প্রতিদিন মোট পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরয। যথাঃ ফজর, যোহর, আসর, মাগরিব ও ইশা। বিতর নামায ওয়াজিব এবং এটা ইশার অধীন।
ফজরের নামায
ফজরের নামায কত রাকাত পড়তে হয়?
- ফজরে দুই রাকআত সুন্নাতে মুয়াক্কাদা এবং দুই রাকআত ফরয।
ফজরের নামযের সময়/ওয়াক্ত কখন শুরু হয়?
সুবহে সাদেক থেকে নিয়ে সূর্যোদয় পর্যন্ত হলো ফজরের নামাযের ওয়াক্ত।
তবে আলো পরিস্কার হওয়ার পর সূর্যোদয়ের এতটুকু পূর্বে নামায শুরু করা উত্তম যেন সুন্নাত পরিমাণ কিরাত সহকারে নামায আদায় করার পর যদি নামায ফাসেদ হওয়ার কারণে পুনরায় পড়তে হয়, তাহলোে পুনরায় মাছনূন কিরাত যোগে নামায আদায় করা যায়। অর্থাৎ, মোটামুটি সূর্যোদয়ের আধঘন্টা পূর্বে নামায শুরু করলে উত্তম হয়।
ফজরের দুই রাকআত সুন্নাতে মুআক্কাদার বিশেষ কয়েকটি বিধান:
- এ দুই রাকআত সুন্নাত যে কোন সূরা/কিরাত দিয়ে পড়া যায়, তবে তবে প্রথম রাকআতে সূরা কাফিরূন ও দ্বিতীয় রাকআতে সূরা এখলাস পড়া মুস্তাহাব। অথবা প্রথম রাকআতে সূরা বাকারার ولوا امنا بالله ومما أر للا الخ আয়াত ও দ্বিতীয় রাকআতে সূরা আলে ইমরানের আয়াত قل يا احمل الكنب تعالوا পড়া মুস্তাহাব। তবে মাঝে মধ্যে অন্য সূরা দ্বারাও পড়বে যেন ঐ দুই সূরা দ্বারা পড়াই জরূরী- এরূপ বোধগম্য না হয়।
- ফজরের জামা’আত শুরু হয়ে গেলেও যদি আশা থাকে যে, সুন্নাত পড়ে নিয়েও অন্ততঃ শেষ বৈঠকে তাশাহ্হুদে জামা’আতের সাথে শরীক হতে পারবে, তাহলোে সুন্নাত পড়ে নিবে। তবে এরূপ অবস্থায় সুন্নাত পড়তে হবে মসজিদের বাইরে (ভিতরে জামা’আত হতে থাকলে বারান্দায় পড়া বাইরের হুকুমে) বা পিলার প্রভৃতির আড়ালে। আর যদি শেষ বৈঠকে তাশাহ্হুদেও শরীক হতে পারার আশা না থাকে কিংবা সুন্নাত পড়ার মত অনুরূপ স্থান না পায়, তাহলোে সুন্নাত ছেড়ে দিয়ে জামা’আতে শরীক হয়ে যাবে এবং এরূপ ছেড়ে দেয়া সুন্নাত সূর্যোদয়ের পূর্বে পড়া জায়েয নেই। সূর্যোদয়ের পর এবং সূর্য ঢলার পূর্বে পড়ে নেয়া উত্তম, জরূরী নয়। আর যদি ফজরের ফরযসহ সুন্নাত কাযা হয়ে থাকে এবং সূর্য ঢলার পূর্বেই কাযা আদায় করা হয় তাহলোে সুন্নাতসহ কাযা করবে।
- যদি কোন দিন কোন কারণে সুন্নাত পড়ার সময় না থাকে শুধু ফরয পড়ার সময় থাকে, তাহলোে শুধু ফরয পড়ে নিবে এবং সুন্নাত উপরোক্ত নিয়মে কাযা করে নিবে।
- এই দুই রাকআত সুন্নাতের নিয়ত এভাবে করা যায়- বাংলায়ঃ ফজরের দুই রাকআত সুন্নাতের নিয়ত করছি।
ফজরের দুই রাকআত ফরযের বিশেষ কয়েকটি বিধান:
- সফর বা জরূরতের অবস্থা না হলোে ফজরের নামাযে তেওয়ালে মুফাস্সাল অর্থাৎ, সূরা হুজুরাত থেকে সূরা বুরূজ পর্যন্ত সূরাগুলোর মধ্য থেকে কিরাত পড়া সুন্নাত।
- ফজরের দ্বিতীয় রাকআত অপেক্ষা প্রথম রাকআত লম্বা হওয়া উত্তম। জুমুআর দিন ফজরের প্রথম রাকআতে সূরা আলিফ-লাম-মীম সাজদাহ এবং দ্বিতীয় রাকআতে সূরা দাহ্য় পড়া মুস্তাহাব। তবে মাঝে মধ্যে ব্যতিক্রম করবে যাতে সাধারণ মানুষ এটাকে জরূরী মনে না করে বসে।
- ফজরের দুই রাকআত ফরযের নিয়ত এভাবে করা যায়। বাংলায়ঃ ফজরের দুই রাকআত ফরয নামাযের নিয়ত করছি।
জোহরের নামায
জোহরের নামায কত রাকাত পড়তে হয়?
- জোহরে প্রথম চার রাকআত সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ, তারপর চার রাকআত ফরয, তারপর দুই রাকআত সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ।
জোহরের সময়/ওয়াক্ত কখন শুরু হয়?
সূর্য পশ্চিম আকাশে হেলার পর থেকে প্রতিটা বস্তুর ছায়া (মূল ছায়া বাদে) দ্বিগুণ হওয়া পর্যন্ত। তবে শীতের মওসূমে ওয়াক্তের শুরু ভাগে এবং গরমের মওসূমে দেরীতে পড়া উত্তম। প্রতিটা বস্তুর ছায়া সমপরিমাণ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত যোহরের মোস্তাহাব ওয়াক্ত। (বেহেশতী জেওরঃ ১ম)
জোহরের চার রাকআত সুন্নাতের বিশেষ বিধানসমূহ:
- এই সুন্নাত শুরু করার পর ইমাম ফরযের জাম’আত শুরু করলে দুই রাকআতের কম পড়া হয়ে থাকলে দুই রাকআত পড়ে সালাম ফিরিয়ে জামা’আতে শরীক হয়ে যাবে। (এই দুই রাকআত নফল হয়ে যাবে) এবং এই সুন্নাত পরে পড়ে নিতে হবে। আর তৃতীয় বা চতুর্থ রাকআতে থাকলে সুন্নাত শেষ করে তারপর জামাআতে শরীক হবে।
- জামাআত শুরু হওয়ার পর এই সুন্নাত শুরু করবে না বরং জামা’আতে শরীক হয়ে যাবে।
- ফরযের পূর্বে এই সুন্নাত পড়তে না পারলে ফরযের পর প্রথমে পরবর্তী দুই রাকআত সুন্নাত পড়ে নিবে তারপর এই চার রাকআত সুন্নাত পড়বে।
- এই চার আকআত সুন্নাতের নিয়ত এভাবে করা যায়- বাংলায়ঃ জোহরের চার রাকআত সুন্নাতের নিয়ত করছি।
জোহরের চার রাকআত ফরযের বিশেষ মাসায়েল:
- ফজরের ফরযের ন্যায় জোহরের ফরযের কিরাতও তেওয়ালে মুফাস্সাল থেকে হওয়া সুন্নাত। তবে জোহরে তেওয়ালে মুফাস্সালের মধ্যে তুলনামূলক ছোট সূরা পড়া সুন্নাত এবং উভয় রাকআতের কিরাত সমান হওয়া বা প্রথম রাকআতে সামান্য পরিমাণ বেশী হওয়া উভয় রকম করা যায়।
- জোহরের ফরযের নিয়ত এভাবে করা যায়- বাংলায়ঃ জোহরের ফরয নামাযের নিয়ত করছি।
আসরের নামায
আসরের নামায কত রাকাত পড়তে হয়?
আসরে প্রথম চার রাকআত গায়রে মুয়াক্কাদা, তারপর চার রাকআত ফরয।
আসরের সময়/ওয়াক্ত কখন শুরু হয়?
- জোহরের ওয়াক্ত শেষ হওয়ার পর থেকে সূর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত আসরের সময়। তবে সূর্যের হলোুদ হয়ে যাওয়ার পর আসরের ওয়াক্ত মাকরূহ হয়ে যায়। এর পূর্ব পর্যন্ত মোস্তাহাব ওয়াক্ত।
আসরের চার রাকআত ফরযের বিশেষ কয়েকটি মাসআলা:
- সফর বা জরূরতের অবস্থা না হলোে আসরের নামাযে আওছাতে মুফাস্সাল অর্থাৎ, সূরা তারেক থেকে সূরা বাইয়্যেনা পর্যন্ত সূরাগুলোর মধ্য থেকে কিরাত পড়া সুন্নাত।
- আসরের ফরয নামাযের নিয়ত এভাবে করা যায়- বাংলায়ঃ আসরের ফরয নামাযের নিয়ত করছি।
মাগরিবের নামায
মাগরিবের নামায কত রাকাত পড়তে হয়?
- মাগরিবে তিন রাকআত ফরয, তারপর দুই রাকআত সুন্নাতে মুয়াক্কাদা।
মাগরিবের সময়/ওয়াক্ত কখন শুরু হয়?
সূর্য সম্পূর্ণ অস্ত যাওয়া থেকে নিয়ে পশ্চিম আকাশের লাল বর্ণ শেষ হওয়া পর্যন্ত মাগরিবের ওয়াক্ত (অর্থাৎ, প্রায় সোয়া ঘন্টা)। তবে মাগরিবের নামায দেরী করে পড়া মাকরূহ। আযানের সাথে সাথেই মাগরিবের নামায পড়ে নেয়া উত্তম। (বেহেশ্তী জেওর)
মাগরিবের তিন রাকআত ফরযের বিশেষ কয়েকটি মাসআলা:
- মাগরিবের ফরযে কেছারে মুফাস্সাল অর্থাৎ, সূরা যিলযাল থেকে সূরা নাছ পর্যন্ত সূরাগুলোর মধ্য থেকে কিরাত পড়া সুন্নাত।
- মাগরিবের ফরয নামাযের নিয়ত এভাবে করা যায়- বাংলায়ঃ মাগরিবের ফরয নামাযের নিয়ত করছি।
ইশার নামায
ইশার নামায কত রাকাত পড়তে হয়?
- ইশার নামাযে প্রথম চার রাকআত সুন্নাতে গায়রে মুয়াক্কাদা, তারপর চার রাকআত ফরয, তারপর দুই রাকআত সুন্নাতে মুয়াক্কাদা এবং দুই রাকআত সুন্নাতে গায়রে মুয়াক্কাদাহ।
ইশার সময়/ওয়াক্ত কখন শুরু হয়?
- মাগরিবের ওয়াক্তে বর্ণিত “পশ্চিমাকাশের লাল বর্ণ” শেষ হওয়ার পর সাদা বর্ণ দেখা যায়, তারপর কাল বর্ণ দেখা যায়, হযরত ইমাম আবূ হানীফার মতে এখান থেকে শুরু করে সুবহে সাদিক পর্যন্ত ইশার ওয়াক্ত। কিন্তু রাত্রের এক তৃতীয়াংশ পর্যন্ত মোস্তাহাব ওয়াক্ত, রাত্রি দ্বিপ্রহর পর্যন্ত মোবাহ ওয়াক্ত আর রাত্রের দ্বিপ্রহরের পর থেকে সুবহে সাদেক পর্যন্ত ইশার মাকরূহ ওয়াক্ত।
ইশার চার রাকআত ফরযের বিশেষ কয়েকটি মাসআলা:
- আওছাতে মুফাস্সাল থেকে কিরাত পড়া সুন্নাত।
- ইশার ফরয নামাযের নিয়ত এভাবে করা যায়- বাংলায়ঃ ইশার ফরয নামাযের নিয়ত করছি।
সূত্র: আহকামে যিন্দেগী।