✅ বাংলাদেশে বর্তমানে বাণিজ্যিক ছাগল প্রজনন খামার না থাকায় মাঠ পর্যায় হতে ছাগল সংগ্রহ করতে হবে। মাঠ পর্যায়ে ব্যাক বেঙ্গল ছাগল, বাচ্চা ও দুধ উৎপাদন ক্ষমতার ভিনড়বতা বিদ্যমান।
উক্ত ভিনড়বতা বংশ অথবা/এবং পরিবেশগত কারণ বা স্বতন্ত্র উৎপাদন দক্ষতার জন্য হতে পারে। সে প্রেক্ষাপটে ব্যাক বেঙ্গল ছাগল খামার প্রতিষ্ঠার জন্য বংশ বিবরণের ভিত্তিতে বাছাই ও নিজস্ব উৎপাদন বা পূনরুৎপাদন বৈশিষ্ট্যাবলীর ভিত্তিতে বাছাই বিবেচনায় রেখে ছাগল নির্বাচন করা যেতে পারে।
▶ বংশ বিবরণের ভিত্তিতে বাছাইঃ
মাঠ পর্যায়ে বংশ বিবরণ পাওয়া দুরূহ। কারণ খামারীরা ছাগলের বংশ বিবরণ লিখিত আকারে সংরক্ষণ করেন না। তবে তাঁদেও সাথে আলোচনা করে একটি ছাগী বা পাঁঠার বংশের উৎপাদন ও পূনরুৎপাদন দক্ষতা সম্বন্ধে ধারনা নেয়া যেতে পারে। ছাগীর মা/দাদী/নানীর প্রতিবারে বাচ্চার সংখ্যা, দৈনিক দুধ উৎপাদন, বয়োপ্রাপ্তির বয়স, বাচ্চার জন্মের ওজন ইত্যাদি সংগ্রহ করা সম্ভব। পাঁঠা নির্বাচনের ক্ষেত্রে পাঁঠার মা/দাদী/নানীর তথ্যাবলীর উপর নির্ভর করা যেতে পারে। একটি উনড়বত বৱ্যাক বেঙ্গল ছাগী বা পাঁঠার বংশীয় গুনাগুন নিমড়বরূপ হওয়া প্রয়োজন।
▶ নিজস্ব উৎপাদন/পূনরুৎপাদন বৈশিষ্ট্যাবলীর ভিত্তিতে বাছাইঃ
এ ক্ষেত্রে দু’টি বিষয় বিবেচনা করা প্রয়োজন। ছাগী ও পাঁঠার উৎপাদন এবং পূনরুৎপাদন বৈশিষ্ট্যাবলী এবং এদের দৈহিক বৈশিষ্ট্যাবলী। পাঁঠা নির্বাচনের ক্ষেত্রে উৎপাদন এবং পূনরুৎপাদন বৈশিষ্ট্যাবলী তার মা/দাদী/নানীর গুনাগুনের উপর নির্ভর করবে। তবে পাঁঠার দৈহিক বৈশিষ্ট্যাবলীর বিবেচনায় নির্বাচন করা যেতে পারে। ছাগী নির্বাচনে উৎপাদন ও পূনরুৎপাদন বৈশিষ্ট্যাবলী নিমড়বরূপ হবে।
▶ ছাগীর উৎপাদন/ পূনরুৎপাদন বৈশিষ্ট্যাবলীঃ
ঘন ঘন বাচ্চা দেওয়ার ক্ষমতা : বছরে কমপক্ষে ২ বার এবং প্রতিবার কমপক্ষে ২টি বাচ্চা
ন্যূনতম দৈনিক দুধ উৎপাদন :-৬০০ মি.লি
প্রতিটি বাচ্চার জন্ম ওজন : >১ কেজি
বয়োঃপ্রাপ্তির বয়স : ৪.৫ – ৫ মাস
বয়োঃপ্রাপ্তির ওজন : >১০ কেজি
দুগ্ধ প্রদানকাল : ৩ মাস
▶ ছাগী নির্বাচনঃ
ছাগীর নিমড়বলিখিত বৈশিষ্ট্যাবলী থাকা প্রয়োজন।
মাথা :- চওড়া ও ছোট হবে।
দৈহিক গঠন :- শরীর কৌনিক এবং অপ্রয়োজনীয় পেশীমুক্ত হবে।
বুক ও পেট :- বুকের ও পেটের বেড় গভীর হবে।
পাজরের হাড় :- পাজরের হাড় চওড়া এবং দুইটি হাড়ের মাঝখানে কমপক্ষে এক আঙ্গুল ফাঁকা জায়গা থাকবে।
ওলান :- ওলানের দৈর্ঘ্য এবং প্রস’ সামঞ্জস্যপূর্ণ থাকবে। বাঁটগুলো হবে আঙ্গুলের মত একই আকারের এবংসমান-রালভাবে সাজানো। দুধের শিরা উলেৱখযোগ্যভাবে দেখা যাবে।
বাহ্যিক অবয়ব :- আকর্ষণীয় চেহারা, ছাগী সুলভ আকৃতি, সামঞ্জস্যপূর্ণ ও নিখুঁত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ।
▶ পাঁঠা নির্বাচনঃ
লাভজনক বৱ্যাক বেঙ্গল ছাগল খামার প্রতিষ্ঠার জন্য উলেৱখিত জাতের পাঁঠা নির্বাচনের ক্ষেত্রে দৈহিক যে সমস- গুনাবলী বিবেচনাপ্রয়োজন তা নিমড়বরূপ। বিভিনড়ব বয়সে দৈহিক বৈশিষ্ট্যের তারতম্য হয়। উনড়বত গুনাগুন সম্বলিত একটি পাঁঠার নিমড়বলিখিত বৈশিষ্ট্যাবলী থাকা প্রয়োজন।
চোখ : পরিষ্কার, বড় ও তীক্ষ্ণ দৃষ্টি সম্পনড়ব হবে।
ঘাড় : খাটো ও মোটা থাকবে।
বুক : গভীর ও প্রশস- হবে।
পিঠ : প্রশস্ত হবে।
লয়েন : প্রশস্ত ও পুরু এবং রাম্প এর উপরিভাগ সমতল ও লম্বা থাকবে।
পা : সোজা, খাটো এবং মোটা হবে। বিশেষ করে পিছনের পাদ্বয় সুঠাম ও শক্তিশালী হবে এবং একটি হতে অন্যটি বেশ পৃথক থাকবে।
অন্ডকোষ : শরীরের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে ঝুলানো থাকবে।
বয়স : অধিক বয়স্ক (২ বছর বয়সের বেশী) পাঁঠা নির্বাচন করা যাবে না।
▶ সুস্থ ছাগলের বৈশিষ্ট্যঃ
সুস্থ ছাগলের নাড়ীর স্পন্দন প্রতি মিনিটে ৭০-৯০ বার, শ্বাস-প্রশ্বাস প্রতি মিনিটে ২৫-৪০ বার এবং তাপমাত্রা ৩৯.৫ সেঃ হওয়া উচিত। সুস্থ ছাগল দলবদ্ধভাবে চলাফেরা করে, মাথা সবসময় উঁচু থাকে, নাসারন্ধ থাকবে পরিষ্কার, চামড়া নরম, পশম মসৃন ও চকচকে দেখাবে এবং পায়ু অঞ্চল থাকবে পরিচ্ছন্ন।
▶ ছাগলের পরিবহন পদ্ধতি ও নিরাপত্তাঃ
◊ নির্বাচিত ছাগলকে পূর্বে পিপিআর ভ্যাকসিন দেয়া না থাকলে পরিবহনের ২১ দিন পূর্বে পিপিআর ভ্যাকসিন দিতে হয়। পরিবহনের পূর্বে ছাগলকে পর্যাপ্ত পরিমাণ লবণ ও চিটাগুড় মিশ্রিত জল (জল ১ লিটার, লবণ ১০ গ্রাম ও চিটাগুড় ৩০ গ্রাম) খাওয়াতে হবে। অতিরিক্ত গরম বা ঠান্ডা কিংবা ঝড়-বৃষ্টিতে এদের এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় পরিবহন করা মোটেও উচিত নয়।
◊ খামার এলাকার বেড়া বা নিরাপত্তা বেস্টনী এমনভাবে নির্মান করতে হবে যাতে সেখানে অনাকাঙ্খিত ব্যক্তি, শেয়াল কুকুর ও অন্যান্য বন্যপ্রাণী প্রবেশ করতে না পারে।
◊ প্রবেশপথে ফুটবাথ বা পা ধোয়ার জন্য ছোট চৌবাচ্চায় জীবাণুনাশক মেশানো জল রাখতে হবে। খামারে প্রবেশের আগে খামারে গমনকারী তার জুতা/পা ডুবিয়ে জীবাণুমুক্ত করবেন।
◊ খামারের জন্য সংগৃহীত নতুন ছাগল সরাসরি খামারে পূর্বে বিদ্যমান ছাগলের সাথে রাখা যাবে না। নূতন আনীত ছাগলদেরকে স্বতন্ত্র ঘরে সাময়িকভাবে পালনের ব্যবস্থা করতে হবে। এ ধরনের ঘরকে পৃথকীকরণ ঘর বা আইসোলেশন শেড বলে। অন্ততপক্ষে দুই সপ্তাহ এই শেডে রাখা বিশেষ জরুরি।
◊ এসব ছাগলের জন্য প্রাথমিক কিছু চিকিৎসার ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রথমে এদেরকে কৃমিনাশক খাওয়াতে হবে। এজন্য বহিঃপরজীবী এবং আন্তঃ পরজীবীর জন্য কার্যকর কৃমিনাশক প্রয়োগ করতে হবে। চর্মরোগ প্রতিরোধের জন্য প্রতিটি ছাগলকে (০.৫%) শূন্য দশমিক পাঁচ শতাংশ ম্যালাথিয়ন দ্রবণে গোসল করাতে হবে।
◊ আইসোলেশন শেডে ছাগল রাখার পর ১৫ দিনের মধ্যে যদি কোনো রোগ না দেখা দেয় তাহলে প্রথমে পিপিআর রোগের ভ্যাকসিন এবং সাত দিন পর গোটপক্সের ভ্যাকসিন প্রয়োগ করতে হবে। শেষ টিকা প্রদানের সাত দিন পর এসব ছাগলকে মূল খামারে নেয়া যেতে পারে।
◊ প্রতিদিন সকাল এবং বিকালে ছাগলের ঘর পরিষ্কার করতে হবে। কোনো ছাগল যদি অসুস্থ হয় তাহলে তাকে আলাদা করে আইসোলেশন শেডে রেখে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।
◊ যদি কোনো ছাগল মারা যায় তবে অবশ্যই তার কারণ সনাক্ত করতে হবে। ল্যাবরেটরিতে রোগ নির্ণয়ের পর তদনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা বিশেষ করে অন্যান্য ছাগলের অন্য নিতে হবে। মৃত ছাগলকে খামার থেকে দূরে নিয়ে মাটির গভীরে পুতে বা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। রোগাক্রান্ত ছাগলের ব্যবহার্য সকল সরঞ্জামাদি ও দ্রব্যাদি সঠিকভাবে জীবাণুমুক্ত করতে হবে।
hi kaml jjd