🛑প্রশ্নঃ নিচের আয়াত থেকে বুঝা যাচ্ছে আসমান ৭ টি কিন্তু এটি তো অবৈজ্ঞানিক? প্রকৃতপক্ষে এই মহাবিশ্ব ট্রিলিয়ন সংখ্যক ছায়াপথ আর সাথে বিলিয়ন বিলিয়ন নক্ষত্র দিয়ে গঠিত, সেখানে সপ্তস্তর বলে কিছু নেই! তবে কেন এ ধরণের অসত্য তথ্য?
* সুরা বাকারাহ ২:২৯ = তিনি তৈরী করেছেন সাত আসমান। আল্লাহ সর্ববিষয়ে অবহিত”।
* সূরা তারেক:১২ = তিনিই আল্লাহ যিনি সৃষ্টি করেছেন সাত আসমান এবং পৃথিবী সেই একই পরিমানে”।
* সুরা নুহ ৭১:১৫ = তোমরা কি লক্ষ্য কর না যে, আল্লাহ কিভাবে সপ্ত আকাশ স্তরে স্তরে সৃষ্টি করেছেন?”
🔷উত্তর :- প্রশ্নকর্তার অভিযোগ আরেকবার মনোযোগ দিয়ে পড়তে বলব আমার চিন্তাশীল পাঠকদের। মহাবিশ্ব ট্রিলিয়ন সংখ্যক ছায়াপথ আর সাথে বিলিয়ন বিলিয়ন নক্ষত্র দিয়ে গঠিত – আচ্ছা এর দ্বারা কি প্রমান হয়েছে যে ৭ আসমান নেই? উত্তর হচ্ছে না। হ্যাঁ আপনি যদি বলতেন বিজ্ঞান হুজুর মহাবিশ্ব সম্পর্কে সমস্ত কিছু জেনে ফেলেছে তারা পুরা মহাবিশ্বের সব কিছুই জেনে ফেলেছে এবং তারা দেখেছে যে ৭ আসমান বলে কিছু এই – এই নেন আপনাকে পুরা মহাবিশ্বের এলাকার ঠিকানা দিলাম আপনিও একটা রকেট ভাড়া করে পুরা মহাবিশ্ব ঘুরে আসেন নিজে চোখে দেখে নেন। – এরকম হলে কোন সমস্যা ছিল না। কিন্তু ৪২০ টাকা দিয়ে ভাড়া একটি রিকশা রকেট দিয়ে যেখানে সূর্য হুজুরের ধারের কাছেও যাওয়া যায় না সেই খগেনরা আবার বলছেন ৭ আসমান বলে কিছুই নেই , তারা মহাবিশ্বে ৭ আসমান বলে কিছু খুজেই পাই নাই – হাস্যকর লাগে এদের যুক্তির করুন অবস্থা দেখে। নাস্তিক অন্ধ বিশ্বাসীরা এমনভাবে বলে যে ৭ আসমান বলে কিছুই নাই যেন তারা মহাকাশের সীমা-পরিসীমা তাদের জানা রয়েছে তারা সব কিছুই ঘুরে দেখে এসেছে।
আমরা যদি সাধারণ যুক্তিতে আসি, তাহলে বলতে পারিঃ যে কোন আয়তনের স্থানকেই নির্দিষ্ট পরিমাপ বা গুণাগুণের ভিত্তিতে ৭ বা যে কোন সংখ্যায় বিভক্ত করা যায়। কাজেই “মহাকাশ ৭ স্তরে বিভক্ত নয়” এই কথাটি তাত্ত্বিকভাবে ভুল।
ধরুন , একটা আলমারীর ৭টা ড্রয়ার আছে। প্রত্যেকটা ড্রয়ারে ২০টা করে কলম আছে। অর্থাৎ আলমারীতে মোট কলম আছে ১৪০টা।কেউ বলা শুরু করলঃ এই আলমারীতে ১৪০টা কলম আছে; কাজেই এতে ৭টা ড্রয়ার থাকতে পারে না! এই ব্যক্তির কথাকে কি কোন যুক্তিসম্পন্ন মানুষ মেনে নিতে পারবে? নাস্তিক অন্ধ বিশ্বাসীদের যুক্তিও অনেকটা এ রকম। কুরআন বলেছে আসমানের ৭টি স্তরের কথা। নাস্তিকরা এই কথাকে ভুল প্রমাণের জন্য নক্ষত্র আর ছায়াপথের কথা নিয়ে এসেছে। আর সমস্ত নাস্তিকরা পুরা মহাবিশ্ব ঘুরে দেখে এসেছে এবং তারা ৭ আসমান খুইজা পায় নাইগা!
ধরে নিন আপনার বিশাল একটি নদী আছে এখন আপনি সেটাকে স্তরে সাজাবেন , এটিও ধরে নিন যে আপনার নদীর ৭ টি কিনারা আছে। এখন আপনি নৌকা দিয়ে পুরা নদী পর্যবেক্ষণ করলেন। কাগজের মধ্যে লিখলেন ১ নং কিনারা হল প্রথম স্তর এখানে আমি মাছ চাষ করব, ২ নং কিনারা হল দ্বিতীয় স্তর , এখানে আমি বিকেলে নৌকা দিয়ে ঘুরব , ৩ নং স্তরে আমি একটি ফ্লোটিং মার্কেট বানাব যেখানে মানুষ এসে ঘুরতে পারবে এবং কিনতে পারবে …….এভাবে ইত্যাদি ইত্যাদি বাকি স্তরকে বিভিন্ন ভাবে সাজালেন। এখন ধরুন আপনার নৌকার মাঝির নাম ছিল আসিফ মহিউদ্দিন। সে আপনাকে বলছে যে মালিক আপনার নদীতে তে তো অনেক মাছ আর অনেক গভীর তাই আপনি যেই স্তরে ভাগ করলেন সেটি অযৌক্তিক। – সহজেই বুঝতে পারছেন যে মাঝীর কথাই আসলে ভিত্তিহীন তেমনি নাস্তিকদের অভিযোগ দুর্বল।
বিজ্ঞান মহাবিশ্বকে সম্পূর্ণ বুঝে উঠতে পারবে না এই কথার ভিত্তিতে তথা মানুষের সব রহস্য ভেদ করতে পারবে না তা এখন বিজ্ঞান স্বীকার করছে। “কোয়ান্টাম মেকানিক্স” পৃষ্ঠা ১০ -এ স্যার জাফর ইকবাল লিখেছেন যারা বিজ্ঞান চর্চা করে তারা ধরেই নিয়েছে আমরা যখন বিজ্ঞান দিয়ে পুরো প্রকৃতিটাকে বুঝে ফেলব। তখন আমরা সব সময় সবকিছু সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করতে পারব। যদি কখনো দেখি কিছু ব্যাখ্যা করতে পারছি না তখন বুঝতে হবে এর পিছনের বিজ্ঞানটা তখনো জানা হয়নি। জানা হলে তখন ব্যাখ্যা করা যাবে। এক কথায় বিজ্ঞানের ব্যাখ্যা বা ভবিষ্যবানী সব সময়ি নিখুত এবং সুনিশ্চিত – কোয়ান্টাম মেকানিক্স বিজ্ঞানের এই ধারনাকে পুরোপুরি পাল্টে দিয়েছে। বিজ্ঞানীরা সবিস্ময়য়ে আবিস্কার করেছেন যে প্রকৃতি আসলে কখনোই সবকিছু জানতে দেবে না। সে তার ভিতরের কিছু কিছু জিনিস মানুষের কাছ থেকে লুকিয়ে রাখে। মানুষ কখনোই সেটি জানতে পারবে না। সবচেয়ে চমৎকার ব্যাপার হচ্ছে এটি কিন্তু বিজ্ঞানের অক্ষমতা বা অসম্পূর্ণতা নয়। এটাই হচ্ছে বিজ্ঞান। বিজ্ঞানীরা একটি পর্যায়ে গিয়ে কখনোই আর জোরগলায় বলবে না “হবে” তারা মাথা নেড়ে বলবেন “হতে পারে”।
সুতরাং বিজ্ঞান যেখানে বলছে মহাবিশ্ব সব কিছু এখনো আমাদের জানা হয়নি সেখান আপনি খগেন কিভাবে পুরা মহাবিশ্ব ঘুরে দেখে আসলেন যে সাত আসমান নাই। আপনি কি পুরা মহাবিশ্ব ঘুরে দেখেছেন সাত আসমান নাই? উত্তর হচ্ছে না। তাহলে কুরআন কি দেখেছে মহাবিশ্বে সাত আসমান আছে? উত্তর হচ্ছেঃ মহাবিশ্বর স্রষ্টা আল্লাহ আর তিনিই ভাল জানেন মহাবিশ্বর সাতটি আসমান আছে সুতরাং আমরাও তাই মানি।
টীকাঃ আকাশ আল্লাহর একটি সৃষ্টি। তাই আল্লাহ ইচ্ছা করলে আকাশকে কঠিন পদার্থ না বানিয়েই যা ইচ্ছা তাই করতে পারে কারন আল্লাহ কাছে এরকম করা একেবারেই সহজ।
আল্লাহ্ সর্বশক্তিমানঃ তিনি সব কিছুর উপর ক্ষমতাবানঃতিনি সব কিছু করতে সক্ষমঃ
* সুরা বাকারা ২:২৮৪
* সুরা আল ইমরান ৩:১৮৯
* সুরা মায়দা ৫:১
* সুরা মায়দা ৫:১২০
* সুরা আনাআম ৬:৬৫
* সুরা আনআম ৬:৭৩
* সুরা নাহল ১৬:৭০
* সুরা হজ ২২:৬
* সুরা নুর ২৪:৪৫
* সুরা আনকাবুত ২৯:২০
* সুরা রুম ৩০:৫০
* সুরা ফাতির ৩৫:১
* সুরা ফাতির ৩৫:৪৪
* সুরা ফুসসিলাত ৪১:৩৯
* সুরা শুরা ৪২:৯
* সুরা হাদিদ ৫৭:২
* সুরা তাগাবুন ৬৪:১
Tags:
[ #ভ্রান্তি #অপব্যাখ্যা #সংশয় #প্রশ্ন #জিজ্ঞাসা #উত্তর ]