প্রিয় খামারিয়ান পাঠকবুন্ধ, নতুন একটি আলোচনাতে আপনাকে স্বাগতম জানাই, এই পোষ্টটিতে আলোচনা করব, নবীর জন্ম তারিখ কবে? ১২ই রবিউল আউয়াল ও ঈদে মিলাদুন্নবী পালন সম্পর্কে।
নবীর জন্ম তারিখ কবে? ১২ই রবিউল আউয়াল ও ঈদে মিলাদুন্নবী পালন
১২ই রবিউল আউয়াল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্ম দিবস হিসেবে পরিচিত। তাই এ দিনে কেউ কেউ ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করেন ৷ আবার কেউ কেউ জশনে জুলুসে ঈদে মিলাদুন্নবী করেন বা বিভিন্ন জন বিভিন্ন ভাবে এই দিনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্ম বার্ষিকী পালন করেন।
‘ঈদে মিলাদুন্নবী’ অর্থ নবীর জন্ম উপলক্ষে খুশি বা নবীর জন্ম দিবসের উৎসব। আর ‘জশনে জুলূসে ঈদে মিলাদুন্নবী’ অর্থ নবীর জন্ম উৎসব উপলক্ষে বর্ণাঢ্য মিছিল। ১২ই রবিউল আউয়ালে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্ম বার্ষিকী পালন এবং এসব উৎসব ও অনুষ্ঠান করা হবে কি-না এ ব্যাপারে নিম্নোক্ত কয়েকটি বিষয় সামনে রাখা যেতে পারে।
- ১। ১২ই রবিউল আউয়াল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্ম তারিখ কি-না বিষয়টি বিতর্কিত বরং অধিকাংশ মুহাক্কিক আলেমের মতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্ম তারিখ হল ৮ই রবিউল আউয়াল। অতএব মুহাক্কিক উলামায়ে কেরাম এর মত অনুসারে ১২ই রবিউল আউয়াল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্ম দিবসের উৎসব করা হলে তা হবে বাস্তবতা বিরোধী এবং অসঙ্গত।
- ২। ১২ই রবিউল আউয়াল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্ম তারিখ কি-না তা নিয়ে প্রচুর মতবিরোধ রয়েছে। পক্ষান্তরে এ তারিখটি রাসূল (সাঃ)-এর ওফাতের তারিখ এরূপ অনেকের মত রয়েছে। অতএব যে তারিখটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওফাতের তারিখ, সে তারিখ মুসলিম উম্মাহর জন্য এক বেদনাবহ স্মৃতি বিজড়িত তারিখ হতে পারে-উৎসবের নয়। তাহলে এদিনে উৎসব করাও অসঙ্গত হবে বৈকি?
- ৩। যদি মেনেও নেয়া হয় যে, ১২ই রবিউল আউয়াল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্ম তারিখ, তবুও ইসলামে জন্মদিবস বা মৃত্যুদিবস; জন্মবার্ষিকী বা মৃত্যুবার্ষিকী পালনের কোন নীতি রাখা হয়নি-এগুলো মানুষের সৃষ্টি রছম। স্বয়ং সাহাবায়ে কিরামও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্মবার্ষিকী, তাঁর মৃত্যুবার্ষিকী পালন করেননি। যদি তাঁরা পালন করতেন তাহলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্ম তারিখ নিয়ে তাদের মধ্যে বিরোধ হওয়ার কোন অবকাশ ছিল না।
- ৪। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সীরাত মোবারক নিয়ে আলোচনা করা এবং এরূপ আলোচনার মজলিস অত্যন্ত বরকতময়। রাসূল (সাঃ)-এর প্রতি মহব্বত এবং যওক শওক নিয়ে এরূপ আলোচনা করা ও তাতে শরীক হওয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রেমের এক অপরিহার্য দাবী। অতএব ১২ই রবিউল আউয়াল তারিখে এরূপ মজলিস না করে অন্য যে কোন দিন ও যে কোন মাসে করা হলে একদিকে যেমন রহমত ও বরকত লাভ করা যাবে, অপরদিকে অসঙ্গতি ও রছমের অনুসরণ থেকেও নিষ্কৃতি পাওয়া যাবে।
- ৫। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সীরাত সারা বৎসর আলোচনার বিষয়, কুরআন সুন্নায় বর্ণিত সমুদয় আদর্শইতো রাসূলের সীরাত। অতএব সারা বৎসরই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সীরাত নিয়ে আলোচনার মজলিস হওয়া বাঞ্ছনীয়। শুধু রবিউল আউয়াল মাসেই এরূপ মজলিস মাহফিল হওয়া বাঞ্ছনীয় নয়। শুধু রবিউল আউয়াল মাসেই এরূপ মজলিস মাহফিল করা হয় অন্য মাসে করা হয় না- এটাও এক রছম হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ রছমও ভেঙ্গে দিয়ে সারা বৎসরের সব সময় সীরাত নিয়ে আলোচনার মোবারক মাহফিলের ব্যবস্থা করতে হবে।
ফাতেহা ইয়াযদহম কি?
‘ফাতেহা’ বলতে বুঝানো হয় কোন মৃত্যের জন্য দোয়া করা, ঈছালে ছওয়াব করা। ‘ইয়াদহম’ ফার্সী শব্দটির অর্থ একাদশ। ৫৬১ হিজরী মোতাবেক ১১৮২ খৃষ্টাব্দের ১১ই রবিউস্সানী তারিখে বড়পীর শায়খ আব্দুল কাদের জিলানী (রহঃ) ইন্তেকাল করেন। তাঁর মৃত্যু উপলক্ষে রবিউস্ সানীর ১১ই তারিখে যে মৃত্যুবার্ষিকী পালন, উরস ও ফাতেহাখানী হয় তাকে বলা হয়ে থাকে “ফাতেহা ইয়াযদহম”।
পূর্বের পোষ্টে আলোচনা করা হয়েছে যে, ইসলামে জন্মবার্ষিকী বা মৃত্যু বার্ষিকী পালনের কোন নিয়ম রাখা হয়নি। রাসূল (সাঃ), সাহাবা ও তাবিয়ীনদের যুগে তথা আদর্শ যুগে জন্মবার্ষিকী, মৃত্যুবার্ষিকী, উরস ইত্যাদি পালন করা হত না। এগুলো পরবর্তীতে সৃষ্টি হয়েছে। অতএব ইসলামের নামে এসব অনুষ্ঠান রছম ও বিদআত। তাই ফাতেহা ইয়াযদহম নামে শায়খ আব্দুল কাদের জিলানী (রহঃ)-এর মৃত্যুবার্ষিকী পালন ও উরস করা শরী আত সমর্থিত অনুষ্ঠান নয়। তবে তিনি অনেক উঁচু দরের ওলী ও বুযুর্গ ছিলেন, তাই এ নির্দিষ্ট তারিখের অনুসরণ না করে অন্য যে কোন দিন তাঁর জন্য দোয়া করলে এবং জায়েয নিয়ময় তাঁর জন্য ঈছালে ছওয়াব করলে তাঁর রূহানী ফয়েয ও বরকত লাভের ওছীলা হবে এবং তা ছওয়াবের কাজ হবে।
আজকের মত এখানেই সমাপ্ত, দেখা হবে পরবর্তী কোন আলোচনায় উক্ত পোষ্টটির মাধ্যমে নবীর জন্ম তারিখ কবে? ১২ই রবিউল আউয়াল ও ঈদে মিলাদুন্নবী পালন সম্পর্কে আমি আপনাদের সঠিক তথ্য জানাতে পেরোছি। খামারিয়ান.কম এর সাথেই থাকুন।