অর্থাৎ, যখন গোসল ফরয হয়, তখন চুল বা এসব পশম কাটা ছাঁটা মাকরূহ।
* বিনা অপারগতায় অন্যের দ্বারা বগলের পশম সাফ করানো ভাল নয়।
* ভ্রু যদি বিশৃংখল থাকে তাও কিছু কিছু কেটে-হেঁটে সমান করে দেয়া দুরস্ত আছে। তবে মহিলাগণ বর্তমানে যেভাবে ভ্রু তুলে একেবারে সরু করে রাখে, এটা আল্লাহর দেয়া গঠনে এক ধরনের বিকৃতি। এ থেকে বিরত থাকাই জরুরী।
* কাটা চুল মটির নীচে দাফন করে দেয়া উত্তম। কোন ভাল জায়গায় ফেলে দেয়াও দুরস্ত আছে, কিন্তু নাপাক ও খাবার স্থানে ফেলা চাই না।
সূত্রঃ আহকামে জিন্দেগী।
উল্লিখিত পোষ্টটি থেকে আমরা যে সমস্ত ইসলাম ধর্মে গোঁপ দাড়ি রাখার বিধান ও মাসায়েল + নখ কাটার সুন্নত ও মাসায়েল + মাথার চুল ও শরীরের অবাঞ্চিত চুল এবং গোপনাঙ্গের লোম কাটার মাসায়েল সম্পর্কে জানলাম, মহার রব্বুল আলামিনের নিকট পার্থনা, আমাদের তা মেনে সুন্নাত, আদব ও আখলাকের সহিত চলার সুযোগ দান করুন। আমিন।