মুখে মুখে বা বাহ্য ভাষায় ইসলাম প্রকাশ আর অন্তরে কুফরি পোষণ করাকে ইসলামি পরিভাষায় নিফাক বলে। নিফাকারীদের মুনাফেক বলা হয়।।
নিফাকে আকবর বা বড় নিফাকঃ
এর কয়েকটি শ্রেণী রয়েছে, যেমন:
(১) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মিথ্যা জ্ঞান করা;
(২) তিনি যা কিছু নিয়ে এসেছেন তার যে কোন একটিকে মিথ্যা জ্ঞান করা বা মন্তব্য করা;
(৩) রাসূলুল্লা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে শত্রুতা পোষণ করা;
(৪) তাঁর আনীত যে কোনো বিষয়ের সাথে শত্রুতা পোষণ করা;
(৫) ইসলামের ক্ষতি ও পরাজয়ে আনন্দিত হওয়া;
(৬) ইসলামের বিজয়কে অপছন্দ ও ঘৃণা করা।
মুনাফিকদের শাস্তি কাফেরদের শাস্তি হতেও মারাত্মক হবে বলে পবিত্র কোরআন সতর্ক করেছে। আল্লাহ তাআলা বলেন :
إِنَّ الْمُنَافِقِينَ فِي الدَّرْكِ الْأَسْفَلِ مِنَ النَّارِ (النساء 145)
অর্থাৎ, নিশ্চয়ই মুনাফিকরা জাহান্নামের সর্ব নিম্নস্তরে থাকবে। ( সূরা নিসা : আয়াত ১৪৫)
- নিফাক ইসলামের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর, নিফাকের ক্ষতি কুফরের ক্ষতির চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। তাইতো আমরা দেখতে পাই আল্লাহ তাআলা সূরা বাকারার প্রথম দিকে দুটি আয়াতের মাধ্যমে কাফিরদের অবস্থা বর্ণনা করেছেন। আর মুনাফিকদের অবস্থা বর্ণনা করেছেন ১৩টি আয়াতের মাধ্যমে।
- ঈমানের জন্য সর্বাধিক ক্ষতিকর নিফাক, এ মারাত্মক ব্যাধিতে মানুষ বিভিন্নভাবে আক্রান্ত হচ্ছে প্রতি নিয়ত। লক্ষ্য করলে আমরা দেখতে পাব, শয়তানের ধোসর, সঠিক পথ হতে বিভ্রান্ত, সাধু-সূফী নামধারী বিভিন্ন ব্যক্তিরা ইসলামের লেবাস পরে মুসলমানদের ঈমান হরণ করছে নানা কায়দায়।
নিফাকারী বা মুনাফেকরা বাহ্যত: সালাত আদায় করে, সওম পালন করে কিন্তু নানা কৌশলে মুসলিমদের আকীদা নষ্ট করে । বিপদাবদে তারা আল্লাহ ব্যতীত অন্যদেরকে ডাকাডাকি করে এবং নিজ নিজ অনুসারীদেরকেও ডাকতে উৎসাহীত করে। তাদের নিকট সাহায্য প্রার্থনা করা, তাদের কবরে সেজদা দেওয়াকে পুণ্যের কাজ বলে প্রচার করে অথচ এসব কাজ ইসলামি আকীদা বহির্ভূত ও বড় শিরকের অন্তর্ভুক্ত। আবার কেউ কেউ প্রচার করে যে, মহান আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমান। অথচ পবিত্র কোরআনের বহু জায়গায় বলা হয়েছে তিনি আরশের উপর আছেন। কিন্তু তারা তা অস্বীকার করে। এছাড়াও তারা কোরআনের বহু আয়াত ও সহিহ হাদিসকে পর্যন্ত নানাভাবে অস্বীকার করে।
নিফাকে আসগর বা ছোট নিফাকঃ
অর্থাৎ, বিশ্বাস ঠিক রেখে আমলের মাধ্যমে মুনাফিকী করা তথা মুনাফেকদের সদৃশ কোনো আমলে জড়িয়ে পড়া। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
آيَةُ الْمُنَافِقِ ثَلاثٌ : إذا حَدَّثَ كَذِبَ وَإذا وَعَدَ أخْلَفَ وَإذا اؤْتُمِنَ خَانَ (متفق عليه)
অর্থাৎ, মুনাফিকের নিদর্শন তিনটি, যখন কথা বলে মিথ্যা বলে, যখন ওয়াদা করে ভঙ্গ করে, আর আমানত রাখা হলে খিয়ানত করে। ( বুখারি ও মুসলিম )
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্যত্র বলেছেন :
اربعٌ مَنْ كُنَّ فِيهِ كَانَ مُنَافِقًا خَالِصًا وَمَنْ كَانَتْ فِيهِ خَصْلَةُ مِنْهُنَّ كَانَتْ فيْهِ خَصْلَةٌ مِنَ النِّفَاقِ حتَّى يَدَعَهَا: إذا حَدَّثَ كَذِبَ وَإذا وَعَدَ أخْلَفَ وَإذا عَاهَدَ غَدَرَ وَإذا خَاصَمَ فَجَرَ. (متفق عليه)
অর্থাৎ, চারটি দোষ যার মধ্যে চারটিই বিদ্যমান হবে সে নির্ভেজাল মুনাফিক বলে গণ্য হবে। আর যার মাঝে উক্ত চারটির একটি সভাব থাকবে তাহলে এটি পরিত্যাগ করা অবধি তার মধ্যে নিফাকের একটি সভাব আছে বলে ধরা হবে। যখন কথা বলে মিথ্যা বলে, প্রতিশ্রুতি দিলে ভঙ্গ করে, বিতর্ক করলে গালমন্দ করে। (বুখারি ও মুসলিম)
এই নিফাক সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে ইসলাম থেকে বের করে না, কিন্তু তা কবীরা গুনাহ’র অন্তর্ভূক্ত। ইমাম তিরমিযি রহ. বলেছেন : বিজ্ঞ আলেমদের মতে এটি আমলী নিফাক। এটাই ছিল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে মিথ্যার নিফাক।