🛑প্রশ্নঃ নিচের আয়াত সমূহ পাঠ করলে বুঝা যায় যে অর্থাৎ আকাশ এত কঠিন যে আল্লাহ ইচ্ছা করলে আকাশ ভেঙ্গে মানুষকে আঘাত দিতে পারেন। আল্লাহ মানুষকে আকাশকে কঠিন বলে ভয় দেখাচ্ছে। ফেরেশতারা মানুষের জন্য দুয়া করে ফলে আল্লাহ কিছু করেন না। তবে কিয়ামতে এমনটা হবে – এই কি বৈজ্ঞানিক ভুল নয়?
* সুরা হজ ২২:৬৫ = তুমি কি দেখ না যে, ভূপৃষ্টে যা আছে এবং সমুদ্রে চলমান নৌকা তৎসমুদয়কে আল্লাহ নিজ আদেশে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন এবং তিনি আকাশ স্থির রাখেন, যাতে তাঁর আদেশ ব্যতীত ভূপৃষ্টে পতিত না হয়। নিশ্চয় আল্লাহ মানুষের প্রতি করুণাশীল, দয়াবান।
* সুরা সাবা ৩৪:৯ = তারা কি তাদের সামনের ও পশ্চাতের আকাশ ও পৃথিবীর প্রতি লক্ষ্য করে না? আমি ইচ্ছা করলে তাদের সহ ভূমি ধসিয়ে দেব অথবা আকাশের কোন খন্ড তাদের উপর পতিত করব। আল্লাহ অভিমুখী প্রত্যেক বান্দার জন্য এতে অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে।
* সুরা শুরা ৪২:৫ = আকাশ উপর থেকে ফেটে পড়ার উপক্রম হয় আর তখন ফেরেশতাগণ তাদের পালনকর্তার প্রশংসাসহ পবিত্রতা বর্ণনা করে এবং পৃথিবীবাসীদের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করে। শুনে রাখ, আল্লাহই ক্ষমাশীল, পরম করুনাময়।
* সুরা বনী ইসরাইল ১৭:৯২ = অথবা আপনি যেমন বলে থাকেন, তেমনিভাবে আমাদের উপর আসমানকে খন্ড-বিখন্ড করে ফেলে দেবেন অথবা আল্লাহ ও ফেরেশতাদেরকে আমাদের সামনে নিয়ে আসবেন।
🔷উত্তর :-
কুরআনের উপরের আয়াত সমূহকে সামনে রেখে আমরা যা পেলামঃ
* আল্লাহ আকাশকে স্থির রাখেন যাতে তাঁর আদেশ ছাড়া দুনিয়াতে পতিত বা পরে না যায়।
* আল্লাহ ইচ্ছা করলে আকাশের এক খণ্ড ধসিয়ে দিতে পারেন।
* আকাশ উপর থেকে ফেটে পরার উপক্রম হয়। আল্লাহর রহমতে সেরকম কিছুই হয় না।
উপরের পয়েন্ট সমূহ মাথায় রেখে এখন একটি বাস্তব উদাহরণ কল্পনা করুন। ধরুন আপনার স্ত্রীকে আপনি খুবই ভালবাসেন। তাকে নিয়ে আপনি কোথাও ঘুরতে গেলেন। দুইজন ডিনার করছেন। আপনি আপনার স্ত্রীকে বলছেন আমি তোমাকে প্রচুর ভালবাসি। আমার ভালবাসার বিশ্বাস এতই শক্ত যে সেটি কখনো ফেটে ভেঙ্গে পরবে না, তুমি আমার ভালবাসায় কখনো ফাটল দেখতে পাবে না ইনশা আল্লাহ। আমি যে তোমাকে কত ভালবাসি এর একখণ্ড নমুনা মাত্র দেখালাম, এত সুন্দর একটি জাগায় ঘুরতে এনে। স্ত্রী লজ্জা পেয়ে উত্তর দিল আল্লাহ আপনার আর আমার ভালবাসা কখনো যেন ধসিয়ে না দেন এবং এইভাবেই আপনি আমাকে আর আমি আপনাকে যেন ভালবেসে যেতে পারি যা আমাদের মৃত্যুর আগ পর্যন্ত স্থির থাকবে আমিন। হে আল্লাহ আমাদের দুয়া কবুল করুন আমিন।
একজন সুস্থ মানুষ কখনোই উপরের উদাহরণ অথবা কথা সমূহকে ভুল বলতে পারবে না। কারন উপরের কথা সমূহ একেবারেই সাধারন এবং আমাদের জীবনের সাথে এতই সম্পর্কিত যে আমরা সবাই জানি এসব ঘটনা কারন এসব স্টাইলের কথা একেবারেই স্বাভাবিক একটি বিষয়। আমরা সবাই জানি যে ভালবাসা , বিশ্বাস এসব এমন কোন শক্ত কঠিন পদার্থ না যে স্থির থাকবে , ফেটে পরবে , ভেঙ্গে যাবে , ধসে পরবে ইত্যাদি। কিন্তু ভালবাসা , বিশ্বাস এগুলোর ক্ষেত্রেও “শক্ত হওয়া” “ফেটে পরা” “ভেঙ্গে যাওয়া” “ধসে পরা” “স্থির থাকা” ইত্যাদি শব্দ ব্যাবহার করা যায় এবং সেসব কখনোই ভুল হতে পারে না আবার সেটি কঠিন পদার্থ হওয়াও জরুরি না।
এখন কেউ যদি বলে বিশ্বাস ও ভালবাসা তো কঠিন পদার্থ না যে তাকে শক্ত পদার্থ বলতেই হবে , বিশ্বাস কি স্থির থাকে? বিশ্বাস কি ভেঙ্গে যায়, ভালবাসায় কি ফাটল ধরে , এটি কি স্থির থাকে? আপনারা যারা চিন্তাশীল মানুষ আছেন তারা আগেই বুঝে গিয়েছেন যে এই ধরনের প্রশ্ন আসলে কতটা হাস্যকর এবং দুর্বল এবং ভিত্তিহীন। কারন শক্ত হওয়া , ফেটে পরা , ধসে যাওয়া, স্থির থাকা এসব পরিভাষা শুধুই যে কঠিন পদার্থ হলেই ব্যাবহার করা যাবে আর অন্য কোন ক্ষেত্রে ব্যাবহার করা যাবে না এই কথা কোন মূর্খ বলেছে শুনি! তাছাড়া আমরা সকলেই জানি শব্দ অথবা পরিভাষা যে কোন ক্ষেত্রেই ব্যাবহার হতে পারে। যেমন অনেক সময় সিনেমার নায়ক বলে যে আমার ভালবাসায় এত শক্তি আছে যে পুরো দুনিয়া এক হলেও তোমার (নায়িকা) থেকে আমাকে আলাদা করতে পারবে না।
আরেকটি উদাহরণ দেয়া যেতে পারে। তৎকালীন দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধারা এমনভাবে স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছে যে পাকিস্তানি হানাদাররা সেসব বাঙ্গালীদের দেশপ্রেম ভাঙতে পারেনি, দুর্বল করতে পারেনি, ধসিয়ে দিতে পারেনি, ফাটল ধরাতে পারেনি সেই ইতিহাসের মূল্য এখনো আমাদের মনে স্থির আছে – আচ্ছা দেশপ্রেম কি শক্ত কোন পদার্থ, ইট বালু সিমেন্ট পানি দিয়ে কি তৈরি? উত্তর হল না। কিন্তু তারপরেও দেশপ্রেমের ব্যাখ্যা দেয়ার জন্য শক্ত হওয়া, ধসিয়ে পরা , স্থির হওয়া ইত্যাদি এসব পরিভাষা ব্যাবহার করা যায় কিন্তু কেউ যদি এসব বৈজ্ঞানিক ভুল বলতে চান তাহলে আমরা বলব, যারা দাবী করেন তাদের পূর্ব পুরুষ বানর ছিল তাদের কাছে এসব বৈজ্ঞানিক ভুল মনে হলে আমাদের কিছুই করার নাই দাদা , বুঝেছেন। কারন বানর মার্কা ব্রেন এসব তাৎপর্যময় পরিভাষা উপলব্ধি করার যোগ্যতা রাখে না কারন খগেনদের জ্ঞানে ফাটল ধরেছে।
আরেকটি উদাহরণ খেয়াল করুন। আমরা অনেক সময় ক্রিকেট খেলার আলোচনায় বলে থাকি , এই জানিস সাকিব আল হাসান এমন ভাবে ক্রিকেট খেলেছে যে সে একাই পুরা ভারত টিমকে ধসিয়ে দিয়েছে , এমনভাবে বোলারদের ভেঙ্গেছে যে ভারতের বোলাররা আমাদের বাংলাদেশের সাকিব আল হাসানের সাথেই স্থির থাকতে পারেনি। সেই খেলেছে ভাই, পুরা মাঠ ফাটিয়ে দিয়েছে। আল্লাহ আমাদের বাংলাদেশের ক্রিকেট টিমকে আরও ভাল খেলার তৌফিক দিক আমিন। – এই উদাহরণ থেকে কিন্তু এটি বুঝা যায় যে “ভারত ক্রিকেট টিম” শক্ত পদার্থের তৈরি? কিন্তু উপরের শব্দ দ্বারা কি বুঝানো হয়েছে সেটি কিন্তু আমরা পরিস্কার জানি।
উপরের উদাহরণ বুঝে থাকলে বুঝতে সহজ হবে যে ঠিক একইভাবে আল্লাহ যে আকাশকে স্থির রাখেন, ধসিয়ে দিতে পারেন , ফাটিয়ে দিতে পারেন , আকাশের খণ্ড ইত্যাদি যা আল্লাহ বলেছেন কুরআনে – এরমানে এটা কোন ভাবেই বুঝায় না যে আকাশকে একটি কঠিন পদার্থই হতে হবে অথবা আকাশ কঠিন পদার্থ কিছু বরং আল্লাহ আকাশকে স্থির রাখেন মানে আকাশ তার নিয়মের মধ্যেই আছে আল্লাহর হুকুমে , আল্লাহ যদি আকাশকে হুকুম দেন তাহলে তার সব নিয়ম ভেঙ্গে যাবে এবং আমাদের উপর পতিত তথা কিয়ামত হয়ে যাবে। যেমন “আমার ভালবাসার এক খণ্ডর ওজন অনেক” এরমানে বুঝায় না যে ভালবাসা কঠিন পদার্থের কিছু ঠিক একইভাবে “আকাশের এক খণ্ড” অর্থাৎ আকাশের এক অংশ যা আল্লাহ ইচ্ছা করলে মানুষের উপর ধসিয়ে দিতে পারেন। আশা করি বুঝতে পেরেছেন।
Tags:
[ #ভ্রান্তি #অপব্যাখ্যা #সংশয় #প্রশ্ন #জিজ্ঞাসা #উত্তর ]