প্রিয় পাঠক, আজকের পোষইটতে আমরা তুলে ধরব, পর্দা ও ইসলাম, পর্দা করা ফরজ কিনা? মাহরাম তালিকা এবং মাহরাম নন মাহরাম এর পর্দার হুকুম আহকাম কি? তো চলুন শুরু করি।
পর্দা ও ইসলাম (পর্দা করা ফরজ কি?)
পর্দার হুকুম আহকাম
* শরী’আতে গায়রে মাহরাম পুরুষ বা নারীর সাথে পর্দা করা ওয়াজিব (অবশ্যিক/অবশ্য পালনীয়)।
* কোন বেগানা নারীর প্রতি দৃষ্টিপাত করা পুরুষের জন্য হারাম। এমনিভাবে নারীর পক্ষেও কামভাব নিয়ে কোন বেগানা পুরুষের প্রতি দৃষ্টিপাত করা হারাম। তবে অনিচ্ছাকৃতভাবে হঠাৎ যে দৃষ্টি পড়ে যায় তা মাফ; তবে সে দৃষ্টিকে দীর্ঘায়িত করা যাবে না। নারীদের চেহারাও পর্দার হুকুমের অন্তর্ভুক্ত
* দাড়ি বিহীন বালকের প্রতিও বদনিয়ত ও কামভাব সহকারে দৃষ্টিপাত করা হারাম।
* কোন পুরুষ কোন পুরুষের গোপন অঙ্গ দেখতে পারবে না। তেমনি কোন নারী অপর কোন নারীর গোপন অঙ্গ দেখতে পারবে না। তবে চিকিৎসা ইত্যাদি বিশেষ প্রয়োজনের ক্ষেত্রে হলে ভিন্ন কথা। সে ক্ষেত্রেও অন্তর থেকে যথাসম্ভব শাহওয়াত দূর করার চেষ্টা করবে এবং এ ক্ষেত্রেও প্রয়োজনের অতিরিক্ত অংশ দেখা জায়েয হবে না। পুরুষের নাভি থেকে হাটু পর্যন্ত গোপন অঙ্গ (সতর), আর নারীর গোপন অঙ্গ (সতর) বলতে বুঝায় তার মুখমণ্ডল ও হাতের তালু ব্যতীত সমস্ত শরীর।
* চলা ফেরা ও কাজ কর্মের সময় বা লেন-দেনের সময় প্রয়োজন হলে নারীর জন্য মুখমণ্ডল, হাতের তালু, আঙ্গুল ও পদযুগল খোলারও অনুমতি রয়েছে। কিন্তু পুরুষের জন্য বিনা প্রয়োজনে নারীর এগুলোর প্রতি দৃষ্টিপাত করা জায়েয নয়।
* যাদের সঙ্গে নারীকে পর্দা করতে হয় না অর্থাৎ, যাদের সামনে নারীগণ যেতে পারেন তাদের একটি তালিকা নিম্নে প্রদান করা হল।
মাহরাম নন মাহরাম
মেয়েদের/নারীর মাহরাম তালিকা :
১। নিজ স্বামী (যার নিকট স্ত্রীর কোন অঙ্গের পর্দা নেই। তবে বিনা প্রয়োজনে বিশেষ অঙ্গ দেখা অনুত্তম)।
২। পিতা (আপন হোক বা সৎ। দুধ পিতাও এর অন্তর্ভুক্ত)।
৩। দাদা (দাদার পিতা বা আরও যত উপরে যাক এর অন্তর্ভুক্ত)।
৪। নানা (নানার পিতা বা আরও যত উপরে যাক এর অন্তর্ভুক্ত)।
৫। চাচা (আপন হোক বা সৎ)।
৬। ভাই (আপন হোক বা বৈমাত্রেয় বা বৈপিত্রেয়) তবে চাচাত মামাত খালাত ফুফাতো ভাইয়ের সঙ্গে পর্দা করতে হবে। দুধ ভাইয়ের সঙ্গে দেখা দেয়া যায়।
৭। ভ্রাতুষ্পুত্র (আপন ভাইয়ের পুত্র হোক বা বৈমাত্রেয় ভাইয়ের বা বৈপিত্রেয় ভাইয়ের)।
৮। ভাগিনা (আপন বোনের ছেলে হোক বা সৎ বোনের)।
৯। ছেলে (আপন হোক বা সৎ)।
১০। আপন শ্বশুর, আপন দাদা শ্বশুর ও আপন নানা শ্বশুর ব্যতীত অন্য সকল প্রকার শ্বশুরের সঙ্গে পর্দা করতে হবে।
১১। মামা (আপন হোক বা সৎ)।
১২। নাতী (আপন ছেলের ঘরের হোক বা মেয়ের ঘরের হোক)।
১৩। জামাই (আপন মেয়ের জামাই)।
* নির্বোধ, ইন্দ্রিয় বিকল ধরনের লোক বা ঐসব বালক যারা বিশেষ কাজ কারবারের দিক দিয়ে নারী পুরুষের মধ্যে কোন পার্থক্য বোঝে না, তাদের সাথে পর্দা করা জরুরী নয়- তারাও পর্দার হুকুম থেকে ব্যতিক্রম।
* পূর্বের পরিচ্ছেদ থেকে বোঝা গিয়েছে- পুরুষ কোন্ কোন্ নারীর সঙ্গে দেখা করতে পারবে অর্থাৎ, কোন্ কোন্ নারীর সঙ্গে পর্দার হুকুম নেই; তবে সহজে বোঝার জন্য তারও একটি তালিকা নিম্নে পেশ করা হল।
ছেলেদের/পুরুষের মাহরাম তালিকা
১। মা (আপন হোক বা সৎ। দুধ মা-ও এর অন্তর্ভুক্ত)।
২। মেয়ে (আপন হোক বা সৎ অর্থাৎ, স্ত্রীর পূর্বের ঘরের মেয়ে হোক)।
৩। বোন (আপন হোক বা বৈমাত্রেয় বা বৈপিত্রেয়) দুধবোনও এর অন্তর্ভুক্ত। মামাত, খালাত, ফুফাত বোনদের সাথেও পর্দা করতে হবে।
৪। ফুফু (আপন হোক বা সৎ)।
৫। খালা (আপন হোক বা সৎ)।
৬। ভাতিজি (আপন হোক বা সৎ)।
৭। ভাগ্নি (আপন হোক বা সৎ)।
৮। শাশুড়ী (আপন শাশুড়ী বা দাদী শাশুড়ী বা নানী শাশুড়ী)।
৯। আপন দাদী।
১০। আপন নানী 1
১১। পুত্র-বধু।
১২। নিজ স্ত্রী 1
১৩। নাতিনী (ছেলের ঘরের হোক বা মেয়ের ঘরের)।
* উল্লেখ্য, পুরুষ তার মাহরাম মহিলার শুধু মাথা, চেহারা, গর্দান দুই বাহু ও পায়ের নলা দেখতে পারে, তাও যদি শাহওয়াত না থাকে। পেট পিঠ দেখা জায়েয নয়। একজন নারী অপর নারীর এতটুকু অংশই দেখতে পারে, যতটুকু একজন পুরুষ অপর পুরুষের দেখতে পারে- তার বেশী নয়।
* যেখানে নারীর আওয়াজের কারণে অনর্থ সৃষ্টি হওয়ার আশংকা থাকে সেখানে পর্দার অন্তরালে থেকেও বেগানা পুরুষকে আওয়াজ শুনানো এবং পর্দার সাথে কথা-বার্তা বলা নিষেধ। যেখানে এরূপ আশংকা নেই সেখানে জায়েয কিন্তু বিনা প্রয়োজনে পর্দার অন্তরালে থেকেও বেগানা পুরুষদের সঙ্গে কথা-বার্তা না বলার মধ্যেই সাবধানতা নিহিত। প্রয়োজনের মুহূর্তে বলতে হলেও নারীকে মিহি সুরে না বলার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। ফিতনার সম্ভাবনা থেকে বাঁচার জন্য এটাই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা।
* নারীদের জন্য বেগানা পুরুষকে অলংকারের আওয়াজ শোনানোও জায়েয নয়।
* সুশোভিত রঙ্গিন কারুকার্য খচিত বোরকা পরিধান করে বের হওয়াও নিষিদ্ধ।
* যে ব্যক্তি স্বীয় স্ত্রী বা পরিবারের (অধীনস্ত) কোন মহিলাকে বেগানা পুরুষের সাথে মেলা মেশা করতে দেয়, শক্তি সত্ত্বেও তাতে কোন প্রকার বাধা না দেয় অর্থাৎ, শরী’আতের পর্দা বিধান লংঘন করতে দেয় তাকে দাইয়ূস বলা হয়। আর হাদীসে এসেছে দাইয়ূস ব্যক্তির জন্য আল্লাহ তা’আলা জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন।
তো পোষ্ট থেকে আশা করি, প্রিয় পাঠক, আজকের পোষইটতে আমরা তুলে ধরব, পর্দা ও ইসলাম, পর্দা করা ফরজ কিনা? মাহরাম তালিকা এবং মাহরাম নন মাহরাম এর পর্দার হুকুম আহকাম কি? বিষয়গুলো পরিষ্কার হয়েছে। দেখা হবে পরবর্তী আলোচনায়, আজকের মত এখানেই বিদায় নিচ্ছি। ধন্যবাদ।