Skip to content

 

ধন্য আশা কুহকিনী! তোমার মায়ায় অসার সংসারচক্র ঘোরে নিরবধি! সারমর্ম

ধন্য আশা কুহকিনী! তোমার মায়ায় অসার সংসারচক্র ঘোরে নিরবধি! সারমর্ম

ধন্য আশা কুহকিনী! তোমার মায়ায়

অসার সংসারচক্র ঘোরে নিরবধি!

দাঁড়াইত স্থিরভাবে, চলিত না হায়!

মন্ত্রবলে তুমি চক্র না ঘুরাতে যদি!

ভবিষ্যৎ-অন্ধ মূঢ় মানব-সকল

ঘুরিতেছে কর্মক্ষেত্রে বর্তুল আকার;

তব ইন্দ্রজালে মুগ্ধ; পেয়ে তব বল

যুঝিছে জীবন-যুদ্ধ হায় ! অনিবার।

নাচায় পুতুল যথা দক্ষ বাজিকরে,

নাচাও তেমনি তুমি অর্বাচীন নরে।

সারমর্মঃ

আশা জীবন-সংসারের অদৃশ্য চালিকাশক্তি। আশা না থাকলে মানবজীবন ছবির ও জড়তায় পর্যবসিত হতো। আশা আছে বলেই এর মন্ত্র-মায়ায় মানুষ সামনে এগিয়ে চলে, সমৃদ্ধির লক্ষ্যে জীবন-যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়।

সারাংশ ও সারমর্ম লেখার নিয়মঃ

আকারে বড় গদ্যের সংক্ষিপ্ত প্রকাশকে সারাংশ এবং একটি পদ্যের মূলভাবকে সারমর্ম বলা হয়। বাংলা দ্বিতীয় পত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সারাংশ বা সারমর্ম। অনেকেই সারাংশ ও সারমর্ম কীভাবে লিখবে বুঝতে না পেরে মুখস্থ করে। কিন্তু নিয়ম জানা থাকলে অল্পসময়েই সারাংশ ও সারমর্ম লিখে অন্য বিষয় যেমন ভাব-সম্প্রসারণ বা রচনা লিখন যেগুলোতে বেশি সময় লাগে সেগুলোতে মনোযোগ দেওয়া যায়।

গদ্যরচনার অন্তর্নিহিত বক্তব্যকে সংক্ষেপে লেখার নাম সারাংশ, আর কাব্যভাষায় লেখা কোনো রচনার মূলভাবকে সংক্ষেপে লেখার নাম সারমর্ম। সারাংশকে সারসংক্ষেপ এবং সারমর্মকে মর্মার্থও বলা হয়ে থাকে। একটি বিষয় সম্পর্কে সংক্ষেপে ধারণা পেতে সারাংশ ও সারমর্ম বিশেষ ভূমিকা পালন করে। সারাংশ ও সারমর্ম লেখা শিখতে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো অনুসরণ করতে পারে:

ক. প্রদত্ত রচনার বিবরণ ও ভাবকে অনুসরণ করে সারাংশ ও সারমর্ম লিখতে হয়।

খ. অনধিক চার বাক্য বা চল্লিশ শব্দের মধ্যে সারাংশ ও সারমর্ম সীমিত রাখা দরকার।

গ. প্রদত্ত রচনার মূল কথা যাতে সারাংশ ও সারমর্মে বাদ না পড়ে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হয়।

ঘ. সারমর্ম বা সারাংশ লেখার সময়ে উদাহরণ, উদ্ধৃতি, পরিসংখ্যান, তথ্য-উপাত্ত ইত্যাদি পুরোপুরি বাদ দিতে হয়।

ঙ. সারাংশ ও সারমর্মের ভাষায় কোনো ধরনের কাব্যধর্মিতা রাখা যায় না। ভাষা হতে হয় দ্ব্যর্থহীন ও আবেগবর্জিত।

চ. সারাংশ ও সারমর্মে পুনরাবৃত্তি পুরোপুরি বর্জনীয়।

ছ. সারাংশ বা সারমর্ম লেখার সময়ে নিজস্ব বক্তব্য, মন্তব্য বা মত প্রকাশের কোনো সুযোগ নেই।

জ. পড়তে হবে ও বুঝতে হবে। সারমর্ম বা সারাংশ লেখার সময় অনুচ্ছেদের কথা বা বাক্য লিখে দিলে চলবে না। আগে মূল ভাব বুঝতে হবে, এরপরই সাজিয়ে সংক্ষেপে লিখতে হবে। কবিতা, গদ্য বা রচনা খেয়াল করে পড়লেই মূল ভাব আঁচ করা যাবে। অর্থাৎ ভালোভাবে পড়লেই মূল বিষয়বস্তু বোঝা যাবে।

ঝ. কোনো কোনো সময় রচনায় একাধিক মূল ভাব বা বক্তব্যও থাকতে পারে। যদি এমনটি হয়, তাহলে আসল মূল ভাব বোঝার সহজ উপায় হলো রচনার বাক্যগুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ লাইনগুলো শনাক্ত করা। এরপর বাক্যগুলোর সঙ্গে কোন ভাবটি বেশি কাছাকাছি তা যাচাই করা।

ঞ. কোন বাক্যগুলো দরকারি, কোনগুলো অদরকারি—সেগুলো আলাদা করতে হবে। তাহলে কাজটা সহজ হবে। মূল রচনার যে অংশটা প্রশ্নে থাকবে, সেখানে উল্লিখিত উদ্ধৃতি, বর্ণনা, সংলাপ, উদাহরণ, উপমা বাদ দিতে হয়।

চ. সারমর্ম কিংবা সারাংশ বড় করে লেখার সুযোগ নেই। আর লেখার গণ্ডি অবশ্যই রচনার মূল ভাবের মধ্যেই যেন সীমিত থাকে। এখানে নিজের ইচ্ছামতো কোনো মন্তব্য বা  মতামত লেখা যাবে না।

সারাংশ ও সারমর্ম এর মধ্যে পার্থক্যঃ

  • কোনো গদ্য বা কবিতা রচনায় যেসব যুক্তি, দৃষ্টান্ত, উপমা ও অলঙ্কার থাকে তা বাদ দিয়ে সহজ-সরল ভাষায় বিষয়টি সংক্ষেপে প্রকাশ করার নামই সারাংশ বা সারমর্ম। সারাংশ হলো একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর বিস্তারিতভাবে লিখিত এক বা একাধিক অনুচ্ছেদের মূল বক্তব্যটিকে সংক্ষেপে উপস্থাপন করা। অপরদিকে সারমর্ম হলো কোনাে কবিতার একাধিক পঙক্তির মূল ভাবটি সংক্ষেপে উপস্থাপিত হলে, তাকে উপস্থাপন করা।
  • গল্প-কবিতা ছোট-বড় আকারে থাকতে পারে। কোনো কিছু বোঝাতে গিয়ে নানা প্রসঙ্গ আসতে পারে, বাক্যের সংখ্যাও বাড়তে পারে। গল্প বা কবিতা যত বড়ই হোক, এর মূল ভাব কিন্তু ছোট। সহজ ও সাবলীল ভাষায় গল্প বা কবিতাকে সংক্ষেপ করা বা এর অন্তর্নিহিত ভাব লেখাই হলো পুরো ঘটনার সারমর্ম বা সারাংশ।গদ্যের ভাবসংক্ষেপ হলো সারাংশ আর পদ্যের ভাবসংক্ষেপ সারমর্ম।
  • মোট কথা, কোনো লেখা ছোট আকারে আকর্ষণীয় ভাষায় প্রকাশ করার নামই সারাংশ বা সারমর্ম। কবিতার ক্ষেত্রে এই সংক্ষিপ্তকরণকে বলা হয় সারমর্ম এবং গদ্যের ক্ষেত্রে একে সারাংশ হিসেবে অভিহিত করা হয়। আর এটিই সারাংশ ও সারমর্মের প্রধান পার্থক্য।

Copyright Notice

কপি করা নিষিদ্ধ!