বিষয়: (11 টি) পরিবারের অশান্তি দূর কারার উপায়।
হ্যাশট্যাগ: #পরিবারের অশান্তি দূর কারার উপায়।
পরিবারে বিভিন্ন করণে অশান্তি সৃষ্টি হয়ে থাকে। এসব কারণগুলো শুরু থেকেই যদি এড়িয়ে চলা যায়, তাহলে একটা সুখী ও আনন্দময় পরিবার গড়ে তোলা সম্ভব এবং সেই সুখ ও আনন্দকে ধরে রাখা সম্ভব। সাধারণতঃ যে সব কারণে পরিবারে অশান্তি দেখা দিয়ে থাকে নিম্নে সেগুলো প্রতিকার ব্যবস্থাসহ উল্লেখ করা হল।
পরিবারের অশান্তি দূর কারার উপায় (১)
শ্বশুর-শাশুড়ী ও পুত্র-বধূর মাঝে সুসম্পর্ক না থাকা :
সাধারণতঃ শ্বশুর শাশুড়ী পুত্রের উপর অধিকার থাকার সুবাদে পুত্রবধূর উপরও কর্তৃত্ব করতে চায় এবং পুত্রের ন্যায়-পুত্রবধূকেও বাধ্যগত পেতে এবং রাখতে চায়।
তারা পুত্র থেকে যে রকম আনুগত্য ও খেদমত পাওয়ার, পুত্রবধূ থেকেও সে রকম পেতে চায়।
এর ফলে পুত্র-বধূর সাথে কর্তৃত্ব সুলভ আচরণ ও ক্ষেত্র বিশেষে বাদী সুলভ ব্যবহারও করে থাকে।
অনেক সময় পুত্রবধূ প্রফুল্ল চিত্তে না চাইলেও জবরদস্তী তার থেকে শ্বশুর শাশুড়ী কাজ ও খেদমত নিয়ে থাকেন এবং জবরদস্তী পুত্রবধূকে একান্নভুক্ত রাখা হয়।
এসব কারণে পুত্রবধূর স্বাধীন চেতনা আঘাতগ্রস্ত হয়, কখনও কখনও সে আত্মমর্যাদায় আঘাতবোধ করে এবং এ সংসারকে সে আপন বলে মেনে নিতে পারে না, ফলে শ্বশুর-শাশুড়ীর সাথে শুরু হয় তার সম্পর্কের টানাপোড়েন এবং তখনই পুত্রবধূ তাদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে চায়।
পুত্রবধূর আপনজন ও আত্মীয়-স্বজনকে ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখা এবং তাদের আতিথেয়তা ও আপ্যায়নকে গুরুত্ব না দেয়ার কারণেও অনেক সময় শ্বশুর-শাশুড়ীর প্রতি পুত্রবধূ ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে I
এর প্রতিকারের জন্য মনে রাখা দরকার যে, শ্বশুর-শাশুড়ীর খেদমত করা মৌলিকভাবে পুত্রবধূর দায়িত্ব নয়, করলে সেটা তার অনুগ্রহ।
বরং এ খেদমতের দায়িত্ব তাদের পুত্রের উপর বর্তায়।
পুত্রের পক্ষ থেকে তার বধূ যদি সে খেদমতের দায়িত্ব আঞ্জাম দেয় তাহলে সেটা তার অনুগ্রহ। শ্বশুর শাশুড়ী যদি পুত্র-বধূর খেদমতকে এ দৃষ্টিভঙ্গীতে মূল্যায়ন করেন, তাহলে পুত্র-বধূর প্রতি তারা প্রীত হবেন এবং তার প্রতি তাদের বাদী সুলভ মনোভাব সৃষ্টি হবে না। এ সম্পর্কে, ‘স্ত্রীর অধিকার সমূহ’ শিরোনামে পোষ্টে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
পরিবারের অশান্তি দূর কারার উপায় (২)
যৌথ পরিবার থাকা :
অনেক সময় একান্নভুক্ত পরিবার থাকার কারণেও সংসারের শান্তি বিনষ্ট হয়। বিশেষভাবে যদি স্ত্রীর জন্য থাকার ঘরও পৃথক করে দেয়া না হয়।
স্বাভাবিকভাবে প্রত্যেক নারীই এ কামনা করবে যে, স্বামীকে নিয়ে সে স্বাধীনভাবে নিজের মত করে একটা সংসার গড়ে তুলবে, তার থাকার জন্য একটা ভিন্ন ঘর থাকবে যেখানে সে তার মাল-সামান সুষ্ঠুভাবে সংরক্ষণ করতে পারবে, যেখানে সে স্বাধীনভাবে স্বামীর সাথে বিনোদন করতে পারবে।
যৌথ পরিবার ও একান্নভুক্ত সংসার অনেক ক্ষেত্রেই এ কামনায় বাঁধা সৃষ্টি করে।
ফলে শ্বশুর-শাশুড়ী, ননদ, দেবর প্রমুখদের সাথে পুত্র-বধূর বনিবনা হয়ে ওঠে না।
অনেক পিতা-মাতাই মনে করে থাকেন তাদের পুত্রের ভিন্ন সংসার গড়ে উঠলে তারা অবহেলিত হবেন, তারা বঞ্চিত হবেন। কিন্তু পুত্রকে যদি তারা যথাযথভাবে গড়ে তুলতে পারেন, তাহলে পুত্রের সংসার ভিন্ন হলেও পুত্র তাদের অধিকার ও খেদমতে ত্রুটি করবে না- এটাও বাস্তব সত্য। তদুপরি জোর জবরদস্তী কিছুদিন একান্নভুক্ত রাখা হলেও চরম অবনিবনা সৃষ্টি হওয়ার পর এক সময়তো পৃথক হতেই হবে, সেই পৃথক হওয়াটা আগে ভাগে করে ফেললেইতো ভাল।
মনে রাখা দরকার যৌথ পরিবার সাময়িক বিচারে ভাল হলেও স্থায়ী সুসম্পর্কটা বড় কথা।
তদুপরি স্ত্রীর অধিকার আছে পৃথক হয়ে যেতে চাওয়ার, অন্ততঃ একটা থাকার ভিন্ন ঘর পাওয়া স্ত্রীর অধিকার। এ সম্পর্কে “স্ত্রীর অধিকার সমূহ” পোষ্টে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
হযরত থানবী (রহঃ) বলতেন, দু চুলার আগুন থেকেই সংসারের শান্তিতে আগুন লাগে। অতএব এই যুগে শুরু থেকেই চুলা পৃথক করে দেয়া সমীচীন। তবে স্ত্রীরও মনে রাখা দরকার বিনা প্রয়োজনে স্বামীকে তার মাতা-পিতা ও ভাই-বোন থেকে পৃথক করে নিয়ে তাদের মনে কষ্ট দেয়া উচিত নয়।
পরিবারের অশান্তি দূর কারার উপায় (৩)
আয়-ব্যয়ের মাঝে ভারসাম্য থাকা :
প্রত্যেক মানুষেরই উচিত তার আয় অনুযায়ী ব্যয় করা। অনেকেই সংসার জীবনের প্রথম দিকে আবেগের বশবর্তী হয়ে সাধ্যের বাইরেও অনেক বেশী ব্যয় করে থাকে।
সব ক্ষেত্রেই সে তার স্টাণ্ডার্ড ছাড়িয়ে চলে যায়।
এভাবে তার স্ত্রী ও সন্তানাদির স্টাণ্ডার্ড বেড়ে যায় এবং এভাবে চলতে চলতে হয়তো এক সময় সে ঋণী হয়ে পড়ে কিংবা এভাবে চলা তার পক্ষে আর সম্ভব হয়ে ওঠে না।
তখন পূর্বের স্টাণ্ডার্ড বজায় রাখার জন্য তাকে অবৈধ আয়ের পথে পা বাড়াতে হয় কিংবা স্ত্রী পুত্র পরিজনের কাছে হেয় হতে হয়, তাদের মন রক্ষা করা সম্ভব হয় না, ফলে মানসিক শান্তি বিনষ্ট হয়।
কুরআনে কারীমে একদিকে যেমন কার্পণ্য করতে নিষেধ করা হয়েছে, অপর দিকে এত বেশী হাত খোলা হতেও নিষেধ করা হয়েছে, যাতে পরবর্তীতে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে যেতে হয় এবং হেয় হতে হয়।
সুতরাং আয় ব্যয়ের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করে চলা উচিত। বিশৃংখল ব্যয় করা নিষিদ্ধ ৷
বিশৃংখল ব্যয় করা বলতে বোঝায়-যা কিছু হাতে আছে তৎক্ষণাৎ তা ব্যয় করে ফেলা এবং ভবিষ্যতে শরী’আত সম্মত প্রয়োজন দেখা দিলে তা পূরণ করতে অক্ষম হয়ে পড়া।
এতে বোঝা গেল কিছুটা সঞ্চয়ের নীতিতে চলা কর্তব্য।
পরিবারের অশান্তি দূর কারার উপায় (৪)
স্ত্রীকে সংসার চালানো শিখিয়ে না দেয়া :
কোন গাড়ীর আরোহীগণ যদি গাড়ীর চালককে সহযোগিতা না করে, তাহলে চালক সে গাড়ি নির্বিঘ্নে চালাতে সক্ষম হয়না।
তদ্রূপ সংসার জীবনে পুরুষ হল গাড়ী চালকের ন্যায় আর স্ত্রী হল সে গাড়ীর আরোহী এবং কিছুটা সে চালকও বটে।
তাই স্ত্রীকে সংসার চালানো শিখিয়ে দেয়া উচিত, যাতে পুরুষের আয়ের সাথে সঙ্গতি রেখে সংসার পরিচালনায় সে সহযোগিতা করতে পারে এবং যাতে স্বামীর আয়ের সাথে সঙ্গতিহীনভাবে সংসার চালিয়ে তাকে বিব্রতকর অবস্থায় না ফেলে।
স্ত্রীর মধ্যে স্টাণ্ডার্ড বৃদ্ধি করার এবং আরও জাঁকজমকের সাথে চলার মনোবৃত্তি যেন সৃষ্টি হতে না পারে সে জন্য নিজের চেয়ে ধনবান পরিবারের বাড়িতে স্ত্রীকে বেড়াতে নিয়ে যাওয়ার বা পাঠানোর এবং তাদের সাথে উঠা-বসা করানোর ব্যাপারে সতর্কতার সাথে পদক্ষেপ নিতে হবে।
শুধু স্ত্রী নয় বরং সংসারের অন্যান্য সদস্যদের প্রতিও এ ব্যাপারে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।
এতসব সতর্ক পদক্ষেপ নেয়ার পরও কখনও যদি স্ত্রী বা সংসারের অন্য সদস্যদের মধ্যে সাধ্যের বাইরে জাঁকজমকের সাথে এবং আড়ম্বরের সাথে চলার মনোবৃত্তি সৃষ্টি হয়ে যায়, তাহলে তাদেরকে দুনিয়া ত্যাগের ওয়াজ নছীহত শুনাতে হবে, দুনিয়াত্যাগী বুযুর্গ অলী-আউলিয়াদের জীবনী ও কাহিনী শুনাতে হবে যা এতদসম্পর্কিত পুস্তক পুস্তিকা পাঠ করাতে হবে এবং গরীবদের সাথে উঠা-বসার ব্যবস্থা করতে হবে। আর যে পরিবেশে যাওয়ার ফলে উক্ত মনোবৃত্তি সৃষ্টি হয়েছে সে পরিবেশ থেকে তাদেরকে যথাসম্ভব দূরে রাখতে হবে।.
পরিবারের অশান্তি দূর কারার উপায় (৫)
স্বামী স্ত্রীর পারস্পরিক সন্দেহ :
স্বামী স্ত্রী একে অপরের চরিত্রের ব্যাপারে সন্দিহান হয়ে পড়লে এ থেকে সংসারে চরম অশান্তি দেখা দিতে পারে।
এর থেকে পরিত্রাণ লাভের জন্য প্রথমতঃ উভয়কেই মনে রাখতে হবে যে, দলীল প্রমাণ ছাড়া কারও ব্যাপারে কু-ধারণা করা অন্যায় এবং পাপ।
অতএব দলীল-প্রমাণ ছাড়া নিছক সন্দেহ হয়ে থাকলে মন থেকে সে সন্দেহ ঝেড়ে ফেলতে হবে।
যদি মন থেকে সন্দেহ না যায় তাহলে, যে কারণে সন্দেহ সৃষ্টি হয় সে কারণ উল্লেখ করে তাকে স্পষ্ট বলতে হবে যে, এ কারণে আমার মনে সন্দেহ সৃষ্টি হচ্ছে তুমি এ থেকে বিরত হও, আর বিরত হতে না পারলে আমার জন্য দুআ কর যেন আমার মন থেকে এ সন্দেহ দূর হয়ে যায় এবং নিজেও মন থেকে কু-ধারণা দূর হওয়ার জন্য আল্লাহ্র নিকট দুআ করতে থাকবে।
এভাবে ইনশাআল্লাহ মন পরিষ্কার হয়ে যাবে। অন্যথায় মনে মনে সন্দেহ, ক্ষোভ চাপা রাখলে সেটা খারাপ পরিণতি ডেকে আনতে থাকবে।
আর বাস্তবিকই যদি দলীল প্রমাণের ভিত্তিতে জানা যায় যে, স্ত্রীর চরিত্র নষ্ট হচ্ছে, তাহলে যে কারণে সেটা ঘটছে সেটা প্রতিহত করবে।
এর জন্য সবচেয়ে উত্তম পন্থা হল স্ত্রীকে শরী’আত সম্মত পর্দার মধ্যে রাখা।
পর্দা ব্যবস্থায়ই হল চরিত্র ও সতীত্ব সংরক্ষণের সবচেয়ে নিশ্চিত ব্যবস্থা। আর যদি স্বামীর চরিত্র নষ্ট হতে থাকে, তাহলে স্ত্রী যেহেতু জোরপূর্বক স্বামীকে কোন কিছু মানাতে বাধ্য করতে পারবে না এবং এজন্য বকাঝকা করলে স্বামীর জিদ বেড়ে গিয়ে আরও হিতে বিপরীত হতে পারে, তাই স্ত্রীর তখন করণীয় হলঃ
(এক) স্বামীর মতি ভাল হওয়ার জন্য আল্লাহ্র কাছে দুআ করবে।
(দুই) যখন স্বামী নির্জনে তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ মুহূর্তে থাকবে এবং ঠাণ্ডা মাথায় থাকবে তখন খুব নরম ভাষায় তাকে বুঝাতে থাকবে।
(তিন) স্বামীর মনোরঞ্জনের জন্য আগের চেয়ে বেশী নিজেকে নিবেদিত করবে। এভাবে হয়ত স্বামীর সংশোধন হয়ে যেতে পারে। এ না করে স্ত্রী যদি এরূপ মুহূর্তে স্বামীকে জব্ধ করতে চায়, প্রকাশ্যে হেয় করতে চায় এবং স্বামীর মনোরঞ্জনে পূর্বের চেয়ে পিছিয়ে থাকে, তাহলে ক্ষতির সম্ভাবনাই বেশী।
পরিবারের অশান্তি দূর কারার উপায় (৬)
একাধিক বিবাহ :
ইসলাম বিভিন্ন প্রয়োজনের ভিত্তিতে একাধিক বিবাহ (এক সঙ্গে সর্বোচ্চ চারজন) পুরুষের জন্য জায়েয রেখেছে, তবে শর্ত হল পুরুষ তার সকল স্ত্রীর মধ্যে ইনসাফ ও সমতা বজায় রাখবে।
স্বামী আরও স্ত্রী ঘরে আনুক, আরও একটা বিবাহ করুক সাধারণভাবে স্ত্রী তা মেনে নিতে চায় না এবং এ জন্য মনোমালিন্য ও সংসারে অশান্তি লেগে যায়।
এ অশান্তির প্রতিকারের জন্য স্বামী ও স্ত্রী উভয়েরই কিছু করণীয় রয়েছে।
স্বামীর করণীয় হল-
যদি একান্তই তাকে আবার বিবাহ করতে হয় তাহলে যে কারণে আগের স্ত্রী পরবর্তী বিবাহকে মেনে নিতে পারছে না অর্থাৎ, সে আশংকা করছে যে, অন্য স্ত্রীকেই বেশী আদর সোহাগ করা হবে এবং তার আদর সোহাগ কমে যাবে, তার সন্তানাদি অবহেলিত হবে ইত্যাদি স্বামীর কর্তব্য কার্যতঃভাবে এ আশংকাকে দুর করা অর্থাৎ, সে সকল স্ত্রীর মধ্যে পূর্ণভাবে সমতা রক্ষা করবে, সকলকেই এক দৃষ্টিতে দেখবে, সকলের সাথে এক রকম আদর সোহাগের আচরণ করবে, তাহলে আস্তে আস্তে পূর্বের স্ত্রী স্বাভাবিক হয়ে আসবে।
আর স্ত্রীর কর্তব্য হল-
প্রথমতঃ
সে মনকে বুঝাবে যে, পুরুষের জন্য একাধিক বিবাহ করা যখন জায়েয, তখন আমার সেটা মেনে নিতে বাঁধা কোথায়।
দ্বিতীয়তঃ
সে জিদ ধরে স্বামীর খেদমত ও মনোরঞ্জনে ত্রুটি করবে না; তাহলে এই অবসরে পরবর্তী স্ত্রীর দিকে স্বামী বেশী ঝুঁকে পড়বে বরং তার জন্য উচিত হল স্বামীকে আরও বেশী আকৃষ্ট করার চেষ্টা করা, যাতে স্বামীকে ভারসাম্যতার পর্যায়ে রাখা যায়।
তৃতীয়তঃ
সতীনকে প্রকাশ্যে সন্তুষ্ট চিত্তে মেনে নেয়া। যদি সতীনের সাথে প্রকাশ্যে শত্রুতার আচরণ করা হয়, তাহলে সেও তাকে শত্রু ভাববে
এভাবে শুরু থেকেই অমিল লেগে গেলে ভবিষ্যতে তাকে আপন করে নেয়া কঠিন হবে।
মনে রাখতে হবে- নতুন সতীনকে আপন করে নিতে না পারলে সংসারে যে অশান্তি আসবে, সে অশান্তি শুধু নতুন সতীনই ভোগ করবে না, তাকেও ভোগ করতে হবে।
তাই জিদ ধরা নয় বরং বুদ্ধিমত্তা হল শুরু থেকেই সতীনকে আপন করে নিয়ে মিলেমিশে থাকার চেষ্টা করা।
আর নতুন স্ত্রীকেও মনে রাখতে হবে যে, তার স্বামীর পুরাতন স্ত্রীরও অধিকার রয়েছে, যেমন তার অধিকার রয়েছে।
অতএব পুরাতন স্ত্রী থেকে স্বামীকে বিচ্ছিন্ন করে নিজের কুক্ষিগত রাখার প্রচেষ্টা অত্যন্ত অন্যায়।
নতুন স্ত্রী যদি স্বামীকে সব স্ত্রীদের মধ্যে সমতা রক্ষার ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করে, তাহলে এক দিকে স্বামী অন্যায় থেকে রক্ষা পাবে অপর দিকে আগের স্ত্রীও তাহলে নতুনের মুগ্ধ হবে এবং সর্বোপরি সংসারের শান্তি রক্ষা হবে।
পরিবারের অশান্তি দূর কারার উপায় (৭)
তালাক সম্পর্কিত কুসংস্কার :
তালাক দেয়া বা না দেয়া উভয় ক্ষেত্রেই সমাজে বাড়াবাড়ি ও প্রান্তিকতা রয়েছে।
কিন্তু লোক কথায় স্ত্রীকে তালাক দিয়ে দেয়, নিতান্ত ঠেকা ছাটাই সামান্য সামান্য কারণে রাগের মাথায় তালাক দিয়ে দেয় এবং তিন তালাক দিয়ে বসে, যাতে করে পরে হুঁশ ফিরে এলেও আর স্ত্রীকে রাখা তার জন্য জায়েয থাকে না, তখন সে নানান ভাবে পারিবারিক অশান্তিতে পড়ে যায়। মনে রাখতে হবে অত্যন্ত প্রয়োজন ছাড়া বা নিতান্ত ঠেকা ব্যতীত তালাক দেয়া স্ত্রীর প্রতি জুলুম এবং অন্যায়।
আর কখনও তালাক দিতে হলেও এক তালাক দেয়া সমীচীন, যাতে পরে সম্বিত ও হুশ ফিরে এলে প্রয়োজন বোধে আবার স্ত্রীকে ফিরিয়ে নেয়া যায়।
সারকথা- রাগের মাথায় তালাক দেয়া পরিবারে অশান্তি ডেকে আনতে পারে।
আবার কতক লোক সমাজের নিন্দা সমালোচনার ভয়ে, পরিবারের তথাকথিত ঐতিহ্য বজায় রাখার জন্য নিতান্ত ঠেকায় পড়েও স্ত্রীকে তালাক দিতে পারে না।
স্ত্রীর সাথে কোন ভাবেই তার বনিবনা হচ্ছে না, কোন ভাবেই তারা মিলেমিশে চলতে পারছে না, দাম্পত্য জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে, তবুও তালাক দিতে পারছে না, ফলে সারাটা জীবন তাদের অশান্তিতে কাটছে, এটাও এক ধরনের কুসংস্কার, হিন্দুয়ানী কুসংস্কারের ফলেই তালাককে এত জঘন্য মনে করা হয়।
ইসলামে তালাক দেয়াটা অত্যন্ত গর্হিত বটে, কিন্তু তা সব সময়ে এবং সব পরিস্থিতিতে নয় বরং কোন কোন পরিস্থিতিতে তালাক দেয়াটা মোস্তাহাব এবং উত্তম হয়ে দাঁড়ায়, এমনকি কোন কোন পরিস্থিতিতে তালাক দেয়া ওয়াজিব ও জরুরী হয়ে পড়ে।
ফোকাহায়ে কেরাম বলেছেনঃ স্ত্রী যদি স্বামীকে কষ্ট দেয় বা নির্যাতন করে, কিংবা মোটেই নামায না পড়ে, বা বোঝানো সত্ত্বেও অশ্লীল কাজে লিপ্ত হয়, তাহলে উক্ত স্ত্রীকে তালাক দিয়ে দেয়াটাই মোস্তাহাব ও উত্তম। আর স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার ব্যাপারটা যদি এমন পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়ায় যে, স্বামী স্ত্রীর অধিকার আদায় করতে পারে না, তাহলে স্ত্রীকে তালাক দেয়া ওয়াজিব হয়ে পড়ে বশ্য যদি স্ত্রী তার অধিকার ছেড়ে দেয় তাহলে ভিন্ন কথা।
অতএব কোনক্রমেই যে স্ত্রীর সঙ্গে বনিবনা হচ্ছে না নিন্দা সমালোচনার ভয়ে কিংবা বংশে কেউ তালাক দেয়নি কাজেই তালাক দেয়া যাবে না- এই ঐতিহ্য রক্ষা করতে গিয়ে উক্ত স্ত্রীকে রেখে জীবনকে দুর্বিষহ করার কোন অর্থ নেই, যখন পারস্পরিক অনৈক্যের কোনই সমাধান করা সম্ভব হয় না, তখন তালাক দিয়ে দেয়াই সমীচীন। (ماخوذ از تحفہ زوجین واحسن الفتاوی جه/ ۵)
পরিবারের অশান্তি দূর কারার উপায় (৮)
অত্যধিক মহর ধার্য করা :
অনেক সময় স্বামী-স্ত্রীর মাঝে সম্প্রীতি না থাকা সত্ত্বেও স্বামী স্ত্রীকে ত্যাগ করতে পারে না শুধু এ কারণে যে, তার ঘাড়ে চেপে আছে বিরাট অংকের মহর, যেটা পরিশোধ করার সাধ্য তার নেই।
আবার এই মহরের অংক বড় থাকার সুবাদে অনেক স্ত্রীও স্বামীর অবাধ্য হওয়ার বা স্বামীকে যথাযথভাবে তোয়াক্কা না করার দুঃসাহস পায় এই ভেবে যে, সে যতই করুক স্বামী তাকে ছাড়ার সাহস পাবে না মহর পরিশোধ করার ভয়ে।
সাধ্যের বাইরে অত্যধিক মহর ধার্য করলে এভাবে সেটা সংসারের অশান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়, মহরটাই তখন হয়ে দাঁড়ায় জীবনের জন্য কাল, অশান্তি দূর করার পথে অন্তরায়।
ইসলামের দৃষ্টিতে মহর পরিশোধযোগ্য একটি ঋণ, অন্যান্য ঋণের ন্যায় এ ঋণও পরিশোধ করা ওয়াজিব- এই চিন্তা থাকলে কোন স্বামীই শুধু নাম শোহরতের জন্য তার সাধ্যের বাইরে মহর ধার্য করত না, কিংবা করে থাকলেও ক্রমান্বয়ে তা পরিশোধ করে দিলে পরবর্তীতে তার জন্য সেটা কোন সমস্যা হয়ে দাঁড়াতে পারত না।
মূলতঃ সমাজ মহরকে শুধু ধার্য করার বিষয় মনে করে, এটা যে পরিশোধ করা জরুরী তা মনে করে না, যার ফলেই সাধ্যের বাইরে মোটা অংকের মহর বাঁধা হয় এবং এটা কোন এক সময় সমস্যা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
পরিবারের অশান্তি দূর কারার উপায় (৯)
যৌতুক প্রথা :
আমাদের বর্তমান সমাজে যৌতুক একটা বিরাট পারিবারিক অশান্তির কারণ।
এই যৌতুকের অভিশাপে বহু নারীকে নির্যাতনের শিকার হতে হয়, বহু নারীকে জীবন দিতে হয় এবং বহু পরিবারে শান্তি বিনষ্ট হয়।
যৌতুক একটা সামাজিক অভিশাপ এবং এটা সমাজের এক রকম মানসিক সংক্রামক ব্যাধি।
এই ব্যাধি থেকে সমাজকে মুক্ত করা অপরিহার্য।
যৌতুক চাওয়া যে অবৈধ, এটা একটা ঘৃণিত পন্থা, এটা অনধিকার চর্চা, এর কারণে যে স্ত্রীর কাছে হীন ও নীচ বলে প্রতিপন্ন হতে হয়-এসব কথাগুলো ব্যাপকভাবে প্রচার হওয়া আবশ্যক, তাহলে হয়ত ধীরে ধীরে এই ব্যাধি সমাজের মন-মানসিকতা থেকে দূর করা সম্ভব হতে পারে।
অগ্রীম প্রতিরোধ ব্যবস্থা হিসেবে ব্যক্তিগত ভাবে যারা যৌতুক চায় বা যৌতুক পাওয়ার লালসা রাখে তাদের সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন না করাই উচিত।
এরূপ সামাজিক অপরাধ প্রতিহত করার জন্য ইসলামের আলোকে কোন কঠোর আইনও প্রণয়ন করা যেতে পারে।
যৌতুক সম্পর্কিত মাসায়েল এবং আরও কিছু কথা জানার জন্য অন্য একটি পেষ্টে বিস্তারিত আলোচনা আছে, উপরে থাকা সার্স বাটনে লিখে ক্লিক করলেই পাবেন।
পরিবারের অশান্তি দূর কারার উপায় (১০)
সন্তানাদির দ্বীনদার না হওয়া :
সন্তানাদি যদি পিতা-মাতার অবাধ্য হয়, খারাপ পথে এক কথায় সন্তানাদি যদি দ্বীনদার ও ভাল না হয়, তাহলে সংসারে সেটা বিরাট অশান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
এর প্রতিকার হল ও সন্তানাদিকে দ্বীনদার বানানো। সন্তানাদিকে দ্বীনদার বানানো ও ভাল করে গড়ে তোলার পদ্ধতি সম্পর্কে অন্য কোন পষ্টে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
পরিবারের অশান্তি দূর কারার উপায় (১১)
পারস্পরিক অধিকার আদায় না করা :
পরিবারের মাতা-পিতা, স্বামী-স্ত্রী, ভাই-বোন ও ছেলে-মেয়ের মধ্যে একের প্রতি অপরের যে অধিকার তা আদায় না করলে, যার যা করণীয় তা না করলে পরস্পরে অমিল এবং এই অমিল থেকে অশান্তির সূত্রপাত ঘটতে পারে। এসব অধিকার সম্পর্কে জানার আলাদা আলাদা পোষ্ট করা হয়েছে, উপরের সার্স বক্স লিখে সার্স করলে পেয়ে যাবেন।
উপরোক্ত কারণগুলো ছাড়াও আরও বিভিন্ন কারণে পরিবারে অশান্তি দেখা দিতে পারে, বিজ্ঞ উলামায়ে কেরাম থেকে তার ইসলামী সমাধান জেনে নেয়া যেতে পারে।
সমাপ্ত: (11 টি) পরিবারের অশান্তি দূর কারার উপায়।